আমরা পৃথিবী নামক যে গ্রহে আজ বসবাস করছি তার বয়স আনুমানিক সাড়ে চারশ কোটি বছরের বেশি। সূর্য থেকে ছিটকে পরা অগ্নিপিন্ড থেকে সৃষ্টি আমাদের এই পৃথিবী। পৃথিবী থেকে সূর্যের দুরত্ব ১৪.৯৬ কোটি কিলোমিটার। উত্তপ্ত অগ্নিপিন্ড থেকে তাপ বিকিরণের মাধ্যমে ক্রমশ ঘনীভূত হয়ে তরল অবস্থা প্রাপ্ত হয়। পরে এই পিন্ডটি বাইরের দিক থেকে ভিতরের দিকে ক্রমশ কঠিন হতে থাকে এবং উদ্ভূত জলীয় বাষ্প থেকে মেঘের সৃষ্টি হয়। মেঘ থেকে বৃষ্টি হওয়ায় পৃথিবীর কঠিন বহিঃস্তরে জলভাগ অর্থাৎ সমুদ্রের আবির্ভাব ঘটে। এরপরে ধীরে ধীরে শীতল পৃথিবীতে তৈরি হলো পাহাড়,পর্বত। সমুদ্রের পানিতে সর্বপ্রথম প্রোটোপ্লাজমের মাধ্যমে প্রাণের আবির্ভাব ঘটে ।
পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরে। বিকিরণ পদ্ধতিতে সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগে ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড। শক্তির মূল উৎস সূর্য। পৃথিবীতে নানা রকমের জিনিস দেখতে পাওয়া যায়। প্রকৃতিতে প্রাপ্ত ৯৮টি (মোট ১১৮ টি,প্রকৃতিতে প্রাপ্ত ৯৮ টি) মৌলিক পদার্থের সমন্বয়ে হরেক রকম জিনিস তৈরি। যেমন-প্রকৃতিতে প্রচুর পমিাণে পানি পাওয়া যায়। এই পানি দুই ভাগ হাইড্রোজেন ও একভাগ অক্সিজেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌগিক পদার্থ। কঠিন এবং তরল পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত ভূপৃষ্ট হলো আমাদের পৃথিবী।
পৃথিবীতে তেরো লক্ষ প্রাণী প্রজাতি এবং চার লাখের মত উদ্ভিদ প্রজাতি শনাক্ত হয়েছে। পৃথিবীর আদিমতম প্রাণী হচ্ছে এ্যামিবা। এ্যামিবা এককোষী প্রাণী। খালি চোখে এদের দেখা যায়না। অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে এদেরকে দেখতে হয়। জীব প্রজননের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে। জীবের প্রজনন হয় দুইভাবে, যৌন এবং অযৌন। বিবর্তনের মাধ্যমে নতুন প্রজাতির উদ্ভব হয়। আবার অনেক প্রজাতি কালের গর্ভে হারিয়ে যায়। যেমন-ডাইনোসর। ডাইনোসর প্রজাতির প্রাণী প্রকৃতির সাথে খাপ খাওয়াতে না পারার কারণে পৃথিবী থেকে তার বিলুপ্তি ঘটেছে। যে জীবের টিকে থাকার ক্ষমতা যত বেশি,সে বিবর্তনের আবর্তে তত বেশি দিন টিকে থাকতে পারে। পরিবেশ ও জীবনপ্রবাহের সাথে যে যত বেশি খাপ খাওয়াতে পারবে সেই প্রজাতিটি টিকে থাকবে। লড়াই সংগ্রাম করে প্রকৃতিতে টিকে থাকতে হয়।
বেঁচে থাকার জন্য উদ্ভিদ ও প্রাণীর খাদ্যের প্রয়োজন। সৌরশক্তির মাধ্যমে উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য সংগ্রহ করে। প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। উদ্ভিদ ও প্রাণী একে অন্যের পরিপূরক। বেঁচে থাকার জন্য একে অন্যের উপর নির্ভরশীল।
মানুষ তেরো লক্ষ প্রাণী প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত বহুকোষী জীব। জীবের জন্ম আছে আবার মৃত্যু অবধারিত। প্রকৃতি থেকে জন্ম আবার প্রকৃতিতে বিনাশ। জীবের শুধু মৃত্যু হলে পৃথিবী থেকে একসময় সেসব প্রজাতির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেত। কিন্তু তা হয়না। কারণ একদিকে জীবের মৃত্যু ঘটছে,অন্যদিকে প্রজননের মাধ্যমে জীবের বংশবিস্তার হচ্ছে। মানুষ এমনই একটি জীব যার জন্ম যেমন রয়েছে,আবার মৃত্যুও তার জন্য অবধারিত। মানুষ প্রজননের মাধ্যমে তার প্রতিরুপ সৃষ্টি করে ভবিষ্যৎ বংশধর রেখে যায়। মানব জন্ম মৃত্যুর মাধ্যমে তার সমাপ্তি ঘটায়। সকল জীবই হয়তবা মৃত্যুকে ভয় পাই। মৃত্যু থেকে নিজেকে আড়ালে রাখার চেষ্টা করে। রোগ,ব্যধি মানুষকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাই। আকস্মিক দুর্ঘটনায় ও মানুষ মৃত্যুবরণ করতে পারে। অদৃষ্টের লিখন কেউ খন্ডাতে পারেনা। মানুষ তার মেধা,বুদ্ধি,অর্থ,সম্পদ,শক্তি সামর্থ্য পুরোটায় ব্যয় করে বেঁচে থাকার জন্য। কিন্তু মৃত্যুকে আড়াল করতে পারেনা। অবশেষে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়। রক্ত মাংসের দেহ প্রকৃতিতে বিলীন হবে। মৃত্যুর মাধ্যমে জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে। অসহায়ভাবে মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হয়। মৃত্যুর মাধ্যমে জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটলেও জীবনের সার্থকতা মৃত্যুতে নিহীত। হাজার বছর বেঁচে থাকার মধ্যেই জীবনের সার্থকতা থাকেনা। সকল জীবকেই মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন-“ যদি মৃত্যু না থাকিত, জগতের যেখানকার যাহা তাহা চিরকাল সেইখানেই যদি অবিকৃতভাবে দাঁড়াইয়া থাকিত, তবে জগৎটা একটা চিরস্থায়ী সমাধি মন্দিরের মতো অত্যন্ত সংকীর্ণ, অত্যন্ত কঠিন, অত্যন্ত বন্ধ হইয়া রহিত। মৃত্যুর অভাবে কোনো বিষয়ে কোথাও দাঁড়ি দিবার জো থাকিত না।”
প্রভাষক, লাউর ফতেহপুর ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ কলেজ
নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।