সুখ হলো আনন্দ,তৃপ্তি,আরাম,স্বাচ্ছন্দ্য। সুখ এক অনুভূতির নাম। যা দেখা যায়না,ধরা যায়না,ছোঁয়া যায়না। শুধু অনুভব করা যায়। সুখ মানুষের জীবনে অমূল্য সম্পদ। কোন মাপকাঠিতেই যাকে মাপা যায়না।
জীবন এক জটিল ও কঠিনতর বিষয়। জীবনে কেউ সুখী আবার কেউ অসুখী। সুখী জীবনযাপনের জন্য অনেক কিছুর প্রয়োজন হতে পারে। প্রয়োজনটা বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকমের। ধনসম্পদ,গাড়ী,বাড়ি,ভালো পরিবেশ,সু-স্বাস্থ্য,উত্তম জীবন সঙ্গী সবকিছুই সুখী জীবনযাপনের জন্য দরকার। তবে সকলের ক্ষেত্রে সুখী জীবনযাপনের জন্য একটি সাধারণ বিষয় হলো অর্থ। অর্থছাড়া সুখী জীবন যাপনের কোনকিছুই অর্জন করা যায়না। আবার সবকিছু অর্জিত হলেও অনেকে সংসার জীবনে সুখী হতে পারেনা। অর্থবিত্ত ছাড়া হতদরিদ্র মানুষ যেমন নিজেকে সুখী মনে করতে পারেনা। আবার অঢেল ধনসম্পদ অর্জন করেও অনেক মানুষ সংসার জীবনে নিজেকে সুখী মনে করতে পারেনা। মানুষের চাহিদা অসীম,অভাব অফুরন্ত। আবার সম্পদ সীমিত। সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার দিয়ে চাহিদা পূরণ করতে হয়। রাষ্ট্র চাইলেই মানুষের সব অভাব পূরণ করতে পারেনা। মেধা বুদ্ধি ও শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে মানুষ নিজেই নিজের অভাব পূরণ করতে পারে। অভাবের প্রকারভেদের ভিন্নতার কারণে মানুষ তার অর্জিত সম্পদ নিয়ে সুখী হতে পারেনা। প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অভাব পূরণ হলে দরকার আরামপ্রদ দ্রব্য,আবার এটা পূরণ হলে দরকার বিলাসজনিত দ্রব্য। মানুষের জীবনে একের পর এক অভাব আসবেই। অভাবকে পুঁজি করেই মানুষ নৈতিক এবং অনৈতিক পন্থায় অর্থ উপার্জনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অভাব পূরণ হলেও মানুষ সন্তুষ্ট থাকতে পারেনা। আরামপ্রদ ও বিলাসজাত পণ্যের জন্য অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করতে গিয়ে মানুষের মনুষ্যত্ববোধটুকুও নষ্ট হয়ে যায়। সমাজের পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে অনেকে বিলাসী জীবন চাই। বিলাসী জীবনযাপনের জন্য অর্থ চাই। অর্থ উপার্জনটা হতে হবে যে কোন উপায়ে।
বিত্তবান হয়ে সমাজের দশজনের বাইরে নিজেকে আলাদাভাবে পরিচয় দেয়ার প্রতিযোগীতায় সবাই ব্যস্ত। এই ব্যস্ততা সব সময় মানুষকে সুখী করতে পারেনা। অর্থবিত্তের চাপে পিষ্ট হয়ে অনেক মানুষ অসুখী হয়ে যায়। পরিবার এবং সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অতিরিক্ত অর্থ সম্পদ মানুষকে শান্তিতে ঘুমাতে দেয়না। যদি সে অর্থ অবৈধ পথে উপার্জিত হয় তাহলে সে অর্থ অনর্থের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সমাজের সবাই সমভাবে বেঁচে থাকার মধ্যে এক অন্যরকম অনুভূতি আছে। সমাজের কল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করার মাঝে এক আত্মতৃপ্তি থাকে। দশের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত অর্থের দরকার হয়না।
জনগণের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণই একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব। রাষ্ট্রের পাশাপাশি ধনাঢ্য ব্যক্তিদের দায়িত্বও কম নয়। ভোগ বিলাসী জীবনযাপনে সাময়িক সুখ ভোগ করা যায়। সুখের রাজ্যে প্রবেশ করতে হলে ত্যাগের মানসিকতা দরকার হয়।
শিবখেরার মতে“পৃথিবীতে দু’রকমের মানুষ আছে। একরকম যারা সব কিছু গ্রহণ করে,দুই, যারা সবকিছু দিয়ে দিতে পারে। যারা নিতে জানে তারা খায় ভালো;আর যারা দিতে জানে তারা ঘুমোয় ভালো। যারা দিতে জানে,তাদের আছে প্রখর আত্মমর্যাদাবোধ,একটি ইতিবাচক মনোভাব এবং তারা সমাজ সেবায় আগ্রহী।”
সমাজ সেবা সবার জন্য উন্মুক্ত। মানুষ চাইলেই দশের সেবায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে পারে। শুধু দরকার সুস্থ মানসিকতার। নিজের ধন সম্পদে সবাই তৃপ্ত হতে পারেনা। অন্যের বিলাসী জীবন দেখে অনেকে অতৃপ্তিতে ভুগে। নিজেকে অসুখী মনে করে। না পাওয়ার বেদনা তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। অসুখী ব্যক্তিরদ্বারা কোন মহৎ কাজ হয়না।
“মানুষ নিজেই নিজেকে অসুখী মনে করে,তার কারণ সে সর্বদা ব্যর্থতার হিসাব করে। জীবনটাই যে মস্ত বড় পাওয়া এটা সে মৃত্যুর আগে বুঝতে পারেনা।” লুথার হাম
সুস্থ সবল দেহ মন নিয়ে সাধারণ জীবনযাপন করাটাই প্রকৃত সুখ।
প্রভাষক, লাউর ফতেহ্পুর ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ কলেজ
নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।