বই। আমার বন্ধু। প্রিয় বন্ধু। প্রিয় বনে গেছে, বাংলা সিনেমার রোমান্টিক গল্পের মতো করেই। বইয়ের বুক জুড়ে থেকে যায় গল্প। জানা-অজানা অনেক গল্পই আশ্রয় নেয় বই থেকে। আবার বইয়ের অস্তিত্ব গল্প ও জ্ঞ্যানের শিকঢ়ে আবদ্ধ।
বই সম্পর্কে বলে আষাঢ়ে গল্প নাই করলুম। গ্রামের বেড়ে ওঠা ছেলে হলেও দুরন্তপনার আবহ গায়ে-মনে কোথাও মাখাতে পারি নি। চাকুরীজীবী বাবা-মা'র একমাত্র ছেলে আমি। পাঁচটি বসন্ত না পেরোতেই ওয়াক্ত মেনে বই পড়ানো। অ আ ক খ দিয়ে হাতেখড়ি। বাবা-মা'র সম্মিলিত ও পরিকল্পিত প্রয়াসে চলত, মস্তিষ্কভোঁজ। জেলখানার কয়েদী কিংবা চিরিয়াখানার প্রাণীর মতো বই গুলো নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনতাম। খুঁজতাম মুক্ত বাতাশ। হায়! সেটা পেয়ে উঠি নি! সুকান্ত'র সুরের রেশ ধরে বলতে ইচ্ছে হয়, "একদণ্ডের মুক্ত বাতাস যেন, লাখ টাকার হাওয়াই-মিঠাই।"
কিন্তু, বিরক্তির কারণ বই থেকেই আবার প্রেমের সূচনা। মায়ের সংগ্রহে ছিল, কবিগুরুর "গল্পগুচ্ছ"। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোনোর আগেই শেষ করেছি সবগুলো পৃষ্ঠা। সত্যিই, একাডেমিক শিক্ষার বাইরে এগুলো পড়তে ভালোই লাগত। যদিওবা আমার কাছে প্রথম দিকে সাহিত্যের অখাদ্য কিছুই মনে হতো। তবে, "ইচ্ছাপুরণ" গল্পটা আমার খুবই ভালো লেগেছিল। নিম্নমাধ্যমিকে ফেলুদা ও ঠাকুরমার ঝুলি আমাকে ভীষণ ভালো রেখেছিল। কবিগুরুর গল্পগুচ্ছ থেকে পাওয়া প্রেষণা আজ আমায় অনেকদূর নিয়ে এসেছে। নিত্যদিনের খাবারের মতো বইয়ের দু'টো পৃষ্ঠাও যেন আঁখি ও মনের খাবার।
মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনোর আগেই চেষ্টা করেছি ছোটখাটো সংগ্রহশালা তৈরির। শোবার ঘরেই তৈরি করা এই সংগ্রহশালায় আছে, ৪৭+ বই। নিজের প্রতিবন্ধকতার বেড়াজাল থেকে মুক্তি পেতে, নিজের সংগ্রহে রেখেছি ৮০০+ পিডিএফ বই। ভ্রমণ কিংবা মন খারাপের দিনে মুঠোফোনেই পড়ে নেয়া বইগুলো সর্বোচ্চ চেষ্টা করে, মনের আকাশের কালো মেঘ সরাতে।
রবি ঠাকুরের পর নজরুল, শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র, জসিমউদ্দিন, সৈয়দ শামসুল হকদের যেমন পড়েছি, এখন পড়ছি তরুণ সাদাত হোসেন কিংবা তৌহিদ-উল হককে। তবে, লকডাউনে করোনার রাজত্বে পুরো বিশ্ব যেখানে স্থবির, বিশ্বের নামীদামী লেখকদের অনুবাদ বইগুলো আমাকে ভালো রেখেছে। আত্মবিশ্বাস ও আত্মউন্নয়নের নেপথ্যে ডেলকার্নেগী কিংবা রবার্ট কিয়োসাকি যেন নিজেদের জায়গা থেকে অনন্য।
এই যে! অনেক লিখে ফেললাম। একটু জিরিয়ে নেয়া উচিৎ তাই না? প্রেমিকারর সাথে প্রেমালাপের মাঝে জিরিয়ে নেয়ার ঘন্টাতেও বলব, "শুধু তুমি নও, বইগুলোও ভালোবাসি।"