সরমা আমার বাড়িতে যে পথ দিয়ে রোজ কাজে আসে,সেই পথেই সে দেখেছিল,
একটা ঝকঝকে ডায়েরি ডাস্টবিনের সামনে পড়ে আছে। দেখে সরমার কৌতূহল হলো। সরমা ডায়েরিটা তুলে নিয়ে খুলে দেখে তাতে অনেককিছু লেখা। সেটা নিয়ে আমার বাড়ি এসে
আমার হাতে দিয়ে বলল দেখ দিদি এই ডায়েরিটা ডাস্টবিনের পাশে পড়েছিল।তুই সেখান থেকে এটা তুলে আনলি আমি ঘৃণাভরে তাকে বলি।দূর
করে দে। আমায় ছোঁয়াস না ছোঁয়াস না।
সরমা কুন্ঠিতভাবে বলে না গো দিদি ডাস্টবিন থেকে নয়।আমি স্যানিটাইজ করে দিচ্ছি।
আস্তাকুঁড় থেকে আনা বলে আমার সংকোচ হয়।
আমি বললাম না না ওটা তুই ফেলে দিয়ে আয়
আমি ধরব না।
সরমা বলে ডায়েরিটার মধ্যে অনেককিছু লেখা
আছে গো দিদি। তুমি তো লেখ তাই তোমার জন্য
নিয়ে এসেছি। যদি কোন কাজে লাগে তোমার।
আমি এবার কৌতূহল ভরে বলি, বারন্দায় চেয়ারের নীচে রেখে দে।স্নানের আগে দেখে নেব।
যা তুই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে কাজে লেগে পর।
স্নানে যাওয়ার আগে আমি ডায়েরিটা খুলে দেখি।
পড়ে ভাবলাম,কোনো বিশেষ বিশেষ স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ডায়েরিটা ব্যবহৃত হয়েছিল।
খুলে দেখি কোন নাম লেখা নেই তাতে।
মনে হল, নতুন ফ্ল্যাটে হয়তো এটার আশ্রয় জোটেনি, জায়গা হয়েছে ডাস্টবিনে । অবাক হলাম তার মানসিকতায় যে এটাকে ডাস্টবিনে সাজিয়ে রেখে গেছেন।
প্রথম পাতা খুলে দেখি কিছু একটা লেখা ছিল। হিজিবিজি করে কাটা কিছু পড়া গেল না।
আরও কয়েক পাতা উলটে দেখা গেল
যা লিখেছিলেন তিনি,
এই জীবন নদীর মত গতিহারা দিশাহারা
মনে বয়ে চলে অবিরত ভালোবাসার স্রোতধারা ।
নীলাকাশ সমান হৃদয় জুড়ে স্নিগ্ধ শীতল নদীর
জলে জোয়ার ভাটায় মনের অস্থিরতা। চলতে
চলতে মোহনায় মেলে শেষে। সে আর এক গভীর
উত্তাল জলরাশি। যা জীবনকে করে তোলে উত্তাল
ঢেউয়ের মতো। ঢেউ গুলো সাজানো স্বপ্ন। সমুদ্রতটে,আছড়ে পড়ে ভেঙে যায় স্বপ্ন। আবার
সাজায় স্বপ্ন। এই সমুদ্রও জীবনক্যানভাস। মন
হাতরায় যদি পাওয়া যায় সেই মুক্ত। কেউ পায়
সেই ঝিনুক যাতে বন্দী সেই মুক্ত। আবার কেউ
পেয়েও হারায় সেই ঝিনুক। এক আকাশ হৃদয়ে
জমে মেঘ। যেখানে আকাশ মেশে সমুদ্রে।
জীবন ক্যানভাস ভেসে বেড়ায় নীলাকাশ হৃদয়ে
নীলসমুদ্র সমান উদার বড় গভীর মনের সন্ধানে।
এরপর অনেকগুলো পাতা ফাঁকা। তারপর একজায়গায় লেখা --
'মাঝে মাঝে কেন এমন যে হয় জানি না। মনে হয় সত্যি কি দুজনেই কেউ কারো নয়, সময়ের প্রয়োজনে জীবনে হয়তো কেউ একজন আসে, আবার হারিয়ে যায় তাকে ধরে রাখা যায় না।এটাই কি নিয়তি? বাস্তবের কঠিন আঘাত অনেকে সইতে পারে না। '
ডায়েরি আমি আর একবার স্যানিটাইজ করে
টেবিলে রেখে স্নানে গেলাম। ভাবলাম খাওয়া
দাওয়া সেরে বিকেলে ঘুম থেকে উঠে পড়ব।
ঘুম থেকে উঠে চায়ের কাপ নিয়ে বসে ডায়েরিটা
খুলে দেখলাম একজায়গায় লেখা আছে,
--
জীবনে আবেগ মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করে। যুক্তি মানুষকে সঠিক পথ দেখায়।
আরও কয়েক পাতা পরে লেখা --
'পৃথিবীতে কারো আপন হওয়াটা খুব সহজ, কিন্ত কাউকে আপন করে পাওয়াটা খুব কঠিন।'
আজকাল ভালবাসা বড় ঠুনকো। ভালবাসার মানুষগুলো যখন তখন হারিয়ে যায়।
অকারণ ছোটছোট মনোমালিন্যের কারণে দুজনের সম্পর্কের মধ্যে একটা প্রাচীর গড়ে ওঠে,
কেউ সেটা ভাঙার চেষ্টা করে না।
হয়তো মনোমালিন্যগুলো কারো কাছে নিছক অভিমান ।
চায়ে চুমুক দিয়ে পাতা ওলটাতে ওলটাতে দেখি
একজায়গায় লেখা --
' বাস্তব বিচিত্র। প্রেমে সর্বদা একজন অপরজনকে অন্তর দিয়েই ভালোবাসবে এটা আশা করে। আর অন্যজন ভাবে সারাক্ষণ তার সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে।সে বুঝতেই চায়না ভালোবাসার মূল্য।
কে যেন কানের কাছে এসে বলতে থাকে,
শোন তুমি যদি ক্লান্ত হও, বিধ্বস্ত হও তবে খানিক
বিরতি নাও। তবে হাল ছেড়ো না।
কিছুটা অপূর্ণতা থেকেই যায়।
সব পেয়ে গেলে তো ইচ্ছেটাও মরে যাবে।
ইচ্ছার মৃত্যুতে জীবনের সব রঙ রূপ স্বাদ সব ফিকে হয়ে আসে।
আর এক চুমুক দিয়ে দেখি
লিখেছেন শুধু "জীবনের হাল টেনে যাওয়া"এভাবে,
হাল টেনে জীবন সময়ের স্রোতে
শূন্যে ঝুলে ঘোরে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে
পরিস্থিতি পরিবেশ সমাজের দর্পণে
পরিবর্তন আসে মানবের মননে।
দূরে সরে যায় স্বার্থ মগন আপনজন
পাশে শুধু রয় ভালবেসে সেই প্রিয়জন।
নিত্যদিন সংসারে চলে কত অভিনয়
মুখোশ পরে ভাল মানুষের দেয় পরিচয়।
বোঝা যায়না মুখের ভাষার সত্য বুলি
সত্যকে চেপে ঘাড়ে শ্বাস ফেলে মিথ্যের ঝুলি।
বর্তমান অতীতকে মনে চেপে রাখে
উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ছবি চোখে আঁকে।
আত্মহারা জীবন তরী প্রান্ত সীমানায়
দৃপ্তহাতে হাল টানে ভাসে অসহায়।
মাঝ দরিয়ায় তরী ডোবে হতাশায়
সূর্যও দেখি হেসে অভিমুখ বদলায়।
শেষে, উড়বে একদিন জয়ের পতাকা নিশ্চয়
দূর করে সব বাধা বিপত্তি ভয়।
তাই প্রথমেই
নিজেকে চিনতে হয় দৃঢ়চেতায়।
স্বীয় দীপ্তিতেই
অনুসৃত মার্গ স্নিগ্ধ শিখায়।
দুদিনের তরে এসে সবুজ পৃথিবীতে
ভুলতে হবে হিংসা রোষ বিদ্বেষ।
আবেগে প্রেম ভালবাসা জাগিয়ে হৃদে
গড়তে হবে সুন্দর জীবনের পরিবেশ।
ডায়েরিটা পড়তে পড়তে মনে হল তিনি লেখালিখি
করেন।
সাহিত্য জীবনেও বুঝলাম সম্পর্কের টানা পোড়েন
যখন কেউ বলে লেখাগুলো দারুণ হচ্ছে। আর সেই লেখায় সম্মান যেন বৃষ্টির মত ঝরে পড়ছে দেখে অনেকের মনে কালো মেঘ ঘনিয়ে আসে। তাদের গায়ে সেই বৃষ্টির
ফোঁটাগুলো যেন এসে বিঁধছে। তখন তারা সহ্য
করতে পারে না। নানা প্রশ্নে জর্জড়িত
করে ফেলে। ভেবে পাই না কি করব।
সারাদিন ধরে সরাসরি তাদের প্রশ্নের মুখে পড়ি
একবার কবিবন্ধু আর আমি দুজনে
একসাথে গল্প করতে করতে হেঁটে চলেছি।
বললাম একরাশ প্রশ্ন যদি থাকে তাকিয়ে আমি কি করে যাই তা এড়িয়ে? সে আমার দিকে
তাকিয়ে হাসে।
হেসে বলে, তুমি সত্যি হলে সে সত্যি। তুমি মিথ্যে হলে সে মিথ্যে।
আরও বলে, যা পেয়েছো তাই নিয়ে
খুশি থাক। যেটুকু পেয়েছ সেটুকু হারিয়ো না।
হারিয়ে গেছে যা আর তা পাবে না। আর যা পাওনি তা কখনও তোমার ছিল না।যেখানে জীবন আছে সেখানে আশা থাকবে।
ফুল ফোটে, দেখ না?
---ফুল ফুটলে তার সুবাস ছড়াবে চারিদিকে। এটাই অটুট সম্পর্কের লক্ষ্মণ।যেখানে নিঃসংকোচে গন্ধ বিলানো যায়।
কবি বন্ধু বলল, মন যতই উথাল পাতাল হোক
সম্পর্ক নষ্ট কোরো না। রূঢ় স্বরে আবার বলল,
কথাটা পছন্দ হল না। বন্ধুত্ব কি দুধ যে লেবুর রস পড়লেই ছানা কেটে যাবে?
আমিও প্রতি উত্তরে বলি মিষ্টি তো বটে?কবি বলে বন্ধুত্ব মাখন। লেবুর রসে স্বাদ বাড়ে।
অনেক আতি পাতি কথা হয়েছে জ্ঞানদাসুন্দরী। বলল কবি,এভাবেই চলুক তোমার সৃষ্টি। বেশ তবে তুমি বন্ধু হয়েই থাকো।ঠিক এইভাবে,তুমি হও মেঘ আমি হই বৃষ্টি।
তার লেখায় আমি মুগ্ধ হয়ে ভাবছিলাম
জীবনে পরিবর্তন আর যন্ত্রণা এই দুটো মেনে নিতে
পারলেই সুখী। অতীত এবং আগামীর ভাবনাকে
খামোখাই বসাতে যাই উচ্চ আসনে।বাঁচতে হলে
নিংড়ে নিতে হবে মুহূর্তকে।শুকিয়ে ফেলতে হবে
চোখের জল।রাত পোহালেই ভোর আসে। কিন্তু
কেউ জানে না কি অপেক্ষা করছে তার জন্য।মাত্র
ষাট সেকেন্ড সময় সঙ্গ দেয় এক মিনিট। ষাটসেকন্ডে পূর্ণ একটা মিনিট। জীবনে প্রতি মিনিট মূল্যবান। মিনিট দিয়েই গাঁথনি হয় জীবন।
সময় শাসন মেনেই জীবন কাঁদে হাসে। প্রতিবাদ
করলে সময় বদলে যায় নিজে। মুহূর্তে জীবন হয়
ইতিহাস। একটা মিনিট তারা খসার মতো খসে
যায়। মুহূর্তরা চমকে যেন টেরিয়ে তাকায়।
................................................
আমার পরিচয়
আমি সুচন্দ্রা বসু। আমার পরিচয় দিলাম।
জন্মস্থান-কলেজস্ট্রীট
(কলকাতা)
শিক্ষা _আমি স্নাতক (সি. টি কলেজ ডে।
কলকাতা)
শিশুকাল থেকেই সাহিত্য
অনুরাগী। বর্তমানে আমি
গৃহবধূ।লেখালিখির প্রেরণা
পাই কবি শংকর ব্রহ্ম মহাশয়ের কাছ থেকে।
বাস্তব জীবন এবং স্বপ্ন কল্পনার উপর বিশ্বাসী।
সাহিত্য আমার প্রেম ও প্রতিবাদের উপর
অনুরাগ।
বহু পত্রপত্রিকায় লেখা ছাপা হয়েছে ও হয় এবং
স্বাগতম কবিতা সংকলনে
দশটি কবিতা সংকলিত হয়েছে। বর্তমানে
হুগলীর শ্রীরামপুরে থাকি।সংসার
ছাড়া বাকী সময় সাহিত্য
নিয়ে কাটে।ভবিষ্যতে সাহিত্যে দাগ রেখে
যাওয়ার বাসনাই মন আশা রাখে।আমি অনুভবের আয়নায় সাহিত্য পত্রিকা ও সাম্প্রতিক সাহিত্য নামে এই দুটি গ্রুপের এডমিন। এই দুটি গ্রুপ আমি পরিচালনা করি।
ঠিকানা
সুচন্দ্রা বোস
২৬৭/৫ জি.টি.রোড
পানপাড়া শ্রীরামপুর হুগলি।