দিন দশেক পেরিয়ে গেল, আমাদের কথা হয় না। একদমই না। ফেসবুক মেসেঞ্জার, ফোন কল সবখানেই একটা নিষেধাজ্ঞা।
অনেকটা লক ডাউনের মতোই ঘটা করে নিজের মনকে কোয়ারেন্টাইনে রেখেছি। এছাড়া অবশ্য উপায় ছিল না।
প্রেমরোগ ভয়ঙ্কর। মনে ধরলে ছাড়তে চায় না। আচার-আচরণ সবখানেই প্রেমিক সত্ত্বার বহিঃপ্রকাশ। আর আমার মতো দুঃসাহসী, নির্লজ্জ্ব হলে তো কথাই নেই।
মালিটোলা পার্কের বারো ফুট উচ্চতার আসনে বসে যখন এই সব বীরত্বগাঁথা গল্পের স্মৃতিচারণায় ব্যস্ত, তখনই ওর দেখা। ঠিক বাস্তবে নয়। চোখের সামনে ফোনের স্ক্রিনে। আমার বন্ধু সরোজের সাথে ঘুরতে গিয়ে ছবি তুলেছে। আবার জুড়েও দিয়েছে ফেসবুকে।
সরোজ আমাদের ক্লাসমেট। ভালো ছেলে। প্রেমে দক্ষ ও অভিজ্ঞ। ডজনখানেক প্রেম করেছে। বাস্তব প্রেমজ্ঞান সম্পন্ন আধুনিক ছেলে। তৃণার সাথে মানিয়েছেও। মাস দুয়েক থেকে দুজনের প্রেম। বিশ্ববিদ্যালয় বাসে সকালে আসার পর থেকে বিকেল অবধি একসাথে। অসাধারণ রসায়ন।
ও বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, ওর নাম তৃণা। সানজিদা রহমান তৃণা। খুব শান্তশিষ্ট ও চালাক মেয়ে। অগাধ অবজারভেশন ক্ষমতাসম্পন্ন।
সরোজের সাথে ওর সম্পর্ক নেহাত বন্ধুত্ব ভেবে তৃণাকে বেশ জ্বালাতন করতাম। ও মেনে নিত। ভাবতাম প্রেমে পরার প্রথম পর্যায়। তৎক্ষণাৎ, 'দ্য ফোরটিন রুলস অফ লাভ' পড়ে টুকিটাকি পানিপড়া পেয়েছিলাম। তারপর থেকে আমার উন্মাদনা চর্চার সূচনা। উন্মাদনার গল্পগুলো শুধু রোমহর্ষকই ছিল না। ছিল ভয়ঙ্কর রকমের যুদ্ধসুলভ।
পুরান ঢাকার ইংলিশ রোডের এই মুক্ত আকাশের নিচে যখন স্মৃতি রোমন্থন করছি, হঠাৎ বান্ধুবী স্বীকৃতির ফোন। তুলতেই বলল, "লগ্ন, সরোজ তন্দ্রাকে ধোঁকা দিয়েছে। মনোবিজ্ঞান বিভাগের এক সিনিয়র আপুকে নিয়ে গতকাল থেকে নিরুদ্দেশ....."