ঘুষি বিষয়ক জটিল বাক্য ।। মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ

 




কেউ ঘুষি মেরেছে;এটা বলা আপাতত নিষেধ।কেউ কেউ বলবেন,আপনি ঘুষি খেলেন-- হয়তো বা, --এটার আপনি প্রাপ্য ছিলেন।বিষয়টা তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে না করলেই ভালো।আর ভিআইপির হাতের ঘুষি বড় স্বাস্থ্যকর।
সিনেমাটিক ঘুষির বদৌলতে অনেক নায়ক একটা সময় মানুষের সার্বজনীন ভালোবাসা পেয়েছে। নায়িকাকে উদ্ধার করতে ঢিশুম-ঢিশুম ফাইটারদের আকাঙ্খা সবাই করেছে।ওটা তখন বৈধ ছিল। এখনো বৈধ।তবে শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলেদের সংখ্যা কমে গেছে। ঘুষির চাইতে মনে হয় কোনো আময়িক প্রয়োগ নেই।ধুমধাড়াক্কা সিনেমা সহ মিডিয়ার যতগুলো ম্যুভি আছে সবগুলোতে ঘুষির দুর্দান্ত আবশ্যিকতা।মোবাইলের সীমাহীন এমবির গুণে শিশু,কিশোর, বুড়ো বুড়ির মধ্যে ঘুষির দৃশ্য এভেইলেবল।ঘুষির এ-ই দৃশ্য তাদের জন্য দারুর মতো উপভোগ্য। এটা তাদের প্রলুব্ধ করে। নেশাগ্রস্ত করে। সারাদিনের কাজকর্ম ফেলে কেবল কয়েক ইঞ্চি মনিটরে চোখ আটকে যায়।সরে আসা ভুলে যায়।
কেউ ঠাউরাবেন-- এটা নতুন প্রজন্মের দুর্ভাগ্য।ভাগ্যের লিখন কি খণ্ডাতে পারবেন?
তারচে বরং চেপে যান।সব ঠিক হয়ে যাবে।
গেলেন চেপে।
মুখ বন্ধ। কিন্তু,আগ্নেয়গিরির আগুন তো জ্বলছেই।
জ্বলবেই।
এইযে বেমক্কা ঘুষিটা খেলেন এটার দাম কিন্তু কোটি টাকা।এরকম ঘুষি খেতে পারে কয়জনা।
অফিসার কোটি টাকার কাজটি পাইয়ে না দিলে পাড়াতো, মামার জেঠাতো ভাস্তের বলী সাইজের শক্তি সমৃদ্ধ ঘুষি আপনাকে হজম করতে হবে।আপনি যে নরমপন্থার লোক,সেটা ঘুষিঅলা জানে।আপনার দৌড়ের গতিবেগ, সরন,ত্বরন নিয়ে তার ইকোয়েশন ক্লিয়ার ।তাই সে নিশ্চিত হয়েই কাজটা সেরেছে।
চলমান ধ্যানধারণার বশবর্তী হয়ে কতিপয় মানুষ তাই ঘুষির মুদ্রা রপ্ত করেছেন।ঘুষির উপাদানে পুষ্টির অবস্থান চিহ্নিত করতে পেরেছেন। নিরলস উৎসাহ উদ্দীপনা প্রয়োগ করে চলেছেন। যখন তখন, যার তার নাকে, মুখে তার এপ্লাই চলেছে দেদার।যার কোনো জবাবদিহিতা নেই। নেই কেনো মার্জিন বা গাইডলাইন।লাগাম ছাড়া এ-ই সংক্রমণ অফিসপাড়া থেকে হাটে,ঘাটে,মাঠে-- সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। 
একটু যদি ভুল করেছো,অমনি পড়ে লাঠির বারি-- 'গরু' নিয়ে যতীন্দ্র মোহন বাগচির ছড়া কব্যের আদলে ঘুষির হরদম চর্চায় অথবা ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের ---মোরা সব কল্পতরু,শিখিনি শিং বাঁকানো,মোরা ভুষি খেলেই খুশি হবো--- ঘুষি খাবোনা--- এখানেও নমনীয় সাপোর্ট, ঘুষির পক্ষে । শিং থেকেও আমরা শিং বিহীন প্রাণী।মেরুদণ্ড আছে।সেটা অকার্যকর।  
আপনি ভুল করেছেন, বা না করেছেন,ঘুষির সফল প্রয়োগের অনাবিল তৃপ্তির হাসি ঘুষিদাতাকে ভীষনভাবে অনুপ্রাণিত  করবে এটা নিশ্চিত।সে সোৎসাহে ঘুষির সিরিজ আক্রমণ নিয়ে এগিয়ে যাবে।
তাই ঘুষির অবারিত মহোৎসব। ওপরতলার ঘুষি নীচতলার নাক বরাবর। উচ্চবিত্ত ঘুষি মারে নীচুতলার হৃদপিণ্ড বরাবর।ধনিক শ্রেণির ঘুষি হত দরিদ্রদের পেটে।
প্রতিষেধক নেই। প্রতিরোধে কর্মসূচি নেই। প্রত্যাহারের সম্ভাবনা নেই।
বড়কর্তা অফিসের লোকবল ও জনমতক  প্রভাবিত করে নিয়্যত করে ফেলেছেন তিনি অনুগতদের ডেকে ঘুষি মারবেন, ব্যস--- নিরবে,ভদ্রোচিত আচরণের ব্যক্তিটি গনতান্ত্রিক নিয়ম মেনেই ঘুষি খেলেন। এতে তার কোনো ক্ষেদ নেই। বেদনা কিংবা  প্রদাহ নেই। থাকলেও বলা যাবেনা।বুক ফাটলেও মুখ খোলা বারন।
অবশ্য সমকালীন প্রেক্ষাপটে ভাইরাল হবার একটা যৌক্তিক উপলক্ষ আছে।একবার ভাইরাল হতে পারলেই হয়।ঘুষি মেরে,ঘুষি খেয়েও ভাইরালের সুযোগ আছে ভার্চুয়ালি।আর বিলিওন-- বিলিওন লাইক,কমেন্ট, ফলোয়ারের বন্যায় ভাসে গোটা সামাজিক মঞ্চ এবং ট্রলের তলোয়ারে কোপাকুপি আপনাকে সেলিব্রেটি করে ফেলবে সন্দেহ নেই।
দেশি-বিদেশি চ্যানেলের বদৌলতে আমরা সবাই ঘুষিময় সময়ের মুখোমুখি। সহজলভ্য এ-ই দৃশ্যপট অশোভন। অস্বস্তিকর।মনবিরুদ্ধ।ক্ষতিকর। মনোজগতকে এ-ই বিষয়ের কবল থেকে মুক্ত রাখার আপ্রাণ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলেই জীবনের তৃপ্তিদায়ক পাতাগুলো গজিয়ে উঠবে বিবেকের  গাছে গাছে।


(লেখক - কবি,গল্পকার,প্রাবন্ধিক) 
ঠিকানা--
প্রগতি হোমিও ফার্মেসী,
শ্যামগঞ্জ বাজার,
ময়মনসিংহ,
বাংলাদেশ।

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।