আদিম কবিতারা
রাত্রি নেমে আসছে আর আমাদের সব কথা ফুরিয়ে যাচ্ছে
শ্বাসবায়ুর চলাচলে তোমার নোলক দুলছে
তোমার চুলে সূর্যাস্তের রং ছড়িয়ে পড়ছে
তোমার আর আমার দূরত্ব ক্রমশ ধূসর হয়ে যাচ্ছে
রূপকথার কোনো পাতালপুরীতে আমরা ঢুকে যাচ্ছি
আমাদের হৃৎপিণ্ড মরচে ধরা পাথর
আমাদের না-বলা কথাগুলি রাত্রির দিশেহারা পাখি
কোথাও বাসা নেই তাদের শুধু বাসাবদল আছে
পৃথিবীর সমস্ত কবিরা নিজেদের আবিষ্কার করছে
আর তাদের প্রেমিকার চুলে সূর্যাস্তের রং মুছে দিচ্ছে
বাতাসে ভেসে আসা খণ্ড খণ্ড চুমুগুলি কুড়িয়ে নিচ্ছে
শব্দে শব্দে সাজিয়ে দিচ্ছে নতুন অর্থভাণ্ডার
আমরা হারিয়ে যাওয়ার আগে কিছুক্ষণ পরস্পর শূন্য ছুঁড়ে দিচ্ছি
আর শূন্যের ভেতর শূন্য হয়ে পাক যাচ্ছি এক একটি পৃথিবীর মতো
আদিম কবিতারা নেমে আসছে অদ্ভুত এক অন্ধকার
কৃজন
নিজের হরিণকে এখন নিজেই পাতা ভেঙে দিই
কচি ঘাস ছিঁড়ে দিই
ডালে শিং ঘষে ঘষে প্রস্তুত করি যুদ্ধের জন্য
নিজেই নিজের গা চেটে চেটে সাজিয়ে দিই
অরণ্যের পর অরণ্য ছুটে ছুটে যেতে হয়
দুরন্ত কৌশলে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়
চারিদিকে আতঙ্ক জড়িয়ে ধরে
পায়ের শব্দে এই বুঝি শত্রুর ঘুম ভাঙে
সকালের রোদে পাখিদের ভিড় ভেদ করে
এগিয়ে যাই আমার হরিণীর খোঁজে
চোরা শিকারির ফাঁদ পাতা আছে
সবুজ ঘাসের বাহারে ঢাকা থাকে ফাঁদ
দূরে কাদের অভিমান কোলাহল করে?
অরণ্যের মঞ্চ ভরে যায় আশ্চর্য চিৎকারে
আমি কি জেব্রার মতো? বনমোরগের মতো?
আমার কৃজন শুধু পার হয় প্রহর গুনে গুনে...
সর্বনাশের ডায়েরি
মৃত্যু এসে ফিরে যাচ্ছে রোজ
আমাদের ঘরের কোনো দরজা নেই
জ্যোৎস্নায় বিষাদ এসে নাচ দেখাচ্ছে
হতাশপাখি ভোরের বেলা ঘুম ভাঙাচ্ছে
আমাদের ঈশ্বরবিশ্বাস কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ছে
আমাদের জীবননদী শুকনো নিঃস্ব খাত
হৃদয়নৌকা নষ্ট-জীর্ণ পরিত্যক্ত স্তূপ
আমাদের বাল্যকাল মৃত প্রজাপতি ছিন্নভিন্ন
আমাদের রাত্রিগুলি দৈত্যের মতো ক্রুদ্ধ অহংকার
রাস্তায় রাস্তায় আতঙ্ক ছুটে বেড়াচ্ছে
ব্রেকিং নিউজে ভয়ঙ্করের বিজ্ঞাপন চলছে
নিজের নাম ধরে এখন নিজেকেই ডাকি
নিজের মুখটি এখনো নিজের মতো আছে তো?
নিজের কপাল ছুঁয়ে নিজেরই তাপ মাপি
প্রসন্না মেয়েটি আমার বিষণ্নার কাছে যায়...