একটা সময় ছিল যখন নারীরা অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিল৷ একজন নারীর কাছে নিজের জীবনের থেকে তার পর্দার মূল্য বেশি কিংবা একজন নারী ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হওয়া সত্বেও সাহায্য চায় না কারণ তার মধ্যে একটা কুসংস্কার ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যে পুরুষ মানুষ তার কণ্ঠস্বর শুনলে এটা শুধু তার জন্য ভীষণ অসম্মানের বিষয় নয়, রিতীমত অপরাধ। তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের অবরোধের যে একেক রকম বিশ্লেষণ ছিল তা জানলে বর্তমান প্রেক্ষাপটের যে কারোরই লোম শিউরে উঠবে।
সেসময় নারীরা পালকিতে ভ্রমন করতো। পালকির উপর যথাক্রমে (১) বানাতের পর্দা দ্বারা প্যাক করে, (২) তাহার উপর মোম জমা কাপড় দ্বারা সেলাই করে, (৩) তাহার উপর খারুয়ার কাপড়ে ঘিরিয়া সেলাই করে, (৪) তাহার উপর বোম্বাই চাদরের দ্বারা সেলাই করে, (৫) অত:পর সর্বোপরি চট মোড়াই করে পালকি ভ্রমণ করানো হতো। আর তা যদি দূরের পথ হয়, তাহলে পালকি সহ মালগাড়িতে ভ্রমণ করতে হত। বেগম রোকেয়া তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় পর্দার এমন বাড়াবাড়ি অযৌক্তিক বলে মনে করেছেন। তবে বঙ্গদেশে সকলেই এমন তা নয়, শুধু অভিজাত সমাজেই এর বাড়বাড়ন্ত ছিল বেশি।
একটা গল্প এরকম ছিল যেখানে একজন নারী আগুনে পুড়ে মরে কিন্তু সাহায্যের জন্য আওয়াজ করে না। কারণ সামনে ছিল পুরুষ মানুষ। সামনে যেহেতু সে যেতে পারবে না এবং পুরুষ মানুষের সাথে কথা বলতে পারবে না বিধায় আগুনে পুড়ে যে নিজের জীবন দিয়ে দেয়। এভাবেই কখনও আগুনে পুড়ে, অন্ধ হয়ে, ট্রেনে কাটা পড়ে তারা পর্দার মান রক্ষা করেছে। শুধু পুরুষ মানুষ নয়, বাড়ির বাইরের মহিলাদের কাছেও কঠোর পর্দার বিধান ছিল তখন।
এরকম কিছু কুসংস্কার, যেটা তৎকালীন সমাজের নিয়ম কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে সামাজিক নির্যাতন সেরকম কিছু শিহরণ জাগানো ঘটনা উঠে এসেছে বইটিতে যা থেকে আমরা তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের অবস্থা এবং অবস্থান সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে সক্ষম হই।
বই: অবরোধ বাসিনী
লেখক: বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন
আলোচনায়-
মোছাঃ নুসরাত জাহান
শিক্ষার্থী, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ
অনার্স ৩য় বর্ষ (ইংরেজি বিভাগ)
রাজারহাট কুড়িগ্রাম