মুনতাহানুল ইসলাম সিজান'র গল্প অপ্রাপ্তি ।। বর্ণপ্রপাত

 

চায়ের কাপে আজ চিনি হয়নি  

--লোপা,এই লোপা।চায়ে চিনি দাওনি কেন?

--দিয়েছি তো।  

--চিনি তো একটুকুও হয়নি...

--হবে কি করে? ঘরে কি চিনি আছে?

--তা আমাকে বলতে পারোনি

--বলবো কি করে?তোমার হাতে পয়সা আছে

বুকে খানিক টা চিনচিন করে ব্যথা অনুভব হলো।জগতে যদি টাকা জিনিস টা না থাকতো খুব ভালো হতো।আগের মতো বিনিময় প্রথা টা আসা দরকার৷ আমার মতো লেখক দের তখন কোন কষ্ট হতো না।বাজারে চাল ডাল সব গল্প রচনা আর তা বিনিময় করে নিয়ে আসতাম

--তুমি কি আবার তোমার ভাবনায় ডুব দিলা?ঘরে রান্না করার মতো কিছু নেই।তুমি কি আমায় না খাইয়ে মারবে?বাবা মা রাজি ছিলো না তারপর তোমার হাত ধরেছি।এভাবে না খাইয়ে মারবে জানলে জীবন হাত ধরতাম না। 

না ঘরে আর টিকা যাচ্ছে না। বাহিরে গিয়ে কিছু একটার ব্যবস্থা করা দরকার। 

কথার মায়া প্রকাশনি কে একটা কল করা যাক।গতবারের বই টা তেমন সাড়া না ফেললেও পরিচিত মানুষ জন অনেকেই কিনেছে।লাভ যত টুকুই হোক না কেন এই বিপদের সময় সেখান থেকে প্রাপ্ত ভাগ টা নেওয়া দরকার। 

--হ্যালো,কথার মায়া প্রকাশনী?

--জি প্রান্ত ভাই,বলেন

--ভাই গতবারের বইয়ের লাভ থেকে আমার অংশটা যদি দিতেন...

--কি যে বলেন ভাই,আপনার বই ছাপিয়ে আমরা লস গুনেছি। ছাপিয়েছি ৬০০ বিক্রি হয়েছে মোটে ৭৭ আপনি অফিসে আসুন বাকি ৫২৩ টা বই কিনে নিয়ে যান!

গতি সুবিধার না। ফোন কাটা দরকার। 

কল টা কেটে পকেটে রেখে হাটতে লাগলাম

জগত টা বড় অদ্ভুত   

যে সৃষ্টি করে তাকেই মানুষ অবহেলা করে

মানুষ তো তার সৃষ্টি কারীকেই গুরুত্ব দেয় না৷ 

যদি দিতো তাহলে এই সমাজে খুন, ধ**, ঘুষ বানিজ্য ইত্যাদি কোন অপরাধই সংঘটিত হতো না

মাথায় আর কোন উপায় আসছে না বাড়ির দিকে যাওয়া দরকার৷ আজ বোধ হয় না খেয়েই থাকতে হবে

বাড়িতে এতো মানুষ!ঢুকতেই মনে হল খাবারের জিনিসের অভাব নেই।বুঝতে বাকি রইলো না লোপার পরিবারের লোকজন এসেছে

কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে হিমালয়ের বরফ ঢাকা গাছ মনে হচ্ছিলো। লোপার পরিবারের কাছে আর কোন মান সম্মান টিকে রইলো না। 

খুব বড় মুখ করে বলে এসেছিলাম আপনার মেয়ে কে সুখে রাখবো। কিন্তু জীবনের কঠিন নিয়ম তা আর হতে দিচ্ছে না  

কোন কথা না বলে চুপ চাপ বিরানী খাওয়া যাক। পেটে ভিষণ ক্ষুধা। 

খাওয়ার মাঝ খানে সবাই আমার রুমে প্রবেশ করলো। 

লোপার হাতে ব্যাগ। লোপার মা বলে উঠলো,

--আমি আমার মেয়ে কে কিছু দিনের জন্য নিয়ে যাচ্ছি।"

কিছু বুঝে উঠার আগেই লোপা শেষ বার এই রুমে বলে উঠলো, --ভালো থেকো

সব কিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।লোপা কি একেবারে চলে গেলো?

আগে খাবার টা শেষ করা যাক। পরে এই নিয়ে ভাবা যাবে। খাওয়া শেষে একটা ক্লান্তির ঘুম দরকার।প্রচুর খাওয়া হয়ে গেছে 

ঘুম শেষে উঠে চা হাতে প্রান্ত নতুন বই লিখতে বসলো।কি লিখবে ভেবে উঠতে না পেরে নিজের কাহিনী গুলোকেই সাজাতে লাগলো। ডাইরী টা মোটা মোটা লাগছে কেন।মনে হচ্ছে ভিতরে কোন কাগজ আছে।বের করা যাক

সেখানে বড় করে লেখা,

"আমায় মাফ করে দাও প্রান্ত। 

আমি মায়ের মাথায় হাত দিয়ে কসম করেছি তোমার সাথে আর সংসার করবো না। আমার মা সংসারের এই অবস্থা দেখে আর আমায় রাখলো না।জোর করে এমন কসম দেওয়ায় নিছে।আর বলেছে না গেলে সে আত্মহত্যা করবে।আমি আমার মা কে হারাতে পারবো না।আর তোমাকেও হারাতে পারবো না। কিন্তু পরিস্থিতি আমাকে তোমার থেকে আলাদা করে দিলো।তুমি প্লিজ ভালো কিছু করো আর আমায় এখান থেকে নিয়ে যেও প্লিজ।তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না... "

সব কিছু ঝাপসা লাগছে।হয়তো চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে চায়!

পরবর্তী কিছু দিন আর ঘর ছেড়ে বের হওয়া হলো না।ঘরের মেঝে তে বসেই বই লিখে ফেললাম। বই মেলা সামনে নতুন একটা প্রকাশনী তে যাওয়া দরকার। আসলাম ভাই একবার বলেছিলো তার পরিচিত প্রকাশনী তে কথা বলিয়ে দিবে।আসলাম ভাই কে কল করা যাক।ভাই সব শুনে ব্যবস্থা করে দিলো।প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক একজন নারী,নাম সায়নী।অনেক সুন্দর ভাবেই বইয়ের কাহিনী শুনে সে ছাপাতে রাজি হলো। 

এর মাঝে বেশ কয়েক বার সায়নীর সাথে প্রান্তর দেখা হলো, কথাও হলো

অবশেষে আজ বই টা প্রকাশ পাবে। প্রকাশ অনুষ্ঠান শুরু দুই ঘন্টা আগে জানতে পারলাম লোপার বিয়েও দুই ঘন্টা পর। মাথা কাজ করছে না।ভেবেছিলাম বই টা ভালো ব্যবসা করলে লোপাকে নিয়ে আসবো। 

সব কিছু ঠিক চলছিলো। হুট করেই সব এলোমেলো লাগছে।লোপার সাথে দেখা হওয়া দরকার।ওর অবর্তমানে ওরে নিয়ে যে বই টা লিখেছি আমি আশাবাদী বইটা এবার সফলতা এনে দিবে।কিন্তু সফলতা ওকে ছাড়া বেমানান।প্রকাশনীর সেই নারীকে প্রোগ্রাম আমাকে ছাড়া সম্পূর্ণ করতে বলে বেরিয়ে পড়লাম

লোপার বাড়ির সামনে বিশাল বিয়ের সাজে চারিদিক রব রব করছে 

ভেতরে ঢোকা প্রয়োজন। একটি বার অন্তত লোপার সাথে দেখা করা দরকার

গেটে ঢুকতেই লোপার ভাইয়ার সাথে দেখা। আমায় দেখতে পেয়েই খুব ভদ্র ভাষায় চলে যেতে বললো। আমি তাও শুনলাম না।আর এতে কপালে জুটলো চড়-থাপ্পড় আর ঘুষি। 

মার খেয়ে সেখানেই পড়ে থাকলাম।ওঠার বিন্দুমাত্র শক্তি নেই। বেশ কিছু সময় কেটে গেলো।পাশ দিয়ে অনেক গাড়ি গেলো।বোঝার বাকি রইলো না লোপা আর তার নতুন স্বামী এই গাড়িতে গেলো

আর পরে থাকলাম আমি আর আমার দূর্ভাগ্য। 

সকাল হলো বাসায় ফিরলাম। তিন দিন কেটে গেলো।ফোন টা অন করা হয়নি।অন করতেই অসংখ্য মেসেজ আসতে লাগলো

কিছু মেসেজ চেক করলাম,সায়নী মেসেজ দিয়েছেন,

"প্রান্ত সাহেব আপনি কই? আপনার বই তো প্রচুর বিক্রি হচ্ছে।ক্রেতাদের মূল আকর্ষণ এখন আপনার বই৷ সবাই আপনাকে দেখতে চাচ্ছে।প্লিজ ভাই ফোন অন করে মেসেজ দেখে থাকলে আমাদের অফিসে চলে আসুন।আপনার সাথে আমরা আরো ডিল করবো"

প্রান্ত মনে মনে হেসে কয়েক টা বাক্য উচ্চারণ করলো। 

যখন এমন টা দরকার ছিলো? তখন কেন পেলাম না?

লোপা তোমাকে এখনো অনেক ভালোবাসি

তুমি এসে দেখো আজ আমার বই সবাই কিনছে!

 

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।