শরতে বসে ভাবি,নিবিষ্ট চিত্তে আমি
কেন শরৎ আর ভালো লাগে না?
আকাশের ঐ নরম শুভ্র তুলোর মতো
আনন্দ বাহক মেঘমালা,
কেন আর আমার চিত্তকে মোটেও
বিত্ত করতে পারে না?
কোথায় যেন রিক্ততা আমায় সদা
গ্রাস করে, শরতের দুপুরে।
এইতো সেদিনও আমি
শরতে মেঘের রথে চড়ে
চোখের পলকে ত্রিভুবন প্রদক্ষিণ করে
হৃদয়ে নিয়ে এলাম একরাশ সুখ!
সেই সুখ বিলিয়ে দিলাম বিশ্বমাঝে -
অকাতরে।
নদীর ধারে শত কাঁশফুলের আহ্বানে
পড়ে থাকতাম সারাবেলা, সজন সাথে
জ্যোৎস্নারাতে শিউলির গন্ধে ছুটে যেতাম
শিউলি গাছের তলে,
সাথে যেত নাম না জানা
কত পোকামাকড়, কত শত প্রাণি,
প্রাণের সাথে প্রাণের সেকি মেলবন্ধন!
ডোবায় নালায় ভেলায় বেড়ানো
শাপলা পদ্মের অপরূপ সৌন্দর্য্য গাঁথা
আটকে আছে স্মৃতির পটে দূর দিগন্তে,
পড়ন্ত বেলার জলে সোনারঙের ঝিলিক
হঠাৎ হাসির বিজলি খেলে পুলকিত মনে।
সরল সাদা তরুণ তরুণী
ভেলায় চড়ে তুলে নিত দুয়েকটা শাপলা,
আনমনে কারো ফুল নিয়ে নিত কেউ
তাতেই পড়তো ইশারায় মৃদু হাসির ঢল,
গোপন ভাষা হতো ক্রমে মধুর ভালোবাসা।
মনে পড়ে, আজ বড্ড মনে পড়ে -
গাঁয়ের বেসামাল দূরন্ত ছেলেমেয়েদের
পূরণো শরতে কাঁশের ঝোপে
সাধের লুকোচুরি খেলার মেলা।
শেয়ালের ডাকে রাতে, ভয়ের দেবীরা আসে
জাপ্টে ধরায় দাদাভাইয়ের তাতে
উন্মত্ত ঘুমের ঘোরে সেকি হিংস্রতা!
শরতের দুপুরে বাঁশের চূঁড়ায়
বসে থাকা ঘুঘুর বিরহস্মৃতি রোমন্থন,
হারিয়ে যাওয়া কত স্মৃতিই যে আনতো টেনে
ঈশ্বর যেন আপন মনে করিয়ে দিত স্মরণ-
এসেছি কোথা থেকে, কি অভিপ্রায়ে?
পড়ে আছি কোন ভ্রমে, কোন সত্য লয়ে?
সেই শরৎ, শরতের সেইসব দিন
ছিল যে কতনা ঘটনাবহুল, তাৎপর্যময়!
সেইসব দিন আজও আছে ধরণীর বুকে
আজও শরৎ তাঁর সৌন্দর্য বিলায়
তবু শরৎ আজ আর শিহরিত করতে পারে না,
শরৎ আজ সরে গেছে সোনার জীবন থেকে।
কাঁশফুলের ঝোপে আজ সাপের ভয়
শাপলা পদ্মে মনে হয় যেন,
ভোমরা তার বিষ ছড়িয়ে গেছে,
শরত- আকাশের ঐ শুভ্র মেঘকেও
ভয় হয় যেন, তার আড়ালে
যুদ্ধ বিমান লুকিয়ে আছে।
কাঁশের ঝোপে লুকোচুরি খেলতেও ভয় হয়
যেন সে ঝোপ থেকে আর বেরুতে পারবো না,
সৌন্দর্যের শরৎ আজ ষড়যন্ত্রে ভরা,
জীবন আজ জীর্ণ, কপটতায় ভরা
শরতে আজ শরতের গান বড়ই কর্কশ
শরৎ আজ জীবন থেকে গেছে হারিয়ে।
১১.০৯.২০২০