একাকীত্বে পূর্ণতা ।। নিম্মি হক


ভালোবাসার আবার প্রকারভেদ হয় জানতাম না কখনো তবে যেদিন থেকে সন্ধ্যা পিসির বাড়িতে যাওয়া শুরু করলাম সেদিন থেকে এর নানান ব্যাখ্যা শুনতে থাকি। তখন সবেমাত্র এস.এস.সি দিয়েছি ওহ একটা কথা বলতে ভুলে গেছি সন্ধ্যা পিসি আমার বাড়ির পাশে থাকে বয়সে বড় হলেও সম্পর্ক ছিলো আত্মার। ছোট থেকে পিসির কাছে যাই একা মানুষ গল্প করার মত কাউকে পায় না জন্য সব কথা আমার সাথে। সেদিন পিসির কাছে গিয়েছিলাম আর যেতেই নারিকেল নাড়ু খেতে দিলো।
নাড়ু খেতে খেতে বলছি পিসি বিয়েটা এবার করে নাও কিন্তু বরাবরের মত পিসির সেই মলিন হাসি।আমাকে বলছে,
শারিরীক সম্পর্ক গড়ে উঠলে কি একজন মানুষকে ভুলে থাকা কষ্টকর হয়?মনের সম্পর্ক কি কিছু না।আমি তাকে ভুলতে পারিনি তাই বলে তার সাথে আমার শারিরীক সম্পর্ক ছিলো?
কি যে বলো পিসি এসব। আমি তোমাকে সেটা বোঝাতে চাইনি কতদিন একা থাকবে এবার তো নিজের কথা ভাবো।
আজ আমার কথা তোর এরকম মনে হলেও একটা সময় বুঝবি।
আমার বোঝার মত যথেস্ট বয়স হয়েছে আমি সব বুঝি। তুমি এবার বিয়েটা করে নাও এভাবে জীবন চলে না।
জীবনের আসল মানে বোঝাবি আমায়?
সব সময় এত হেয়ালি করো কেন?
জীবন মানে কি বুঝিস বল।
সংসার,মা-বাবা,ভাই-বোন,রিলেটিভ সবাই মিলেমিশে থাকায় জীবনের মানে।
হিহিহি এখনো অনেক ছোট তুই বড় হ তখন বুঝবি জীবন মানে কি।
উহু আমি যথেস্ট বড় হয়েছি আর আসল মানে বুঝি তুমি অযাথা এমন করছো জীবনের মানেটা আসলে অনেক বড়।
এই তো ঠিক বলেছিস জীবনের মানেটা অনেক বড়।সবাই তা বোঝে না আর যারা বোঝে তারা জীবনে খুব একটা সুখী থাকে না।যতটা বুঝেছিস এটা নিয়ে থাক জীবনে ভালো থাকবি যত গভীরে যেতে চাইবি ততো আঘাত পাবি হোচট খাবি কেউ এসে পাশে দাঁড়াবে না সবাই নিজেরটা বুঝে।যদি নিজের সমস্যা নিজে সমাধান করতে পারিস তবে তুই জীবনে সফল।
কি সব ছাইপাস বলো থাকো তুমি। আর আসবো না -

এরপর প্রায় ১০/১২ বছর পর বাড়িতে এলাম।পড়াশুনার জন্য বাহিরে থাকতে হয়েছে মাঝে মধ্যে এসেছি খুব কম সময় নিয়ে আর এরমধ্যে পিসির সাথে সেভাবে কথা হয়নি খোঁজ খবর রাখি নি।ইতিমধ্যে অনেক কিছু বদলে গেছে অনেক কিছুর মানে বুঝেছি। আজ আবারো পিসির কাছে এসেছি অনেক বছর পর এভাবে গল্প করছি।
পিসি একটা মানুষকে এতটা ভালোবাসো যে তার স্মৃতি নিয়ে আজো আগের মত আছো এতটুকু চেইঞ্জ হওনি। তোমাদের সম্পর্ক তো সেরকম স্থায়ী ছিলো না সব সময় ঝগড়া, কথা বন্ধ মান অভিমান চলতো কত ইগনোর সহ্য করছো তারপরো তাকে মনে রেখেছো।
সত্যি বলতে কি ভালোবাসা সময় বুঝে না,ভালোবাসা সেটা তো মনের ব্যাপার মন যাকে একবার দেয়া যায় তার সাথে কোন হিসাব আর যোগ হয় না তবে মন হচ্ছে এমন একটা প্রদীপ যা নিয়ে সব সময় সমস্যা সৃষ্টি হয়।

সন্ধ্যা পিসির সাথে যার সম্পর্ক ছিলো তার নাম ছিলো অয়ন। পিসির প্রেম ছিলো স্কুল জীবন থেকে তবে সেটা ছিলো ভালোলাগা আর এ ভালোলাগা পরবর্তী ভালোবাসায় পরিণত হয়। সন্ধ্যা পিসি গ্রামে থাকতো পড়াশুনার জন্য শহরে আসে আর সেখানে অয়ন নামে ভদ্রলোকের সাথে তার আলাপ। সে সময় শুধু সে ছেলের হাসি চলেফেরা কথা বলা আর চোখের চাহনি দেখে চুপি চুপি করে সন্ধ্যা পিসি প্রেমে পড়েছিলো।এরপর কলেজ গিয়ে তাদের মধ্যে একটা পরিচয় পর্ব হয় এবং সেখান থেকে বন্ধুত্ব। ভদ্রলোক বুঝতে পেরেছিলো পিসি তাকে পছন্দ করে কিন্তু সেটা কখনো বুঝতে দেয় নি দুজনের মধ্যে গ্যাপটা তখনো ছিলো কিন্তু পিসি একাকী সময়ে অয়নের কথা ভাবতো তাকে নিয়ে কল্পোনাতে ভেসে বেড়াতো। এভাবে চলতে চলতে একদিন তাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয় এবং এক পর্যায়ে পিসির বাড়ির লোক জেনে যায় আর তখনে পিসির জন্য বিয়ের প্রস্তাব আনে কারণ সে সময় প্রেম ভালোবাসা মানে একটা পরিবারের জন্য মান সম্মান নষ্ট করা অপমানিত হওয়া লোক সম্মুখে। বর্তমানের মত না যে, ঘরে ঘরে ছেলে/মেয়ে প্রেম করে বিয়ে করছে ঘটকের প্রয়োজনে হয়না। যাই হোক বাড়িতে জানতে পেরে পিসির বিয়ে ঠিক করে আর এদিকে পিসি সব কিছু ছেড়ে অয়নের হাত ধরে বেড়িয়ে আসে অজানা ভবিষ্যৎ এর দিকে।পিসি ভেবেছিলো কপালে যাই থাকুক যতটা দু:খ কষ্ট হোক ভালোবাসার মানুষটা সাথে থাকবে এটায় স্বার্থকতা।তার হাতে হাত রেখে হাসিমুখে পথ চলবে বাকি জীবন। এরপর পিসিকে নিয়ে ভদ্রলোক তার বাড়িতে গেলে কেউ মেনে না নেয়াতে পিসিকে নিয়ে চলে আসে আমাদের বাড়িতে আর তখন থেকে আজ অবদি পিসি এ গ্রামে আছে।আমার বাবার সাথে অয়নের ভালো সম্পর্ক থাকায় পিসিকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে উঠে এবং সে রাতে পিসিকে রেখে সেই যে ভদ্রলোক চলে গেলো আজ অবদী ফিরলো না। পরে অবশ্য চিঠিতে বাবাকে জানিয়েছিলো সে তার পরিবারের অমতে পিসিকে বিয়ে করতে পারবে না। পিসি যেনো তার বাবার কাছে ফিরে যায় সব কিছুর জন্য সে পিসির কাছে ক্ষমা চেয়েছে। ভালো মানুষ পিসি তাকে সহজে ক্ষমা করে দিয়েছে কিন্তু সে তার বাবার কাছে ফিরে নি কখনো অনেক কষ্টে একটা জব নিয়ে নিজে আমাদের বাড়ির পাশে বাড়ি করেছে। পিসির বাবা মারা গিয়েছে দূর থেকে মা,বোন,ভাইয়ের কান্না দেখেছে তবুও কাছে যায় নি।অনেকবার বলেছি পিসি নিজের পরিবারকে এভাবে কষ্ট দিয়ো না পিসা হেসে বলতো কষ্ট তো আমি নিজেকে দিচ্ছি। অনেক মানুষ পিসিকে অনেক কথা বলেছে।সেদিন আমার সামনেও এক ভদ্র মহিলা বলছে শারিরীক সম্পর্ক কতটা গভীরে ছিলো?

পিসি একটা কথা বলেছে সবাই শুধু শরিরীরের সম্পর্ক কুমারীত্ব যাচাই করে মনের সম্পর্ক মনের কুমারীত্ব কেউ যাচাই করে না সেটা তো পুড়ে ছাড়খার হয়েছে অনেক আগে সে খবর তো কেউ রাখে না তবে দেহের বিচার কেন করতে আসে সবাই?সেদিন পিসি বলেছিলো সম্পর্কটা একটা বীজ বৃক্ষের মত যে বীজ সুখের কারণ হতে পারে আবার কষ্টের। বীজটা যখন বড় হয়ে ডালপালা বিস্মৃত হয় শিকড় যেমন মাটির নিচে সীমানা ছড়িয়ে যায় সম্পর্কে গভীরতা তেমন একবার জায়গা দিয়ে দিলে যেমন হোক সেটা ধরে রাখতে হাজার লড়াই করে যেতে হয়।

আমার জীবনেও সেরকম একজন এসেছিলো আবার চলেও গেছে কিন্তু রেখে গেছে কিছু দাগ যা মলম লাগানোর পরো থেকে যায়। আজ জীবনের মানেটা সত্যি খুঁজে পাওয়া কঠিন সংসার মা,বাবা,ভাই,বোন নিয়ে জীবন নয়। জীবনের আসল মানে বুঝতে বুঝতে আমরা এক সময় মরণকে স্বগত জানাই তবুও বুঝতে পারি না। সন্ধ্যা পিসি হয়তো সমাজের কাছে দুশ্চরিত্র অপায়া সহ নানান কথার বোঝা নিয়ে বেড়াচ্ছে কিন্তু যে তাকে ছেড়ে গেছে এ দুশ্চরিত্র নাম দিয়ে স্বার্থের খোঁজে যে একজনের ভালোবাসা ত্যাগ এবং সম্মানকে অপমান করে গেছে তাকে কেউ মনে রাখবে না ফেলে আসা পিছনের কাহীনি কেউ শুনতে চায় না। একপক্ষের ভালোবাসা পিউর হলেও পূর্নতা থাকে না। এসব মানুষ দিয়ে যায় কখনো কিছু পায় না আর সমাজ সেটা তো শুধু শারিরীক সম্পর্কে ভিত্তি করে চলে একটা মানুষের মন ভালোবাসা তাদের ত্যাগ এগুলোকে লাথি মেরে আকাশে পাঠায় দেয়।

আজ আবারো পিসির কাছে যাচ্ছি "আর আসবো না তোমার কাছে " কথাটা মিথ্যা প্রমান করে জীবনের মানে বুঝতে।

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।