অশুভ দূর হয়ে, শুভর সূচনা হোক ।। ইসরাত জাহান


প্রতি বছর বাংলা বছরের প্রথম দিনকে সমগ্র বাঙালি বাংলা নববর্ষ হিসেবে উদযাপন করে থাকে। সমগ্র বাঙালির জন্য এটি কোন সাধারণ দিন নয় এটি ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের দিন। এটিকে বাঙ্গালীদের একটি সার্বজনীন লোকউৎসব ও বলা হয়। শুধুমাত্র বাংলাদেশে এই দিবস উদযাপিত হয় যে তা নয় বরং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরা বসবাসরত বাঙালিদের অনেক সুন্দরভাবে এই দিনটি উদযাপন করে থাকে। এটির আনুষ্ঠানিক নাম পহেলা বৈশাখ। সব ধর্মের মানুষেরা মিলিত হয়ে এই দিনটি উদযাপন করে এটি উদযাপনে কোন ধরনের জাতিগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না। এই উৎসবটি শুরু হয় দিনের শুরুতে মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে। বছরের প্রথম দিন থেকেই শেষ দিন পর্যন্ত যেন প্রতিটি দিন প্রতিটি মানুষ সুন্দর ভাবে কাটাতে পারে সেই কামনা করে সর্বস্তরের মানুষ মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে। বিভিন্ন জায়গায় পহেলা বৈশাখ থেকে টানা একমাস ব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়। ওই দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয় নববর্ষের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন ইতিহাস। বাঙালির ঘরে ঘরে চলে পিঠা বানানোর ধুম এবং ইলিশ-পান্তার মহোৎসব। ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সাজিয়ে নিয়ে নতুন আঙ্গিকে। নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করার উপলক্ষ নিয়ে বরণ করে নেয় নতুন বছরকে। সুদূর অতীতকাল থেকে হালখাতা নামক শব্দটা ব্যবসায়ীদের সাথে সম্পর্কযুক্ত। পুরনো বছরের সমস্ত হিসাব চুকিয়ে নতুন বছরের নতুন ভাবে হালখাতা চালু করে তারা। অনেক জায়গায় নতুন বছর উপলক্ষে ক্রেতা এবং বিক্রেতা দের মধ্যে মিষ্টিমুখ করার প্রবণতা ও লক্ষ্য করা যায়। পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ পালিত হয়ে আসছে সম্রাট আকবরের শাসনামল থেকে। প্রাচীন কিছু বর্ষ পঞ্জিকার সাহায্য নিয়ে বাংলা পঞ্জিকা তৈরি করে বাংলা সনের প্রবর্তন সে সময় শুরু করা হয়। মূলত জনগণ থেকে খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য সম্রাট বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। আকবরের শাসন আমলে চৈত্র মাসের শেষ দিন জমির মালিকরা তাদের খাজনা আদায় করে নতুন হিসাবের খাতা চালু করে এলাকাবাসীদের মিষ্টি-মুখ করাতেন। যেটি মূলত হালখাতা হিসেবে পরিচিত। সে সময়ে হালখাতা চালুকে পহেলা বৈশাখের একমাত্র উৎস হিসেবে ধরা হতো। এরপর ধীরে ধীরে নানা ধরনের উৎসব যুক্ত হতে থাকে এটির সাথে। বর্তমানে বাঙালি মেয়েরা লাল-সাদা শাড়ি পড়ে এবং ছেলেরা লাল-সাদা পাঞ্জাবি পড়ে বর্ষবরণে অংশ নেয়। প্রতিবছর নতুন বছরের নতুন সূর্য ওঠার সাথে সাথেই শুরু হয় ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। সকাল ৯টায় শুরু হয় চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা। এরপর একে একে রমনা উদ্যান, শাহবাগ, রবীন্দ্র সরোবরে ইত্যাদিতে পালিত হয় নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শুধু ঢাকা নয় বাকি দেশের ৬৩ জেলায় বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিবসটি পালিত হয়। ২০২০ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। ঐ বছর বাংলা নববর্ষ ১৪২৭ উদযাপনের সরকারের দিক থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। বিগত কয়েকদিন ধরে হঠাৎ করে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। সংক্রমণ ঠেকাতে নববর্ষ ১৪২৮ উদযাপন উপলক্ষে সব ধরনের জনসমাগম যেনো এড়িয়ে চলা হয় তা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয় যে, ‘সব ধরনের জনসমাগম পরিহার করে যেন অনলাইন বা ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।' করোনা মহামারী কে বিদায় জানিয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ যেন সমগ্র বাঙালি একসাথে পালন করতে পারে সেটাই কাম্য।
 

সূচিতে ফিরতে এখানে ক্লিক করুন।


Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।