ভূতের বাড়ি ।। শুভজ্যোতি মন্ডল মানিক


নিধিরাম মাইতি নিরীহ প্রকৃতির মানুষ,জমিজমা না থাকায় অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান।ঘরে বাইরে চারজন লোকের সংসার,দুই ছেলে নিজেরা দু'জন।বয়স বাড়ছে স্মরণ শক্তি সামর্থ্য কমেছে আগের থেকে।বড় ছেলেটা বিয়ে করে আলাদা থাকে।ছোট ছেলের সাথে তেমন বুনি বনা হয়না,অনেকটা স্বেচ্ছাচারী জীবন বেছে নিয়েছে ;কাজেকর্মে  মন নেই;নেশা ভাঙ করে পড়ে থাকে। প্রতিদিন বাড়ীতে ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকে।ফাল্গুনী পূর্ণিমার রাত,ছোট ছেলে অনেক রাত করে ঘরে ঢুকেছে ;নিধিরাম মাইতি ছোট ছেলেকে বলে এতো রাত অব্দি বাইরে কি করিস?এতেই বাবুর মানে লাগে,বিশ্রী রকমের আচরণ করে বসে;এমনকি শারীরিক আঘাত পর্যন্ত করে নিধিরামকে।নিধিরাম মাইতি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন,অপমান সইতে না পেরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।ভোর রাতে সবাই যখন ঘুমে,গোয়াল হতে গরুর দড়ি খুলে পুকুরের পশ্চিম পাড়ে আম গাছে গলায় দড়ি দেয়।নিধিরাম মাইতির স্ত্রীর খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যেস।ঘুম থেকে ওঠার সময়  স্বামীকে দেখতে না পেয়ে কেমন সন্দেহ হয়,লোকটা গেলো কোথায়?আবছা অন্ধকার বাইরে,ঘর থেকে বেরোতেই দেখে পুকুরের পশ্চিম পাড়ে আমগাছটার ডালপালা নড়ছে।কাছে যেতে যেতে ঊর্মিলা রানী সজোরে চিৎকার করতেই লোকজন এসে নিধিরাম মাইতিকে গাছ থেকে নামায়।গাছ থেকে নামানোর সময় জিহ্বা মুখের ভিতর হতে বাহিরের দিকে,গোঙানির  শব্দ বের হচ্ছে;খানিক পরে নিঃশব্দ হয়ে যায়।নিধিরাম মাইতি মারা যাওয়ার পর বাড়ির পশ্চিম পাশটা দিনের বেলায়ও কেমন ঝিম মারা থাকে।রাতের বেলা নিধিরাম মাইতির ফুঁপিয়ে ফুপিয়ে কান্নার শব্দ শোনা যায়।নিধিরাম মাইতির শেষকৃত্য আমগাছটার গোড়ায় ই করা হয়েছিলো,অবশ্য আম গাছটি কেটে ফেলা হয়েছে।প্রতিদিন দুপুরে ওখানে ঘূর্ণি বাতাস ওঠে,দিনের বেলা একাকী ঘুমিয়ে থাকলে নাকে মুখে কে যেনো বালিশ চাপা দিয়ে ধরে এমনটা মনে হয়।নিধিরাম মাইতির বড় ছেলের ঘরে দুবছরের ফুটফুটে একটা ছেলে আছে,হাসে খেলে দৌড়ায়।একদিন নিধিরাম মাইতির ছেলের বউ রান্না ঘরে রান্নার কাজে ব্যস্ত,দু'বছরের ছেলে কোন ফাঁকে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেছে;সারা বাড়ি খোঁজার পরও খোঁজ মেলেনি।পরদিন ছেলের লাশ খুঁজে পাওয়া যায় ডোবার জলে যেখানে আমগাছে নিধিরাম মাইতি আত্মহত্যা করেছে।রাতে উঠোনের উপর ঘোড়ার ডাক শোনা যায়,আসুরিক পুরুষ কন্ঠ কথা বলে অনর্গল।একদিন দুপুরে নিধিরাম মাইতির ছোট ছেলেটা পুকুরের কোনে গাবগাছে গাব পাড়তে ওঠে ঝাঁকিজালে ব্যবহার করার জন্য;কোথা থেকে দমকা বাতাস এসে ফেলে দেয় দিপুকে;ওখানেই মারা যায় দিপু।এক-এক করে ছেলে নাতি সবাইকে খেয়েছে নিধিরাম।সন্ধ্যা হতেই বাড়ীর লোকজন দোরে খিল দেয়,কবে যেন বাকিদের টেনে নেয়।বড় ছেলে, মা-বউকে নিয়ে অন্যত্র চলে যায়।লোকে বলাবলি করে নিধিরাম মাইতির ছোট ভাই-মা গলায় দড়ি দিয়ে মরেছে অনেক আগে।গ্রামবাসীদের কাছে বাড়িটি এখন ভূতের বাড়ি নামে পরিচিত।

শুভজ্যোতি মন্ডল মানিক(শিক্ষক),মোড়েলগঞ্জ- বাগেরহাট।

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।