ভালোবাসার টান ।। বিপুল রায়

মনের ভিতর মানবিকতা আর ভালোবাসা থাকিলে, পরিস্থিতি যাই হউক না কেনে-- ভালোবাসা কুনোদিন, কুনো অংশে কম হয় না। নারী জাতির প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি আর সন্মান জানের মতন ক্ষমতা থাকিলে পুরুষ জাতি হয়া উঠে সর্বসুন্দর এক মহামানব।

বিষ্ণু উয়ার একে পাড়ার তপিতার রূপে পাগলা। সেই ছোটবেলা থাকি দেখি আইসেছে তপিতাক। উয়ার ভাল নাগা, না নাগা-- সবকিছুই ভালো করি জানে বিষ্ণু। ক্লাস ফাইভ ফেল সুন্দরী তপিতার অহংকার খানেক বেশী বুলি বিষ্ণু প্রেমের প্রস্তাব দ্যাং দ্যাং করিয়াও আর দ্যায় নাই।

মাস্টারি চাকরি পাওয়ার পর বিষ্ণু ভাবিল যে, প্রেমের প্রস্তাব দিলে হয়তো তপিতা ‘না’ করিবে না। কিন্তু সব স্বপ্নয় চুরমার হইল প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার পর। তপিতা বিষ্ণুর মুখের উপর ‘না’ করি দ্যায়।

হঠাৎ একদিন তপিতার মোবাইলোত ফোন আইসে অচিনা এক নাম্বারে। একজন অচিনা চেংরার গালার আওয়াজ শুনি তপিতা সাথে সাথে ফোন কাটি দ্যায়। সেদিন বারবার ফোন করিলেও কিন্তু তপিতা একবারের জইন্যেও আর ফোন তুলে নাই।

দুই দিন পর সেই নাম্বার থাকি আরও ফোন আইসে। তপিতা ফোন তুলিলে চেংরাটা যে কি কইল-- অনেক্ষণ চলে কথাবার্তা। ... তারপর প্রতিদিন সেই নাম্বার থাকি কল আইসে তপিতার মোবাইলোত। সেলা আর বিরক্ত হয় না তপিতা, বরঞ্চ প্রাণ খুলি কথা কয় ঘন্টার পর ঘন্টা। হয়তো তপিতা সেই চেংরার প্রেমে পড়ি গেইসে।

এর মইধ্যে বিষ্ণু তপিতার বাড়িত বিয়ার ঘটক পাঠাইলে তপিতার বাপ-মাও খুব খুশি হয়। কিন্তু, তপিতার তাতে কুনোরকম উৎসাহ দেখা যায় না। মাওয়ের আগত সরাসরি কয়, “মা, মুই বাড়ির গোরত বিয়া করিম না।”

তপিতার মাও কয়, “আরে পাগলি, বিষ্ণুর মইধ্যে কি এমন খারাপ আছে হাঁ? বাড়ির গোরত হইল তে কি হইল? চেংরাটা তো খুবে ভালো, স্কুলের মাস্টার-- ইয়ার বেশী তুই আর কি চাইস!”

 “মা, বুঝির চেষ্টা কর-- বাড়ির গোরত মুই বিয়া করিম না।”

“তুই আরও কত দূরত বিয়া করির চাইস হাঁ! যে না কপালখান ধরি আচ্চিস... এমন ঘর কি আর সবসমায় পাওয়া যায়!”

“দরকার নাই মা।”

“কি করিস কর! মাথাত উঠি গেসিস তুই! বিষ্ণু যে তোক পছন্দ করিসে-- সেইটা তোর ভাইগ্য তপিতা।”

“এমন ভাইগ্যের দরকার নাই মোর, মা।”... এংকরি মাওয়ে-বেটিয়ে নাগি গেল কেচাল। বিষ্ণুর ভাইগ্য খারাপ, নাকি তপিতার ভাইগ্য খারাপ-- সেইটা ভগবানে জানে।

 

যেই অচিনা চেংরাটার সাথে তপিতা ফোনত কথা কয়, সেই চেংরাটা নাকি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। চাকরিসুত্রে দুর্গাপুরোত থাকে। মাত্র কয়েক দিনের কথা-বার্তা তাতে তপিতা গলি গেইসে সেই চেংরাটার প্রেমে। দেখা নাই, জানা নাই-- একজনের প্রেমে আর একজন যে মাতোয়ারা হয়, সেইটা বোধায় এই মোবাইল না থাকিলে সম্ভব হইল না হয়।

তপিতা বিষ্ণুক উচিৎ শিক্ষা দিবার বাদে ধরি গেইসে শিলিগুড়ি বিগ বাজার। বিষ্ণুক কইসে, শপিং করির যাবে। কিন্তু আসলে তপিতার উদ্দেশ্য ছিল একেবারেই আলাদা। সেই চেংরাটা নাকি বিগ বাজার আসিবে, আর তপিতা উয়ার সাথে পালাবে বিগ বাজার থাকি।... চেংরাটাও কথার খিলাপ করে নাই। সমায় মতন উয়াও আসি উপস্থিত শিলিগুড়ি বিগ বাজার। বিষ্ণু একপাখে শপিং করে, তপিতা আর একপাখে শপিং করার আলে খুঁজে সেই চেংরাটাক। কিছুক্ষণের মইধ্যেই দেখা হয় দুইজনেরে। বিষ্ণু আপন মনে শপিং করে, এই সুযোগে তপিতা সেই চেংরাটার হাত ধরি বিগ বাজার থাকি বিরি দিল চম্পট।

অনেক্ষণ বিতি গেল, তপিতার দেখা নাই! ফোন নাগায় বিষ্ণু-- তপিতার ফোনও  সুইচ অফ। কি ক্যালেঙ্কারি কান্ড!... বিষ্ণু আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করিল। কিন্তু তপিতার খোঁজ পাইল না। বাইধ্য হয়া বেচারা একেলায় বাড়ি ফিরি আসিল।

তপিতার বাপ ঘটনাটা শুনি কয়, “হয়তো কুনো বন্ধু-বান্ধবের দেখা পাইসে বাবা। সমায় মতন আপনে ফিরি আসিবে। তুই খায়া-দায়া যাইস ফির। মুই কোনেক শালুগারা থাকি আইসোং।”

“সইন্ধ্যা যে হছে কাকু!”

“তুই না জানিসকে, উয়ায় কুনোটে গেইলে সইন্ধ্যা ছাড়া বাড়ি ফিরে না।”

“কিন্তু...”

“কিন্তু-টিন্তু ওইলা বাদ দেক। হাত-মুখ ধুইয়া খা আগত। মুই যাং, দেড়ি হছে।”... বিষ্ণু তপিতার বাড়িত খাওয়া-দাওয়া সারি, তপিতার বাড়ি ফিরির অপেক্ষাতে নইল। কিন্তু তপিতা ততক্ষণেও বাড়ি ফিরিল না বুলি বিষ্ণু বাড়ির ঘাটা ধরিল।

পরের দিন সকালে বিষ্ণু তপিতাক কল করে, কিন্তু তপিতার ফোন সেলাও সুইচ অফ! বিষ্ণু তপিতার বাপোক কল করি পুছিল যে, “তপিতা কতক্ষণ বাড়ি ফিরিসে?”... কিন্তু তপিতার বাপের ভাঙা গালা শুনি জানির পায় যে তপিতা হয়তো বাড়ি ফিরে নাই। বিষ্ণু ফটাফট চলি গেল তপিতার বাড়ি। তপিতার বাপ এমন ভাবে বিষ্ণুক কথা শুনাইল যে-- বেটি নিখোঁজের একমাত্র দোষি বিষ্ণুই। ততক্ষণে পাড়ার আরও অনেক লোকে আসি ভিড় জমাইসে তপিতার বাড়িত। শান্ত-শিষ্ট, সরল মনা একজন নিরিহ স্কুল মাস্টার বিষ্ণুর পক্ষে হয়া অনেকে তপিতার বাপের বিরুদ্ধে কথা কয়। বিষ্ণুও নিজেকে নিজে মনে মনে দোষি সাব্যস্ত করেছে। “মাত্র একটা চেংরির দায়ভার ঠিক মতন করি পালন করির পালুং না!”... এই ভাবি বিষ্ণু ছটফট ছটফট করি আছে।

তপিতার বাপ কয়, “বিষ্ণু, তোর কুনো দায়িত্ব-জ্ঞান আছে তো?”

“না, মানে কাকু হইসেটা কি...”

“তুই জানিস না, একটা চেংরিক সাথে ধরি গেইলে উয়ার সব দায়ভার নিজের উপর পড়ে।”

“তোমরা মোক ভুল ভাবেছেন কাকু!”

“ভুল! ভুল তো মোর সেলায় হইসে, যেলা তপিতাক তোর সাথে যাবার দিসুং!”

“তোমরা এইলা কি কছেন কাকু!”

“আজিকার মইধ্যে যুদি তপিতা ফিরি আইসে তো ভালো। আর না হলে তোর কপালোত দুঃখ আছে বিষ্ণু।”

“কাকু, চলো থানাত এফ.আই.আর করি আসি।”

“থানার কথা কয়া তুই ভালে কাজ করিলু। যুদি আজিকার মইধ্যে তপিতা না ফিরে, তাহলে কালি মুই তোর নামে থানাত কিডনাপিং কেজ দিয়া আসিম বিষ্ণু।”... ব্যপারটা কোটে থাকি কোটে পৌঁছাইল। দোষ করিল কায়, আর দোষি হইল কায়!

বিষ্ণুর মাথাত একটা বুদ্ধি আসিল। সাথে সাথে আরও বিগ বাজার আসি উপস্থিত। স্টাফরুম যায়া আগের দিনের ছিছিটিভির ভিডিও দেখির আব্দার করে। প্রথমে স্টাফ কর্তৃপক্ষ ভিডিও দেখাইতে নাকোজ করিলেও তপিতার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটা শুনি ভিডিও দেখায়। ছিছিটিভির ভিডিও দেখি তো বিষ্ণুর মাথাত হাত! ভিডিওত দেখা যায় যে, তপিতা নিজেই একটা চেংরার হাত ধরি বিগ বাজার থাকি বাইর হয়া চলি যায়! বিষ্ণু সেই ভিডিওখান নিজের ফোনত শেয়ার করি নিয়া বাড়ি ফিরে।

বাড়ির লোক ভিডিওখান দেখি অবাক! একটা চেংরি হয়া একটা চেংরার হাত ধরি....! বিষ্ণু ভিডিওখান গোপন করি তপিতার ফটোক ফেসবুকত পোষ্ট করি লেখি দ্যায়, “এই চেংরিটা বিতা কালি থাকি নিখোঁজ! নাম: তপিতা রায়। বাড়ি: শিলিগুড়ি, বিধান নগর। বয়স ২২ বছর। উচ্চতা: ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। দেহার রং: ফর্সা। কাহরো নজরত পড়িলে, দয়া করি নিচের দেওয়া নাম্বারোত যোগাযোগ করেন।”

বিষ্ণু তপিতার বাপোক ধরি বিধান নগর থানাত যায়া এফ. আই. আর করি আইসে। পুলিশ ঘটনাটা জানির চাইলে বিষ্ণু বিগ বাজারের কথাটা ধামাচাপা দিয়া কয়, “বিতা কালি থাকি তপিতা নিখোঁজ।” নিখোঁজের কারণ সম্পর্কে অনেক কিছু বানেচানে কয় বিষ্ণু। পুলিশ কিছু দিনের সমায় নিয়া তপিতাক খুঁজি বাইর করির আস্বাস দ্যায় উমাক।

ঘটনার পাঁচ দিন বিতি গেল, কিন্তু তপিতার কুনো খোঁজ পাওয়া গেল না! বিষ্ণুর মনত প্রশ্ন হয়, “আচ্ছা, তপিতা আসলেই কি স্ব-ইচ্ছায় চেংরাটার সাথে গেইসে? নাকি আরও অইন্য কিছু গল্প আছে? যুদিও বা স্ব-ইচ্ছায় যায়া থাকে, তাহলে তো এতদিনে একবার ফোন করি জানাইল হয়, কোটে আছে।”... এমন সমায় বিষ্ণুর মোবাইলোত অচিনা একটা নাম্বার থাকি কল আইসে। বিষ্ণু কল রিসিভ করে। কথা কইলে জানির পারে, কলকাতা থাকি কুনো একজন অচিনা লোক কল করিসে। বিষ্ণু পুছে, “কার সাথে দরকার?”

অচিনা লোকটা কয়, “নাম্বারটা ফেসবুকে পেলাম। আমার এক বন্ধু শেয়ার করেছিল, আপনার কেউ একজন নিখোঁজ!”

বিষ্ণু খুব উৎসাহ নিয়া কইল, “খোঁজ পেয়েছেন?”

“হ্যাঁ, খোঁজ তো পেয়েছি। কিন্তু...”

“কি কিন্তু স্যার? বলুন বলুন-- আপনি চিন্তা করবেন না। আপনাকে আমরা অবশ্যই কিছু গিফ্ট করবো।”

“না দাদা, আমি গিফ্টের কথা বলছি না। কথাটা হলো, আমি যাকে দেখেছি, সে আপনার হারিয়ে যাওয়া আপনজন কি না জানি না। কিন্তু দেখতে হুবহু আপনার দেওয়া ছবিটার মতোই।”

“কোথায় দেখেছেন স্যার?”

কি করে বলি, বলুন তো!”

“আরে, বলুন। প্লিজ স্যার...”

“আচ্ছা, বলছি-- গতকাল আমি আমার হারিয়ে যাওয়া বোনের খোঁজ করতে গিয়ে কলকাতার এক যৌন পল্লীতে দেখেছি দাদা! খুব কান্নাকাটি করছিল। দেখেই মনে হচ্ছিল, মেয়েটা সেখানে স্ব-ইচ্ছায় যায় নি। তাকে সেখানে বন্দী অবস্থায় রাখা হয়েছে!”... লোকটার এইলা কথা শুনি বিষ্ণুর চোখুর জল টোপটোপে মাটিত পড়ে।  না, এই চোখুর জল একমাত্র উয়ার ভালোবাসার মানষির বাদে না হয়, সমাজের একজন নিষ্পাপ নারীর বাদে। যার ফুলের মতন জীবনটা অকালেই ঝড়ি পড়ার পথে।

বিষ্ণু কইল, “আচ্ছা স্যার, আমি কাল সকাল দশটার মধ্যেই কলকাতা আসছি, আপনি কি আমাকে একটু সহযোগীতা করবেন?”

 “আ.. আমি!”

“প্লিজ স্যার, ‘না’ করবেন না।”

“কিন্তু, আমি যে...”

“স্যার, আপনার এই সহযোগীতা একটি মেয়ের জীবন বাঁচাতে পারে। প্লিজ স্যার...”

কিছুক্ষণ পর লোকটা কইল, “আচ্ছা আচ্ছা, চলে আসুন।”... লোকটারটে পুরা ঠিকানা নিল বিষ্ণু। একজন একবাকিয়া, ভাব মারা চেংরি, যায় উয়ার মুখের উপর বিয়ার প্রস্তাবে ‘না’ করি দিসে-- সেই নাখান একটা চেংরির বাদেও বিষ্ণু এতকিছু করেছে। আসলে সেলা বিষ্ণুর নজরোত তপিতার অহংকার, জেদ-- এইলা পড়ে নাই। সেলা উয়ার মনত একটায় ভাবনা, যে কুনো প্রকারেই হউক একজন নারীর জীবন রক্ষা করাটা একধরনের দায়িত্ববোধ।

বিষ্ণু সাথে সাথে বিধান নগর থানাত যায়া ব্যপারটা খুলি কয়। পুলিশ বিষ্ণুক সব ধরনের সহযোগীতা করিবে বুলি আস্বাস দ্যায়। সাথে থানার দুইজন পুলিশও বিষ্ণুর সাথে কলকাতা যাবার প্রস্তুতি ন্যায়। থানার দারোগা সাহেব কলকাতা পুলিশের সাথে ব্যপারটা নিয়া আলোচনা করিলে, সহযোগীতা করিবে বুলি আস্বাস দ্যায় কলকাতা পুলিশও।

বাড়ির কাহক্কো না জানে বিষ্ণু তপিতার খোঁজত কলকতার পথে যাত্রা শুরু করিল। পরের দিন সকাল দশটার মইধ্যে বিষ্ণু আর পুলিশ দুইজন শিয়ালদহ স্টেশনোত নামে। সাহাইয্যকারী সেই লোকটাও সমায় মতন স্টেশন আসি হাজির। কুনোরকম সমায় নষ্ট না করি, চাইরোজনে কলকাতা পুলিশোক সাথে নিয়া চলি যায় জাগামতন। বিষ্ণু দ্যাখে তোতকোরায় তপিতাক অনেক কষ্টে রাখিসে যৌনপল্লীর এক যৌনকর্মী। বিষ্ণুক দেখি তপিতার চোখুর জল গলগলে ঝরি পড়েছে। কলকাতা পুলিশ নিশা গুপ্ত নামের সেই যৌনকর্মীক পাকরাও করে। সাথে দুইটা গরম গরম চড় কষে দিয়া জিজ্ঞাসাবাদ করে, “তপিতাক কায় এটে আনি দিসে?”... তার উত্তরে পুলিশ জানির পারে যে, শিলিগুড়ি চম্পাসারির এক যুবক এই কাজ করি দিসে। ইয়ার আগতও এমন বহু কাজ নাকি করি দিসে ওই যুবক! চেংরিগিলাক প্রেমের জালোত ফাঁসে নাকি ওই যুবক এমন কাজ করে! যুবকের ছবি সহকারে তার সব বর্ণানা পুলিশোক দ্যায় নিশা। কলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করে যৌনকর্মী নিশাক।

বাড়ি ফিরার পথে সাহাইয্যকারী লোকটাক বিষ্ণু একখান চেকবুক নিকিলি দিয়া কয়, “স্যার, আপনি আমাদেরকে অনেক সাহয্য করেছেন। আপনি না থাকলে হয়তো...! আপনার এই সহযোগীতার কথা আমি কোনোদিন ভুলতে পারবো না। এই নিন চেকবুক, আমাদের তরফ থেকে পুরস্কার স্বরূপ আপনার যত খুশি লিখুন।”

 “লজ্জা দেবেন না দাদা। এটা আমার কর্তব্য। তার পরিবর্তে আপনি দোঁয়া করবেন, আমিও যেন আমার হারানো বোনকে খুঁজে পাই।”

বিষ্ণু কয়, “ভগবান আপনার বোনকে নিশ্চই ফিরিয়ে দেবেন স্যার। আর হ্যাঁ, কোনোদিন যদি আমাদের উত্তরবঙ্গে আসেন, আমাকে অবশ্যই জানাবেন। উত্তরবঙ্গে আপনাকে সহযোগীতা করার পুরো  দায়ভার আমি নিলাম।”

“অবশ্যই দাদা। আমি আসব, আপনার অপরূপা উত্তরবঙ্গে অবশ্যই আসব।”

“তাহলে আমরা আসি স্যার।”... এই কয়া বিষ্ণু আর তপিতা লোকটার পাও ধরি ভক্তি দিয়া ফিরতি ট্রেনোত চড়ে।

বিষ্ণু তপিতাক সাথে নিয়া ফিরি আইসে শিলিগুড়ি। বিধান নগর থানার পুলিশ খুব তাড়াতাড়ি অপরাধীক গ্রেফতার করিবে বুলি জানায়। বিষ্ণুর এই মহৎ কাজ দেখি তপিতার বাড়ির লোক সহ গোটায় পাড়ার লোক খুব খুশি।

সেদিনে বিষ্ণু আরও তপিতার বাপোক কয়, “কাকু, তপিতার যুদি আপত্তি না থাকে, তাহলে মুই কালি উয়াক বিয়া করির চান্দাং।”

তপিতার বাপ হুট করি এই মুহুর্তে কি কবে ভাবি পাছে না। তাও কইল, “এইটা তো হামার সৌভাইগ্য বিষ্ণু।”

 “না কাকু, তপিতারও মতামত জানার দরকার আছে।”

বিষ্ণুর সেই আগিলা অটুট সিদ্ধান্তের কথা শুনি তপিতা হাউহাউ করি কান্দন জুড়িল। ভাবেছে তোতকোরায় উয়ায় খুব ভাইগ্যবতী। এতকিছুর পরেও যে বিষ্ণু উয়াক আপন করি নিবার বাদে হাত বাড়াইসে, সেইটা হয়তো আর অইন্য কাহ করিল না হয়।

পরের দিনে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ার বাজার করা হইল। সাগাই-সোদর নিমন্তন করা হইল ফোনতে। এই সংক্ষিপ্ত সমায়ে যতকেনা সম্ভব আয়োজন করি ঘরের লক্ষ্মী ধরি আসিল বিষ্ণু।

বাসর ঘরত বিষ্ণু কয়, “তপিতা, যতয় ঝড়-ঝঞ্ঝাট, বাধা-বিপত্তি আসুক না কেনে এইবার আর তোক কাহ কুনোদিন মোরটে থাকি ছিনি নিবার পাবে না।”... তপিতাও বিষ্ণুর বুকোত মাথা রাখি একটা নয়া জীবনের স্বপ্ন দ্যাখে।

তারিখ: ৩১.০৭.২০২০

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।