যদু আর মদু দুই ভাই । বয়সে জমজ না হলেও জমজ মনে করে দুই চার জন যে ভুল করে বসে তা নতুন না । যদু বয়সে মদুর চেয়ে দুই বছরের বড় । যদু এখন শহরের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে । পড়াশোনায় তার সার্বক্ষণিক মনোযোগ বলবৎ থাকে । গ্রামে চলাচল করদে দুচার জন পারলে যদুকে নিয়ে গর্ব বোধ করত । অপর দিকে মদু মেট্রিকের কোটা পার করেই পড়াশোনার হিসেব চুকেছে । তার মত হল এই যুগে অত পড়াশোনা করে বেকার থাকার চেয়ে গায়ে হাওয়া লেগে ঘুরে বেড়ানো তুলনামূলক ভালোই বটে। একঘেয়েমি একাডেমিক সিলেবাস শেষ করে চাকরির জন্য আবার উবু হয়ে বসে তপস্যা করে যত দিনে চাকরির সন্ধান জুটবে ততদিনে শাদি করে আব্বা ডাক শুনেও রিতিমত শশুর বনে যাওয়া অসম্ভবপর কিছু না । মদুর কথা, "দাদা পড়াশোনা করছে করুক, আমার দ্বারা তা কখনোই হবে না ।"
যদু কষ্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একখানা সিট দখল করেছে । এখন সারাদিন তার একাজ ও কাজ লেগেই থাকে । পড়াশোনা করে ফাঁকফোকর পেলে দের-দু মাস অন্তর বাসায় শুভ দর্শন দিতে আসে । কিন্তু সমস্যা বেধে গেলো ভিন্ন জায়গায় । যখনই বাসায় কদমধূলি রাখে সবাই বলতে থাকে তুই এত শুকাই গেছিস কেনো? যদু তখন যতটুকু পারে নিজের বাইরের জীবন সম্পর্কে কিছু বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করে থাকে । এখানকার খাবারের মান যে মোটেই ভালো না! তার উপর আবার রান্নার একটা জাদুকরী প্রভাব তো থেকেই গেছে বৈকি । বাসা থেকে যদুর বাবা-মা সর্বদাই বলে থাকে, "ওখানে গিয়া বাহির থেকে কিছু কিনে খাইস বাজান!" কিন্তু আর্থিক দীনতা থাকার দরুন যদু কখনোই তা করত না । দু-চারটা পয়সা কিভাবে সাশ্রয় করা যায় সেই চিন্তায় নিমজ্জিত থাকত ।
আপন দাদার শহুরে জীবনের এমন করুণ বর্ণনা শুনে মদুর একদিন ইচ্ছা করল সেও শহরে এসে এখানকার পরিবেশ দেখে যাবে । হঠাৎ একদিন সন্ধ্যা বেলায় মদু ব্যাগপত্র সহ যদুর ঠিকানায় হাজির । এখানে আবার এক বড় ভাইয়ের চাকরি হওয়ার সুবাদে সেদিন সন্ধ্যায় বাইরে ভালই খাওয়া দাওয়া হল । রাতে যদুর বন্ধুরা একটা পার্টির আয়োজন করেছে । সেখানে ছোটো ভাই কে রেখে যাওয়া কেমন হয় ওকে সাথে করেই নিয়ে চলল যদু। আমিষ ভোজ বেশ ভালোই হল । মেসের জীবনে একটা বিশেষ ক্ষণ হল মাসে একদিন সবাই মিলে টাকা দিয়ে একটু ভালো খাবারের ব্যবস্থা করে থাকে যাকে ফিসট (feast) মিল বলে থাকে । সকালে যদু জানতে পারল আজকে তারা ফিসট খেতে চলেছে । সেদিন সকাল ও দুপুরে ভালোই ভুঁড়ি ভোজ হল । খাওয়া দাওয়া শেষ করে একটু বিশ্রাম করল মদু।
বিকেলে যদু ভাবতে লাগল ছোট ভাইকে ক্যাম্পাসটা ঘুরে না দেখালে কেমন হয়? বিকেলে মদু কে সঙ্গে নিয়ে যদু ক্যাম্পাসে ঘুরে দেখাতে বের হল । ক্যাম্পাসে ঢুকেই মদু দেখল কতগুলো অফিসারের মত লোকজন একসাথে হাঁটাচলা করছে (প্রেজেন্টেশন ছিল)। যদু মদুকে পরিচয় করে দিল এনারা আমার সিনিয়র ভাই/ আপু । সবাইকে নতুন শার্ট প্যান্ট টাই পড়তে দেখে মদু অবাক হয়ে
গিয়েছিল । কেননা তাহার এলাকার বড় বড় চাকরিজীবীরাও রীতিমত এইরকম উন্নত পোষাক পরিধান করেন না । সিনিয়র ভাই শুনে একটু অবাক হল বৈকি। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ফ্রিতে ওয়াইফাই, বাস চলাচল ল্যাব সহ শিক্ষা উপকরণের সুবিধাদি থেকে একটু অবাকই হলো! কিছুক্ষণ ঘুরে রুমে এসে বিকেলে মদু বাসায় চলে গেল ।
বড় ভাইয়ের শহুরে জীবন দেখতে এসে পার্টি, ফিস্ট মিল আর প্রেজেন্টেশনে সাজুগুজু করিয়া থাকা বড় ভাইদের দেখে বাসায় গিয়ে যদুর জীবন সম্পর্কে মদু এমন বর্ণনা দিয়েছে যে, যদু যে এখানে গাঁজা বা নেশাপানী খেয়ে নিজের চেহারার দুর্গতি ঘটিয়ে ফেলে নাই এ কথা আর কোনভাবেই কাউকে বিশ্বাস করাতে পারে নাই!
শিক্ষার্থী,
ইংরেজি বিভাগ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।