সন্ধ্যা। পৃথিবীর স্থানে স্থানে তা কত নয়নাভিরাম দৃশ্যপটেরই না অবতারণা করে!তৎপূর্বেই কোনও একটি প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত স্থানে ঢি’ দিয়ে বসে দিবারাত্রির এ সন্ধিক্ষণকে পশ্চিম দিগন্তের ধূসর গাঁয়ের মাথায় মনশ্চক্ষে একান্তে উপভোগ করতে লেগে পড়া আমার আশৈশব অস্থিমজ্জাগত অভ্যাস। যে স্থানটিকে গোড়া করে এ লেখার পত্তন ঘটাতে যাচ্ছি, সেটি তেমনই এক স্থান। সামনে নদী, যার পানি প্রবাহে ষড়ঋতু জুড়ে অপরাহ্ন থেকে সূর্যাস্তে থাকে হরেক রকমের মনোরঞ্জক ছলাকলা । তন্মধ্যে হেমন্তের ছলকলাগুলোই আমার কাছে সর্বাধিক প্রাণস্পর্শী হয়ে ওঠে। হেমন্তে এখানকার পানিতল খুব বেশি নিচে নেমে যাওয়ায় এখানে পাড়ঘাটা মতো পড়ে। হাঁটু কিংবা তৎনিম্ন পানির তরঙ্গে প্রস্থানোদ্যত সূর্যের লাল আভায় অপূর্ব শিহরণ জাগে। পেছনের ধূ ধূ মাঠ, যাতে কদাচিৎ দৃষ্টি ঘোরালে আরেক প্রকার শিহরণ ওঠে, সে-ও মনশ্চক্ষে আমাকে ভীষণ টানতে থাকে। ঠিক এখানকারই ভীতি-শিহরণ জাগানিয়া অতীত ঘটনাপঞ্জী : খুন হওয়া ব্যক্তির লাশ পড়ে থাকা, ভূত প্রেতের আনাগোনা, কাছারের গর্তে সাপ খোপের বাস প্রভৃতি লোককথার সবই ভেস্তে যায়। সামনে শুধুই তরতর নদী-তরঙ্গ, তাতে লালাভার বিচ্ছুরণ আর ওপাড়ের ধূ ধূ মাঠের পর দূর গাঁয়ের ধূসর ছায়া ভাসে।
সব মিলিয়ে তন্ময় হয়ে আমার বসে থাকাই অব্যাহত থাকে। ভাবি, অবশেষে এই বুঝি প্রকৃতিতে আমার অনির্বাণ লাভ হতে চলল। ঠিক তখনই সব রোমাঞ্চানুভূতিকে ভোতা নিরঞ্জন, পানসে করে দিয়ে পার্শ্ববর্তী গাঁয়ের কৃষক হারু মিয়ার কর্কশ পাগলাটে কণ্ঠ জাগে :
হাইখেলা, হাইখেলা
এইবার হইব হাইখেলা
হাই টি টি টি টি হাইট
এইবার যেনতেন খেলা না
এইবার খেলাডা হইব হাইখেলা
মানুষ আমি আছি হাই
ফইটা মিয়া আছে গাই, খ্যাক্।
ব্যগ্রকণ্ঠ আমাকে খুব বেশি বিচ্যুত-বিচলিত করে না; করে না হারু মিয়ার উৎকট হাতহাতিলও। আমি তেমনি অভিভূত থাকি পশ্চিমের প্রায়ান্ধকারবিলীন দিকচক্রবালে। কিন্তু বিরক্তি বিচ্যুতিটি তখনই চূড়ান্ত পর্যায়ে ধেয়ে আসে যখন হারুমিয়া হাতের তৈল মাখানো কালো বিশেষ লাঠিটি সপাৎ সপাৎ ঘুরিয়ে একেবারে আমার কানের কাছে মুখ ঠেকিয়ে বলে ওঠে, বাবাজি, হাইনজোর তো এক্কেবারে ঘনাইয়া আইলো, সূয্যু ওইপাড়ের দস্যুপাড়ার তলে গেছে গা। এই কুইস্থানে একা একা অহনও বইয়া থাকবেন ? ভূতের কতা হুনেন নাই ? হাফ, বিচ্ছা, গোড়ুস্থানের গোড়খোদের কতা? একটা পাগলা ঘোড়াও যে পিছনের মাঠে ফাল পাড়ে ? ওই আছমান থেইকা উইড়া যে নামে, হুনেন নাই ?
শুনেছি, আপনি দয়া করে যান। আমাকে একা বসে থাকতে দেন। আমি মনোযোগ না সরিয়ে বলি।
বাবাজি, আপনের বাপের ধারেই যাইতাছি। গেলি পর হ্যায় তো জিগাইব আপনে অহনও এইধারে বইসা আছেননি। আমার কর্তব্যজ্ঞানের কুনু কতা হ্যায় না কইলেও আমার পাঁচ আত্মার ভিতরে তা খালি ঘুটাচাইল করতে থাকব। কতা কিন্তুক আমার এক্কাবারে খাসা।
হোক খাসা, আপনি যান দয়া করে। বাবার কাছে যান। গিয়া বলেন আমি এখনও এখানে বসেই আছি। আপনি আমাকে অনেক করে বাড়ি যেতে বলেছেন, কিন্তু আমি বসেই আছি।
বাবাজি, তালি তা-ই কমু? কমু হেইডাই ?
জি বলুন, একটা সময় বাবা আর আমি দুজন মিলেই তো এখানে বসে মাছ, কচ্ছপ, কুমিরের চলাচল, ওপাড়ের লালাভ দিগন্ত দেখতাম। বাবা ভুলে যাননি নিশ্চয়ই।আর এখানে তার অনুমতি নিয়েই বসে থাকি ।কতক্ষণ থাকব তাও তার জানা।
বাবাজি, কইতাছিলাম এইঠায় হাঁপের চলাচল ভয়মকর। কালা কুটকুটা দারাইজ গুক্কুর!ফুলা মাথাত কুতকুতাইনা চৌখ!ওরে বাপরে বাপ! এক্কাবারে এই আঁন্ধার কাছারের তলেই। কত আর আপনেরে কমু ! এইহানে ভূতের চলাচল পবন হাওয়ায়, গোড়খোদ আহে ওই যে- দেহেন, ওই পাড়ের গোড়ুস্থানে লাশ বিশটাইয়া না পাইয়া। মানুষজন একবার পাইলেই হইল, কী মটকানি যে দেয় গর্দানে! আর ঘোড়াতো আহে দাঁত বিজলানি দিয়া, বিকট চিহি-কইরা-কী যে তার ছিরি !
আসুক এরা, আপনি যান। বাবা নিশ্চয়ই বারান্দায় বসে আছেন।
হাই টি টি টি হাইট। এইবার হইব হাই খেলা। যেনতেন খেলা না, এক্কেবারে হাই খেলা। আমি আছি হাই, ফইটা মিয়া গাই।
একত্রে আমাদের বাড়ি যেতে আমার সায় না পেয়ে ভেতরভীতু হারু মিয়া নদীর তীর ধরে আমাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে একা গাঢ় অন্ধকারে হাঁটে। যতটা না তার মুখের বুলি, তার চেয়েও এ সময়টাতে বোধ করি ভয় তাড়াতে একই কথা বলতে ও একই শব্দ করতে থাকে সে যতক্ষণ না আমাদের বাড়ির বাইরের ঘন গাছপালা নাগাদ পৌছায়। তার কণ্ঠটি অশ্রুত হতেই বিপরীত দিকে অর্থাৎ হারু মিয়াদের বাড়িমুখী পথে ঢোলের বাড়ি ওঠে। গরুর ভুঁড়ির পুরু চর্বি দিয়ে বানানো ঢোল। বাজনা তার :
ঢম ঢমাঢম ঢম ঢমা ঢম
ঢম ঢমা ঢম ঢম
ঢম ঢম ঢম !
ঢোল বাজার ফাঁকে সমবেত কিশোর- তরুণ কণ্ঠে ছড়াগান ওঠে। গান হারু মিয়াকে কটাক্ষের উদ্দেশ্যে :
হারু করে কারু বারু
ফইটকা বাজায় ঢোল
হারুর লাইগা রাইন্ধা রাখছে
খাকশিয়ালের ঝোল।
হারু খাস তো খা
না খাস তো চিনা তুলতে যা
চিনা নিল স্রোতে
হারু বাড়িতে আইসা কুঁতে।
এখানে খাঁকশিয়াল শব্দের পরের যে শব্দটি গান গাইয়েরা নিয়মিত ব্যবহার করে থাকে তা অশ্লীল হওয়াতে পরিবর্তে ঝোল শব্দটি আমি জুড়ে দিয়েছি।
গান গাইয়েরা হারু মিয়ার চির প্রতিদ্বন্দ্বী ফকিট মিয়ার তরুণ ও কিশোর ছেলেপুলে। হারু মিয়া আমাদের বাড়ি যাবার উদ্দেশ্যে সন্ধ্যার পর নিজ বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার পর পরই তারা দলবদ্ধ এ গান শুরু করে। গান যতটা না হারু মিয়াকে শোনাবার উদ্দেশ্যে, তার চেয়েও বড় অভীষ্ট তাদের পাড়া প্রতিবেশি, পথচারীদের শুনিয়ে হারু মিয়ার মান খাটো করে নিজেদের গায়ের হাঁড় জুড়ানো। ঢোলের বাড়ি প্রবল হবার সাথে সাথে কণ্ঠগুলোও তীব্রতর হতে থাকে। আমি তন্ময় ভাব কাটিয়ে ঝটপট উঠে পড়ি। জানি, আর কিছুক্ষণের মধ্যে ফটিক মিয়াও একইভাবে এসে একই ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে। তারও গন্তব্যস্থল আমদের বাড়ি। অভিষ্ট হারু মিয়ার মতোই আমার বাবার সাথে সাক্ষাৎ। তড়িঘড়ি না উঠলে ঢোলগুলোও অদূরে বাজতে বাজতে কান ফাটাবে।
শব্দগুলো এগিয়ে আসার সাথে আমি নদীপাড় ছেড়ে পেছনের অবারিত ফসলের মাঠে পা ফেলি। খেতের আল ধরে হাঁটি। ওদিকে ঢোলের বাজনা আর ওঠে না। চোখ রাখি ছায়াঘন চারদিকে- তন্ন তন্ন করে খুঁজি ভূত প্রেত, গোড়খোদদের। কোনদিন ছায়াবৎ কোন বস্তুও চোখে পড়ে না। চারদিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে সোজা আকাশে তুলি। নিঃসীম আকাশ বুকে অবারিত আলোকবিন্দু নিয়ে নির্বিকার চেয়ে থাকে। কখনো চাঁদ থাকলেও তা থাকে পূবে কিংবা পশ্চিমে, দূরে সে দূর দূরান্তে আমি উন্মুখ চেয়ে পথ হাঁটি-যদি হারু মিয়ার বয়ান করা সে উড়ুক্কু ঘোড়াটি নেমে আসে!ক্ষতি কী তাতে ? ঘোড়ায় চড়ার কৌশল তো রপ্তই আছে। চড়ে না হয় পারি জমাব দূরের চিরচেনা ওইসব মিটিমিটিদের উদ্দেশ্যে। ভাবতে ভাবতে গাছগাছালির ঘন ছায়াঘেরা বাড়ির সীমানায় এসে উঠি। বার আঙিনার বড় গাছগুলোর আড়ালে খানিকক্ষণ দাঁড়াই। তখন দেউরি পথে লাঠি ঠুকে বেরোতে থাকে চির চেনা হারু মিয়া; খাটো, পায়ে নাগড়ার খচখচ, পরনে ধবল লুঙ্গি, গায়ে একই রঙয়ের হাওয়াই শার্ট, মাথায় বেতের টুপি, থুতনীতে লকমা দাড়ি। অন্ধকারেও আমি মনশ্চক্ষে তাকে শতভাগ আঁকতে পারি।
হারু মিয়া অতিক্রম করে যেতেই আমি গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসি। বার আঙিনায় পা চালিয়ে ভাবি, দেউরি পথে ভেতর আঙিনায় পা দিতেই দেখতে পাব বাড়ির পেছন দিকের প্রবেশদ্বার দিয়ে ফটিক মিয়া মাথা নিচু আঙিনায় ঢুকছে। দৈত্যের মতো বিশাল শরীর, লম্বা মুখ, মাথায় ছোট চুল, গা খালি, গলায় প্যাঁচ দেয়া গামছা। বারান্দার অদূর থেকে অদ্ভুত গলা খেউরে মৃদুকণ্ঠে বলবে, চাচা মিয়া, আছেন নি? চাচা মিয়া!
বাবা বারান্দায়ই বসে থাকেন। গম্ভীর হয়ে জগৎ সংসার নিয়ে ভাবুকের মতো নানা কথা ভাবেন। সরল কণ্ঠে বলবেন, ফকিট? আসো, আসো। ফটিক মিয়া গলার গামছায় জলচৌকির কোনা ঝেড়ে আলগোছে মাথা নিচু বসে যাবে। কিছুক্ষণ মৃদু মৃদু গলা খেউরির পর কথা পাড়বে। সেই একই সব কথা, যেসব মিছেমিছি হারু মিয়াও বলে গেছে। আমি সন্তর্পণে আঙিনা পেরিয়ে নিজ ঘরে উঠে বই নিয়ে বসব। প্রায় সন্ধ্যায় তাই করি।
হারু মিয়া ও ফটিক মিয়া পরস্পর চাচাত ভাই, লাগালাগি বাড়ি। জ্ঞানের উন্মেষ ঘটার পর থেকে দুজনেই দেখে এসেছে তাদের বাপ চাচারা নানা বিষয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়েই দুজন জগৎ ছেড়েছে। হারু মিয়া আর ফটিক মিয়া দুজনই পৈতৃক শত্রুতার ঐতিহ্য সযত্নে লালন করে চলেছে। ব্যাপারটা বংশগত নাকি কাকতালীয় যে দুজনেরই মাথা সমঅসুস্থ। সংসারের নানা কিছুতে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা, শত্রুতা। বাড়ির সীমারেখা নিয়ে, ফলফলারির গাছগাছালি নিয়ে, গরু ছাগল মহিষ ভেড়া নিয়ে, সর্বোপরি দুজনের দুখণ্ড জমি নিয়ে। দুজনেই ষাঁড় পালে, লড়াই দেয়া ষাঁড়, হল্লা করে যত্ন করে ভাঙা আয়নায়, ছুরি চাকুতে ষাঁড়দের শিংগুলো চেঁচে নিয়মিত ক্ষুরধার করে। তারপর ঢোল পিটিয়ে তারিখ দিয়ে দিকজোড়া মাঠে লড়াই জমায়। জয় পরাজয়ের হিসেবে হারু মিয়া বরাবর পিছিয়ে থাকে। তবে কণ্ঠে-চাপায় সে বরাবর এগিয়ে; মোটাকণ্ঠ-বাজখাই, ফটিক মিয়ারটা মেয়েলী-ক্ষীণ-অস্পষ্ট, দেহ- ভারিক্কির বিপরীত।
জমি নিয়ে আগেও দুজনে মামলা লড়েছে। হারু মিয়া বেশি বার হেরেছে। তবে শেষ মামলায় সে সবিশেষ আশাবাদী। কারণ, স্বভাষ্যে এবারে তার খেলাটা হবে যেনতেন খেলার উর্ধ্বে উঠে হাই খেলা, মহা খেলা, চরম খেলা। এ খেলায় তারই ঐতিহাসিক জয় হবে।
খেলায় জিততে হারু মিয়া প্রতি সন্ধ্যায় ছুটছে আমার বাবার কাছে। নিয়মিত ছুটছে ফটিক মিয়াও। তারও একইরূপ জেতা চাই। ইতিপূর্বে জিততে গিয়ে বছরের পর বছর দুজন বহু খেলাই খেলেছে। গাঁয়ের মাতবর মহিশুর শিকদারের পরামর্শে শক্তি বাড়াতে দুজনেই পুত্র সন্তান মানত করে করে দেদারছে সন্তান জন্ম দিয়েছে। এক্ষেত্রে হারু মিয়া কিঞ্চিৎ এগিয়ে; নয় ছেলে তার। ফটিক মিয়ার সংখ্যা নয় হলেও শেষ দুজন মেয়ে হওয়ায় সে একটু পিছিয়ে। এক পর্যায়ে মাসাধিক কালের ব্যবধানে দুজনেরই বউ মরেছে।
পুত্র সংখ্যায় এগিয়ে থাকলেও পুত্র হারু মিয়ার অধিকাংশই মাথা পাগলা। একই দুভার্গ্য ফটিক মিয়ারও । কাজেই মাতবর মহিশুর শিকদারের পরামর্শ আর নয়। বাবা শহরের ভাল উকিল ধরে আমাদের জমিজমা সংক্রান্ত এক মামলায় বীরদর্পে জিতেছেন। তাই মামলায় জেতার বুদ্ধি পেতে হন্যে হয়ে দুজনেরই বাবার কাছে ছোটা। বাবা দুজনকে বারবারই পরামর্শ দিয়েছেন,তুচ্ছ বিষয়ে উকিল মোক্তার ধরে এত সব মামলা লড়ার প্রয়োজন নেই; পরস্পর সমঝোতায় এসে শান্তিপূর্ণ জীবন বেছে নিতে। শোনেনি কেউই। এক সময় হতাশ হয়ে দুজনই বাবার কাছে আসা ছেড়েছে। কিন্তু দুজনের মুখেই হাই খেলা চরম খেলার বুলিটি থেকেই গেছে। একটা সময় মামলায় বীতশ্রদ্ধ হয়ে ওঠে তারা। প্রতিদিন মুখে মুখেই পরস্পরকে ভয়াল হতে দেখে নিতে থাকে। দিন দিন ফটিক মিয়ার ছেলেদের ঢোলের বাজনাটা প্রকটতর হবার সাথে হারু মিয়ার সহ্যের সীমাও পেরোতে থাকে। একরাতে গলা উঁচিয়ে ফটিক মিয়াকে প্রকাণ্ড চ্যালেঞ্জ করে বসে সে। জমির ফয়সালাটা জমিতেই হবে। মহাখেলা, চরম খেলা, হাই খেলা হবে। ফটিক মিয়াও ঢোলের বাড়ি তুলে সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে।
এক রৌদ্রৌজ্বল সকালে ঢোলের বাড়ি আর মহা হইহট্টোগলে খেলাটা শেষ পর্যন্ত হয়েই গেল। প্রথমে হারু মিয়ার বড় ছেলের মুগুড়ের প্রচণ্ড বাড়িতে মাথা ফেটে ফটিক মিয়া মাঠে মরল। তৎক্ষণাৎ ফটিক মিয়ার বড় ছেলের লাঠির বাড়িতে মাথা থেতলে হারু মিয়াও তথায় সাঙ্গ হল।
জীবিতদের দুপক্ষেরই মামা বাদী বরাতে দুপক্ষের বিরুদ্ধেই খুনের মামলা হল। দুপক্ষই বাদী, দু পক্ষই বিবাদী। দু মামলায় দুপক্ষই পালাক্রমে বাদী বিবাদীর কাঠগড়ায় দাঁড়ায়। গড়াতে থাকে সময়। মামলায় দু পক্ষেরই নগদ অর্থকড়ি যায়। এক চিলতে জমির হাঙ্গামায় সমস্ত জমি-জমা যায়; বিক্রিঘটিত হাত পড়ে ঘরবাড়িতেও। বলতে গেলে দুপক্ষই পথের ফকির।
এরপর বছর সাতেক পেরিয়ে যায়। কৈশোর অতিক্রান্তে আমি যৌবনে। নদীর সেই পাড়ঘাটা কাছারে সেই অবারিত মাঠ পেছনে ফেলে ষড়ঋতু সন্ধ্যায় তেমনি ঢি’ দিয়ে বসে থাকি। নদী, সূর্য, আকাশ, গাঁ, মাঠ, গাছ প্রকৃতি সেই আগের মতোই। শধু অস্তিত্বহীন আগের সেই সপাৎ সপাৎ লাঠির ঘুরানি, সেই ঢোলের বাড়ি, সেই উচ্চ পদশব্দ চলাচল, সেই-পুরুকর্কশ কণ্ঠ-হাই টি টি টি টি হাইট। এইবার হইব চরম খেলা, হাই খেলা।
কিছুদিন হল পর পর দু মামলার রায়ে দুপক্ষের উত্তরসুরীদের প্রত্যেকের ফাঁসির আদেশ হয়েছে। কারণ, হারু মিয়া ও ফটিক মিয়া দুর্বল মাথায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোরে শেষ পর্যন্ত খেলাটা সত্যি সতি খেলে গেছে হাই।