এই আপি এত সাজু গুজু করে যাচ্ছিস কই?
কই সাজছি? ভুরু কুচকে বলল তৃনা।একটু ফেস পাওডার দিচ্ছি।
আমি টানা আধ ঘন্টা ধরে দেখছি তুমি সাজছো
বেশি পাকামো করিস না।কিল খাবি।তোর না সামনে এক্সাম।যা পড়তে যা।আমি এসে পড়া ধরব কিন্তু
হুহ মুখ ভেংচে চলে গেল সাকিব। তৃনার ছোট ভাই
আবারো সাজায় মন দিল তৃনা।
আজ দিন টা যে স্পেশাল।
এর মধ্যে বেজে উঠল ফোন।
আয়াজের ফোন।
হাই জানু কি করছ? আমি তোমার বাড়ির মোড়ের অই পার্ক টার ধারে। চলে এসো।
মাস ছয়েক হল আয়াজের সাথে পরিচয়। ভীষন স্মার্ট আর হ্যানড সাম
তৃনাও যে দেখতে খারাপ তা না। গায়ের রঙ অত টা ফর্সা না হলেও উজ্জ্বল শ্যামলা। হাইট মাঝারি। এক হারা গড়ন। তবে চেহারাটা খুব সুইট। মায়া কাড়া।
দেশের নামকরা ভার্সিটিতে বিবিএ পড়ছে। ক্লাসের দু চার জন যে তার দিকে এগিয়ে আসে নি তা না কিন্তু তৃনার কেন জানি ছেলে ব্যাচ মেট দের সাথে রিলেশনে জড়াতে ইচ্ছে হয় না।ওদের কেন জানি ছোট ভাই ভাই লাগে।তাই কাউকে পাত্তা দেয়নি।
আয়াজের সাথে প্রথম পরিচয় হয় একটা ট্যুরে যেয়ে। আজকাল অনেক ফেসবুক গ্রুপ আছে যারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ট্যুর অপারেট করে। সেবার ওরা এমন ই একটা গ্রুপের সাথে ক ' জন বান্ধবি গিয়েছিল রাংগামাটি।কাপ্তাই লেকে বেড়াতে গিয়ে ছবি তোলার সময় আরেকটু হলে পা পিছলে পড়েই গিয়েছিল নৌকা থেকে যদি না একটা হাত তাতক্ষনিক ভাবে শক্ত করে পেছন থেকে না ধরত।
আরে ছবি তুলবেন ভাল কথা তাই বলে নিজের দিক টা তো খেয়াল রাখবেন না । ভীষন লজ্জা পেয়েছিল তৃনা।
সরি আমি আসলে ঠিক বুঝতে পারিনি।
হয়েছে হয়েছে। আপনি এর পর ছবি তুলতে চাইলে আমাকে বলবেন আমি তুলে দিব।
আয়াজের ছবি তোলার হাত খুব ভাল। সেবার অনেক গুলা ছবি তুলে দিয়েছিল । ঢাকায় ফিরেও তাদের যোগাযোগ হয় এবং এর পর আস্তে আস্তে কখন যে হৃদয় দেয়া নেয়া হয়ে গেছে টের পাইনি।অনেক রাত অবধি চলত তাদের চ্যাটিং।
আজ আয়াযের জন্মদিন। ওর জন্যে একটা সুন্দর টি শার্ট আর একটা রোলন কিনেছে তৃনা। ওকে সারপ্রাইজ দেবে।
এই যে ম্যাডাম এত ক্ষনে আপনার আসার টাইম হল। সেই এক ঘন্টা আগে মনে হয় ফোন দিয়েছিলাম। এর মধ্যে দু কাপ চা একটা ডাব খাওয়া শেষ আপনার আসার খবর নেই। বফ কে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রেখে কি যে সুখ পায় মেয়েরা বুঝিনা।
সরি সরি। রাগ টাগ পরে করো
আগে এটা ধর বলে গিফট প্যাক টা হাতে দিল।
হ্যাপি বার্থ ডে। ম্যানি ম্যানি হ্যাপি রিটার্ন্স অফ দ্যা ডে।
থাংক ইউ।
তাহলে চলো যাওয়া যাক
আয়াজের বাইকে করে সারাদিন এখানে ওখানে ঘুরল। ফুচকা খেল আইস ক্রিম খেলো। দুপুরে লাঞ্চ করল গ্রীন লাউঞ্জের রুফ টপে। এত উচু বিল্ডিং এর ছাদের উপর খুব সুন্দর করে বাগান করে রেস্তোরা করেছে। এখান থেকে পুরা ঢাকা শহর দেখা যায়। সন্ধ্যাটা কাটালো ধানমন্ডি লেকে দুজন দুজনার হাত ধরে। আয়াজ জানালো ওর সামনের মাসে কানাডা যাবে। ওর বাবা মা ওখানেই থাকে ওর বড় ভায়ের সাথে। উনাদের বলবে তার পছন্দের কথা। উনারা অমত করবেন না। তাদের নিয়ে এসে ফর্মালি তৃনার বাবা মার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেবে। ওর বড় ভায়ের সাথে। তাকেও কানাডা সেটল হতে বলে কিন্তু ওর দেশ ছেড়ে যেতে ভাল লাগেনা।এখানেই এত বড় বিজনেস।এসব ছেড়ে কানাডা গিয়ে করবে টা কি।
আয়াজ বলল আমার ফ্ল্যাট কিন্তু খুব কাছেই। এত কাছে এসেছ আর আমার বাসাটা দেখে যাবে না?
নাহ আজ থাক অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে।
আরে এসো তো। মাত্র দু মিনিটের পথ। তোমাকে তো বাসায় আমি ই দিয়ে আসব।
আয়ানের ফ্ল্যাট টা ভীষন পছন্দ হল। ছিম ছাম। দক্ষিনে খোলা।
কি বউ মনি, পছন্দ হয়েছে?
আয়াজ মাঝে মাঝেই দুস্টুমি করে তৃনা কে বউ মনি ডাকে।
নাও ধর। বলে এক গ্লাস ঠান্ডা স্প্রাইট দিল।
এর টেস্ট টা বেশ ঝাঝালো। তৃনা খেয়াল করল তার খুব হালকা আর ফুরা ফুরা লাগছে। সারাদিনের ক্লান্তি যেন সব উধাও।
হঠাত করেই আয়াজ অকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেল। তৃনা যেন বাধা দিতে গিয়েও যেন দিতে পারল না। বরং ভালই লাগছিল আয়াজ যা করছিল। সেদিন আয়াজ তাকে দিয়ে গেল বাসায়।
এর পরের সপ্তাহে এসে কানাডা যাচ্ছে বলে বিদায় নিয়ে গেল। ওকে এয়ার পোর্টে সি অফ করতে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু আয়াজ মানা করল। বলল ওর ফ্লাইট অনেক রাতে।
এর মধ্যে সপ্তাহ খানেক কেটে গেল। আয়াজের সাথে কোন যোগাযোগ নেই।
হঠাত করে ও একদিন ও খেয়াল করল সবাই কেমন যেন অদ্ভুত ভাবে ওর দিকে তাকাচ্ছে।নিজেদের মধ্যে কি যেন কানাকানি চাপা হাসি শুনতে পায়। কিন্তু ও সেদিকে তাকালেই সবাই চুপ।ওর ক্লোজ বান্ধবিরা ও কেন যেন ওকে এভয়েড করছে। বুঝতে পারছেনা কিছুই
আজ যা হল সেটা যেন অকল্পনীয় ছিল। ডিপার্টমেন্ট চেয়ারম্যান স্যার তার রুমে ডেকে পড়াশুনার খোজ নিলেন।বললেন জিপিএ ফোর সে পাবে। উনি তাকে স্কলারশিপ এর ও ব্যবস্থা করে দিবেন।তার পরেই হঠাত স্যার তার দিকে হাত টা ধরে বিশ্রী ইংগিত করে চোখ টিপ দিলেন।
অবাক বিস্ময়ে জমে গেল তৃনা।মাথায় বাজ পড়লেও বুঝি চমকাৎ না
ছিহ স্যার। আপনি অমন! ঘৃনা ভরে এক রাশ থুতু দিয়ে বলে তৃনা
তুই কি দুধে ধোয়া নাকি? হিস হিসিয়ে বললেন স্যার।
এক ছুটে বেরিয়ে সোজা একটা রিকশা ধরে বাসায় এসে বাথ রুমে অনেক ক্ষন ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদল।
মাথায় ঘুরছে স্যার এর সেই কথা টা
সাকিব টা ও ইদানিং অকে কেন যেন এড়িয়ে এড়িয়ে চলে বুঝতে পারেনা।
একদিন হঠাত একটা ডায়রি চোখে পড়ল।
সাকিব আবার ডায়রি লেখা শুরু করল কবে থেকে?
ওর ডায়রি ওর অনুপস্থিতি তে পড়বে কিনা একটু দ্বিধা হল।কিন্তু খুলে দেখার জন্যে দুর্বার আকর্ষন বোধ করল।
ছেলেটা ত বেশ ভাল লিখে দেখি।
গত কদিনের অনেক ঘটনা সে বেশ গুছিয়ে লিখে রেখেছে।আবার কবিতা টবিতাও লিখছে দেখি। ইরা নামের একটা মেয়ের কথাও লেখা আছে দেখি।ছেলেটা কে সে মুখচোরা ভাবত।এখন দেখি সেও ডুবে ডুবে জল খায়। হঠাত একটা জায়গায় এসে তার চোখ আটকে গেল
""সেদিন ছিল ২৩ মার্চ আমাদের ফ্রেন্ড রকির জন্মদিন।অদের ছাদে আমরা বার্থ ডে পার্টি করছি। এর মধ্যে আমাদের সব চাইতে পুংটা দোস্ত ফাহিম বলল নতুন ভিডিও ছারছে একটা।আইস সালা হেব্বি মাল। সে সবাই কে দেখালো।আমার এসব বাজে ভিডিও দেখতে মোটেই ভাল লাগেনা।কিন্তু ফাহিম জোর করে দেখাল।আমি চমকে গেলাম। ছেলেটার সাথে যে মেয়েটা এ কে তো আমি চিনি।প্রতি দিন ই দেখি।আপি রে শেষ তক তুই অ।
আমার মনে হচ্ছিল আমি অন্ধ কেন হয়ে গেলাম না।প্রচন্ড বমি পাচ্ছিল।ওয়াশ রুম যাবার নাম করে কল ছেড়ে খুব কাদলাম।জরুরি এসাইনমেন্ট করা হয় নি কাল জমা দিতেই হবে এই সব বলে টলে কোন মতে আমি রকিদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম
আমি আতংকে আছি আমার ফ্রেন্ড রা যদি আপি কে দেখে ফেলে।
আপি রে কেন তুই এই কাজ করতে গেলি।""
তৃনার সামনে পুরো পৃথিবী অন্ধকার।
ওর আত্মহত্যার খবর পরদিন পত্রিকায় এলো।
এস এম নওশের
২৩/৯/২২
বারডেম
২৩/৯/২২
বারডেম