গতরাতে
ঘুমের মধ্যে বেশ ছটফট করছিল নাজিমুদ্দি। এমন ছটফটানি যে কোনো গোবর খোঁদলে
একটি নিরীহ মুরগী পড়লে গলা পর্যন্ত ডুবে যাওয়া নিশ্চিত জেনে বাঁচার জন্য যে
শেষ চেষ্টাটা করে পা আর পাখনা ছুড়াছুড়ি করে, নাজিমুদ্দিও গতরাতে এমন
করছিলো নাকি! তার স্ত্রী রাশেদা বানুও বেশ বিচলিত হয়েছিল তার স্বামীর ঘুমের
মধ্যকার এমন কান্ডজ্ঞান দেখে। এমনিতেই নাজিমুদ্দির দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী
রাশেদা; দরদ-তরদ তার আর আগের মত উতলিয়ে উতলিয়ে ওঠেনা। সারাজীবন সহ্য করে
করে এখন গা জ্বালা করে। কিল লাথি আর গুতো এখন আর সহ্য না করে মাঝে মাঝে
দু'য়েক লাথি মারতে মন চায় তার। তবে সে প্রকাশ্যে আর স্বজ্ঞানে তা পারেনা।
হাজার হোক, স্বামী বলে কথা! তবে ঘুমের মধ্যে -নাক ডেকে ঘুমানো স্বামীকে কিল
লাথি দেওয়া অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। গভীর ঘুমের সময় নাজিমুদ্দির নাসিক্য
ইঞ্জিনটির নজেল প্লাঞ্জার আর পিষ্টনে পর্যাপ্ত ডিজেল মেখে যে ভডভডি
শব্দমালা তৈরি হয়, সে সময় এই কিল গুতোকে সাইলেন্সার বানিয়েই রাশেদার ঘুমটা
হয় আর কি! তো কী এমন হয়েছিলো গতরাতে? কেনই বা রাশেদা এত বিচলিত ছিলো
নাজিমুদ্দির উপর? আর নাজিমুদ্দিরই বা কেন এমন ছটফটানি ছিল?
গতরাতে
ঘুমের মধ্যে নাজিমুদ্দি খালি আহ! উহ! করছিল আর তার স্ত্রী রাশেদাকে জড়িয়ে
ধরে বলছিল, ‘আপনেরা যাইবেন না। আপনেরা থাকবেন।' আবার গতরাতের ঐ ঘটনার একটুও
‘টুশব্দ’ পর্যন্ত করেনি নাজিমুদ্দি। এমনকি এই কথা তার স্ত্রীকেও তিনি
বলছেন না। না বলার কারন হয়তো হতে পারে যে ভালো স্বপ্ন দেখলে নাকি কাউকে
বলতে হয়না। বললে সে স্বপ্ন সত্যি হয়না। নাজিমুদ্দি স্বপ্নে দেখে সে রিকসা
চালাতে চালাতে গোবর গাদায় রিকসা ফেলে দিয়েছে। আশেপাশে এমন কোনো মানুষ জীব
জানোয়ার মুরগী টিকটিকি তেলাপোকা বাঘ শেঁয়াল কাক টিয়া – কিছুই নেই যে
নাজিমুদ্দি আর তার রিকসাকে উদ্ধার করে ডাঙায় তুলবে। এদিকে ডুবতে ডুবতে
নাজিমুদ্দির গলা পর্যন্ত গোবর আর চুনা মিশ্রিত খিচ পানি চলে এসেছে।
স্বপ্নের মধ্যে তিনি মা গো বাবা গো বলে চিৎকার করছে! কিন্তু তার মা, বাপ;
কেউ আসলো না। কেউ যখন না এলো কিছুক্ষন পরে নাজিমুদ্দি দেখে তার নাকের ডগায়
একটা গুবরে পোকা কিলবিল কিলবিল করছে। এইবার নাজিমুদ্দি আরো বেশি ভড়কে যায়।
এরপর সে পুলিশ আর্মি বিজিবি আনসার লাঠিয়াল কতোয়াল চৌকিদার – সবাইকে ডাকতে
থাকে। এমনকি বস্তির আতিনেতা পাতিনেতা কাউন্সিলর থেকে মেয়র – তারাও কেউ
আসেনা। ইতোমধ্যেই আকণ্ঠ পর্যন্ত গোবর গাদার গুবরে পোকায় ছেয়ে গেছে
নাজিমুদ্দির পুরো দেহ। এমন সময় নাজিমুদ্দি দেখে দেহ আর মস্তকবিহীন সাদা
পোষাক পরিহিত একদল দেবদূতগণ গোবর গাদার পাশ দিয়ে যাচ্ছে। আর তারা গোবরের
গন্ধে ছি: ছি: বলে পবিত্র থুথু ফেলে যাচ্ছে। একসাথে ক'য়েকজন দেবদূতের
পবিত্র থুথু নাজিমুদ্দির নাকের উপরে পড়ে। নাজিমুদ্দি তখন দেখে যে পুরো গোবর
গাদা একটা বিশাল বিল হয়ে গিয়েছে আর তার সেই রিকসার ছই থেকে একটি নৌকা
হয়েছে, হাতল থেকে একটি লাঙল হয়েছে! আর রিকসায় আঁকা যে গোলাপ ফুল ছিল, তা
সত্যিকার অর্থেই গোলাপ ফুল হয়েছে। একজন পীর সেই ফুলের কাছে বসে আছে। এমন
স্বচ্ছ জলের বিল হলেই বা কী হবে! বিলের মধ্যে ধানক্ষেতও রয়েছে। আর এই কারনে
গরমও লাগছে। তাই নাজিমুদ্দি চিন্তা করলো একটা পাখা পেলে ভালোই হতো। এমন
সময় একজন দরবেশকে দেখা গেল পাখা নিয়ে নাজিমুদ্দির কাছে আসতে। এরপর
নাজিমুদ্দি নৌকায় চড়ে চড়ে সারা বিল ঘুরে ঘুরে অনেক বড় একটা মাছ ধরলো। বড়
মাছ ধরে সে বেজায় খুশি। তার মনে এই মাছ পরিমাপ করার সখ হলো। তাই সে খুঁজে
খুঁজে পাকিস্তানি আমলের দাঁড়িপাল্লা পেলো। কিন্তু নাজিমুদ্দি সেই
দাড়িপাল্লায় মাছ ওজন করলো না। তবে অন্য উপায়ে যেই মাছটি মাপ দিতে যাবে –
এমন সময় দেবদূতগণ নাজিমুদ্দিকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে গিয়েছে। তাই নাজিমুদ্দি
বলেছিলো, ‘আপনেরা যাইবেন না।'
নাজিমুদ্দি
তার বউকে কিছু না বলেই খালি এদিক-ওদিক করছে। মনে আফসোস নিতে নিতে সে রিকসা
নিয়ে বের হয়ে যায়। নাজিমুদ্দি ঢাকা শহরে রিকসা চালায়। কমলাপুর থেকে
মালিবাগ, মালিবাগ থেকে রামপুরা, রামপুরা থেকে বাড্ডা, বাড্ডা থেকে বারিধারা
- সব তার মুখস্ত। আবার ঐদিকে মতিঝিল থেকে গুলিস্তান, গুলিস্তান থেকে
আজিমপুর, আজিমপুর থেকে নিউমার্কেট, কলাবাগান,কল্যাণপুর, গাবতলী, মিরপুর –
সব তার চোখের পাতায় থাকে। কোনো প্যাসেঞ্জার যদি মুখ ফুঁটে কোনো স্থানের নাম
বলতে চাই, প্রথম ‘সিলেবল' এর উচ্চারণ শুনলেই নাজিমুদ্দি পকপক করে পুরোটা
বলে ফেলতে পারে। ঢাকার উত্তর থেকে দক্ষিন আর পূর্ব থেকে পশ্চিম – সব
জায়গাতেই তার রিকসার চাকা ঘোরে; চিপাচুপা গলি দিয়ে ঢোকে। আর সে ফাঁক-ফোঁকড়
পেলে ট্রাফিক দারোয়ানের পকেটে দশ টাকার একটা নোট গুঁজে দিয়ে তার রিকসা
ঢাকা শহরের বড় বড় আর প্রশস্ত রাস্তায় চালিয়ে দেয়।
সারা
সকালে রিকসা চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে সে যখন বনানীর ওভার ব্রিজের কাছে তার
রিকসা নিয়ে আসে, তখন নাজিমুদ্দি ফুতপাতে রিকসা দাঁড় করিয়ে একটু ঝিমিয়ে যায়।
এতে তার নিজেরও ক্লান্তি দূর হয় আর রিকসাটারও জান বাঁচে। যাহোক, একটুখানি
ঝিমানোতেই সে আবার স্বপ্ন দেখতে থাকে।
নাজিমুদ্দি
স্বপ্নে দেখে যে, সে বিশাল এক রাস্তার ধারে বসে আছে। পুঁজিপতিদের চাকর-বাকর
ট্রাফিক পুলিশ এসে নাজিমুদ্দিদের নিতম্বে ডান্ডার বাড়ি দিচ্ছে। এত জোরে
জোরে বাড়ি দিচ্ছে যে নিতম্ব আর উরুতে রীতিমত লাল দাগ পড়ে গিয়েছে। মাঝে মাঝে
নিতম্বের গোশত ফেঁটে রক্ত বের হচ্ছে। শুধু তাই নয়, তাদের রিকসা ভেঙে
গুড়িয়ে দিয়েছে রাস্তার জমিদারেরা। নাজিমুদ্দি শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছেনা।
খালি আকু-পাকু করছে। শুকনো গলায় মাগো আর বাবাগো বলেও কেউ আসছে না।
সমাজকর্মী, এনজিওকর্মী, আতিনেতা, পাতিনেতা, বস্তির বলীয়ান দাদা ভাই মামা
খালু দুলাভাই শ্বশুর শালা সম্মন্ধি – কেউ না। এমন সময় নাজিমুদ্দি দেখে ঢাকা
শহরের উপর দিয়ে একদল দেবদূত যাচ্ছে। নাজিমুদ্দিদের এই অবস্থা দেখে
দেবদূতগণ আতর আগরবাতি আর সুগন্ধি ছড়িয়ে দিয়ে ঢাকা শহরকে সুবাসে ভরিয়ে
দিয়েছে। এমন সুগন্ধির গন্ধ পেয়ে ঢাকা শহরে আমলা থেকে কামলা, শিল্পপতি থেকে
শ্রমিক, রাজনীতিবিদ থেকে ছাত্রসমাজ, গার্মেন্টস কর্মী থেকে গার্মেন্টস
মালিক, বাড়ির মালিক থেকে ভাড়াটিয়া আর গণভবন থেকে বঙ্গভবন – সব জায়গা থেকে
ঝাঁকে ঝাঁকে লোক আসছে আর দেবদূতদের ছেটানো গন্ধ সুবাস গায়ে মাখাচ্ছে। এমন
সুবাস যে বুড়িগঙ্গা তুরাগ হাতিরঝিল – এইসব জায়গার পানিতে আর দুর্গন্ধ নেই,
খালি সুভাষিত গন্ধ আর গন্ধ! কামরাঙ্গী চরের চামড়া পচা গন্ধ আর নেই, নেই
বস্তির টাট্টিতে গু'য়ের গন্ধ। দেবদূতদের ছড়ানো আতর গোলাপ আর আগরবাতিতে সব
গন্ধ চলে গিয়েছে। নিজামুদ্দি আরও দেখছে যে দেবদূতগণ রাস্তার পাশে বড় বড়
শপিংমলে নিজামুদ্দিদের রিকসা রাখার জন্য পার্কিং করে দিয়েছে। নিজামুদ্দিরা
বড় বড় সাহেব আর মেম সাহেবদের গাড়ির ড্রাইভারদের মত কদর পাচ্ছে। এত কদর যে
শপিংমলের দারোয়ানরা নাজিমুদ্দিদের হালুয়া রুটি খেতে দিচ্ছে, কদবেল হাতে
ধরিয়ে দিচ্ছে আর নাজিমুদ্দিরা সেটা কাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বের করছে আর
খাচ্ছে, ঝালমুড়ি পাচ্ছে আর খাচ্ছে – নাজিমুদ্দিরা এইগুলো খাচ্ছে আর তাদের
প্যাসেঞ্জারেরা দিব্যি প্রয়োজনীয় কাজ সারছে, মজামাস্তি করছে। পরে আবার তারা
ফিরে আসলে নাজিমুদ্দিরা আবার রাস্তায় আর চিপাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এমন
স্বপ্ন দেখতে দেখতে নাজিমুদ্দির নিতম্বে ট্রাফিক পুলিশের ডান্ডার বাড়ি পড়ে।
‘শুয়োরের বাচ্চা। রাস্তা কি তোর বাপের নাকি? রাস্তার পরে রিকসা লইয়া শুইয়া
আছোস' – এই চিৎকার করতে থাকে একজন ট্রাফিক পুলিশ। ট্রাফিক পুলিশ এমনভাবে
নাজিমুদ্দিকে তাড়াতে থাকে মনে হয় যেন তার নিজের বাপের রাস্তা। আর তা
পরিষ্কার করার দায়িত্ব তার হাতে। সে যাক গে সে কথা। ডান্ডার বাড়ি খেয়ে
তড়িঘড়ি করে রিকসা নিয়ে পালিয়ে যায় নাজিমুদ্দি। পরে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেশ
লম্বা ক'য়েকটা ভাড়া মেরে আবার বস্তির ঘরে ফেরে নাজিমুদ্দি।
ঘরে
ঢুকেই বেশ বিচলিত হয় নাজিমুদ্দি আর মনে মনে ভাবতে থাকে ‘দেবদূতগণ আর
কিছুক্ষণ থাকলেই শান্তি পেতাম।' নাজিমুদ্দি হাত-মুখ ধুয়েই খাওয়ার জন্য পাগল
হয়ে যায়। এমন পাগল সে রাতের খাবারের আগে কোনোদিনই হয়নি। রাশেদা ভাত চুলায়
বসিয়েছে কেবল। ভাত না পেয়ে চোখে মুখে আগুন নিয়ে নাজিমুদ্দি বলে, ‘সারাদিন
করছটা কি রে মাগি?' স্বামীর এমন কথা শুনে আকাশ থেকে না পড়লেও বেশ ভড়কে যায়
রাশেদা। ‘যেই মানুষড্যা আন্ধার রাইত না হলে খায়না, সেই মানুষ আজ এমন করে
ক্যান! গতরাতেও ক্যামন জানো করছিলো!’ – এই বলে আফুঁটা ভাতের মাড় ঝরিয়ে ভাত
খেতে দেয় নাজিমুদ্দিকে। ভাত খেয়েই নাজিমুদ্দি শুতে যাবার জন্য উতলা হয়ে
যায়। টয়লেট আর প্রসাবের বেশ চাপ থাকা সত্বেও সেগুলো নিয়েই সে বিছানাতেই
যায়। আর বিছানাতে যেতেই সে ঘুমিয়ে যায়।
সে ঘুমের
মধ্যে স্বপ্ন দেখে যে সে রিকসা চালাতে চালাতে ঢাকা শহরের বড় বড়
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে। সে ঘুরে ঘুরে দেখছে আর শান্তির নি:শ্বাস
ফেলছে। এমন সময় সে দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ভাইয়েরা একে অপরের সাথে
লাঠালাঠি করছে। কেউ লাঠি, আবার কেউ চাপাতি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। আবার কারোর
কারোর হাতে পিস্তলও আছে। নাজিমুদ্দির ভয়ে এমন অবস্থা হচ্ছে যে মনে হয় তার
আটকে রাখা টয়লেট একেবারে হালিশ নাড়ীর কাছে এসে ঠেকেছে। ভয়ে থরথরিয়ে কাঁপছে
সে। তার এমন এই কাঁপাকাঁপির সময়ে সে দেখে যে আকাশ থেকে সেই দেবদূতগণ উড়ে
এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে নেমেছে। দুই পক্ষের মারামারির মধ্যে তারা নেমে ছাত্র
ভাইদের থামতে বলে। দেবদূতগণের সাদা ধবধবে পোষাক দেখে ছাত্র ভাইয়েরা থেমে
যায়। তারা নিজেরাও বিশ্বাস করে যে স্বর্গীয় অধিকর্তার আদেশেই দেবদূতগণ
এসেছে/বেহেশত থেকে ফেরেশতারা নাযিল হয়েছে – তাদের এই ভ্রাতৃত্বপূর্ণ
সম্পর্ককে ঠিকঠিক করার জন্য। ছাত্র ভাইয়েরা মারামারি বন্ধ করে দেয়। হলের
সিটের জন্য তারা আর ভাইয়ের পেছনে পেছনে ঘোরেনা। ভাইদের চাপে তারা আর
মতাদর্শের বুলি শেখে না। একটা মতাদর্শের দীর্ঘমেয়াদি সনদ পাওয়ার জন্য তারা
আর লাখ লাখ টাকাকড়ি গুছায় না। দেবদূতগণ এসে এক পলকেই অনেকগুলো হল বানিয়ে
দেয়, বিভিন্ন মতাদর্শের বই পত্রে ভরিয়ে দেয়। তারপর থেকে ছাত্র ভাইয়েরা খালি
আদর্শ শেখে আর শেখে। কোনা মারামারি টারামারি আর নেই। পুরো
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খালি শান্তি আর শান্তি! এমন শান্তিতেও নাজিমুদ্দির মন
ভরে না। এমন সময় এক দেবদূত নাজিমুদ্দির কান ধরে বলে, ‘কি রে? তোর মুখে হাসি
নাই ক্যান?’ নাজিমুদ্দি কাচুমাচু খেয়ে বলে, ‘শান্তি তো হইলো! তয় ভার্সিটির
পণ্ডিতগণ আর অফিসাররা তো খালি কামড়া-কামড়ি করে। পণ্ডিতগণ খালি তাদের
পরিবারের সব অযোগ্য সদস্য নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজেদের ঘর বানিয়ে
ফেলতে ব্যস্ত।তাগের লাইগা কিছু করন যায় না?’ নাজিমুদ্দির এমন কথা শুনে
দেবদূতগণ এক মুহুর্তেই পণ্ডিতদের পরিবারের সবাইকে মেধাবী বানিয়ে দেন,
পণ্ডিতদের বেতন দ্বিগুন করে দেন, এখন আর তারা প্রাইভেটে ক্লাশ নেয়না,
পরিবারের লোক আর আত্মীয়দের নিয়োগ দিতে কামড়াকামড়ি করেনা, সবাই অটো প্রমোশন
পায়। এইজন্য আর স্টান্ড বাজি করা লাগবে না, কাউকে ‘প্যাক্ট’ করা লাগবে না।
তাদের উপর বিশেষ বিশেষ গোত্রের কোনো প্রভাব থাকবে না। নাজিমুদ্দি এইবার
বলে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পণ্ডিতগণ আর ছাত্র ভাইয়েরা ঠিক থাকলেই হয়বো। দ্যাশ
বাঁচবো, দ্যাশে জ্ঞানী জ্ঞানী লোক তইর হইবো।'
নাজিমুদ্দি
স্বপ্নে আরও দেখতে পান যে ফাইলের কাজ করার জন্য ভার্সিটির অফিসারেরা আর
গড়িমসি করেনা, নতুন নিয়োগের সময় তারা আর ‘ইজম ইজম’ খেলেনা, টাকা খেয়ে কাউকে
নিয়োগ দেওয়ার জন্য লাফালাফি করেনা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খালি সুখ আর সুখ।
এমন সুখ নাজিমুদ্দি আর দেখেনি কোনো দিন! এমন স্বপ্নে যখন নাজিমুদ্দি সময়
পার করছে, সেই সময় নাজিমুদ্দি দেখে একপাল কাক এসে তার মাথায় হেগে দিচ্ছে।
নাজিমুদ্দি রাগে আর ক্ষোভে ফুলতে থাকে। রাগে তার শরীরের এমন অবস্থা হয়েছে
যে সে চাইলেই মাথা নিচের দিকে দিয়ে আকাশের দিকে পা দিতে পারছে, কাকের মত
উড়তে পারছে। এমন সময় নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে উপর দিকে পশ্চাতদেশ
দিয়ে নাজিমুদ্দি হাগতে থাকে। নাজিমুদ্দির গু এত দুর্ঘন্ধ ছড়ায় যে সব কাক
পালিয়ে যায়। ‘যাক! কাক তো পালাইছে' – এই কথা বলতেই নাজিমুদ্দির ঘুম ভাঙে।
ঘুম
ভাঙার পরে সে দেখে যে তার পরনের লুঙ্গি আর খ্যাতা কাপড় একেবারে
‘ল্যাটাপ্যাটা’ হয়ে গেছে। লজ্জায় লজ্জাবতী হয়ে নাজিমুদ্দি ল্যাপ খ্যাতা আর
পরণের লুঙ্গিখানা নিয়ে সে বস্তির কলের দিকে যায়। এমন সময় ছেলে মেয়েকে
খাবার দিয়ে ঘরে ঢোকে রাশেদা বানু। ঘরেই ঢুকেই সে নাক বন্ধ করে ওয়াক! ওয়াক!
বমি করে। বমি করতে করতে জ্ঞান হারিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায় রাশেদা।। ছেলে মেয়ের
জানাজানি হওয়ার আগেই ঘরের মেঝের উপর বউয়ের বমি আর নিজের লুঙ্গি খ্যাতা
পরিষ্কার করতে ছুটে যায় নাজিমুদ্দি। এইসব পরিস্কার করতে করতে নাজিমুদ্দি
আবার জাগনা স্বপ্ন দেখে।
এইবার
সে জাগনা স্বপ্নে দেখে যে একটি আবদ্ধ বাড়িতে একটি মেয়ে চিৎকার করছে।
চিৎকার শুনে এমন মনে হচ্ছে যে মনে হয় কেউ ধর্ষিত হচ্ছে। নাজিমুদ্দি ক'য়েক
পা এগিয়ে দেওয়ালে কান পাততেই নিশ্চিত হয় যে বস্তির কানকাটা ছব্দুল তার
পনেরো বছরের নিজ শালিকা রহিমাকে জোর করছে। রহিমার চিৎকারে আশে পাশের কোনো
মানুষ জনই তাকে উদ্ধার করতে যাচ্ছেনা। নাজিমুদ্দির নিজেরও কোনো শক্তি
হচ্ছেনা – সেই মেয়ের পাশে দাঁড়ানোর কেননা কানকাটা ছব্দুল হচ্ছে কাউন্সিলরের
একেবারেই খাস লোক। এদিকে ঐ মেয়েটি যেমন ধর্ষিত হচ্ছে, অন্যদিকে একদল
চোরাচালানী দেশ থেকে সব টাকা, সোনাদানা – আশে পাশের দেশ ইন্ডিয়া থেকে শুরু
করে পাকিস্তান নেপাল ভুটান ইংল্যান্ড সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে পাচার
করে নিয়ে যাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে নাজিমুদ্দি আরও দাপাদাপি করে। একদিকে ধর্ষণ
আর আরেকদিকে অর্থপাচার - দু'টো দেখেই নাজিমুদ্দি আহাজারি করছে।
নাজিমুদ্দির এমন আহাজারি দেখে সুদূর স্বর্গ থেকে আবার দেবদূতগণ আসেন।
নাজিমুদ্দি এই জাগনা স্বপ্নে আরও দেখেন যে দেবদূতগণ দেশের সব ধর্ষকদেরকে
খোজা করে দিয়েছে। আর অর্থপাচারকারীদের জন্য দেশেই ক'য়েকটা ব্যাংক খুলে
দিয়েছে যাতে তারা কালো টাকা রাখতে পারে। এই দেখে নাজিমুদ্দি দেবদূতগণের উপর
খুবই খুশি হয়েছে। ‘যাক। বাবা! মেয়েটার জীবন বাঁচলো আর দেশের টাকা দেশেই
থাকলো' – এই কথা বলে মাথায় হাত দিতেই সাবানের ফ্যানাতে তার মাথা ভরে যায়।
এরপর সে দেখে যে সে হাগুমুতুর লুঙ্গি আর খ্যাতা পরিষ্কার করছে। এইসব
পরিষ্কার করে নাজিমুদ্দি যখন ঘরে ফেরে, তখন সে দেখে তার স্ত্রী ঘুমাচ্ছে।
নাজিমুদ্দি
খালি ঘুমানোর জন্য ছটফট করছে। এইবার সে খ্যাতা কাপড় ছাড়া-ই ঘুমিয়ে যায়।
ঘুমের মধ্যে আবার দেবদূতগণ আসবে, সেই আশাতেই সে ঘুমে বিভোর থাকতে পাগলামি
করে।
নাজিমুদ্দি স্বপ্ন
দেখছে। একদল ম্যাজিস্ট্রেট, ডিসি, পুলিশের এসপি, ডাক্তার, সচিব, উপসচিব,
অতিরিক্ত সচিব, আধাসচিব, পুরো সচিবসহ সরকারি সব আমলারা নাজিমুদ্দির কাছে
এসে কান্নাকাটি করছে আর বলাবলি করছে – ‘নাজিমুদ্দি ভাই, দ্যাশে গণতন্ত্র
আসছে। সব জনগণেরই সমান অধিকার রয়েছে, রয়েছে সবার সমান সম্মান। এতোদিনে
আপনারে তুই তুকারি করে পাপ করেছি, গণতন্ত্র নষ্ট করেছি। আপনি আমাদের দেশের
সিটিজেন, আপনাদের সেবাতেই আমরা নিয়োজিত। আপনি আমাদের মাফ করে দিয়েন।'
সরকারি আমলাদের এমন কান্নাকাটি দেখে নাজিমুদ্দি নিজে আর কান্না থামাতে
পারেনা। সে হাউমাউ করে কানতে থাকে। এমন সময় আবার সেই দেবদূতগণ আসে।
দেবদূতগণ সরকারি সব আমলাদের কানে হাত দিয়ে আদর করে একেক জনের ঘুষের খতিয়ান
বের করে। কে কতবার রাষ্ট্রের পয়সা নষ্ট করে নিজেদের জীবনকে সুখে শান্তিতে
সাজিয়েছে – সব খতিয়ান বের করে। সরকারি আমলা ভাইদের এমন অবস্থা দেখে
নাজিমুদ্দির কান্না আর থামেনা। দেবদূতগণের পা নেই বলে সে তাদের পা ধরে
কানতে পারেনা। সে আহাজারি করে দেবদূতদের 'রিকোয়েস্ট' করে বলে, ‘হে মহাত্মা
দেবদূতগণ, আপনেরা আমার আমলা ভাইদের মাফ কইরা দেন। তাগোরে আর এত নাস্তানাবুদ
করবেন না। আল্লাহর কিরে লাগে, ভগবানের দোহায় লাগে।' নাজিমুদ্দির আহাজারি
শুনে দেবদূতগণ থামেন। আমলা ভাইয়েরাও শান্তি পায়। এমন শান্তি পায় যে শান্তির
ঠ্যালা সহ্য করতে না পেরে নাজিমুদ্দিকে জড়িয়ে ধরে কানতে থাকে। নাজিমুদ্দিও
জোরে জোরে কান্দে। এমন সময় রাশেদা বানুর হাতের ঠ্যালাতে নাজিমুদ্দির ঘুম
ভাঙে। ঘুম ভাঙার পরে সে দেখে পুরো বালিশ একেবারে ভিজে গিয়েছে। নাজিমুদ্দি
আবার একটু ঘুমাতে চায়। কিন্তু তার স্ত্রী রাশেদা তাকে আর ঘুমোতে দিতে
চায়না। ঘরের বারান্দার লাইট জ্বালিয়ে একটা ছোট কাঠের টুলের উপর বসিয়ে রাখে।
মাঝে মাঝে চোখে এসে পানি দিয়ে যায়।
নাজিমুদ্দিকে
জেগে জেগে রাত পার করতে হয়। মাঝে মাঝে তার স্ত্রী রাশেদা আসে আর পানি মারে।
‘ঘুমোলে যার এত সমস্যা, তার না ঘুমানিই ভালো’ – এই কথা বিড়বিড় করে বলে
ঘুমিয়ে পড়ে রাশেদা। তবে নাজিমুদ্দি স্বপ্ন দেখতে দেখতে যে মজা পেয়ে গিয়েছে –
সেই স্বপ্ন দেখা সুখের বাতিক তার আর থামেনা। এইবার সে জেগে জেগে স্বপ্ন
দেখতে থাকে।
এইবার জাগনা স্বপ্নে নাজিমুদ্দি দেখে
একদল এমপি, মন্ত্রি, পাড়ার অলিগলির আতিনেতা পাতিনেতা – সবাই তার কাছে এসে
কান্নাকাটি করছে। ‘ভাই, দ্যাশটা আপনাগোর। আপনাগোর কারনেই আমরা নেতা হয়।
আপনারা জনগণই দেশের প্রাণ। আপনার সাথে যে ভুলত্রুটি করেছি, মুর্খ আর
অশিক্ষিত বলে গালিগালাজ করেছি, আপনাদের হকের টাকা মেরে খেয়েছি। আপনে আমাদের
মাফ করে দিয়েন। এখন থ্যাইক্যা আমরা সুখে ইউরোপ আমেরিকা যাব না। দু:খে আর
ব্যাংকক থাইল্যান্ড নেপাল ফ্রান্স যাব না। এখন থাইক্যা সুখে দুঃখে আপনাদের
বুকের সাথে বুক মিলে ‘হাগাহাগি' করবো।' মন্ত্রি আর এমপিদের এমন কথাশুনে
নাজিমুদ্দি নিজেকে খুব সুখী এবং গণতান্ত্রিক মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে
থাকে। আবেগে আপ্লুত হয়ে কানতে থাকে। কিন্তু সে নিজেকে এতই ক্ষমতাবান মনে
করে যে, সে খুশিতে এক মন্ত্রীর চ্যালাকে থাপ্পড় মারতে যায়। নাজিমুদ্দির এমন
কাণ্ডজ্ঞান দেখে মন্ত্রি আর এমপিগণ ক্ষেপে যায়। যখনই নাজিমুদ্দির গলাচেপে
ধরতে যায়, এমন সময় আবার সেই দেবদূতগণ এসে তাকে উদ্ধার করে। পরে দেবদূতগণ
এসে রাজনীতিকদের নীতিজ্ঞানের উপর একঘণ্টার লেকচারবাজি করে। এমন মনোমুগদ্ধকর
লেকচার যে সবাই কান পেতে খালি শুনছে আর শুনছে। দেবদূতদের গহীন লেকচার
শোনার পরে রাজনীতিক আর জনগণের মধ্যে যখন শান্তি থমথম করছে, তখন নাজিমুদ্দি
জাগনা থাকতে থাকতে আবার ঘুমিয়ে যায়।
‘আল্লায় মনে অয়
আমারে খুব ঠ্যাকোতেই বিধবা বানাইবো। হায়! আল্লাহ। এইডা তুমি কি নজির
দেখাইতেছো। লোকটা ঘুমের মধ্যে কান্দে, জাইগ্যা থাইকা কান্দে, লুঙ্গি ভরে
হাগে’ – এই বলে রাশেদা আহাজারি করে বেড়ায়। বস্তির অলিতেগলিতে এখন
নাজিমুদ্দিই হচ্ছে ‘হট টক'!
নাজিমুদ্দির
বউ আজ আর তাকে রিকসা চালাতে যেতে দেয়নি। বস্তির দু'য়েকজন পাতিনেতা এসেছে।
নাজিমুদ্দির ভালো চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কাউন্সিলর থেকে মেয়র,
সমাজসেবা কর্মী থেকে আমলা সবাই খুব উদ্বিগ্ন। নাজিমুদ্দির ভালো চিকিৎসার
জন্য। দেশের নামকরা একটি এনজিও একবস্তা টাকা আর গাড়িঘোড়া নিয়ে এসেছে
নাজিমুদ্দির চিকিৎসার জন্য।
নাজিমুদ্দিকে জোরজার করে
বস্তির ক'য়েকটা ছেলে একটা পিকাপে তুলেছে। আবার হাসপাতালে নেওয়ার সময়
অনেকেই তাকে অজ্ঞান করার পরামর্শ দিয়েছিল। আর এর কারন ছিলো সে জেগে থাকলে
স্বপ্ন দেখে, ঘুমিয়ে থাকলেও স্বপ্ন দেখে। তাই তার সেন্স বন্ধ করে দেওয়া-ই
হবে উত্তম। তবে এমন সময় একজন মানবাধিকার কর্মী ঘোরতর বিরোধিতা করে। যাইহোক,
একদল দেশের মাথা মিলে নাজিমুদ্দিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এমন সময় আচমকা
ঘুমিয়ে গিয়ে আবার স্বপ্ন দেখা শুরু হয় নাজিমুদ্দির।
এইবার
নাজিমুদ্দি স্বপ্নে দেখে যে একদল গণমাধ্যম কর্মী তার কাছে হাত জোড় করে মাফ
চাচ্ছে। আর তারা বলছে নাজিমুদ্দি ভাই, ‘আপনাদের সুখ-দু:খের ফটো তুলে
তুলে আমরা আমাদের মিডিয়াকে গরম রেখেছি। বিভিন্ন জায়গা থেকে পুরষ্কার
পেয়েছি। আর সেই সব ফটো বিশাল বিশাল দামে বিক্রি করেছি। হাজার হাজার দেশি
বিদেশি এনজিও এসেছে। আপনাদেরকে পুঁজি করে ব্যবসা করেছে। আপনি আমাদের মাফ
কইরা দেন।' মিডিয়ার লোকজন যখন নাজিমুদ্দির কাছে এমন সহানুভূতি দেখায়,
নাজিমুদ্দি তখন খালি কান্দে আর কান্দে; ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কান্দে, জোরে জোরে
কান্দে, আঁচড়িয়ে আঁচড়িয়ে কান্দে। সমুদ্রের জোয়ার শেষ হয়ে আবার জোয়ার আসে,
নদীর পানি শুকিয়ে আবার ভরে যায়, গাছের সবুজ পাতা ঝরে গিয়ে আবার নতুন পাতা
আসে কিন্তু নাজিমুদ্দির কান্না থামেনা। এইবার নাজিমুদ্দি দেখে একদল এনজিও
মালিক এসে নাজিমুদ্দির হাতে পায়ে ধরে। নিজেরা নাজিমুদ্দির সাথে ঠগ আর
প্রতারণা করেছে বলে স্বীকার করে। নাজিমুদ্দিকে বুকে নিয়ে তারা কান্নাকাটি
করে। এনজিওগুলো নাজিমুদ্দিদের নিয়ে কাজ করে যে বিশ্বসংস্থার বিশাল বিশাল
সনদ অর্জন করেছে – তা দেখাতেই নাজিমুদ্দিন কান্নায় ভেঙে পড়ে। এরপরে
ধর্মব্যবসায়ীরা নাজিমুদ্দির কাছে মাফ চায়। ‘আপনাগোর মত মানুষের সেন্টিমেন্ট
কাজে লাগিয়ে আমরা যুগের পর যুগ টিকে আছি। আপনাগোর মাথায় কাঁঠাল ভেঙে গাড়ি
বাড়ি, পার্লামেন্টে সিট, বড় বড় কলকারখানা সবকিছুরই মালিক হয়েছি। কিন্তু
আপনাগোর ভাগ্যের কোনো উন্নতি হয়নি। মাফ করে দিয়েন ভাই' – এই কথা বলে সবাই
কান্নাকাটি করে। নাজিমুদ্দিও কানতে কানতে চোখের পানি শুকায়ে ফেলে। এইবার
স্বপ্নের মধ্যে নাজিমুদ্দি দেখে সে সত্যি সত্যিই গোবর গাদায় পড়ে আছে। আর তা
দেখে বহুদূরে দেবদূতগণ খিলখিলিয়ে হাসে আর হাসে। দেবদূতগণের এমন তামাশা
দেখে নাজিমুদ্দির স্বপ্নের মধ্যেই হুশ ফেরে। সে হুশয়ালা স্বপ্নে দেখে যে
লাখো শহীদের পবিত্র রক্তকে এদেশের মতাদর্শ ব্যবসায়ী রাজনীতিক, সুবিধাবাদী
আমলা, সুবিধাবাদী বুদ্ধিজীবী আর মাতাল জনগণ একেবারে গোবর গাদা বানিয়ে
রেখেছে। আর সেই গোবর গাদাতে ডুবে ডুবে মারা যাচ্ছে নাজিমুদ্দি নিজে।
এইবারের স্বপ্নে দেবদূতদের পাশে না পেয়ে নাজিমুদ্দি খুব মর্মাহত হয়। সে
নিজে নিজেই উপলব্ধি করে যে দেশটার স্বাধীনতা দেবদূতগণ এনে দেন নাই বা
দেবদূতগণও দেশটা নষ্ট করছে না। দেশের নাগরিকরা-ই স্বাধীনতা এনেছে আর তাদের
উত্তরসূরী আমরা আমাদের মধ্যে পেতাত্মার ছায়া ভর করিয়েছি। আর সেই বশে
বশীভূত হয়ে আমরা নাগরিকরাই দেশটারে গোবর গাদা বানিয়ে রাখছি।
নাজিমুদ্দির
স্বপ্ন দেখার যে নেশা জেগেছিলো, তাতে সে গোবর গাদা থেকে উদ্ধার হতে
চেয়েছিলো। এই উদ্ধার উদ্ধার খেলায় সে দেবদূতগণের সহায়তা কামনা করেছিলো।
কিন্তু সে তা পায়নি। এমন চরম সত্য উপলব্ধি করার পরেই নাজিমুদ্দির মুখ নাক
কানে রক্ত উঠে যায়। ঘুমের মধ্যেই সে ধরাশয় ছেড়ে চলে যায়। মৃত্যুর পর
নাজিমুদ্দির মৃত দেহ তার গ্রামের বাড়ি খিজিরপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। আর সেখানেই
তার দাফন হয়।
নাজিমুদ্দি
কি রোগে মরেছিলো - তা ডাক্তারগণ বলতে পারেনি। তবে তার স্ত্রী রাশেদা বানু
বলেছিলো, ‘আমার স্বামী স্বপ্ন বমি কইরাই মইরা গেছে।'