“কোন কিছু করার পরে যা ভালো মনে হয় তাই হলো নৈতিকতা,আর তা করার পর যা খারাপ মনে হয়, তাই হলো অনৈতিকতা।”-আর্নেস্ট হেমিংওয়ে
নৈতিকতাকে সহজ সরল ও সাবলীল ভাষায় চমৎকার উপস্থাপন। সকল মানবিক গুণাবলির সমষ্টি হলো নৈতিকতা। দুই একটি ভাল গুণ অর্জন করাকে নৈতিকতা বলেনা। দিন মাস বছরের হিসেব করে নৈতিক গুণাবলি অর্জন করা যায়না। সারাজীবন কঠোর পরিশ্রম,সাধনা ও ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমে নৈতিক গুণাবলি অর্জন করতে হয়।
“নৈতিকতা মানুষের জন্য সৃষ্টি,মানুষ নৈতিকতার জন্য সৃষ্ট নয়”-জাঙ্কউইল।
নৈতিকতা মানুষের বড় সম্পদ। নৈতিকতা বিবর্জিত মানুষের চরিত্র বলতে কিছুই থাকেনা। নৈতিকতা বিবর্জিত কাজ সমাজের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়না। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সমস্ত মানবিক গুণাবলি মানুষের মাঝেই বিরাজমান।
নৈতিক গুনাবলিগুলিকে তালিকার মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়না। সদা সত্য কথা বলা, লোভ,হিংসা,বিদ্বেষ,অহঙ্কার ত্যাগ করা ,অন্যায়ের প্রতিবাদ করা,সৎ পথে থেকে জীবনধারণ করা। মানুষকে ভালোবাসা,দেশ ও দশের কল্যাণে নিজেকে আত্মনিয়োগ করা এমন অসংখ্য গুনাবলিকে নৈতিকতার সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। আমরা পারিবারিকভাবে,বড়দের দেখে,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গুরুর মাধ্যমে এবং বই পড়ে অসংখ্য নৈতিক গুণাবলি সর্ম্পকে জেনেছি। কিছু কিছু গুণাবলি মনেপ্রাণে লালন করেছি এবং ধারণ করেছি। আবার কিছু কিছু নৈতিক গুণাবলি ভুলেই গিয়েছি। এই গুলোর প্রয়োগ আমাদের বাস্তব জীবনে নেই। সর্বদা সত্য কথা বলা,সৎপথে অর্থ উপার্জন করার নীতিকথা সবার মুখে মুখে। ধরে নিলাম আমরা সবাই সত্য কথা বলি। সৎ পথে অর্থ উপার্জন করি।
কিন্তু আমরা কতজন অর্জিত অর্থ মানবতার কল্যাণে ব্যয় করি। সবাই নিজ নিজ পরিবার নিয়ে ভোগ বিলাসী জীবনে ব্যস্ত। অর্জিত অর্থ মানব কল্যাণে ব্যয় করার মানসিকতা আামাদের নেই। এটা আমাদের নৈতিকতার অপলাপ। মানুষের জন্য ত্যাগ স্বীকারে আমরা অভ্যস্ত নই। আমরা বড় বড় ড্রিগ্রি অর্জন করেছি,বিদ্যা শিক্ষা গ্রহণ করে অনেক বড় পন্ডিত হয়েছি। কিন্তু আমাদের পান্ডিত্য অসহায় দুর্বলের কল্যাণে ব্যয় করার পরিবর্তে তাদেরকে জুলুমের কাজের জন্য প্রয়োগ করছি।
অর্থ সম্পদ অর্জন ব্যক্তিগত ভোগ বিলাসের জন্য। রাষ্ট্র ও জনকল্যাণের জন্য নয়। নৈতিকতার সারমর্ম যদি আমরা উপলব্ধি করি তাহলে ভোগ বিলাসের জন্য জীবন নয়। ত্যাগের জন্যই জীবন। নৈতিকতাকে হারিয়ে আমরা আমাদের মূল্যবোধকে সর্বদা বিসর্জন দিয়ে যাচ্ছি। স্বার্থপরতা ও প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে অন্যের অমঙ্গল কামনায় সদা ব্যস্ত এক জীবন আমাদের।
মূল্যবোধ সম্পন্ন ব্যক্তি বলা যাবে তাকে যার ন্যায়পরায়ণতা,দয়া,সাহস,নৈতিকতা,সততা,সহমর্মিতা,বিনয়,আনুগত্য এবং ভদ্রতাবোধ এই গুণগুলি আছে।
ডা. লুৎফর রহমান বলেছেন-“যে অর্থ মানব কল্যাণে ব্যয়িত হয় না,যে ক্ষমতা মানুষের দাবি রক্ষার জন্যে অর্জিত হয় না, যে বিদ্যা মানুষকে সত্য ও ন্যায় মহিমা শোনাবার জন্যে লাভ হয়নি সে অর্থ,সে বিদ্যার কোন মূল্য নেই।”
প্রত্যক্ষ দুর্নীতি,ব্যভিচার,অসহায় গরীব দুঃখী মানুষদের জুলুম করাকেই শুধু অনৈতিকতা বলেনা। আবার দু চারটি নৈতিক গুনাবলি জীবনে বাস্তবায়ন করাকেই নৈতিকতা বলেনা। মহাত্মা গান্ধীর মতে ৭ টি মারাত্মক পাপ হল-
১.সম্পদশালীর কর্মহীনতা ২.বিবেকহীন আনন্দ উপভোগ ৩.চরিত্রহীন জ্ঞান ৪.নীতিবোধহীন ব্যবসা ৫.মানবিক চিন্তা বিহীন বিজ্ঞান ৬.আত্মত্যাগ বিহীন ধর্ম এবং ৭. নীতিহীন রাজনীতি।
জীবনভর নৈতিকতার চর্চার মাধ্যমে মূল্যবোধকে ধরে রাখা সাগর মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার মতই জটিল ও কঠিন কাজ।
প্রভাষক, লাউর ফতেহ্পুর ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ কলেজ
নবীনগর, বাহ্মণবাড়িয়া।