আফটার সিক্সটি
সেকালে কাঁদতাম; একালে কাঁদি।
কাঁদার নিজস্ব ব্যাকরণে
অর্থের ব্যাপার আছে, থাকেই।
সেকালে চোখ কাঁদতো;
নোনাজলে ভাসতো; হালকা হতাম!
একালে মন কাঁদে;
কলিজা পুড়ে, মন পোড়ায়;
স্থায়ী দুর্গন্ধে বুক ভারী ভারী লাগে।
সেকালে স্বজন-প্রিয়জন, সব ছিলো;
মানুষ ছিলো না।
একালে মানুষের ভীড়ে গড়াগড়ি খেয়ে
কোথাও স্বজন দেখি না!
একাল ও সেকালের আমি
এখনো অবুঝ।
জলঘড়ি
অতঃপর...
একটা জলঘড়ি।
সোনালি শরীরে শীৎকার বলৎকারে
স্থায়ী কলঙ্ক নিয়ে
কাঁটাগুলো রক্তপানির স্রোতে
বিধৌত হয়...!
চিত্রকরের আজব তুলিতে
ফ্রেমবন্ধি নিয়তি,
জ্বালা-পোড়ার প্রচ্ছদে ভেতরের অবয়ব;
বাহিরে লবণপানির খোদিত নির্যাসে
চোয়ালের ভূমি তুন্দল রুটি!
ঘড়ি।
জমিনে উইপোকা’র বসতি;
উপরে কাঁটা-
ঘূর্ণনে কলিজা, হৃদপিণ্ড ছিঁড়ে
ফুসফুসে জমে ব্যথার বুদবুদ।
তারপর...
এক এক করে কাঁটাগুলো খসে যায়;
ফুরিয়ে আসে ঘড়ির প্রয়োজন...
পাখিঘটিত ভাবনা
পাখনা গজালে ওড়ার স্বাধীনতা থাকে
এই আকাশে উড়তে না চাইলে
অন্য আকাশে অন্য ভাবে ওড়ো
তবু ওড়ো-
আমিও পাখি হ'বো একদিন-
তোমার আকাশে উড়ার বাসনা নিয়ে...
হাঁটো, পা যেদিকে যায়
ভালোবাসাটা এখনো নতুনত্বের
গল্প বোনে-
বিরামচিহ্নহীন সম্পর্কের দিকে
দিন গড়িয়ে রাত পেরিয়ে
তোমার-আমার সমান্তরাল প্রেমের
পুরাতন চোখ
নীরব-নিস্প্রভ চাহনিতে ভাঙ্গে
হৃদয়ের খানা-খন্দর!
বড্ড আলসেমি পেয়ে বসলেও
ভাবতে হয় ভাবনার স্বভাব দোষে
খড়কুটোর অবলম্বনের কথা;
ব্যর্থতার আপাদমস্তক
প্রচন্ড ঘৃণা হয়
ঘৃণার ছোঁয়াচে জীবাণু
ছড়িয়ে যায় জীবনের অলিতে-গলিতে
অসম ব্যথায়
চাতকের ঠোঁটে এক মুঠো বৃষ্টির
সান্ত্বনা নিয়ে
ফিরে আসবে না জানি সমতায়
তুমি না কি এখন
ধ্বংসের মাতমে
প্রচন্ড খেলোয়াড় বেলা-অবেলায়
কষ্টের আশপাশে কষ্টের ছায়া
একটা কষ্ট আরেকটা কষ্টের পাশে
অনেকটা পথ-
অকারণে ফিরে যায়।
একটা সমান্তরাল সম্পর্ক ঘিরে
ক'ফোঁটা দীর্ঘশ্বাস
ওড়ে,
পড়ে থাকে আগুনপালক!
মেঘের শরীরে
চৈত্রের ঘাস
হাঁটে- হেঁটে হেঁটে ভাবে,
ভাবায়,
বৃষ্টির সারথী আর কতদূর?
কষ্টের পায়ে কষ্টের পথ মাড়িয়ে
পাহাড়ের পাশে একদিন-
আমি ঝর্ণা হ'বো!
মুহাম্মদ রফিক ইসলাম
জন্মঃ ৩০ অক্টোবর ১৯৮২ সালে, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায়। পেশাঃ শিক্ষকতা। প্রকাশিত ১ম কাব্যগ্রন্থঃ ইচ্ছেঘুড়ির আকাশ (২০১৯)