ধারাবাহিক উপন্যাস: দিদার চৌধুরী'র "হৃদয়ের কান্না" -৩


বেশতো লাগছে ভদ্রমহিলা কে। সালোয়ার কামিজ পরা, সাদার মাঝে কালো রংয়ের প্রিন্ট করা কাপড়, অন্ধকারে চাঁদের আলোতে বেশ সুন্দর লাগছে। আরো বেশি সুন্দর লাগতো যদি না গাড়িটি নষ্ট না হতো।
কারণ গাড়িটি নষ্ট হওয়ার সাথে সাথে বেচারীর মনটাও নষ্ট হয়ে গেছে।
:দেখুন বেকার মানুষ আমরা । গায়ে তেমন বল নেই। যা চিন চিনে দেখছেন ,তা একমাত্র ঈশ্বরের করুন মাত্র।
ভীতসন্ত্রস্ত মহিলাটির চোখের জল রাশি চাঁদের আলোয় ঝলমল করছে।
ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম,
: রাস্তার অবস্থা কেমন? কাঁদা গর্ত নেই তো?
আশাতীত হয়ে ড্রাইভার বলল,
: মহাশয় রাস্তার কথা ভাববেন না ।রাস্তা খুব ভালো আছে।
পুনরায় ড্রাইভারকে বললাম,
: ঠিক আছে, গাড়িতে বসে পড়ুন -দেখি ঠেলে কতদূর পর্যন্ত নেওয়া যায়।
তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে, হাজার দীঘির ঘাটে পেরিয়ে, একবার ডান এর মোড, আর একবার বামে। প্রাণপণ চেষ্টায় অতঃপর গাড়ি এসে দাঁড়ালো শিমুলতলী।
এই মাঙ্গলিক কাজের কতটুকু কৃতজ্ঞতা পাব তা বলা যাচ্ছে না । জলের তৃষ্ণাও পেয়েছে খুব।
ড্রাইভারকে বললাম,
: দাদা একটু জল হবে? গাড়িতে কি জল আছে? বড়ই তৃষ্ণা পেয়েছে।

গাড়িতে বসে থাকা বয়স্ক সাহেব , তার মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বলল,
: মা ওদেরকে একটু জল দে তো। বাচাদের বড় কষ্ট হচ্ছে। ঈশ্বর ওদের মঙ্গল করুক।
মেয়েটি গাড়ির জানালা দিয়ে জলের পাত্র এগিয়ে ধরল।
"এই নিন জল" বলে জলের বোতল আমার হাতে দিলো। এই সেবাতে যেন তার কোন আপত্তি নেই।
অনেকটা মায়ার সুরে বলল,
: খিদে পেয়েছে ? কিছু খাবেন ?
তার কথা গুলায় মনটা ভরে গেল ।এমন পরিশ্রমের পর মেয়ে মানুষের এমন আদুরে কথায় মনটা হালকা হয়ে যায়।
পেটের খুদায় লাজ-লজ্জা ত্যাগ করে, ভদ্রমহিলাকে বললাম,
: কিছু খেতে পেলে তো মন্দ হতো না। কিন্তু এত রাতে আশেপাশে তো কোন দোকান-ঘর দেখছি না।
ভদ্রমহিলা "এই নিন" বলে এক ঠোঙা টপি বের করে দিল। দেওয়ার সময় মুখে এক ঝলক হাসি ফুটে উঠল। কৃতজ্ঞতার সুরে বলল,
: অনেক কষ্ট হচ্ছে , তাইনা?
জল-টপি খেয়ে পুনরায় গাড়ি ঠেলতে লাগলাম, দু'ক্রোশ পথ শেষ হয়ে, গাড়ি সদর গেট দিয়ে বড় একটি বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো ।বুঝে নিলাম এটিই সাহেবের বাড়ি।
গাড়ি দাঁড়ানো মাত্রই !শীত নিবারণী বস্ত্র গায়ে দিয়ে মহিলাদ্বয় সদর দরজা দিয়ে হনহনিয়ে ভিতরে চলে গেল।
মনটা হঠাৎ তিক্ত হয়ে গেল। "যা সালা কার জন্য করলাম এত কষ্ট। মনে মনে বলতে লাগলাম এ কেমন মানুষ। যাওয়ার সময় ন্যূনতম কিছু একটা বলে যেতে পারতো। ন্যূনতম কমন সেন্স যাকে বলে।
গাড়ির ড্রাইভার তার যথাস্থানে সে চলে গেল। আমি ,আমার বন্ধু উৎপল আর বয়স্ক সাহেব দাঁড়িয়ে আছি। আবছা অন্ধকার রাত।
বৃদ্ধ কৃতজ্ঞ সুজন ভাবে আমাদের কে বলল,
: বাপুরা- তোমাদের পরিশ্রম আর দরদী মাঙ্গলিক কর্মের পুরস্কার দেওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। যদি রাতের অন্তিম প্রহরটা এখানে থেকে যেতে, তো খুব খুশি হতুম।
বয়স্ক লোকটি একটি জল ভরা পাত্র নিয়ে এসে বলল, হাত-পা ধোয়ার জল দিলুম। যাই তোমাদের থাকার একটা ব্যবস্থা করিগে। বলে বয়স্ক ভদ্রলোক চলে গেলেন।
আমি আর উৎপল উঠানে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছি। হালকা শীত শীত ভাব লাগছে। সারা শরীর পরিশ্রান্ত।
কিছুক্ষণ পর দেখলাম ,এক রমণী শাড়ি পরিহিতা হাতে কাঁসার জলপাত্র নিয়ে ,এদিকে আসছে। যাকে ইতিমধ্যেই গাড়িতে দেখেছিলাম। যে আমাদেরকে টপি খেতে খেতে দিয়ে ছিলেন।
তিনি এসেই বলল,
: বাহিরে দাঁড়িয়ে কেন ? ভেতরে আসুন ।
বেশ সুন্দর সাধু ভাষায় কথাগুলো বলল। অথচ ওই যে বয়স্ক লোক সম্ভবত তার বাবা হবেন। উনিতো কথার শেষে লুম শব্দ যোগ করে বলেই চলছেন। কিন্তু এর বেলায় কোন লুম শব্দ যোগ দেখছিনা। সম্ভবত শিক্ষিত, আধুনিক তাই।
ভদ্রমহিলা ইশারায় ডাক দিলে ,মহিলার পিছু অনুসরণ করলাম। একটি ঘরের জলশূন্য কামরায় প্রবেশ করলাম।দেখি পুরাতন একটি খাট পাতা আছে । পাশে একটি টেবিল , দুটি চেয়ার, টেবিলের উপর প্রদীপ জ্বলছে।
(চলবে)

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।