আচ্ছা আপনি, আপনারা কি কবি?
জানেন, আমি এক কবিকে চিনতাম...
কবি বলতে আমি তাকেই প্রথম দেখেছি।
আমার কবিকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম।
কিন্তু জানেন, আপনাদের সাথে আদৌ তার কোন মিল পাইনি
তার রুক্ষ চুলগুলো সে কখনো চিরুনি করত না...
তার এলোমেলো কথা, ছেঁড়া শার্ট ও গেঞ্জি পড়া
এসব দেখে বড্ড মন খারাপ হতো আমার,
এ নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া হতো।
তার চাহিদা ছিল সামান্য
পেট ভরে খাবার
চোখ ভোরে ঘুম কখনো দেখিনি তার,
আকাঙ্খার সবটাই ছিলাম আমি।
সে বলতো
আমার জন্যই নাকি কবি,
আমার জন্যই নাকি লেখে...
বলুনতো দেখি,
কেউ কি কারো জন্য কখনো কবি হয়, হতে পারে?
একদিন তার একটি কবিতা পত্রিকায় প্রকাশ করেছিলাম।
এ নিয়ে তো খুউব ঝগড়া...
রাগে-অভিমানে কথা বলেনি ক’য়েকদিন...
বলুন দেখি,
কবিতা যদি প্রকাশ না-ই করি,
তাহলে লিখে লাভ কি?
অথচ সে কি বলতো জানেন?
সে বলতো
তার কবিতা নাকি শুধু আমার জন্য লেখা
তা অন্য কেউ কেন পড়বে! কেন দেখবে?
খুব চেষ্টা করেছিলাম তাকে বোঝাতে
তাকে বোঝাতে চেষ্টা করতাম
কবি কখনো একার হয় না
কবি তো সবার, দেশের, দশের...
মৃদু হেসে বলতো
আমি যদি সবার হই
তবে তো তোমার থেকে হারিয়ে যাব...
কিছু না বুঝেই ঝটপট উত্তর দিয়েছিলাম
প্রয়োজন হলে হারাও আমার থেকে...
তবুও তোমাকে কবি হতে হবে...
তবুও তোমাকে দশের হতে হবে...
সেদিনের পর থেকে
দীর্ঘ দশটি বছর তার সাথে দেখা হয়নি আমার,
কেউ দিতে পারেনি তার কোন সন্ধান।
একদিন একটি চিঠি আসলো আমার নামে...
এ যুগে কেউ আবার চিঠি পাঠায় নাকি?
আনন্দের সহিত পড়তে লাগলাম
প্রিয় রেবা,
কেমন আছো?
অনেক বছর পর তোমায় লিখছি এমনটা ভেবো না,
আমি প্রতিদিন লিখি তোমার নামে, তুমি হয়তো জানো-ই না,
কারণ আমি তো এখন কবি। আর কবি মানেই তো সবার।
গত বইমেলায় তোমার ছেলে রূনু
ছড়ার যে বই টা কিনেছিল ওটা আমারই লেখা।
তুমি জানোই না যে তোমার ঘরে আমার লেখা বই আছে,
জানবেই বা কি করে?
আমার নাম তো এখন রুদ্র।
আমি এখন কবি আর কবি মানে যে সবার।
আজ আমি সবার হয়েছি,
আজ আমি কবি হয়েছি,
তবে তোমার হয়েছি অচেনা।
যাই হোক স্বামী-সংসার নিয়ে বেশ আছো।
আমি ঠিকই তোমার খবর নেই রুদ্র হয়ে।
ভালো থেকো রেবা, ভালো থেকো...
তারপর,
আর কোন যোগাযোগ তার সাথে হয়নি আমার
চিঠির খামে পাইনি তার কোন ঠিকানা
বলুন দেখি কবিদের স্বভাব কি এমনই হয়?
কবিরা কি এমন করেই হারায় সব?
পরিবার, সমাজের চাপে
আজ আমি সংসার পেতেছি
অনেক কিছু বলতে পারিনা ভয়ে
তবে আজ আমার একটাই চাওয়া
আমি আমার কবিকে ফিরে পেতে চাই।
“মনে-প্রাণে আমি যে কবিকেই ভালোবাসি!”
রাগ অভিমান তো সবার হয়...
তাই বলে কি এভাবে হারিয়ে যেতে হবে?
আপনারাও তো কবি,
আপনারা অনেকেই তো এখানে আছেন,
বলুন না আমার কবি কোথায়?
কবিদের সাহিত্য জগতে
আমার কবি ফিরে পেতে আবেদন করছি...
নিয়ে এসেছি সে চিঠিটাও
এনে দিন না আমার সেই কবিকে
আপনাদের রুদ্রকে
আমার সাহেদ নামে ফিরিয়ে দিন প্লিজ
আমার কবিকে ফিরিয়ে দিন।
মতিয়ারা মুক্তা। কবি ও সংগঠক হিসাবে “মাটির মা” নামেই দুই বাংলায় পরিচিত। পিতা রুহুল আমিন, মাতা আনোয়ারা বেগম, শালিয়াবহ, পেচারআটা, ঘাটাইল, টাঙ্গাইল। বাংলায় স্নাতকের (সম্মান) শিক্ষার্থী।স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখি পছন্দ। বড়ভাই গীতিকার আনোয়ার হোসেনের অনুপ্রেরণায় লেখালেখির হাতে খড়ি। এপর্যন্ত প্রকাশিত একক গ্রন্থ সংখ্যা ৮ টি এবং যৌথভাবে ৮০টিরও উপরে এবং সম্পাদিত গ্রন্থ ২৩টি। এছাড়াও তার সম্পাদনায় নিয়মিত প্রকাশিত হয় ম্যাগাজিন “মায়ের ঘর” এবং মাসিক সাহিত্য পত্রিকা “মায়ের ঘর”।