ফলুয়ার চর ঘাট ।। মোঃ শাহীনুর ইসলাম

 ইস্ এলায় পন্নুহয় ব্যাহে। আস্তে আস্তে ভ্যান চালান,যে ভাঙ্গা সড়ক,'কয় বছর ধরি যে ভাল করে না। একবার উল্টি গেইলে দাত-মুখ সউগ ভাঙ্গি যাইবে।

 - ফির  তোমরাও একনা ভালো করি ধরেন, যেন পরেন্না । আগে এটা ছিল বাধের সড়ক,পরে পাঁকা হইচে। দ্যাখেননা ঠাই ঠাই ভাঙ্গি গেইছে। প্যাটের দায় এই ভাঙ্গা সড়ক দিয়া হামাক ভ্যান চলা নাগে।

 - সরকারি লোকেরা কি এই সড়কটা দ্যাখেনা?চেয়ারম্যান মেম্বরেরা কি করে।

 - দ্যাখেনা আবার উপজেলার সউগ অফিসার আর চেয়ারম্যান মেম্বরেরা সবাই এই সড়ক দিয়ায়'তো কুড়িগ্রাম যায়। শুনছি ওমারা অফিসের লোকের  ঘুষ দিয়া সড়ক ভালোকরার ট্যাকা তুলে নিছে। আর কয় "ভোটত যে খরচ্যা হইচে সেইট্যাকায় বলে এলাও ওঠে নাই।"

- আচ্ছা কনতো কতদিন ধরি এই সড়ক ভালো করেনা।জানেন কি?

 - ক্যা তোমরায় ভাল করবেন নাকি? 

  - আরে না না সেটা নোয়ায়, এমনি তোমাক পুছ করবার নাগছো।

 - মনে নাই, এক হাতে ভ্যানের হ্যান্ডেল অন্য হাতে মাথা চুলকায় আর বলে, কয় বছর আগে ভাল করছিল----! মনেনাই, দ্যাখেননা ঐ ট্রাকটর গুলা এই সড়ক দিয়া বালু নিয়া যায় আর আইসে। ফির ঘাট থাকি গরুর গাড়ি গুলা মাল সামানা নিয়া আইসে,সড়কটার আজাইর নাই। আর সেই জন্যেই তো এই অবস্তা।

- পিছনো থেকে ট্রাকটরের হর্ণ। ভ্যান ওয়ালা মাথা ঘুরে পিছন দিকে তাকায়,একটু সমতল রাস্তা পেলেই সাইড দিবে।

ব্যাটারি চালিত ভ্যান কাঠের তক্তার উপর গদী দিয়ে বসার ব্যাবস্থা করা হয়েছে।সামনে সীটে নুরইলাম সহ দুইজন পুরুশ আর পিছনের সীটেও দুই জন মহিলা। সকলেই ফলুয়ার চর ঘাট মুখে যাচ্ছে।ভ্যানওয়ালা ও সামনের সীটে বসা পুরুশের মধ্যে এভাবে কথা হচ্ছিল।

ট্রাকটরে ত্বর সয়না। সে হর্ণ এর মধ্যে হাত দিয়ে থাকে। হর্ণের শব্দে কান ঝালা-পালা হয়। ঐ সমায়ের মধ্যই একটু সমতল দেখে তরিঘরি করে সাইড দেয়। দ্রুত বেগে ট্রাকটরটি পিছনথেকে অতিক্রম করতে থাকে। আর পথের মধ্যে জমে থাকা ধুলিগুলি এমন ভাবে আকাশের দিকে উড়তে থাকে সকলের চোখ মুখ সব অন্ধকারে ঢেকে নেয়। রাস্তার দু ধারে বাড়ি ঘর ও গাছ পালা দিয়ে ঘেরা। বাতাশ বেরুবার কোন সুযোগ নাই,তাই ধুলাগুলি কুন্ডলি পাকিয়ে অনেক্ষন ধরে ঘুরতে থাকে। গাছের পাতা থেকে সুরু করে বাড়িঘর পর্যন্ত ধুলি জমে সাদা হয়েছে। মহিলা যাত্রী কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকে আর অন্যরা চোখ বন্ধ করে থাকে। ভ্যানটি দাড়িয়ে থাকে।ট্রাকটরটি বেশ দুরে চলেযায়।

একটু পরে ভ্যান ওয়ালা ঠাহর করে প্যাডেলে পা রাখে এবং পিকাপটা একটি টান দেয়। ভ্যানটা একটু সামনে এগুতেই বা দিকের চাকাটি গর্তে পরে যায়। বাদিকের যাত্রী 'এই পরে গ্যালো গ্যালো বলতে বলতে হাত ফসকে ধপ্পাস করে নীচে পরে যায়।

অন্য যাত্রী সহ ভ্যানটি দাড়িয়ে থাকে।

মহিলা যাত্রী পিছন থেকে চিৎকার দিয়ে উঠে বলতে থাকে। 

 - এইডো কি করছ্যাও দ্যাহোনা লোকটো পইরা গেলগা কেমনে ভ্যান চালাও জিড়োন বাদে চালাতে পারছ্যাওনা। কানা হইছ্যাও! দিশ্যা পারছ্যাও না! হায় হায় অহ্হনেই হাত পা ভাইঙ্গা গ্যাতোগা। কি যে করছ্যাল।

লোকটি কলাগাছের ডালপালা আকরে ধরে একটুর জন্যে রক্ষাপায়। পাশেই বিশ পচিশ ফুট গর্ত ।

নুরইসলাম সামনেই ছিল সে লাফ দিয়ে নেমে তৎক্ষনাৎ হাত টেনে লোকটিকে উপরে উঠায়।

লোকটি পাথর মিশ্রিত বালিতে পরে। বেশ ব্যাথা পেয়েছে। উহ্ আহ্ বলতে বলতে ধুলায় মাখা সার্ট প্যান্ট ঝাড়তে থাকেআর ট্রাকটর ড্রাইভারকে গালি দিয়ে চৌদ্দ্য গুষ্ঠির শ্রাদ্ধ্য করে। তার সাথে মহিলাটাও সুর মিলায়। "ঐ হারাম জাদা পোলাডাকে ধইরা হারমোর ভাইঙ্গা দ্যাওগা। হে বড্ড বাইরা গ্যাছাও"।

ইতিমধ্যে ধুলার প্রকোপ অনেকটা কমে গেছে। সকলেই ঘাট অভিমুখে রওয়ানা দেয়।

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।