বর্ষা মৌসুমে স্রোতস্বিনী পদ্মার সর্বনাশী রুপ টা-ই চোখে পড়ে।নদী গহ্বরে হারিয়ে যেতে থাকে ঘরবাড়ি মানুষ গৃহপালিত পশু-পাখি।বিকাল বেলা ভয়ংকর ঢেউ গুলো আঁচড়ে পড়ে দূকুলে।ধোপার চরের মানুষের জীবন জীবিকার মানদন্ড পদ্মা নির্ভর।ধোপার চরে শতো শতো জেলের সারি সারি ছোট ঘর।সারাদিন মাছ ধরা কেনা বেঁচা,জাল সারাইয়ের কাজে ব্যস্ত থাকে জেলের দল।ঘাটে বাঁধা সারি সারি নৌকায় মাছ ধরা জাল;ঢেউয়ের ছন্দে দুলতে থাকা নৌকায় ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা দোল খায়।ধোপার চরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সবুজ ঘাসের উঠোন;গবাদি পশুর চারণভূমি।অমাবস্যা পূর্ণিমা তিথীতে জলের চাপ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি থাকে।জোঁয়ার ভাটার সঙ্গে এখানকার মানুষের জীবন জীবিকার সম্পর্ক নিত্যদিনের।ঘোর অমাবস্যা তিথীতে একদিন রাতের বেলা ধোপার চরের মানুষজন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন;স্রোতের তোড় এতো বেশি ছিলো যে,সর্বনাশী পদ্মার বুকে ধোপার চর আত্মগোপন করতে সময় নিয়েছিলো কয়েক মুহুর্ত।ঘরবাড়ি গাছপালা মানুষজন কিছুই রেহাই পায়নি নির্দয়া পদ্মার চর ভাঙনের মৃত্যু যজ্ঞ হতে।চর ভাঙনের দু'দিন বাদেই পদ্মার পাড়ের লোকজন উজান মালোকে দেখে বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছিলো দু'একজন বেঁচে আছে হয়তো!পদ্মার পাড়ে বসে বসে ধোপার চরে তাদের বসবাসের জায়গাটা নির্ণয় করার চেষ্টা করতে থাকে উজান মালো।স্রোত আর জলের ঢেউয়ে সেখানে কোন চর ছিলো কি-না বোঝার উপায় নেই।প্রতিদিন বিকেলে উজান মালো মনমরা হয়ে পদ্মার পাড়ে বসে থাকে।কতো স্বজন!কতো স্মৃতি!সব কিছু পদ্মার জলদেশের নিচে বালি কাদায় চাপা পড়ে গেছে।রেণু নামের সদ্য বিবাহিতা বউটার কথা খুব করে মনে পড়ে উজান মালোর।বউটা তাকে প্রায়ই বলতো,রাতের বেলা একটু তাড়াতাড়ি ঘরে ফেরা যায় না?একা একা ঘরে থাকতে ভালো লাগে না।উদাস চোখে বউটার কথা মনে করে,উজান মালো নিয়মিত অপেক্ষা করতে থাকে পদ্মার পাড়ে।শোকে দুঃখে আধা পাগলা উজান মালো দূরের পালতোলা নৌকা দেখলেই হাত তুলে ইশারা করে রেণু আছে না-কি নৌকার ভিতর?কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে বলে,রেণু আসবে!আমাকে ছাড়া একা থাকতে পারে না তো!রেণুকে ঘরে ফিরিয়ে নিতেই না-কি পদ্মাপাড়ে প্রতিদিন অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে উজান মালো।উজান মালো মরেছে অনেক বছর;পদ্মার পাড়ে তার কবরটা স্ত্রীকে ভালোবাসার নিদর্শন স্বরুপ অপেক্ষা করে আছে।
মোড়েলগঞ্জ-বাগেরহাট,