মালিক ভরসা
সেদিন এক রিকশা ওয়ালা
তার প্রশস্ত কাঁধ উঁচু নিচু করে বললেন
ঘুমোতে গেলেই একটা কান্নার কণ্ঠ
ফিতায় ফিতায় মেপে নিয়ে যায়
আমার ভেতরের সবটুকু জল।
পৌষের রাতের মতো একটা শিশু
স্টেশন হয়ে শুয়ে পড়ে বুকে
স্টেশন কাঁপে, পৃথিবী কাঁপে
রেললাইন রক্ত পাথরের মতো শক্ত অশ্রু
মানুষের হাওয়া হয়ে মিশে যায় মেঘে।
শুধু ঘরে বাহিরে রাজার মতো পায়চারি করে
আমাদের ব্যক্তিগত দুঃখগুলো
হাসপাতাল কিনে নিয়েছে টাকা ওয়ালারা
গাছের গুঁড়ি , পথের রিপোর্ট, মৃত্যুর বাতি
ডাক্তার-টেস্ট কিনে নিয়েছে টাকা ওয়ালারা
আমাদের কিছু হলে...
করিডোর বারান্দায় চক্কর! চক্কর....
শান্তনার শেষ কবুতর হয়ে হেঁটে আসে কবর
আর সেই পিতামহের নিম কথা
মালিক ভরসা! মালিক ভরসা!
১৮.০৪.২১
উত্তর পুরুষ
বাড়ির সামনেই ঠাকুমার কবর
ইদানীং সন্ধ্যা হলেই আবোল-তাবোল ভাবে
উঠে আসে অতীতের জ্বলন্ত কয়লা হয়ে।
পূর্ব ও পশ্চিমে হেলান দিয়ে তিনি
কথা বলতে বলতে গড়িয়ে যান মানুষের পেটে
জারকের মতো তার চোখের জলে
গ্রাম শহর লোকালয় হজম হয়ে যায় অন্ধকারে।
একদিন দখিনের বাতাস ধরে ঠাকুমা বলেন
বিষন্ন ও ক্ষুধার্ত শেয়ালগুলো চিরদিন
শুধুই কাগজের ইট নিয়ে অতিক্রম করেছেঅনুকূল ছায়ার আকাশ সীমা।
ভোরের মোরগেরা ক্লান্তি ভেঙে অক্সিজেন নিয়ে
আযান দিতে যায় উত্তর পুরুষের গণকবরেসাপের মগজে মদের আগুন
ভ্যান্টিলেটরে জ্বলছে পৃথিবীর পিরামিড
প্রাণহীন হাসপাতাল গুলোর প্রাণ।
২৬.০৪.২১
বিধান
মৃত্যুকে হাতে নিয়ে
ডাক্তারের কাছে গেলাম
ডাক্তার ধারালো ব্লেড বের করে
ধরলেন পেটে।
বিছানাগুলোর চেয়ে মুমূর্ষু
এপ্রন ব্যান্ডেজ স্যালাইন
ঔষধগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো সন্ত্রাসী।
এক বুক নীরস নিঃশ্বাস ছেড়ে
তাকালাম চারপাশের মানুষগুলোর দিকে
তারা দুহাত তোলে আকাশে তাকালেন
মৃত্যু ও জীবনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে
পুড়তে-পুড়তে শুনলাম
পোড়া পাহাড়ের চিৎকার।
পথে এসে দেখা হলো দুই ভিখিরির
কাঁচের প্লেটের মতো চনচন করে
তার হাত হাসতে-হাসতে বলছে
সময়ের সমুদ্র হয়ে আজন্মকাল
ভেসে যাচ্ছে একটিই কণ্ঠ একটিই গান
মাত্র একটি পাখিই ওড়ে যাচ্ছে জলে
তার ডানা-ভরা রাজ রাজত্ব বিধান।
২৩.৪.২১
বাম বাহুতে দু'টো কবর
স্নেহের আঙুল কেটে-কেটে
খোদাই করে যাই জীবন পাথর
বাঁকে বাঁকে জমে থাকা দুঃখ দোহার
নিঃশ্বাসের আগুনে কভু ভাপ উঠে না
এইযে এতো ফুল ফুটে থাকে ঘর আঙিনায়
হৃদয়ে কেন ফুল ফুটে না।
তীব্র পলাশ ঝরে
জল পেলেই কামনা বাড়ায় কলমিলতা
চিরবসন্ত নিয়ে প্রতিদিন
ঘরে ফিরে আলিঙ্গন প্রিয় চড়াই
আমার তো কিছু নেই সীমাহীন আকাশ ছাড়া
ঝরাপাতার মতো শুকিয়ে গেছে মৃত্যু লড়াই
বাম বাহুতে দু'টো কবর তবুও কেন
চোখ তুলে করে যায় ভালোবাসার বড়াই।
২১.০৪.২১
মানুষের দানা
আমার দাদি প্রতিরাতে ঘুমোতেন
দাদার কবরের ভেতর
এবং একটি কাঁচের বোতলে
প্রতিদিন তুলে রাখতেন অল্প অল্প জল
কাঠ-পোড়া রোদ থেকে তিনি
কুড়িয়ে আনতেন মাঠ ফেটে বেরিয়ে আসা মানুষের দানা।
ঝড় বৃষ্টিতে যখন পাতার মতো
ওড়ে যেত সাধারণ মানুষ-পাতা
দু-ঠোঁটের মাঝখানে ঠেলে দিয়ে পান
নিষ্ঠুরের মতো বলতেন
এই হলো আকাশ মাটির প্রেম।
মৃত্যুর কথা শুনলেই তিনি
কাঁচের বোতলটি রাখতেন হাতের কাছে
তার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়তো
রক্তের মতো রঙ।
২৩.৪.২১
দালান জাহান
১২১/২ তেজগাঁও ঢাকা।