সেন্টু ভাইয়ের ভেলেন্ট্যাইন ডে সেলিব্রেট ।। হামীম রায়হান


অন্যান্য বছর ভেলেন্ট্যাইন ডে'র দিন সেন্টু ভাইয়ের মন থাকে ভীষণ খারাপ। হায়-হুতাশ করতে থাকেন। আমরাও তার সাথে যোগ দিয়ে হাহাকার করি প্রেমের জন্য। ভাই ছলছল নয়নে আমাদের বুঝাতে থাকে তার প্রেমের করুণ ইতিহাস! কখন কাকে কিভাবে প্রপোজ করেছিলো, কার বাবা ভাইকে দৌড়ানি দিয়েছিলো, কার ভাইদের ভয়ে সেন্টু ভাই পুকুরে ডুব দিয়ে ছিল। এসব কথা শুনে দিনটা কাটত। দিন শেষে বজা কাকার দোকানে গিয়ে হতাশার ডাক দিতে দিতে গরম গরম সিঙ্গারা খেতাম। আর দু'হাত তুলে মোনাজাত করতাম যাতে সেন্টু ভাইয়ের প্রেমটা যেন হয়ে যায়।

এবার ভেলেন্ট্যাইন ডে'তে দেখি সকাল থেকেই ভাইয়ের দেখা নাই। সারাটা দিন ভাইকে খুঁজে খুঁজে আমরা হয়রান। ভাই মনে হয় প্রেমে পড়েছে! বিকালে আমরা পাড়ার মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। সেন্টু ভাই দেখি হেসে হেসে আসছে। তার চেহারায় এক অন্যরকম আনন্দের আভা! আমরা বুঝে গেলাম নিশ্চয়ই ভাইয়ের মনের প্রেম পূর্ণতা পেয়েছে! ওহ! আজ জমপেশ খানাপিনা হবে! সুবেল তো ভাইকে দেখেই স্লোগান দিতে লাগল 'সেন্টু ভাইয়ের আগমন, শুভেচ্ছার স্বাগতম!' ভাই কাছে এসে বসল। যেন অনেক দিনের স্বপ্ন ভঙ্গ  হয়েছে। আমাদের আর তর সইছিল না, ঘটনা শুনার জন্য। ভাই ধরা খেয়েছে না কি?  'ভাই, ভাবীর সাথে আমাদের কবে দেখা করাবে? এতকিছু করলে আর আমাদের কিছুই জানালে না?' ' আরে কিসের প্রেম টেম। আমি ওসবে আর বিশ্বাস করি না। ওসবের ধারে কাছেও আর যাবো না। যতসব নষ্টদের কাজ কাম!' ভাই বলে কী! গতকালও যে ভাই একটা প্রেমের জন্য হাহাকার করছিলেন, আজ তার এমন পরিবর্তন! ঘটনাতো কিছু একটা আছে! 'তাহলে ভাই সারাটা দিন ছিলে কোথায়?' 'পার্কে ছিলাম। এক প্রকার দৌড়ের উপড়!' 'পার্কে? আজতো পার্কে যাবে প্রেমিক প্রেমিকারা! তুমি কেন গেলে?' 'আমিতো তাদের দেখতেই গেলাম!' 'ভাই, মাথায় কিছুই ডুকছে না। বুঝায় বলো!' 'ওপাড়ার সাইমা, মনে আছে? আমার প্রথম প্রেমিকা! যার গুণ্ডা মার্কা বাপ আছে! তাকে দেখলাম পার্কে বাদাম খায়। তারপর জলিকে দেখলাম। যার ভাই আমার হাত খেটে দেয়ার ভয় দেখাল। তারপর দেখলাম রূম্পাকেও। যে কিনা আমার কলার ধরে পাঁচশ টাকা নিয়ে গেল। নুরিকেও দেখলাম। সেই নুরি, যাকে দেয়া প্রেম পত্র পত্রিকায় ছাপিয়ে দিয়েছিল তার সাংঘাতিক (সাংবাদিক) মামা!' 'তারা কি সবাই তোমার সাথে দেখা করতে গেল?' 'নাহ। তারাতো মনের সুখে পার্কে প্রেম করছিল!' 'তো তুমি সেখানে কী করছিলে? তাদের পিছু নিলে বুঝি?' 'আরে না। আমি শুধু একটা ফোন করে তাদের বাবা মাকে খবরটা পৌছে দিলাম! এবার বুঝুক প্রেমের ঠেলা! আমার সাথে প্রেম না করার মজা। নিশ্চয় এতক্ষণে ধরপাকড় শুরু হয়ে গেছে! তাই আজ মনে ভীষণ খুশি। তোদের আজ পেট ভরে খাওয়াবো! আজ দারুণ ভাবে ভেলেন্ট্যাইন ডে সেলিব্রেট করব!'

আমি মনে মনে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম! ভাগ্যিস আজ সুলতানার সাথে পার্কের প্রোগ্রাম বাদ দিয়েছিলাম! 


হামীম রায়হান,
পটিয়া, চট্টগ্রাম।

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।