'সফলতা' ও 'সার্থকতা' শব্দ দুটি প্রায় সমার্থক মনে হলেও, আমি এক করতে পারি না।
সফলতা দৃশ্যমান, উন্নীত হওয়া, অপরের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া।
সার্থকতা আত্মিক, উন্নত হওয়া, একে অপরে মিলেমিশে সম্মুখবর্তী হওয়া বা অনুগামীদের জন্য অগ্রসর হওয়ার নতুন পথ তৈরি করে দেওয়া।
সফলতার সহজ পথ আছে তন্মধ্যে তোষামোদি ও জালিয়াতি অন্যতম। কিন্তু সার্থক হওয়ার সহজ কোনো পথ নেই। সার্থক হওয়ার জন্য প্রয়োজন ধ্যান, জ্ঞান, সাধনা আর আত্মিক মুক্তি।
নামমাত্র সাধনা আর সিধা উপায়ে যারা সফল হন তাদের আত্মা অতৃপ্তি আর অসম্মানের গ্লানিতে ডুবে থাকে। তারা অপরের মুখের দিকে অভুক্ত শিশুর মতো তাকিয়ে থাকেন একফোঁটা সম্মানের আশায় কিংবা অত্যাচারের স্টিম রোলার চালিয়ে দেন সামান্য সম্মান আদায় করতে। অন্যের সম্মান তারা পায় না। কেননা, তারা তাদের নিজেদের আত্মাকেই সম্মান করতে জানে না। তাদের আত্মায় যেটুকু সম্মান সঞ্চিত আছে তা অনেকটা ছোট কোনো ডোবায় আবদ্ধ জলের মতো বহুদিন ধরে আটকে থেকে পঁচে গলে একাকার। তাদের অন্তরে প্রবাহিণীর স্রোত এসে সেই ক্লেদাক্ত ডোবার জলকে বিশুদ্ধতার ছোঁয়া দেয় না।
সার্থক মানুষরা অন্যরা কি ভাবলো না ভাবলো তা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হন না। তারা তাদের আত্মাকে শ্রদ্ধা করেন বলেই অন্যের সম্মান আদায় করা নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। সার্থকরা ফলের আশা করেন না, তা বলা আমার উদ্দেশ্য নয়, আমি বলি সার্থকরা আত্মতৃপ্তির ফল লাভের প্রত্যাশা করেন। পরিতৃপ্ত আত্মার মানুষেরাই পারে মণিমুক্তা বিলাতে, অতৃপ্তরাতো কেবল নিজের ঝুলি ভরতেই ব্যস্ত।
সিধা উপায়ে সফল হওয়া ব্যক্তির সাথে সার্থক ব্যক্তির অনন্য পার্থক্য এই যে, সফলদের হাত ও মাথা থাকে হুজুরের পায়ে আর পা থাকে দুর্বলের ঘাড়ে। অন্যদিকে, সার্থকদের হাত থাকে দুর্বলের মাথার উপরে আর মাথা থাকে লাবিয়্যাহায় (সপ্তম আসমান), পা থাকে দৃঢ় কোনো আদর্শের উপরে।
সফলরা ঋণী থেকে যান হুজুর ও মজুরের কাছে কিন্তু সার্থকরা ঋণী করে যান পৃথিবীকে।
সফলরা পথ চলেন, কথা বলেন আগ-পাছ ভেবে আর সার্থকরা কথা বলেন মনের আনন্দে তার আত্মাকে ভালোবেসে।
সফলরা যুগের দোহাই দিয়ে যুগযুগ ধরে সুবিধা নেন কিন্তু সার্থকরা সূচনা করেন নবযুগের।
বদরুল আরেফিন
প্রভাষক, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন,
লাউর ফতেহপুর ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ কলেজ,
নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া৷৷