বছর ঘুরে আসলো পবিত্র মাহে রমজান একেবারেই ভিন্ন রূপে। চারদিকে থমথমে অবস্থা। বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব লকডাউন। প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস পরিবর্তন করে দিয়েছে গোটা বিশ্বের গতি। যাক ওসব। আসল কথায় আসি, বেশ কয়েকদিন ধরেই হাঁসের মাংস দিয়ে রুটি খেতে খুব ইচ্ছে করছিলো আমার। মা কে বলব বলব বলে বলা হয়নি। স্বপ্নের কাছে (ছোট ভাই) জানতে পারলাম আংকেলের ফ্রীজে হাঁসের মাংস রাখা আছে। তাই আর দেরি না করে মাকে বলেই ফেললাম হাঁসের মাংস দিয়ে রুটি খাওয়ার কথা। মা বললো দেখ ফজলুল অসুস্থ এই সময় হাঁসের মাংস বাসায় রান্না না করাই ভালো হবে। ফজলু আমার ছোট ভাই। ওর এলার্জির সমস্যা। মা কে রাজি করালাম ফজলুর জন্য খাসির মাংস আনার শর্তে।
লকডাউন উপেক্ষা করে চন্ডিপুর, কদমতলা বাজারে কাঙ্ক্ষিত মাছ না পেয়ে দঃ ব্যাপারীর হাট থেকে নিয়ে আসলাম হাঁফ কেজি খাসির মাংস। বাজারে তো অল্পের জন্য পুলিশের ডাণ্ডার স্বাদ গ্রহণ থেকে বেঁচেছি। সে যাই হউক মনটা সেই ভালো আজ খেতে পারব হাঁসের মাংস আর রুটি। আহ জান্নাতি খাবার। মা ফ্রীজ থেকে মাংস নিয়ে আসলেন। সেদিন রমজানের দ্বিতীয় দিন। বিকেল বেলা রান্না শুরু করে দিলেন মা। ও হ্যা এখানে বলে রাখা ভালো যে আমাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছয়। মা-বাবা, আর আমার চার ভাই-বোন। বোন সবার থেকে ছোট। এখনো হাটতে পারে না। মাকে বাড়ির সব কাজ একাই করতে হয়। আমি দাদার রেখে যাওয়া শাহী কাঠের চেয়ার পেতে বসে আছি আঙ্গিনায়। তখনো ইফতারের প্রায় ঘন্টা খানেক বাকি। ফুরফুরে মন নিয়ে লগ ইন করলাম ফেসবুকে। কিন্তু নেটওয়ার্কের বেহাল দশায় বেশিক্ষন আর থাকা হলো না ফেসবুকে। রান্না ঘরের ফাঁক দিয়ে অনবরত ধোঁয়া বের হচ্ছে। স্বপন মাকে রান্নার কাজে সাহায্য করছে। মা রুটি বানাচ্ছে। অন্যদিকে জ্বলছে দুটি চুলা। ভাত আর পাট শাক রান্না শেষের দিকে। ডাল ভিজিয়ে রাখছে রান্নার জন্য। তখনো হাঁসের মাংস বড় একটি গামলায় পানিতে ডুবছে আর ভাসছে। আমি বার কয়েক দেখে আসছি আর কতক্ষণ লাগবে! আমি তখন ছোট বোন সুখী মণি আর ছোট ভাই সাজন বাবুকে নিয়ে মজা মাস্তিতে ব্যস্ত আঙ্গিনায়। তবে মাঝেমধ্যেই মনে হচ্ছে রোজা রেখে আজ খিদে টা বেশিই ভর করেছে আমার উপর। সময় যেন যাচ্ছেই না। কি আর করার চেয়ার থেকে উঠে টিউবওয়েলের পাড়ে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নিলাম ইফতারের দশ মিনিট বাকি থাকতে। তারপর একটু খানি দোয়া দরুদ পাঠ করতেই চারদিক থেকে ভেসে আসছে ইফতার করার ধ্বনি। ইফতারের জন্য সেদিন বাহিরে থেকেও কোন কিছুই নিয়ে আসা হয়নি ইফতারের জন্য। হাঁসের মাংস আর রুটি দিয়ে ইফতার করার আশায়। পানি মুখে দিলাম সামনে রুটি আসলো তবে হাঁসের মাংস নেই সাথে আসলো পাট শাক আর ডাল। মনটা খারাপ হয়ে গেল। মেজাজও গরম হলো আমার। কি আর করার রাগ করেই খেলাম। রাগে দুঃখে ছোট ভাই সাজন বাবুকে জোর গলায় বললাম ভাত নিয়ে আয়।মা তখন হাঁসের মাংস রান্নায় ব্যস্ত। আমি ডাল ও শাক দিয়েই ভাত খেলাম।
কাউকে বুঝতে দিলাম না আমি রেগে আছি। খুব অসহায় মনে হচ্ছে নিজেকে। ইফতারে রুটির সাথে পেলাম না হাঁসের মাংস। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম আর কোনদিন হাঁসের মাংস খাবোই না। বাড়ির বাইরে একটুখানি হাঁটাহাঁটি করে আসলাম কোন কিছুতেই ভালো লাগছে না ঘুরে ফিরে মাথায় হিট করে ইফতারে খেতে পারলাম না হাঁসের মাংস।আব্বা আম্মা নামাজ শেষ করে সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমাকে ডাকা হলো জবাব দিলাম আমার খাওয়া লাগবেনা অন্যের চিন্তা করার দরকার নেই নিজেরাই খান। নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পরলাম। মা হয়তো বুঝতে পেরেছে আমার রাগ টা কোথায়? সবার খাওয়া শেষ হলো আর আমার জন্য বেশ কয়েকটি রুটি হাঁসের মাংস নিয়ে রুমে আসলেন মা। বললেন খেয়ে নে। কিন্তু তখনি রাগটা আরো বেড়ে গেল। বলেই দিলাম খাবো না।
পরে বাবা, ছোট ভাই সাজন, স্বপন সবাই খুব আদর যত্ন করল কিন্তু বেশি ভাব নিতে গিয়ে আর খাওয়া হলো না, মাংস রুটির প্লেট টেবিলে রেখে চলে গেল সবাই। যেন আমি খেয়ে নেই।
রাত আনুমানিক ১১টা রুমের লাইট অফ মোবাইলের আলো জ্বেলে টেবিলের উপর রাখা রুটি মাংসের ঢাকনা খুললাম খুব সাবধানে যাতে কেউ বুঝতে না পারে আর শব্দ টাও যাতে না হয়। আহ্ কি মনোমুগ্ধকর ঘ্রাণ। ইচ্ছে করতেছে এক নিমিষেই গাপুস গুপুস খেয়ে ফেলি পুরাটাই। কিন্তু আমি যে রেগে আছি আর রাগের জন্যই খাওয়া টা ভেস্তে গেল। তবুও আমি ছাড়বার পাত্র নই। মাংসের বাটিতে আঙ্গুল চুবিয়ে আঙ্গুল চেটে খেলাম মাংসের ঝোল আহ্ কি মজাই না হয়েছে! তার সাথে ছোট একটা মাংসের টুকরাও মুখে চালান করে দিলাম। সাবধানে আবারো সব ঢেকে রাখলাম। সেহেরি খাওয়ার সময় আবারো দেখা মিলল হাঁসের মাংসের বাটির। আমাকে খাইতে বলা হলো কিন্তু কেমনে খাই! খেলে তো রাগের গুরুত্ব থাকে না। আবার মনে হলো মা হয়তো সব কাজ করতে গিয়ে একটু দেরি করছে তাই বলে.......................।
আবারও মাংস রুটি ঢেকে রাখা হলো। এমনি করে দুই দিন চলে গেল।প্রতিবার রান্নার সময় মাংস গরম করে রাখত। আর ছোট ভাই সাজন বাবু মায়ের চোখ আরাল করে খেতো একটু আধটু আমি দেখলেও কিছু বলতে পারি না শুধু কষ্টে বুকটা ফাটে। গত দুই দিনের মতো তৃতীয় দিনের সেহেরি তে আবারো মাংস খাওয়ার জন্য বললো আমি না করে দিলাম। তখন বাবা বললেন না খেলে কি আর করার সবার প্লেটে প্লেটে দুই তিন পিচ করে দিলেন আমাকেও দিতে হাত বাড়ালেন কিন্তু আবারো না করলাম। সবার খাওয়া দেখে নিজের অজান্তে চোখ দিয়ে পানি পরতে শুরু করল। সবাই খেতে এত ব্যস্ত যে আমার দিকে কেউ চোখ তুলেও চায়নি।
লকডাউন উপেক্ষা করে চন্ডিপুর, কদমতলা বাজারে কাঙ্ক্ষিত মাছ না পেয়ে দঃ ব্যাপারীর হাট থেকে নিয়ে আসলাম হাঁফ কেজি খাসির মাংস। বাজারে তো অল্পের জন্য পুলিশের ডাণ্ডার স্বাদ গ্রহণ থেকে বেঁচেছি। সে যাই হউক মনটা সেই ভালো আজ খেতে পারব হাঁসের মাংস আর রুটি। আহ জান্নাতি খাবার। মা ফ্রীজ থেকে মাংস নিয়ে আসলেন। সেদিন রমজানের দ্বিতীয় দিন। বিকেল বেলা রান্না শুরু করে দিলেন মা। ও হ্যা এখানে বলে রাখা ভালো যে আমাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছয়। মা-বাবা, আর আমার চার ভাই-বোন। বোন সবার থেকে ছোট। এখনো হাটতে পারে না। মাকে বাড়ির সব কাজ একাই করতে হয়। আমি দাদার রেখে যাওয়া শাহী কাঠের চেয়ার পেতে বসে আছি আঙ্গিনায়। তখনো ইফতারের প্রায় ঘন্টা খানেক বাকি। ফুরফুরে মন নিয়ে লগ ইন করলাম ফেসবুকে। কিন্তু নেটওয়ার্কের বেহাল দশায় বেশিক্ষন আর থাকা হলো না ফেসবুকে। রান্না ঘরের ফাঁক দিয়ে অনবরত ধোঁয়া বের হচ্ছে। স্বপন মাকে রান্নার কাজে সাহায্য করছে। মা রুটি বানাচ্ছে। অন্যদিকে জ্বলছে দুটি চুলা। ভাত আর পাট শাক রান্না শেষের দিকে। ডাল ভিজিয়ে রাখছে রান্নার জন্য। তখনো হাঁসের মাংস বড় একটি গামলায় পানিতে ডুবছে আর ভাসছে। আমি বার কয়েক দেখে আসছি আর কতক্ষণ লাগবে! আমি তখন ছোট বোন সুখী মণি আর ছোট ভাই সাজন বাবুকে নিয়ে মজা মাস্তিতে ব্যস্ত আঙ্গিনায়। তবে মাঝেমধ্যেই মনে হচ্ছে রোজা রেখে আজ খিদে টা বেশিই ভর করেছে আমার উপর। সময় যেন যাচ্ছেই না। কি আর করার চেয়ার থেকে উঠে টিউবওয়েলের পাড়ে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নিলাম ইফতারের দশ মিনিট বাকি থাকতে। তারপর একটু খানি দোয়া দরুদ পাঠ করতেই চারদিক থেকে ভেসে আসছে ইফতার করার ধ্বনি। ইফতারের জন্য সেদিন বাহিরে থেকেও কোন কিছুই নিয়ে আসা হয়নি ইফতারের জন্য। হাঁসের মাংস আর রুটি দিয়ে ইফতার করার আশায়। পানি মুখে দিলাম সামনে রুটি আসলো তবে হাঁসের মাংস নেই সাথে আসলো পাট শাক আর ডাল। মনটা খারাপ হয়ে গেল। মেজাজও গরম হলো আমার। কি আর করার রাগ করেই খেলাম। রাগে দুঃখে ছোট ভাই সাজন বাবুকে জোর গলায় বললাম ভাত নিয়ে আয়।মা তখন হাঁসের মাংস রান্নায় ব্যস্ত। আমি ডাল ও শাক দিয়েই ভাত খেলাম।
কাউকে বুঝতে দিলাম না আমি রেগে আছি। খুব অসহায় মনে হচ্ছে নিজেকে। ইফতারে রুটির সাথে পেলাম না হাঁসের মাংস। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম আর কোনদিন হাঁসের মাংস খাবোই না। বাড়ির বাইরে একটুখানি হাঁটাহাঁটি করে আসলাম কোন কিছুতেই ভালো লাগছে না ঘুরে ফিরে মাথায় হিট করে ইফতারে খেতে পারলাম না হাঁসের মাংস।আব্বা আম্মা নামাজ শেষ করে সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমাকে ডাকা হলো জবাব দিলাম আমার খাওয়া লাগবেনা অন্যের চিন্তা করার দরকার নেই নিজেরাই খান। নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পরলাম। মা হয়তো বুঝতে পেরেছে আমার রাগ টা কোথায়? সবার খাওয়া শেষ হলো আর আমার জন্য বেশ কয়েকটি রুটি হাঁসের মাংস নিয়ে রুমে আসলেন মা। বললেন খেয়ে নে। কিন্তু তখনি রাগটা আরো বেড়ে গেল। বলেই দিলাম খাবো না।
পরে বাবা, ছোট ভাই সাজন, স্বপন সবাই খুব আদর যত্ন করল কিন্তু বেশি ভাব নিতে গিয়ে আর খাওয়া হলো না, মাংস রুটির প্লেট টেবিলে রেখে চলে গেল সবাই। যেন আমি খেয়ে নেই।
রাত আনুমানিক ১১টা রুমের লাইট অফ মোবাইলের আলো জ্বেলে টেবিলের উপর রাখা রুটি মাংসের ঢাকনা খুললাম খুব সাবধানে যাতে কেউ বুঝতে না পারে আর শব্দ টাও যাতে না হয়। আহ্ কি মনোমুগ্ধকর ঘ্রাণ। ইচ্ছে করতেছে এক নিমিষেই গাপুস গুপুস খেয়ে ফেলি পুরাটাই। কিন্তু আমি যে রেগে আছি আর রাগের জন্যই খাওয়া টা ভেস্তে গেল। তবুও আমি ছাড়বার পাত্র নই। মাংসের বাটিতে আঙ্গুল চুবিয়ে আঙ্গুল চেটে খেলাম মাংসের ঝোল আহ্ কি মজাই না হয়েছে! তার সাথে ছোট একটা মাংসের টুকরাও মুখে চালান করে দিলাম। সাবধানে আবারো সব ঢেকে রাখলাম। সেহেরি খাওয়ার সময় আবারো দেখা মিলল হাঁসের মাংসের বাটির। আমাকে খাইতে বলা হলো কিন্তু কেমনে খাই! খেলে তো রাগের গুরুত্ব থাকে না। আবার মনে হলো মা হয়তো সব কাজ করতে গিয়ে একটু দেরি করছে তাই বলে.......................।
আবারও মাংস রুটি ঢেকে রাখা হলো। এমনি করে দুই দিন চলে গেল।প্রতিবার রান্নার সময় মাংস গরম করে রাখত। আর ছোট ভাই সাজন বাবু মায়ের চোখ আরাল করে খেতো একটু আধটু আমি দেখলেও কিছু বলতে পারি না শুধু কষ্টে বুকটা ফাটে। গত দুই দিনের মতো তৃতীয় দিনের সেহেরি তে আবারো মাংস খাওয়ার জন্য বললো আমি না করে দিলাম। তখন বাবা বললেন না খেলে কি আর করার সবার প্লেটে প্লেটে দুই তিন পিচ করে দিলেন আমাকেও দিতে হাত বাড়ালেন কিন্তু আবারো না করলাম। সবার খাওয়া দেখে নিজের অজান্তে চোখ দিয়ে পানি পরতে শুরু করল। সবাই খেতে এত ব্যস্ত যে আমার দিকে কেউ চোখ তুলেও চায়নি।