শহীদ দিবস তাই ।। ফাতেমা আক্তার

 

মা বাজান  রে কও না আমারে ১০ টা টাকা দিতো.... ছোট ১৩ বছরের মেয়ের কন্ঠ শুনে পেছনে তাকালো মরিয়ম,,,  পুকুর পাড়ে কাপড় কাচছিলো সে,,, ১০ টাকার কথা শুনে বিরক্ত হয়ে মেয়ের দিকে কড়া নজরে তাকালো সে,,,  অভাবের সংসার টেনেটুনে ও এখন কোন ভাবেই চলছে না তার উপর মেয়ের এমন আবদার তাও এক নয় দুই নয় পুরো দশ টাকা,,,  পাড়ে উঠে মেয়েকে একটান দিয়ে কাছে এনে ঝংকার দিয়ে মেয়েকে শুধালো মরিয়ম,,  কিরে" পায়রা " দশ টাকা দিবে কি করবি শুনি...??  আর এতো টাকা তুই জীবনে কখনও এক সাথে হাতে নিয়ে দেখোছিস নাকি.? তবুও ছোট্ট মেয়েটি ভাঙা ভাঙা  গলায় বললো মা তুমি কইলে তো বাজান না করবো না,,  তুমি তো বাজানের থাইক্কা জিনিস সদাইয়ের জন্য টাকা লও রোজ,, আমারে ১০ টা টাকা দিতে কও না মা!! মরিয়মের মেজাজ টি এবার পুরোপুরি খারাপ হয়ে গেলো ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে চুলের মুটি ধরে টান দিয়ে ধরে,,সংসারের অভাবের লিস্টি টা বাচ্চা মেয়ে কে শুনিয়ে দিয়ে চলে গেলো কাপড় মেলতে,,, এদিকে পায়রা অপেক্ষা করতে লাগে ওর বাবা কখন বাড়ি আসবে,,,, দুপুরের দিকে রজিম মিয়া ভাত খাইতে বাড়ি আসলে মরিয়ম তুমুল ঝগড়া বাঁধিয়ে দেয়,,,  কারন টা হলো ঘরে চাল না থাকায় আজ ভাত চড়াতে পারেনি সে অভাবের সংসার হলেও ' পায়রা রা ৬ ভাই বোন ৪ বোন দুই ভাই,,  রাতের কিছু পান্তা ভাত আর শুকনো মরিচ থাকায় সকালে বাচ্চাদের মুখটা আপাতত সময়ের জন্য বন্ধ করতে পেরেছে মরিয়ম,, কিন্তু এই দুপুর বেলাতে তার নিজেও ক্ষিধে তে মাথা নষ্টের উপক্রম,,  রমিজ মিয়া কিছু না বলেই ভ্যান গাড়ি টি নিয়ে বেড়িয়ে গেলেন,,,  আসলে রমিজ মিয়া একজন ভ্যান চালক
' পায়রা র আর ১০ টাকার কথা বলা হলো না বাবা কে,,, রাতে রমিজ মিয়া বাজার থেকে কিছু চাল আর বেগুন নিয়ে আসলে মরিয়ম ভাত আর বেগুন সেদ্ধ করে বাচ্চাদের পাতে দিয়ে নিজের পেঠেও একটু খানি খাবার দিয়ে শুয়ে পড়ে,,,  সবার চোখে ঘুম শুধু " পায়রা' র  ছাড়া সারা রাত এ পাশ ও পাশ করে কাটিয়ে দিলো সে ,, ভোর রাতেই পায়রা ধীরো পায়ে ঘুম থেকে উঠে ফিসফিস করে তার  সেজো বোন "আয়না "কে  ডেকে তুলে বাহিরে নিয়ে আসে,,,  আয়না ফিসফিস করে  জানতে চায় এতো রাতে পায়রা কোথায় যাবে তখন পায়রা ওকে ইশারায় চুপ করতে বলে ও কে অনুসরন করতে বলে,,,  একটা সময় পর ওরা এসে পৌছায় শেখ বাড়ির ফুলের বাগানের পাঁচিল টার সামনে,,,  আয়না কে বাহিরে দাঁড় করিয়ে পায়রা পাঁচিল টপকে ভেতরে গিয়ে তিনটি জবা,, দুইটি গোলাপ আর খান কতক নয়ন তাঁরা ফুল ছিঁড়ে যখন বেরিয়ে আসছিলো তখন শেখ বাড়ির কুকুড়ের হাক ডাকে দারোয়ান চলে আসলে দৌড়ে দেয়াল টপকাতে গিয়ে অসাবধানতা বসতো পায়রা নিচে পড়ে ওর মাথা ফেটে যায় ওড়নায় বাধা ফুল গুলোও নিচে পড়ে যায়,, পায়রার মাথায় রক্ত দেখে আয়না এক দৌড়ে বাড়ি চলে যায় খবর দিতে,,   সবাই চলে এসে দেখে পায়রা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে,,,  সকালে ওর বাবা এসে ও কে ভ্যানে করে হসপিটালে নিয়ে যেতে লাগলে ভাঙা ভাঙা গলায় পায়রা ওর বাবা কে ডেকে  বলে বাজান ফুল গুলো সাথে করে লও , তখন  অবাক হয়ে শেখ বাড়ির বড়ো বাবু কারন টা জানতে চাইলে পায়রা বলে- আজ যে ২১শে  ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা   দিবস - আজকে আমি শহদী মিনারে ফুল দিতে যাবো কারন তারা যে ভাষার জন্য  শহীদ হয়ে ছিলেন এই দিনে- মায়ের কাছে ১০ টাকা চেয়েছিলাম ফুল কিনবো  বলে, ফুল চাচা আমারে বলছিলো ফুলের দাম ১০ টাকা,,  মা দেয় নি টাকা  তাই চুরি করে ফুল নিতে এসেছিলাম ভোরে।

(শহীদ দিবস তাই ।।  ফাতেমা  আক্তার)
নাম- ফাতেমা আক্তার 
পিতা- মোহাম্মাদ জয়নাল আবেদীন 
মাতা - সাহেনা বেগম
ঠিকানা- সিলেট মৌলভীবাজার সদর
প্রকাশিত বই :কলম রহস্য
অনুভবে বাংলাদেশ ( যৌথ কবিতার বই) 

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।