শরতের প্রকৃতি ।। সাজেদুল করিম সুজন


ঋতু বৈচিত্রের দেশ আমাদের বাংলাদেশ। বারো মাস ধরে বাংলাদেশে চলে ষড়ঋতুর লীলা খেলা। ঋতুভেদে বাংলার নৈসর্গিক রূপ অতি বিস্ময়কর।কখনো কাল বৈশাখীর প্রচন্ড তান্ডব আবার কখনোবা সজল মেঘের খেলায় ভরে ওঠে নদ নদী। বয়ে চলে শ্রাবণের ধারা তারপর শরতের মধুর দৃশ্য দেখে প্রাণ মন জুড়িয়ে যায়। শিশির ভেজা ঘাসে শেফালী লুটিয়ে পড়ে। সুদূর গগনে বলাকার সাথে সাথে মেঘেরা পাল তুলে চলে। শারদীয়ার আগমনী মেতে ওঠে বাংলার নর-নারী। হেমন্তে অশ্রুভরা আনন্দের সাঁজি ভরে ওঠে। হৈমন্তী ধানের শীষ দুলতে থাকে বাতাসে।রৌদ্র ছায়ায় লুকোচুরি শুরু হয় ধানের ক্ষেতে। শীত আসে রিক্ত সন্ন্যাসীর বেশে আর ঝরিয়ে দেয় সবকিছু। সে যেন শুষ্ক জীর্ণ কঠোর। ঝরা পাতার গান শুরু হয়। শীতের শেষে বসন্তের আগমন প্রকৃতির রূপ ধারণ করে। দক্ষিনা মলয় মধুর সুরভী মনকে আনন্দিত করে। এসময় কোকিলের কুহুতানে নানান ফুলের সুবাসে বাংলার প্রকৃতি হয়ে ওঠে সুবাসিত। প্রজাপতি আর মৌমাছির হাট বসে ফুলে ফুলে সে কি মনোহারিণী দৃশ্য!

চলছে শরত কাল, 

হৃদয় জুড়ানো দৃশ্য নিয়ে আসে এই শরৎকাল।

শিশির বিন্দু হীরকের মত করে ঝলমল।

ভরা নদী বয়ে যায় তার আপন গতিবেগে

তার তীরে ওই কাশফুলগুলো চাঁদের মতো হাসে।

ঋতুচক্রে বর্ষার পরেই আবির্ভাব ঘটে শরতের। গ্রীষ্মের উত্তপ্ত প্রকৃতিকে বর্ষা স্নিগ্ধ সজল শ্যামল রূপ দান করে। বর্ষার আগমনের পর সেই সবুজ সুন্দরের ছোঁয়া প্রকৃতিকে গড়ে তোলে নবীন পত্র-পল্লবে। এরপর ঘটে শরতের আগমন। শরতকে বলা হয় বাংলার ঋতুর রানী। শরতে মাঠে মাঠে নবীন ধানের সবুজের ছোঁয়া বাতাসে দোল খায়। শুভ্র জোসনা মাটির ধরণীকে করে তোলে মোহনীয়।

ভদ্র এবং আশ্বিন দুমাস নিয়েই শরৎকাল। এসময় আকাশে হালকা মেঘের আনাগোনা লক্ষ করা যায়। মাঝে মাঝেই দু-এক পশলা বৃষ্টি হয়। তবে অবিরাম বর্ষণ এর নিবিড়তা থাকেনা।শরৎকালের নদীগুলো কানায় কানায় ভরা থাকে। পাল তুলে নৌকা চলে অবিরাম। আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর নদীর বুকে পালতোলা নৌকা এ যেন এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।

জুঁই, কামিনী, শিউলি ফুল আর চারদিকে সবুজের খেলায় প্রকৃতিকে মাতিয়ে তোলে এই শরৎকাল। কচি ধানের ডগায় ভোর বেলা শিশির ঝলমল করে। রাতের বেলা বিলের বুকে ফোটে শাপলা। জোসনা রাতে বিলের এর দৃশ্য মন কেড়ে নেয়ার মত। রাতের আকাশে ঝলমল করে জোৎস্না সাথে তাল দেয় চাঁদ মামা। নদীর তীর গুলোতে ফোঁটা কাশফুল যেন শরতের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

শরতের রূপ দৃশ্য হৃদয়-মনকে হরণ করে। শরতের নতুন নতুন পরিবেশে মুগ্ধ হয় বাঙালির মন। নানা রকম খাদ্যের সম্ভার নিয়ে বাঙালির ঘরে উৎসবের আগমনী হয়ে আসে শরৎ। পরঘরী কন্যা আসে পিতৃগৃহে নাইয়রের আশায়। মহা আড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয় হিন্দুদের দুর্গোৎসব।

হে শরত

চক্রের লীলায় আসো তুমি ভরিয়ে দিতে মন

মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ রাখো থাকো যতক্ষণ।

ঝুলি থেকে তুলে দাও মুগ্ধতায় একরাশ তোমার

পথপানে রইবো চেয়ে ফিরে এসো আবার।


সূচিতে ফিরতে ক্লিক করুন

1 Comments

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।