আচ্ছা তোমার মনে আছে নদীর কোল ঘেঁষে আপনচিত্তে বেড়ে উঠা বটগাছটার পাশে একটা বেশ পুরনো ডাকঘর ছিলো।
ডাকঘরের নাম ছিলো 'শ্যামলি লেন ডাকঘর'।
ডাকঘর টির এমন নামকরণের বিশেষত্ব জানা নেই হতে পারে শ্যামলি নামের কাউকে নিয়ে প্রথম লেখা চিঠি দিয়ে ডাকঘরের সূচনা হয়েছিলো।
বর্তমানের ধ্বসে পড়া ডাকঘরের মরিচা ধরা ডাকবাক্সের শেষ চিঠি টা কার ছিলো জানো?
তোমাকে নিয়ে লেখা চিঠি টাই ছিলো প্রাক্তন ডাকঘরের শেষ চিঠি।
চিঠিটা ডাকবাক্সের ভিতরে ঠিকিই হয়তো পড়েছিলো তবে তোমার হাত অব্দি শেষ পর্যন্ত পৌঁছানোর সুযোগ হয়ে উঠেনি।
অনেক নির্ঘুম রাতজাগার সাক্ষী ছিলো চিঠিটা।
তোমাকে নিয়ে এক একটা লাইন লিখতে গিয়ে আমার একপ্রহর পেরিয়ে যেত,
লণ্ঠনের তেল শেষ হয়ে যেতো রোজ সন্ধ্যায়।
যদি মূয়রের পেখম কে কলম
আর গঙ্গার সমস্ত জ্বলকে কালি হিসেবে পেতাম তবুও হয়তো তোমার উদ্দেশ্য লেখা চিঠিতে আমার কথা গুলো লিখে শেষ করা যেত না ।
বর্তমানে
প্রযুক্তির যুগে মুহুর্তেই আমাদের অনুভূতির ভাষা গুলো স্থানান্তর হলেও
সেকালে ডাকপিয়নের অপেক্ষায় ছিলাম ফিরতি প্রতিউত্তরের আশায়।
বটগাছের শিকড়ে বসে বসে কাটিয়েছি শরৎ- বসন্তের গোধূলি ক্ষণ বেলা -অবেলা।
বৃষ্টিতে ভিজেছি কখনো বা শীতের কাঁপা শরীরে চাদর মুড়িয়ে ডাকঘরের দরজায় কড়া নেড়েছি তোমার কোন ফিরতি চিঠি এসেছে কি না।
তোমায় নিয়ে লেখা শেষ চিঠিটা ডাকবাক্সের বদ্ধ ঘরে হয়তো আজো
মুড়িয়ে আছে,
হয়তে মুছে যাওয়া সব শব্দের মাঝেও
ভালোবাসি
প্রিয় শব্দ দুটির ক'টা অক্ষর মুছে যায়নি আজো, হয়তো চিঠির খামে গুঁজে রাখা
তোমার প্রিয় শিউলি গুলো এখনো সতেজ, এখনো গন্ধ ছড়াচ্ছে অবিরাম।
এখানো মৌমাছিদের জট বাঁধে ফুলের সুবাসের উৎস খুঁজতে প্রত্যেহ।
হয়তো এ জন্মে এসে কেউ একজন হঠাৎ খুঁজে পাবে অন্তিম হতে যাওয়া পূর্ব জন্মের তোমাকে নিয়ে আমার লেখা শেষ চিঠিটা।
হয়তো নিলামের বাজারে উঠবে অগণিত মূল্যে।
তারপর,
কোন ক্রমে তোমার দৃষ্টিপাত কেড়ে নিক চিঠির প্রতিটা শব্দ শ্লোক। তোমার হাতে এসে আশ্রয় পাক নিলামে উঠা চিঠিটা।
তোমার মস্তিষ্কে বয়ে যাক গত জন্মের স্মৃতিচারণের স্ফুটন।
এদিকে এ জন্মের আমি কোন এক সূর্য উদয় ক্ষণে এক কাপ চা হাতে মৃদু স্বরে বলে উঠবো,
গত জন্মের অপূর্ণতা দ্বিতীয় জন্মে এসে প্রাপ্তির মিছিলে নাম লেখাবে নিশ্চয়ই ।