নুসরাত জাহানের চোখে খাদিজা তুল কোবরার উপন্যাস 'অনেকটা বাধ্য হয়েই'

উপন্যাস : অনেকটা বাধ্য হয়েই
লেখক: খাদিজা তুল কোবরা
প্রকাশকাল : একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৮
মূল্য: ১৫০ টাকা
প্রকাশনী: দাঁড়িকমা প্রকাশনী

মধ্যবিত্ত একক পরিবারের ছোট ছোট ঘটনাবলী এবং আমাদের সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন কুসংস্কারকে ভুল প্রমাণ করে একজন নারীর মা হওয়ার গল্প রচিত হয়েছে খাদিজা তুল কোবরা'র "অনেকটা বাধ্য হয়েই" উপন্যাসটিতে। উপন্যাসটি শুরু হয় সংলাপের মাধ্যমে যা পাঠককে নিমিষেই আকৃষ্ট করে।

ইরা আর আবীরের ছোট্ট সংসারের দুষ্ট-মিষ্টি খুনশুটিতে গল্পের শুরু। মান-অভিমান, রাগ-ক্ষোভ, সুখ-দুঃখ, সম্পর্ক কিংবা সংসারে বিদ্যমান ঘটনাবলী এই উপন্যাসের অন্যতম উপাদান। আর এই উপাদানগুলোর সমন্বয় ঘটিয়ে সংসারে শান্তি বজায় রাখে স্যাক্রিফাইজ নামক অন্যতম আরেকটি উপাদান। লেখিকার স্বার্থকতা ইরা আর আবিরের ছোট ছোট রোমান্টিক ব্যাপার গুলো খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখাটিতে। যা প্রশংসার দাবী রাখে। 

ইরা আর আবীরের সংসার ভালবাসায় পূর্ণ ছিল ঠিকই। কিন্তু বিয়ের দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও সন্তানের মুখ দেখতে না পাওয়ার আক্ষেপটাও ছিল মনের গহীনে। আমাদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজও তাদের এই দুর্বলতাকে আঘাত করতে ছাড় দেয়নি। স্বভাবসুলভ ভাবে পাশের ফ্লাটের ছোট্ট শিশু পুতুলকে আদর-স্নেহ করার ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তার মা। শুধু তাই নয়, পুতুলের বাবার আকষ্মিক এক্সিডেন্টের জন্যও তিনি ইরাকে দায়ী করেন। কারণ হিসেবে ইরার সাথে আঁটকুড়ে, বন্ধ্যা নারীর বিশেষণ জুড়ানো ছিল। আধুনিক চিন্তা সম্পন্ন হয়েও এই একটি কারণেই বাড়ীর মালিক তাদের বাড়ী ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছিল।
"গাও তোলো গাও তোলো কন্যা হে
কন্যা পেন্দো বিয়ের শাড়ি
এই শাড়ি পিন্দিয়া যাইবেন
তোমরা শ্বশুরবাড়ি কন্যা হে"
 ইরার চাচাতো ননদের বিয়েতে বিয়ে বাড়ীর এরকম বিভিন্ন গীত, গীত গিদালী মহিলা, বিভিন্ন আচার -আচরণ ও রীতিনীতির মাধ্যমে আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির বিয়ের একটি চমৎকার চিত্র উপস্থাপিত হয়েছে। ইরার হলুদ ছোঁয়ার বিষয় নিয়ে অমঙ্গল, কুমঙ্গল কিংবা হুলুস্থুল কান্ড আমাদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন বিশ্বাসকে তুলে ধরেছে। একই সাথে রাগ মানুষকে অনেক নিচে নামিয়ে ফেলে এবং ক্ষমা জীবনকে অনেক সুন্দর করে তোলে এ বিষয়টাও উঠে এসেছে দু-একটি ঘটনার মাধ্যমে।

আমাদের সমাজে কারোর সন্তান না হওয়ার দায়ভার বহন করতে হয় যেন নারীকেই। এ বিষয়ে শ্বশুরালয়ে বউকে খোঁটা দেওয়ার সীমা-পরিসীমা থাকে না। ইরার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। অবশ্য এসব কিছু আমলে না নিয়ে পুরো গল্পেই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে আবীর।

অবশেষে সমস্ত কুসংস্কারকে মিথ্যে প্রমাণ করে ইরা মাতৃত্ব লাভের গৌরব অর্জন করে। একজন নারী হওয়ার স্বার্থকতা লাভ করে। প্রথমবার সন্তানের শরীর ছুয়ে দেখে ইরা অসাধারণ হৃদয়ছোঁয়া একটি কথা বলে
 "মায়ের চোখে সন্তান কখনও অসুস্থ হয় না, সন্তানের শারীরিক ত্রুটি কখনও মায়ের চোখে পড়ে না।"
লেখিকার প্রথম বই হিসেবে দারুণ ছিল গল্পটি। তবে আরও একটু দীর্ঘায়িত করা যেত। আগামীতে তিনি আমাদের এরকম আরও অনেক সুন্দর সুন্দর গল্প উপহার দিবেন বলে আশা রাখি। বইটি পড়ার আমন্ত্রণ।

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।