প্রতিদিনের মতো আজও ঠিক নয়টা বেজে পনেরো মিনিটে বাসা থেকে বের হলাম স্কুলের উদ্দেশ্যে। সাথে আমার প্রিয় নীল সাইকেলটা রয়েছে। ঠিক ১০টায় ক্লাস শুরু হলেও একটু আগে স্কুলে পৌঁছাতে হবে। কারন আগে যেতে না পারলে, নিজের পছন্দ মতো বেঞ্চে বসা যায় না ! বৈশাখে যেই পরিমাণ গরম পরে, এই গরমে রোজ রোজ স্কুলে যেতেও মন টানে না। কিন্তু কি আর করার ? স্কুলে না গেলেও যে আব্বুর হাতে মার খেতে হবে ! তাই বাধ্য হয়ে যেতে হয় মন না চাইলেও।
১৫ মিনিট প্যাডেল মারার পর অবশেষে পৌঁছে গেলাম স্কুলের মাঠে। মেহগনি গাছের সাথে সাইকেল তালা মারছিলাম, হঠাৎ পিছন থেকে ডাক এলো ! মামা! জানিনা ক্লাসের সবাই কোন আনন্দে আমাকে 'মামা' বলে ডাকতো ! পিছন ফিরে দেখি করিম চাচা। মুখে মুচকি হাসি নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। তার পিছু পিছু মনির আর সেলিমও রয়েছে। আসলে করিম আমাদের চেয়ে বয়সে একটু বড় ছিলো। তাই ক্লাসের সবাই ওকে করিম চাচা বলেই ডাকতো ! তিনজন একসাথে এসে আমাকে ঘিরে ধরলো। আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ওরা জানালো যে, আজ ক্লাস করবো না ! স্কুল ফাঁকি দিয়ে এক গ্রামের দিকে ঘুরতে যাবে। সেখানে নাকি বড় বড় পুকুর, খেলার মাঠ, আখের বাগান আর অনেক নারিকেল গাছ আছে। সেখান থেকে ডাব আর আখ চুরি করে খাওয়া যাবে !
এতক্ষণে বুঝলাম ওদের উদ্দেশ্য। বাটপারগুলো কেনো একসাথে এসে আমাকে ঘিরে ধরলো সেটার মানে বোঝবার আর বাকি রইলো না আমার। ক্লাস নাইনের ছাত্র ছিলাম তখন আমরা। প্রতিদিন ক্লাস করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো আমাদের জন্য। সামনেই এস. এস. সি পরীক্ষার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে হবে আমাদের। কারন একটাই, সেটা হলো ভালো রেজাল্ট করতে হবে। বাসা থেকে সবার একটাই চাওয়া। ভালো রেজাল্ট করলে নাকি মোটরসাইকেল কিনে দিবে পাশাপাশি ঢাকার ভালো একটা কলেকে ভর্তি করে দিবে আরো কতো কি লোভনীয় অফার !
ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে যাবার উত্তরে আমি না বলাতে তিনজনেই রাগ করলো আমার ওপর। ভবিষ্যতে আমি যদি তাদেরকে কোথাও নিয়ে যেতে চাই, তখন তারা নাকি আমার সাথে যাবেনা সাফ জানিয়ে দিলো। কি আর করার বাধ্য হয়েই রাজি হয়ে গেলাম। সারা দিলাম ওদের অযৌক্তিক ডাকে ! আমাকে ছাড়া নাকি এই ভ্রমণ-অভিযান জমবেই না ! তাহলে তো যেতেই হয়। এটাই তো বন্ধুত্ব।
ইমরান খান রাজ
শিক্ষার্থী, শেখ বোরহানউদ্দিন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজ।
ঠিকানাঃ সাতভিটা, নারিশা, দোহার-ঢাকা ১৩৩২