শ্যাষ দেখা ।। রণজিৎ রায়


আজি মোর মসির বেটি বৈণির বিয়াও l মনটা খুব চঞ্চল নাগেছে l বাবলীও বিয়াও বাড়ি আসিবে l কয়েকদিন আগতে বেকার খালি উয়ার ছোটোবেলার ফটোকখান ফেসবুকত দিয়া ভুল করিলুং-- সগায় জানিল হামার সম্পর্কটা l 

        মাও দুই দিন আগতে গেইসে বিয়াও বাড়ি l বৈণির বিয়াও-- মনটাত কোনেক্কো আনন্দ নাই!

         সাঞ্ঝেরক্ষণ গেলুং বিয়াও বাড়ি l সগায় মন্ডপ সাজা দ্যাখেছে l হামার যত সাগাই-সোদর সগায় আসিসেl সগারে সাথে সাক্ষাৎ হছে, কাথা হছে l মুই বৈণির ওটে যাবার ধরিসুং, কিন্তু দুয়োর পর্যন্ত যায়া দ্যাখোং-- বৈণি উয়ার বান্ধবিলার সাথে নানানখান কাথা কছে| কাহো সাজেছে, কাহো সাজাছে। বাবলীও ওটে বসি আছে l আজি বাবলীক খুব ঢক নাগেছে l হলদিয়া রঙের একখান শাড়ি পিন্দিসে, ঠোঁটোত হালকা গোলাপী রঙের লিপস্টিক দিসে, হাতোত কাঁইচের চুরি আর মেহেন্দী পিন্দা।  পাওত রুপার পাওতোরা | অইন্য দিনের থাকি আজি কেনেবেলা বেশি ঢক নাগেছে উয়াক  l উয়ার ওদি  থাকি চক্ষুর নজর ইন্য পাকে ঘুরির মনাছে না মোক। এই নাখান ঢক মুখখানের প্রতি মায়াটা অল্প সময়ের মৈধ্যইতে দ্বিগুন হইল  l এই রূপের মায়াত অন্তরের আবেগ বাড়ি গেইল l যেইনা উয়ার চক্ষুর নজর মোর এদি পরিল-- সাথে সাথে মোর চক্ষুর আড়াল হয়া গেইল!

         মাস খানেক বিতি গেইল-- বাবলীর সাথে কাথা কওয়া নাই ! এক মাস আগতে ফোন করি কইসে-- “তুই মোক ভুলি যাইস! মুই তোর সাথে আর সম্পর্কটা রাখির পারিম না l”... মুই উয়াক অনেক বুঝালুং, কত কাউলাকাটা করিলুং-- কিছুই হইল না! মোবাইলও সুইচ অফ করি থুইল! পরে জানির পালুং-- সিমখানে ভাঙি দিসে l মুইও রাগ উঠি উয়ার সম্বন্ধে কয়েকটা কাথা লেখি, ছোটবেলার  উয়ারে একখান ফটোক ফেসবুকোত ছাড়িলুং।

          অনেক দিন পর আজি দেখা হওয়াতে মনটা ভাঙ্গি গেইল l ঠাকুরোক ডেকাছোং আর কছোং-- বাবলী যাতে আরও ফিরি আইসে| ফির ভাবেছোং, মুই বেকার চেংড়া, সরকারি চাকরি-বাকরি নাই-- ক্যাংকরি উয়ার পরিবার মোক মানি নিবে ! লায়লা-মজনুর  কাথা ভাবিয়া বুকোত ফির সাহসও আইসে । 

          বাস্তব টা যে অইন্য মতন l একপাকে বাস্তব, অইন্যপাকে ভালোবাসার টান-- দোমোখোমোত পড়ি গাবুর চেংড়ার মন মোর হেরি গেইল ! বিয়াও বাড়ির মানষিলার মুখের আগত চক্ষুর জল খালি শরমে বিড়াইল না l 

         বরযাত্রী আসিল | মুই বাবলীর পাছিলাতে আড়াল হয়া সারাক্ষন ছিলুং-- নুক্কি নুক্কি উয়াক দেখির বাদে। কিন্তু উয়াক বুঝির দিলুং না যে, উয়াকে দেখেছোংl 

         আজি এক মাসতে মুই এই বাবলীর মাঝোত মোর সেদিনের সেই বাবলীক আর খুঁজি পালুং না! আজিকার বাবলী  একেবারে অইন্য মতন-- মোর প্রতি কোনো টান নাই, আগের মতন সেই হাসিখানও নাই ঠোঁটোত! উয়ার সাথে যে মোর সম্পর্কটা আর নাই-- তাতে উয়ার কোনো আফসোস নাই ! এংকরি সাত-পাঁচ ভাবিতে ভাবিতে কতক্ষণ যে বিয়াও শ্যাষ হইসে মুই বুঝিরে পাং নাই!

          বৈনিক বিদায় দিবার পর সাগাইলা ভিতাভিতি বাড়ি চলি যাছে l বাবলীও বিদায় নিয়া বাড়ি যাবার ধরিসে ; মুই আড়াল থাকি উয়াকে দেখি আছোং| বুঝির পালুং-- আর হয়তো কোনোদিন সাক্ষাৎ হবে না উয়ার সাথে! বুকের ভিতিরাত খুব যন্ত্রনা শুরু হইল! নিক্কাসও খাটো হয়া আসিল! বাবলী একবারও মোর পাখে ফিরি দেখিল না! তারপর একটা সমায় চক্ষুর আড়াল হয়া চলি গেইল উয়ায়!

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।