অবহেলা আর কষ্ট : মিনহাজুল ইসলাম


এলাকার যে ছেলেটি কখনো খারাপ কাজ বা নেশা করে নি, আজকে সে এখন নাম কড়া নেশাখোর আর খারাপ কাজে লিপ্ত। যে ছেলেটি সিগারেটেন থাকা নিকোটিনের ধোঁয়া সহ্য করতে পারতো না, আজ সে সেই নিকোটিন তার চলার পথের সঙ্গী। সে এখন প্রতি রাতেই ছাদের কোণে গিয়ে নিকোটিনের আগুনে নিজেকে পুড়তে বসে। যে ছেলেটি কলেজ, কোচিং, কিংবা বন্ধুদের সাথে আড্ডায় সবাইকে মাতিয়ে রাখতো, আজ সে একদম চুপ। কারো সাথে কোনো কথা বলে না সব সময় একা থাকে। যে ছেলে অনুজ্জ্বলকে ঘৃণাঃবশত অন্ধকার তথা অপছন্দ করতো, আজ সে শপিং এ গেলে সবথেকে আগে কালো রঙটাকে চয়েজ করে আর প্রায় সময়টাই অন্ধকারের মধ্যে থাকতে চায়। এছাড়াও আরো অনেক ঘটনা আছে যা আমাদের চারপাশে ঘটে চলছে। হয়তো কারোটা প্রকাশ পায় আবার কারো টা প্রকাশ পায় না। সমাজের ছোট বড় প্রত্যেকেই ভাবে হয়তো খারাপ সঙ্গ পেয়েই ছেলেটি খারাপ হয়েছে। এভাবেই আমাদের সামনে ঘটে যাওয়া কর্মকাণ্ড গুলোর প্রতিক্রিয়া জানাই। ছেলেটা ভালো ছিল, কিন্তু এখন রোজ সিগারেট খায়। ছেলেটা একদম নষ্ট হয়ে গেছে, রোজ মারপিট আর নেশা করে। এই ছেলে ছোট থেকে অনেক সম্মান করতো, কিন্তু এখন সামনে বসে সিগারেট ধরায়। ছেলেটা খারাপ হবে কখনোই ভাবি নি ইত্যাদি। আমরা ভেবে থাকি এসব ছেলেগুলো এভাবে নষ্ট হওয়া আর বিগ্‌ড়ে যাওয়ার পিছনে খারাপ সঙ্গ একমাত্র দায়ী। কিন্তু কখনো কি জানতে চেয়েছি বা চেয়েছেন তাদের এই খারাপ হওয়ার পিছনের কারণটা। আমরা জানতে চাই নানা কোনদিন। কিসের জন্য তারা এ পথে এসেছে? একটা ছেলে শুধু খারাপ সঙ্গ পেয়ে নেশার জগতে পা দেয় না। এর পিছনে জড়িয়ে থাকে পারিবারিক সমস্যা না হয় কাছের মানুষের দেয়া কষ্ট আর অবহেলা। আমাদের সমাজের প্রায় অর্ধেকের বেশি ছেলেরা নেশায় আসক্ত হয় প্রেম বিচ্ছেদে। আর অল্প কিছু ছেলেরা হয় পারিবারিক কারণে। তখন এরা বেঁচে থাকার জন্য এবং পুরাতন স্মৃতি গুলো মুছে ফেলার জন্য নেশার জগতে পা দেয়। আচ্ছা কতটা কষ্ট পেয়ে একটা ছেলে তার চোখের পানি ফেলে! হ্যাঁ, আপনাকেই জিজ্ঞাস করছি যিনি বা যে এই গল্পটাকে পড়ছেন। আমার জানা মতে, একটা ছেলেকে কখনো আপনি সামনে বসে তেমন একটা কান্না করতে দেখবেন না।কারণ সে জানে সবার সামনে বসে কান্না করতে দেখলে তাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা, তামাশা করবে। তাই সে নিরবে তার কষ্টটাকে বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। কারণ ওখানে লুকিয়ে রাখলে কেউ দেখতে পাবে না, একমাত্র স্রষ্টা আর নিজে ছাড়া। রাতে অন্ধকারে ঘরের কোনো এক কোণে বসে বা বিছানায় শুয়ে নিঃশব্দে দু'চোখের পানি ফেলে কেঁদে যাবে। চিৎকার দিয়েও সে তখন কাঁদতে পারে না, যদি তার বাসার কেউ কান্নার শব্দ শুনে যায়। বাসার যে ছেলেটি খুব হাসি খুশি থাকতো, প্রাইভেট বা আড্ডা দিয়ে সবাইকে মাতিয়ে রাখতে পারতো। আজ হয়তো তার ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে অবহেলা পেতে পেতে সে দিনদিন এতো বদলে গেছে বা যাচ্ছে।

আগের মত আর কারো সাথে মিশে না, মন মরা আর সবসময় একা থাকতে চায়। কারণ, সে জানে বন্ধুদের সাথে চলতে হলে তাকে হাসি-খুশি থাকতে হবে। যদিও ক্ষেত্র বিশেষ চলতে হয় তখন তাকে মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে জীবন কাটাতে হয়। যখন একটা ছেলের জীবনে কোনো মেয়ে আসে, তখন তাকে নিয়েই জীবনটাকে রঙ্গিন করতে চায়। কিন্তু হঠাৎ করে সেই রঙ্গিন কে কালো করে দিয়ে অন্য ছেলের হাত ধরে চলে যায়, তখন শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে হয়। সে ভাবতে থাকে এই কি সেই মেয়ে যে কোনো একসময় আমায় নিয়ে ভালোবাসার স্বপ্ন বুনতো। আপনি যদি একটা ছেলের একদম কাছের বা ভালোবাসার মানুষ হয়ে তাকে কষ্ট দিতে চান বা তাকে কাঁদাতে চান। তাহলে তাকে কোনো ভরা জনসম্মুখে এনে চড় মারুন, তাকে বেশি করে গালাগালি করুন বা তাকে অপমান করুন। দেখবেন নিরবে কোনো প্রতিবাদ না করে আপনার সামনে থেকে মাথা নিচু করে চলে যাবে তবুও কাঁদবে না। কিন্তু তাকে সামান্য পরিমাণ অবহেলা করুন, তার সাথে একটু কথা বলা কমিয়ে দিন, খোঁজ-খবর নেয়া কিছু দিনের জন্য বাদ দিয়ে দিন বা তার সাথে কম যোগাযোগ করুন। তাহলে দেখবেন কিছু দিনের মধ্যে তার চোখের নিচটা কালো হয়ে গেছে আর আগের থেকে অনেকটা শুকিয়েও গেছে। কারণ সারারাত কেঁদে নির্ঘুমে কাটানো রাত আর সঠিকভাবে নিয়মিত না খাওয়ার ফলে এ অবস্থা তার। ছেলেরা অনেক কিছু সহ্য করতে পারে, কিন্তু কাছের মানুষদের অবহেলা সহ্য করতে পারে না। একটা ছেলের সাজানো জীবনকে এলোমেলো করে দিতে তার ভালোবাসার মানুষের অল্প অবহেলাই যথেষ্ট। ছাদে বসে নীল আকাশকে দেখতে থাকা ছেলেটিও কোনো একসময় রাতের আঁধারে ছাদের কোনো এক কোণে বসে তারা গুনে আর নিজের বুকটাকে একের পর এক সিগারেটের ধোঁয়ায় পুড়তে থাকে। বাড়ির ছেলের কোনো একসময় পছন্দ ছিলো নীল আর লাল। কিন্তু এখন তার পছন্দের রঙ বদলে গিয়েছে। সে এখন আর নীল আর লাল রঙের কিছু পড়ে না। কারণ ওটা ছিল তার পুরনো ভালোবাসার মানুষেরও পছন্দ। তাই আজ এসব বাদ দিয়ে তার একমাত্র পছন্দ রঙ হল কালো। একটা ছেলে যে কখনো অন্ধকারে থাকতে পারতো না। সবসময় বন্ধুদের সাথে বাহিরে ঘোরাঘুরি করতো। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে সে এখন অন্ধকারকে নিজের আপন করে নিয়েছে। সে এখন দিনের বেশির ভাগ সময়টাও অন্ধকার রুমেই কাটিয়ে দেয়, তবুও বাহিরে বের হয় না। একটা ছেলে কখনোই চায় না খারাপ হতে, কিন্তু আমাদের সমাজ, পরিবেশ আর পরিস্থিতি তাকে খারাপের দিকে টেনে নিয়ে যায়। দশটা খারাপ ছেলের সাথে চলতে গিয়ে একটা ভালো ছেলেও কোনো একসময় খারাপ হয়ে যায়। আর দশটা ভালো ছেলের সাথে একটা খারাপ ছেলে চললে একসময় নেশা করা ছেড়ে দিয়ে সে ভালো হয়ে যায়। সবশেষে সেই সকল কাছের বা ভালোবাসার মানুষদের একটা কথাই বলবো যে, কোনো ছেলেকে ভালোবাসলে তাকে মন দিয়ে ভালোবাসবেন। কোনো প্রকার ছলনা বা মিথ্যের আশ্রয় না নিয়ে ভালোবাসুন দেখবেন সে আগের থেকে আরো দ্রুত ভালো কিছু করার জন্য এগিয়ে যাবে। আর তাকে যদি আপনি নাই ভালোবাসেন তাহলে দয়া করে তার সাজানো সুন্দর ভবিষ্যৎকে নষ্ট করে দিবেন না। কারণ আপনার একটু একটু করে দেয়া অবহেলা আর কষ্ট একটা ছেলের স্বপ্ন গুলো মাটিতে মিশিয়ে দিতে পারে যে কোনো মুহূর্তে। একটা ছেলে খারাপ হলে তার পরিবারের সদস্যরা বিশেষ করে মা আর বাবা বড্ড অসহায় হয়ে পড়ে। তখন সমাজে তাদের মুখ দেখানোটাই অনেক কষ্টের আর যন্ত্রণার।

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।