জয় পরাজয় ।। ডা. হর্ষময় মণ্ডল


গৌর বেরা ভাগ্যান্বেষণে এসেছিল বাংলাদেশ থেকে ভারতেবর্ষে। না দেশ ভাগের সময় নয়। তাও এখন থেকে বছর দশেক আগে তো হবেই।গৌরর স্ত্রী রেবা, এক মেয়ে চিন্তামনি,

ও দুই ছেলে সানু ও কানুকে নিয়ে বর্ডার সিকিউরিটি দের, দালালের মাধ্যমে ঘুষ দিয়ে

চোরের মতো রাতের অন্ধকারে এসেছিলো।

বাংলাদেশে হিন্দুদের থাকতে দিচ্ছে না। এতো

অত্যাচার সহ্য করে থাকা যায় না, তাই প্রানে

বাঁচতে চলে আসা।বর্ডার থেকে বিশ পঁচিশ

কিলোমিটার দূরেই গৌরর এক কাকা এসে বসবাস করছে বেহুলা গ্রামে। গৌর সবাইকে নিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করে উঠেছিল কাকার বাড়িতে। কাকা নেউল বেরা জানিয়ে

দিয়েছিলো আমার বাড়িতে দিন কয়েক থাক

তারপর নিজের ব্যবস্থা নিজে দেখে নিবি।

বাংলাদেশের জমি, বাড়ি, সবকিছু জলের দামে বিক্রি করলেও হাতে নগদ টাকা বেশ

মোটা রকমের।এতো টাকা সাথে নিয়ে কোথায় থাকবে! কাকার ব্যাঙ্ক একাউন্টে রাখবে তারি 

বা ভরসা কি! ঠিক করলো বাড়ি ভাড়া নেবে।

বেহুলা নামে গ্রাম টাউনের সব আদব কায়দা

এখানে। যেখানেই ভাড়া নিতে যায় ভাষা শুনেই

বুঝে যায় এ বাঙ্গাল। তখন রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড ইত্যাদি দেখতে চায়। গৌর দেখাতে পারে না তাই বাড়ি ভাড়াও পায়না।

অবশেষে একটা মাটির দুচালা ঘর ভাড়া পেলো। সেখানেই উঠলো।দু চার মাস থাকার পর বুঝতে পারলো এখানে থাকা যাবে না।

এখানকার লোকাল ছেলেরা এসে সময় দিয়ে  উঠে যেতে বলে গেছে । বলেছে আমাদেরই খাবার জোটে না কাজ জোটে না তারপর উটকো লোক। একমাস সময় দিলাম তার মধ্যে

পাততাড়ি গুটিয়ে চলে যাবি। নইলে ------

ততদিনে গৌর স্থানিয় নেতার নাম ধাম জেনে

ফেলেছে। গৌর একদিন স্থানিয় নেতা গোপাল

কৃষ্ণ মহন্তর অফিসে হাজির হলো।সব কথা খুলে বলল, পায়ে হাতে ধরলো, নির্দেশ মতো

পার্টি ফান্ডে দশ হাজার টাকা ডোনেশন দিলো

কথা দিলো আমার পরিবারের ভোট আপনার

পার্টিকেই দেবো। নেতা যদিবা একটু নরম হলো পার্টির ছেলেরা বেঁকে বসলো।

গৌর দেখলো বুঝলো যেখানেই যাবো সেখানেই একই ভাবে তাড়াবে, তাই  যে কোন মূল্যে এখানেই থাকতে হবে। তাই বেশি না ভেবে একদিন গৌর স্ত্রী, ছেলেদের, মেয়েকে

নিয়ে গোপাল কৃষ্ণ মহন্ত বাড়িতে গেল।

আকাশে খুব মেঘ জমেছে।সূর্য অস্ত যাবার সময় হয়নি তবুও সব আলো নিভে গেছে।

কিন্তু সূর্য কখনো কখনো মেঘকে পরাভূত করে 

আলো ঠিকরে দিচ্ছে।

-- গৌর গোপাল কৃষ্ণকে প্রনাম জানিয়ে বললো - বাবু এই দেখুন আমার স্ত্রী আর এই 

দুধের শিশুরা। এবার বলুন বাবু এদের নিয়ে

কোথায় যাবো! আমাদের কি দোষ বলুন?

বাংলাদেশে হিন্দুদের থাকতে দিচ্ছে না, সেখানে মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের উপর হিন্দু ছিল, সেই সংখ্যা কমতে কমতে সাত 

আট শতাংশে এসে ঠেকেছে। ওরা বলছে এক ঘর ও হিন্দু থাকা চলবে না। কিন্তু ভারতবর্ষে তো তা বলছে না, বরং মুসলমানরা দিব্যি

মেজাজে আছে। শুনেছি ও পেপারে পড়েছি

বহু জায়গায় মুসলমানদেরই প্রাধান্য বেশি।

সেখানে হিন্দুদের, হিন্দু দেবদেবীরপূজা করতে

দেয় না, শাঁখ বাজাতে দেয় না। এ রকম হতে পারতো না কি সব মুসলমান বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে চলে গেল, আর সে খান থেকে হিন্দুরা চলে এলো? তাহলে তো আমাদের ও রকম কুকুর বেড়ালের মতো পালিয়ে বেড়াতে

হতো না। কেঁদে ফেলল গৌর।

গৌর বোকা বা অশিক্ষিত নয় মাধ্যমিক পাশ।

বাংলাদেশে হিন্দু মুসলমান  ধর্ম সম্প্রদায় বিভাজনের জন্য আর পড়াশুনা করতে পারে নি।

গোপাল কৃষ্ণ গৌরর দিকে তাকালো, বললো - 

ঠিক বলেছো হে তাই হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু হয় নি এখন আর মোটেও সম্ভব নয়।যা হারে 

 মুসলিম বাড়ছে বা তোষন চলছে তাতে আমাদের হয় খুন হতে হবে নয় ধর্ম ত্যাগ করতে হবে।সে দিন আর বেশি দূরে নয়।

গোপাল কৃষ্ণ কথা বলতে বলতে  রেবাকে বেশ কবে জরিপ করছিল।

রেবাকে দেখলে কেউ বলবে না রেবা তিন

ছেলে মেয়ের মা। মাজা গায়ের রং, টিকালো

নাক, বড় বড় চোখ, উন্নত পয়োধর, নিতম্ব, লম্বা, স্বাস্থবতী কিন্তু মেদ হীন। সব মিলিয়ে

যে কোন পুরুষকে আকর্ষণ করার ও ধরে

রাখাল ক্ষমতা রাখে।

রেবা লক্ষ্য করলো, গৌরও। না রেবা লজ্জা

পায়নি,আড়ষ্ঠও হয়নি। নিজেকে ঢাকা দিয়ে

সরিয়ে নেবার চেষ্টা ও করলো না বরং অসতর্ক ভাবে বুকের কাপড়টা সরিয়ে দিলো। গোপাল

কৃষ্ণের লোলুপ দৃষ্টি আরো প্রকট হলো। বললো - এখন যেখানে আছো সেখানে থাকো

দেখছি কি করা যায়।কাল এসে খবর নেবে।

না না কাল এসো না , এতো তাড়াতাড়ি সম্ভব নয় কয়েকদিন পরে এসো।

গৌর বললো - ঠিক আছে বাবু । আমি রোজ 

আসবো কোন দিন খবর পাবো সেই আশায়।

আমার তো সন্ধ্যার সময় কোন কাজ নেই, একবার ঘুরতে ঘুরতে চলে আসবো।

 -- সে ঠিক আছে, কিন্তু কাল মিটিং আছে। ফিরতে ফিরতে রাত ন'টা হয়ে যাবে। কাল 

এসো না। 

বাইরে বেরিয়ে এসে দেখলো তখনও সূর্য অস্তমিত হয়নি। মেঘের প্রবল আক্রমণ প্রতিহত

করে নিজেকে মহিমায় জাহির করেছে।

রাতে ফিরবে বলে যে ইঙ্গিত দিয়েছিলো গোপাল কৃষ্ণ , আর যে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল সব কিছু বুঝে রেবাকে তারপরের দিন একা পাঠিয়ে ছিলো গৌর, নিজে দূরে দাঁড়িয়ে ছিল।এই রকম ভাবে মাটির

ভাড়া বাড়িতে আরো ছ'মাস থেকে প্রত্যেক দিন রাতে গোপালকৃষ্ণের লালসার শিকার হতে এসেছে।নারী জীবনের সব খুইয়ে নিজের

স্বার্থ গুছিয়ে নিয়েছে রেবা।যেমন রেশন কার্ড,

ভোটার কার্ড, ব্যাঙ্ক একাউন্ট করিয়ে নিয়েছে।

 আরো কয়েক মাসের মধ্যে ক্যানেল পাড় 

বরাবর বিঘা দুয়েক জায়গা দখল করে বাড়ি

তৈরি করে নিলো। যখন গৌর বাড়ি করে তখন

দুই কিলোমিটারের  মধ্যে কেউ ছিল না।ক্রমে 

বসতি স্থাপন হয়েছে।বসতির মধ্যে বিহারী বেশী। স্থানিয় ও অনেক আছে। এখন ইলেক্ট্রিসিটি হয়েছে।ঢালাই রাস্তা হয়েছে।

মোটামুটিভাবে বর্তমানে গৌর বেরা বেশ সুখেই

আছে।বিঘা দুয়েক ধান জমি কিনেছে।

ক্যানেলের জলে বারোমাস চাষ হয়।

ঐ দুবিঘে জমিতে সংসারের অর্ধেকের উপর খরচ টেনে দেয়, বাকি খরচ গৌর ভ্যান চালিয়ে

করে নেয়। নিজের জমির যা যা ফসল হয় সে

গুলো বিক্রি করতে বাজারে নিয়ে যাবার জন্য ভ্যান কিনেছিল। নিজের ফসল না থাকলে ভাড়া খাটে ।গৌরর ইচ্ছা ছিল আরও কিছু জমি কেনার। ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই। বাংলাদেশের ঘর বাড়ি জমি জায়গা বিক্রি

করে যে টাকা হাতে পেয়েছিল, তাতে ভাড়া ঘরে থাকা, একে টাকা দেওয়া ওকে টাকা দেওয়া, বাড়ি করা, দুবিঘে জমি কেনা, ভ্যান কেনা, মেয়ে, ছেলেদের স্কুলে ভর্তি করা , পড়ানোর খরচ, সংসারের খাই খরচ করে আর টাকা বাঁচেনি। তবে সংসার সচ্ছ ভাবে চলে যাচ্ছে আর কি চায়।

মেয়ে চিন্তামণি মাধ্যমিক  দেবে।সানু, কানু ক্লাস

ফাইভ ও ফোরে পড়ে।এদের ভর্তি নিয়ে কম 

ঝামেলা ভোগ করতে হয়েছে। বাংলাদেশের

সার্টিফিকেটের কোন দাম নেই। দাম পেতে হলে ইন্টারন্যাশেনাল মাইগ্রেশন চাই।সে সব তো ছিলো না ভর্তি ও হচ্ছিল না।ভর্তি করা গেছে গোপাল কৃষ্ণর জন্য। নিজে গ্যেরেন্টার 

হয়ে ভর্তি করিয়েছে। পরিবর্তে রেবা এখনও

গোপাল কৃষ্ণর আবদার প্রত্যহ মেনে চলে।

গোপাল কৃষ্ণর যে ছেলেটা ডান হাত তার নাম 

ভোলা খোল। গৌরর এখানে থাকার ব্যাপারে যে সব থেকে বাগড়া দিয়েছিল সে ভোলা।যখন

বুঝলো গৌরর বউ গোপাল কৃষ্ণর শয্যা সঙ্গিনী

হয়েছে তখন বুঝে নিলো আর এদের তাড়ানো যাবে না। কিন্তু ভোলার একটা রাগ মনে মনে বাসা বেঁধে রইলো  গৌরও সেটা বুঝতে পারতো। গৌর ভেবে পেতোনা কেন রাগ! একবার ভোলাকে প্রশ্নটা করেই ফেলেছিল, যে

বিহারী, পাঞ্জাবি, উড়িয়া নানা জাতির লোক বসবাস করছে  এই পশ্চিম বাংলায় তাহলে

আমাদের উপর এতো রাগ কেন?

উত্তরে ভোলা বলেছিল - কেননা ওরা ভারতীয়

তাই ওরা ভারতের যেখানে খুশি থাকবে , আর

তোরা বিদেশি। মাথায় কথাটা ঢুকলো? আর 

যদি কোনদিন প্রশ্ন করেছিস তাহলে তোর

মাথাটাই আর থাকবে না।

আর দিন দশেক পর মাধ্যমিক পরীক্ষা।মার্চ

মাসেই গরম পড়েছে খুব।ফ্যান ছাড়া থাকা 

যাচ্ছে না। সন্ধ্যা হয়েছে, গৌর চা খেতে খেতে

টিভি দেখছে।গৌর রেবাকে বললো কটা বাজে

দেখতো?  

--- কেন?

-- মেয়েটাকে আনতে যেতে হবে না!

--- এই তো গেল পড়তে।আর ক'টা দিন পরেই

পরীক্ষা, তাই স্যরেরা একটু সময় বেশী পড়াবে

তাছাড়া দুটো টিউশনি। সাড়ে আটটা ন'টার আগে কোন দিন এসেছে! এখন সবে সাড়ে সাতটা বাজে।

গৌর শূণ্য চায়ের কাপটা নামিয়ে রেখে বললো -- খুব চিন্তা হয় গো মেয়েটার জন্য। মেয়েটার

দিন দিন যা রুপ খুলছে -- যেন দুর্গা প্রতিমা।

এখনও মাধ্যমিক দেয়নি দেখলে মনে হবে কলেজে পড়ছে।যেমন লম্বা তেমন গড়ন।

দুধে আলতায় গোলা গায়ের রং, একপিঠ চুল

দাঁত, কপাল, ভ্রু, সব যেন তুলিতে আঁকা। আমার মায়ের আদল পেয়েছে।

--- রেবা হাসতে হাসতে বললো - তোমার মায়ের তো।

-- তাই তো বটে। আমি যেমন মায়ের গলা জড়িয়ে আদর খেতাম তেমনি মেয়েটাও

বাইরের থেকে এসে আমার গলা জড়িয়ে আদর খাবে তারপর অন্য কথা।

--- বেশ বেশ যত খুশি মেয়েকে আদর করো।

শোন গোপালদা বললো - এবার পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়াবার জন্য তোমার নামটা পাঠিয়ে দিয়েছে। দিন সাতেক পরে বি.ডি.ও অফিসে যেতে বলেছে।

-- আমাকে ! এতো লোক থাকতে?

--- হ্যাঁ ভোলা বলছিল বটুক হেলাকে দাঁড়করাতে।

-- হ্যাঁ তাই তো হওয়া উচিত।

--- উচিত অনুচিত বুঝি না। আমি গোপালদাকে

বলেছি আমার স্বামীকে দাঁড় করাতে  ব্যাস।

-- কেন, কেন বললে?

--- ক্ষমতা চাই ক্ষমতা, রাজনৈতিক ক্ষমত।

তাহলে কেউ আর চোখ তুলে তাকাতে পারবে না। আর টাকাও আসবে। তোমাকে সারাজীবন

লেবারের মতো কাজ করতে হবে না।

গৌর রেবার বুদ্ধির তারিফ না করে পারলো না। সংশয়োচিত্তে বললো - কিন্তু সকলে কি মেনে নেবে! 

রেবা দৃঢ় চিত্তে বললো - গোপালদার মুখের উপর কারো না বলার সাহস  নেই। মনে

আছে কতগুলো কাগজে তোমার ফটো লাগিয়ে সই করিয়ে নিয়ে গেছলো?

 -- হ্যাঁ।

--- ও গুলোই তো নমিনেশনের কাগজ।

-- ও, ঠিক আছে দেখা যাক।

কথা বলতে বলতে কখন যে ন'টা বেজে গেছে

কারো খেয়াল নেই। হঠাৎ গৌরর মনে পড়লো

আরে মেয়েটাকে তো আনতে যেতে হবে।এই

সিরিয়ালটা তো ন'টায় হয়। দেরি হয়ে গেলো

যেতেও মিনিট পনেরো লাগবে। বললো - রেবা

মেয়েটাকে আনতে যাচ্ছি, দেরি হয়ে গেল।

 --- হ্যাঁ তাই তো।

গৌর তাড়াতাড়ি সাইকেল বের করে চেপে বসলো।

 --- রেবা বললো - হড়বড় করো না, চিন্তা তো স্যারের বাড়িতে অপেক্ষা করবে। সাবধানে

যেও ---।

আধ ঘন্টা পরে গৌর ফিরে এলো, একাই।

--- রেবা বললো - চিন্তা কই ?

-- বাড়ি ফেরেনি!

--- না তো ! কেন মাস্টার মশাইয়ের কাছে ছিলো না?

-- না ,  স্যার বললেন - সব পড়ানো হয়ে গেছে কয়েকটা পড়া দেখিয়ে ছুটি দিয়ে দিয়েছি। তাহলে কোথায় গেল মেয়েটা  !

অন্য দিন রাত বেশী হলে গৌরর জন্য অপেক্ষা করে। নতুবা সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় হলে নিজেও বাড়ি ফিরে আসে।কোন বন্ধুর বাড়ি যায়নি তো?

খোঁজা খুঁজি চললো।

গোপাল কৃষ্ণ থানায় খবর দিলেন। পুলিশ এলো , এফ.আই.আর লিখে নিলেন। জিজ্ঞাসা

করলেন কাউকে সন্দেহ হয় কি না? মেয়ের

কারো সাথে ভাব ভালোবাসা ছিলো কি না?

দুটি প্রশ্নেরই না জবাব দিলো গৌর।

পুলিশ ইন্সপেক্টর চিন্তামনির এক কোপি ফটো

নিয়ে বললেন - সকাল না হলে তো খোঁজা সম্ভব নয়।তবে চিন্তা করবেন না এ রকম কেস

অনেক দেখলাম, অল্প বয়সের আবেগ হয়তো

কারোর সাথে--------

রেবা ইন্সপেক্টরের কথার মাঝখানে চেঁচিয়ে বললো - ও সে রকম মেয়ে নয়।

ইন্সপেক্টর রেবার কথা গ্রাহ্যই করলো না, ব্যাঙ্গের হাসি হেসে রেবার দিকে টেরা তাকিয়ে

বললেন - শিক্ষা তো ঘর থেকেই পায়। যাই হোক ছেলেটিকে খুঁজে বার করবোই।

একজন কনস্টেবল গৌরর কানে কানে বললেন - দাদা সাহেব রাত্রে গাড়ির তেল পুড়িয়ে এসেছেন, তাই বলছিলাম ----- বুঝতেই

পারছেন নইলে কেসটা ঢিলা পড়ে যাবে।

গৌর বাড়ির ভিতর থেকে পাঁচ হাজার টাকা এনে ইন্সপেক্টর কে হাতে দিয়ে বললো - দেখবেন স্যার।

ইন্সপেক্টর বললেন - দেখবো মানে, এখন পাঁচটাতেই আকাশ পরিস্কার তখন থেকেই খোঁজা শুরু হয়ে যাবে।

গৌররা কেউ সারারাত চোখের পাতা এক করতে পারেনি। ছেলে দুটো ভোরে ঘুমিয়ে পড়েছে। বসে বসে গৌর ও রেবার ঝিমুনি

এসে গেছলো। বিন্দাস খেপা গোঙাতে গোঙাতে আসছে।

চটাস করে দু'জনের ঝিমুনি কেটে গেল। ঘড়ি

দেখলো এখনও ছ'টা বাজেনি।চার দিক পরিস্কার রোদ উঠে গেছে। বিন্দাস বিহারী ছেলে। জন্ম বোবা নয়, আকস্মিক দুর্ঘটনায় বিন্দাস বাক্ শক্তি হারিয়েছে।

বিন্দাস কাছে আসতেই গৌর বললো - কি 

হয়েছে বিন্দাস?

বিন্দাস হাবে ভাবে অনেক কিছু বোঝাবার চেষ্টা করলো।গৌর রেবা বুঝতে পারলো সবই

কিন্তু বিশ্বাস করতে মন চাইছে না। বিন্দাস 

গৌরর হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।রেবাও ওদের পিছনে পিছনে।

বেশী দূর যেতে হলো না।ক্যানেলের খালে 

যেখানে বেশি গর্ত মানে মাটি নিয়ে নিয়ে গর্ত করে দিয়েছে সেখানে চিন্তামনি উপুড় হয়ে

পড়ে আছে বিবস্ত্র দেহে।

সাতদিন টানা মৃত্যুর সাথে লড়ে গেল মেয়েটা

জয়ী হতে পারলোনা এমনকি ধর্ষকদের নাম ও বলতে পারলোনা। চিন্তামনি চির বিদায় নিলো মা বাবা আর এই দুষ্টু সমাজ থেকে।

বডি পাওয়া যাবে পোস্ট মর্টমের পর।

আজই বিডিও অফিসে নাম ঘোষণা হবে কে কে ভোটে দাঁড়াবার নমিনেশন পাবে।

বিডিও অফিস থানা থেকে অল্প দূরে।গৌর 

ঠিক করলো এ ভোটে আমি লড়বোই এবং

জিতবো।যারা আমার চিন্তমনিকে হাত মুখ বেঁধে ধর্ষণ করেছে, তাতেও ক্ষান্ত না হয়ে যোনী দরবারে শাবল ঢুকিয়ে মেরেছে তাদের

উচিত শিক্ষা দেবো‌। গৌর বডি না নিয়ে ছুটলো

বিডিও অফিসের দিকে।


                   ------০--------

[ গল্পটি সম্পূর্ণ কল্পনা প্রসূত।স্থান, কাল, পাত্রে র সাথে কোন সম্পর্ক নেই। কোন ধর্মীয়

সম্প্রদায় কে ছোট করে দেখাবার জন্য নয়

গল্পের খাতিরে এসে পড়েছে।] 

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।