প্রকৃতি কন‍্যা ।। তাপস কুমার বর


        সেদিন বসন্তের বিকেল বেলায়,সোমলতা নির্জনে প্রকৃতির মাঝখানে বসে, একটা হলুদ পাখির দিকে তাকিয়ে কি ভাবছে? হঠাৎ আকাশে কালোমেঘ ছেয়ে এলো। সোমলতা তড়িঘড়ি করে বাড়ির পথের দিকে রওনা দিলো। কিন্তু ততক্ষণে আকাশে কালোমেঘে অঝোর ধারায় তীব্র বৃষ্টি নেমে এলো। অগত‍্যা সোমলতাকে ভিজে ভিজে বাড়ি ফিরতে হলো। সোমলতার মা সুচিত্রা ব‍্যানার্জী ও বাবা নরেদ্র ব‍্যানার্জী। মেয়ের বৃষ্টিতে ভেজা দেখে, সোমলতাকে বাবা ও মায়ের কাছে বকুনি খেতে হলো। সোমলতা পড়াশোনাতে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। কিন্তু তাঁর প্রকৃতি যেন প্রাণ। স্কুলের খাওয়ার পয়সা বাঁচিয়ে সে মাঝে মাঝে সুন্দর ফুল ও ফলের চারা কিনে নিয়ে আসে বাড়িতে। বাড়ির পেছনে সোমলতা গাছগুলোকে,মা যেমন শিশুকে যত্ন করে,তেমনি সোমলতা ফুল ও ফলের চারাগুলোকে অতি যত্নসহকারে গাছ লাগিয়ে নিজের প্রাণের স্পন্দন ফুটিয়ে তোলে। কয়েকটা মাস পর,.....

  "প্রকৃতির রূপ যেন সোমলতার হাতে বিরাজ মান, প্রাণ পেয়েছে গাছগুলো। ফুল ও ফলের গাছগুলো সবুজে সবুজে ভরে উঠেছে"!

- এইভাবে সোমলতা পয়সা বাঁচিয়ে সেই পয়সা দিয়ে চারাগাছ কিনে আনে। কখন যে সোমলতার হাতের স্পর্শে গাছগুলো আজ সবুজে সবুজে ভরে উঠেছে সোমলতার মা ও বাবা টের পায়না,একমাত্র সোমলতাই গাছের কষ্ট বোঝে। একদিন হঠাৎ সোমলতার মা বললো,.....

   "খুঁকি, তোর হাতে তো জাদু আছে রে মা, আজ গাছগুলো ফুলে-ফলে ভরে উঠেছে"!

- প্রতিদিন স্কুলে বেরোনোর আগে ও স্কুল থেকে এসে একবার বাগানে গিয়ে গাছগুলোকে দেখে আসবে সোমলতা। সে মায়ের মতো স্নেহ দিয়ে চারাগাছ গুলোকে লালিত-পালিত করেছে। সেই গাছের মধ্যে সবচেয়ে তাঁর প্রিয় গাছ "মহুয়া ফুলে"র গাছ। তাঁর সুগন্ধ সোমলতাকে ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে ডাকে। নিজের মনের কথাগুলো,.....

   "প্রকৃতির প্রান্তরে নিজের কথাগুলো বিলিয়ে দেয় তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে"!

- স্কুলের প্রধান শিক্ষক রমেশ চ‍্যাটার্জী সোমলতাকে বললো, খুঁকি মা, তুই প্রকৃতি কে খুব ভালোবাসিস না-রে। তাই তোকে আজ থেকে আমি একটা নামকরণ করলাম "প্রকৃতি কন‍্যা"! সেদিন সোমলতা এই নামকরণে ভীষণ খুশি,তাঁর প্রিয় শিক্ষক তাকে ভালোবেসে এই নাম দিয়েছে। সামনে সোমলতার উচ্চ-মাধ‍্যমিক পরিক্ষা। পরিক্ষার চাপে কয়দিন গাছগুলোকে যত্ন করতে পারেনি,.....

  "সোমলতা নির্জনে দাঁড়িয়ে বলে, তোদের খুব কষ্ট হয়েছে, কয়দিন আসতে পারিনি বলে"!

- পরিক্ষা শেষে সোমলতা, এক সপ্তাহের জন‍্য মামা বাড়িতে গিয়েছিল। এ দিকে সোমলতার বাবা, বাড়ির পেছনে, ঝিল বানানোর জন‍্য, সোমলতার সাধের বাগান ধ্বংস করে, ট্রাক্টর দিয়ে মাটি খুঁড়ে বড়ো ঝিল বানিয়েছিল মাছ চায়ের জন‍্য। এক সপ্তাহের পর মেয়ে যখন বাড়ি ফিরলো, বাড়ির পেছনে গিয়ে দেখে তাঁর সেই সাধের বাগান কোথায়? বাবার কাছে ছুটে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে? সোমলতার বাবা জানায়, সব গাছ কেঁটে ফেলা হয়েছে, ওখানের মাছ চাষের ঝিল বানানোর জন‍্য। সেদিন সোমলতা,পাথরের মতো নীরব। বাবার কাছে বার বার প্রশ্ন করেছে, এই জন‍্য তুমি আমাকে মামা বাড়িতে পাঠিয়ে আমার জীবনে এতো বড়ো ক্ষতি করলে বাবা। কেন তুমি এই কাছ করেছো? সোমলতাকে সেদিন তাঁর মা ও বাবা থামাতে পারেনি,.....

 "তাঁর সেই সাধের মহুয়া ফুলের গাছ, আজ নিথর, মাটিতে পড়ে কাঁদছে"!

- দুইদিন সোমলতা বাড়ির কারোর সঙ্গে কথা বলেনি। একদিন তার বাবা বললো, মেয়ের এতো জেদ ভালো নয়। সোমলতা সেদিন তাঁর বাবা ও মা-কে বলেছিল,পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ এই গাছের জন‍্য বেঁচে আছে বাবা। আমরা ওদের থেকে অক্সিজেন পাই। যা এক মুহুর্তের জন‍্য মানব শরীরে প্রবেশ না করলে সারা "মানব জগৎ" ধ্বংস হয়ে যাবে। তোমরা সেই গাছ গুলোকে নির্মম ভাবে ধ্বংস করেছো। গাছের উপকার জাননে তোমরা এই কাজ করতে না বাবা। সোমলতা কাঁদতে কাঁদতে, বললো,.....

  "আজ তোমরা গাছকে কেটে ফেলোনি, তোমরা তোমার মেয়েকে মেরে ফেলেছো বাবা। গাছ আমার শরীর-মন-প্রাণ"।

- সেদিন সোমলতার বাবা ও মা মেয়ের কথাগুলো জন‍্য খুব অনুশোচনা হয়েছে। পরদিন সকালে সোমলতার বাবা কয়েকজন লোক নিয়ে এসে সুন্দর করে একটা বাগান তৈরি করে দেয় মেয়ের জন‍্য। সোমলতার মা একগুচ্ছ চারাগাছ নিয়ে এসে মেয়ের হাতে তুলে দিয়ে বলে, "যা খুঁকি তোর প্রাণের জায়গায় ছুটে যা, ওরা তোকে ডাকছে"। সেদিন সোমলতা মনের আনন্দে চারাগাছ গুলো পুঁতেছিল। কয়েক মাস পর গাছগুলো ভালো ভাবে গজিয়ে উঠেছে সবুজ পাতায়। হঠাৎ বাগানের ডানপাশে চোখ পড়তেন, সেই মহুয়া গাছের গুড়ি থেকে কচি কচি সবুজ পাতায় মহুয়া ফুলের চারাগাছ গজিয়ে উঠেছে, সোমলতা এক দৌড়ে বাবা মা-কে ডেকে এনে বলে,....

  "দেখেছো তোমরা, আমার সেই ছোট্ট প্রাণ আজ সবুজ পাতা মেলে ধরেছে"।


ঠিকানা-

গ্রাম- সাগর কৃষ্ণনগর, পোঃ- সাগর কৃষ্ণনগর, থানা- সাগর, জেলা- দঃ ২৪ পরগনা,

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।