ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক সর্বত্র ।। ইসরাত জাহান

প্রত্যেক বছর প্রত্যেক মুসলমান দুটি ঈদ উদযাপন করে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা। ঈদ শব্দের আরবি শব্দমূল হচ্ছে 'আউদ'।আমরা সবাই জানি, ঈদ অর্থ 'আনন্দ বা খুশি’।তবে ঈদের শাব্দিক অর্থ হলো 'বারবার ফিরে আসে'।ঈদ এমনই একটি দিন যেই দিনটিতে প্রতিটি মানুষই চায় তাদের দিনটা যেন আনন্দে কাটে।ঈদের দিনের মতো আনন্দঘন মুহূর্ত গুলো যেন বারবার প্রতিটি মানুষের জীবনে ফিরে আসে সেটাই মানুষ কামনা করে।অনেকে মনে করেন এই জন্যই হয়তো এই দিনটিকে ঈদ বলা হয়।এ দিনটিতে মহান আল্লাহ্ তাঁর অনুগ্রহ নিয়ামত বারবার ফিরিয়ে দেন বলে অনেকেই ধারণা করেন মূলত এই কারণেই এই দিনটিকে ঈদ বলা হয়।ঈদের প্রচলন শুরু হয় মূলত, "নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম যখন মদিনায় হিজরত করেন, তখন তিনি মদিনায় গিয়ে দেখলেন মদিনাবাসী আগে থেকেই দু’টি উৎসব পালন করেন, যা ছিল মূলত ইহুদিদের উৎসব। কিন্তু মুসলামনদের কোনো উৎসব না থাকায় তারাও না বুঝে সেই উৎসব পালন করতেন। উৎসব দু’টির একটি ছিল নওরোজ ও অপরটি মেহেরজান। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লামের আগমণের পর সাহাবায়ে কেরাম আনহুম আজমাইনরা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন। তখন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম তাদের জানিয়ে দিলেন আল্লাহ তোমাদের জন্য এর পরিবর্তে আরো উৎকৃষ্টতর দু’টি দিন দান করেছেন। এর একটি হলো ঈদুল ফিতর ও অপরটি হলো ঈদুল আজহা"।ঈদ আসে শুদ্ধতার প্রতীক হয়ে। আল্লাহ এবং পরকালের কথা ভেবে যেন প্রত্যেকটা মানুষ নতুনভাবে জীবন গড়ে তুলতে পারে সে অঙ্গীকার নিয়ে।ঈদ আসে মানুষের মাঝে থাকা হিংসা-বিদ্বেষ ভুলিয়ে দিতে।যেন প্রতিটি মানুষ একজনের প্রতি অন্যজন বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দিনাতিপাত করতে পারে।ঈদ আসে পরিশোধিত হৃদয়ে পরিতৃপ্তির ছোঁয়া এবং স্নিগ্ধতা পৌঁছে দিতে।ঈদকে সার্বজনীন উৎসব বলা হয়।ধনী-গরিব সবাই এক সঙ্গে মিলিত হয়ে পালন করে এই উৎসব।ধনী-গরিব সবাই এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে। তাদের মধ্যে থাকে না কোন ভেদাভেদ। 

 

ফিতর শব্দের অর্থ 'ভেঙে দেওয়া'।দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পরে আসে ঈদুল ফিতর আর এই ঈদুল ফিতরের মানেই হলো আনন্দঘন উৎসব।রহমত, মাগফিরাত, নাজাত এবং অফুরন্ত কল্যাণ নিয়ে প্রতিবছর প্রত্যেক মুসলমানের ঘরে ঘরে আনন্দ-উল্লাস নিয়ে ঈদ।ঈদুল ফিতর হচ্ছে প্রতিটা মুসলমানের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রাপ্তির এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির।ঈদ উপলক্ষে প্রতিটি মুসলমানের ঘরে ঘরে যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায় এটি কেবল আনন্দ নয় বরং  সওয়াব এবং পুণ্যের দ্যুতিতে পরিপূর্ণ।আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা ঈদের দিন ফেরেশতাদের মধ্যে রোজাদারদের নিয়ে গর্ব করে বলেন, ‘হে ফেরেশতারা, আমার কর্তব্যপরায়ণ প্রেমিক বান্দার বিনিময় কী হতে পারে?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘হে প্রভু পুণ্যরূপে পুরস্কার দান করাই তো তার প্রতিদান। ’ আল্লাহ বলেন, ‘আমার বান্দারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব (রোজা) পালন করেছে। অতঃপর দোয়া করতে করতে ঈদগাহে গমন করেছে। সুতরাং আমার মর্যাদা, সম্মান, দয়া ও বড়ত্বের কসম! আমি তাদের দোয়া কবুল করব এবং তাদের মাফ করে দেব। ’ (বায়হাকি: ৩/৩৪৩) 

যে ঈদকে সবার উৎসব বলে মনে করা হয়, কিন্তু আসলেই কি তাই? সবাই কী পারে হাসিমুখে দিনটিকে পালন করতে?আমরা যদি বাস্তব দিকগুলো চিন্তা করি তাহলে অন্য রকমের চিত্র দেখতে পাবো।আমাদের চারপাশে অসহায় মানুষের অভাব নেই।যাদের পক্ষে দুবেলা-দুমুঠো খাবার জোগাড় করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।যে দিনটিতে ধনী মানুষের নতুন কাপড়, নানা ধরনের খাবারের আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত থাকে সেই দিনটিতে ও তারা বসে বসে চিন্তা করে আদৌ তাদের মুখে কিছু জুটবে কি না।আমাদের সমাজে বসবাসরত ধনী মানুষের পাশাপাশি অন্যান্য মানুষগুলোও যদি নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী এগিয়ে আসে তাহলে এতিম-দুস্থ, গরিব-নিঃস্ব, অসহায় মানুষগুলোর মুখে কিছুটা হলেও এই দিনটাতে হাসি ফোটবে।এই দিনটাকে শুধু নিজের বা পরিবারের জন্য না ভেবে বরং আশেপাশের যেসব অসহায় মানুষগুলো রয়েছে তাদের খোঁজখবর নিয়ে আমরা আমাদের আনন্দটাকে আরো দ্বিগুন বাড়িয়ে দিতে পারি। 


ইসরাত জাহান 

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম।


সূচিতে ফিরুন


Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।