তিন
প্রীতির সঙ্গে কথা বলতে চাই।” অংশুমান বলল , "কি করতে হবে বল ?
"তুই বলবি রমেন তােমাকে চন্দন হলের কাছে থাকতে বলেছে,ঠিক আছে বলব। কিন্তু কখন ?"বিকাল তিনটের সময়।"ঠিক আড়াইটে থেকে অংশুমান প্রীতির কলেজ যাওয়ার পথে দাঁড়িয়ে আছে। এখন কলেজ থেকে বাড়ি আসবে। হঠাৎ দেখল সবুজ শাড়ি পরে প্রীতি ফুটি চালিয়ে আসছে। অংশুমান বলল, “এই যে ম্যাডাম, একটু দাঁড়ান।”প্রীতি অংশুমানকে চেনে রমেনের বন্ধু হিসাবে। প্রীতি বলল, "কি বলছেন বলুন।”
অংশুমান বলল, “তিনটের সময় চন্দন সিনেমা হলের কাছে তােমাকে পাড়াতে বলেছে রমেন।” প্রীতি বলল, “ঠিক আছে। আমি এই কুড়ি মিনিটের মধ্যে বাড়ি থেকে একটু চেঞ্জ করে আসছি।” রমেন সেইদিন অংশুমানকে আনন্দে জড়িয়ে ধরেছিল এতবড় একটা উপকার করার জন্য। কারণ রমেন একটি লাজুক, মুখচোরা ছেলে। কোনােদিন প্রীতির সঙ্গে পাঁচ মিনিটের বেশি কথা বলতে পারেনি। আজ চুটিয়ে প্রেমজীবনে অনেকরকম অভিজ্ঞতা সঞ্চিত করে একটি মানুষ তার চলার পথকে অভিজ্ঞ করে তােলে। পৃথিবীর এই রঙ্গমঞ্চে সবাই আমরা এক একটা অভিনেতা। প্রতিনিয়ত অভিনয় করে চলেছি। আবার কাল এসে সমস্ত নাটকের যবনিকা টানে একদিন। তবু মানুষ যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন আশা করতে থাকে। এই আশা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। আশা, এগিয়ে চলার লক্ষ্য নির্দিষ্ট না থাকলে একটা মানুষ জড় পদার্থে পরিণত হয়ে যায়। তাই যত দুঃখই আসুক, যত বাধাঁই পথ আটকে দাঁড়াক আমাদের এগিয়ে যেতে হবে নির্ভীকভাবে, স্থিরচিত্তে। মানুষকে ভালােবেসে মানুষের জন্য কিছু কাজ করতে হবে আমাদের। মহাপুরুষরা বেদ, বেদান্ত, উপনিষদ, কোরান, বাইবেল সব ঘেঁটে দেখেছেন মানুষের চেয়ে বড় আর কিছু পৃথিবীতে নেই। মানুষের মাঝেই দেবতা, তাদের মাঝেই শয়তানের বাস। মানুষের মাঝেই স্বর্গের আর নরকের যন্ত্রণা বিদ্যমান। প্রভাত বাবুর আবার একটি কন্যাকে পছন্দ হয়েছে। ধীর, স্থির শান্ত কন্যা। এই কন্যা তিনি মেজছেলে রিলিফের জন্য ঠিক করেছেন। মখারীতি সমস্ত নিয়ম মেনে রিলিফের সঙ্গে শান্ত কন্যাটির বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের পর রিলিফ বৌকে বাবা-মার কাছে রেখে চলে গেল। প্রভাতবাবুর শরীর খুব একটা ভালাে নেই। তাই তিনি সকলের সংসার গুছিয়ে দিয়ে যেতে চান। ছেলেরা সবাই সুখে থাকবে, এটা কি কম কথা !বই তিনি স্ত্রী গীতাদেবীকে বললেন, "অংশুমানের বয়সও তিরিশ পেরিয়ে গাছে। যদি তার বিয়েটাও দিয়ে দেওয়া যায় তা ভালাে হয়।"অংশুমান এখন কলকাতার একটা নার্সিংহােমে ভর্তি হয়েছে। অ্যাপেনডিক্স অপারেশন হবে। কত রােগী শত যন্ত্রণা অবজ্ঞা করে আনন্দে আছে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। একটি বছর পঁচিশেক ছেলের অর্শ অপারেশন হয়েছে। আজ অংশুমানের হবে। একটু ভয় ভয় ভাব। ছেলেটি অংশুমানকে নিজের ব্যথা নিয়েও একটি গান শােনাচ্ছে, 'তাোমার হল শুরু আমার হল সারা', এই গান শুনে অংশুমানের চোখে আনন্দে জল এল, কত যন্ত্রণা সহায করে ছেলেটি শুধু তাকেই আনন্দ দিতে গান গাইছে। এ তাে মহাপুরুষের হৃদয়। এটিও এক ধরনের সমাজসেবা। সমস্ত ভয় কাটিয়ে অংশুমান অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করল।অংশুমানের বড়দা দিলীপের পর পর ছয় বছরের মধ্যে তিন কন্যাসন্তান হল। মেজদা রিলিফের গত চার বছরে একটি কন্যা ও একটি পুত্রসন্তান জন্ম নিল। বড়া লিলুয়া থেকে এসে অংশুমানকে বলল, “কি রে বিয়েটা সময়ে সেরে ফ্যাল, যদি বিয়ে করতেই হয় তাহলে দেরি করে লাভ নেই।”অংশুমানের অপারেশন হওয়ার পর চার বছর কেটে গেছে। মনে মনে ভাল, বিয়েটা বাবা বেঁচে থাকতে করে নিলে ভালাে হয়। বাবার চোখে গ্লুকোমা। ভালাে দেখতে পান না। শরীরও খুব একটা ভালাে নেই। তাই বিয়েটা করে নেওয়াই স্থির করল অংশুমান। অংশুমান দেখতে কনেপক্ষ থেকে লােক এলেন। অংশুমনি বাবা-মার সঙ্গ বেশিদিন মিজি পায়নি। পুরুলেতে এসে দিলীগ বাড়ি দোতলা করাকাজগে নেনে পল। থেকে তিন মাসের মধ্যে দোতলা কমিটি। এখন আর খালার কথা । নেই। উপরের ঘরে একটিতে আগুন ও মা, মাটিতে মি । পরিবার। নিচে বাবা, মা ও বাৰু। বাু এখন ব্যবসা করে। সঙ্গে মিছিল-মিটিং অ্যাটেন্ড করে। বেশির ভাগ সময় না বাইরে কাটা। পলি পরে ভুল কুড়ি বাসস্ট্যান্ডে একটি জুতার দোকান করে। জুম চাষ দেখাশােনা করেন। দুটি মেয়ে এামের হইলে পড়ে। আর ছোট মেয়ে, এখনও ভর্তি হয়নি। প্রভাতবাবুর শরীর আরও ভেঙে পড়ল। যে সংসারকে তিনি কি সিরে আগলে রেখেছেন সেই সংসারকে ছেড়ে চলে যেতে হবে। প্রভাতশাষতে পেরেছেন আর বেশিদিন নয়। চোখে মুকোমা হওয়ার ফলে একলম দেশ পান না। অংশুমানের স্ত্রী দেবী ছয়মাস হল এক পুতসস্তানের জন্ম দিয়েছেন। প্রভাতবাবুর বড় আশা ছিল নাতিকে স্বচক্ষে দেখলেন। কিন্তু হয়। নিয়তি কেন বাধ্যতে'। তিনি নাতিকে কোলে নিয়ে আদর করেন। বিয়ের পরে অংশুমান তারাপীঠে মা তারার কাছে পুত্রস্তান প্রার্থনা করেছিল। মা তারা দয়া করেছেন, বড়দার তিন কন্যা, মেজদার এক কন্যা আর এক পুত্র। অংশুমানের এক পুর। সবাইকে সুস্থ অবস্থায় রেখে প্রভাত একদিন গভীর রাতে লীঘরে শেষ নিশ্বােস ত্যাগ করলেন। বটগাছের ছায়া থেকে বঞ্চিত হল সমগ্র পরিবার। দুঃখে-বেদনায় সকলে কান্নাকাটি আরম্ভ করে দিল। কিন্তু মৃত্যু তার নিষ্ঠুর সত। যুগে যুগে মৃত্যু তার আপন এর পতাকা উড়িয়ে সদ্পে চলেছে, চলবে। এর কোনো শেষ নেই। প্রভাতবাবুর শ্রাদ্ধ হয়ে গেল। দশদিন কঠোরভাবে পুরাে সাদা কাপড় পরে শোক পালনের মাধ্যমে পিতার প্রতি শ্রদ্ধাভক্তি জাপন করে তার আত্মারবাবার মৃত্যুর পর তার চার ছেলের মধ্যে সব থেকে ছোট ছেলে বাবুর বিয়ে বাকি আছে। আর সবাই নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। বাবু নিজের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকে।। একদিন বাবু শিবলুনে কোনাে একটা কাজে গেছে। বাবুর এক বন্ধু বলল, “বাবু, এখানে একটি ব্রাহ্মণের মেয়ে আছে। যদি পারাে একবার দেখে যেও, তােমার এবার বিয়ে করা উচিত।” বাবু অত গুরুত্ব না দিয়ে বলল, "দেখা যাবে"। বন্ধু বলল, “তাহলে শুক্রবারে শিবলুন এর একটি অনুষ্ঠান আছে। অনুষ্ঠানে মেয়েটি গান করবে, তুমি তখন দেখে নিতে পারবে।”বাবু শুক্রবারে ঠিক সময়ে শিবলুনে গিয়ে হাজির হল। ঠিক দশটায় অনুষ্ঠান শুরু হল। উদ্বোধনী সঙ্গীত গাইবে বেলা চ্যাটার্জি। মাইকে ঘােষণা শুনে বাবু সামনের চেয়ারে বসল। বেলা একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইল, সুন্দর হে সুন্দর। বাবুর পছন্দ হয়ে গেল মেয়েটিকে। মেয়েটির বাড়িতে বড়দা ও বৌদিকে পাঠিয়ে দিল কথাবার্তা বলার জন্য। সবরকম কথাবার্তা পাকা করে বড়দা ও বৌদি ফিরে এলেন।। | অগ্রহায়ণ মাসের একটা শুভ দিন দেখে বিবাহ সুসম্পন্ন হল। চার ভাই, সকলের বিয়ে হয়ে গেল। সাজানাে সংসারে সকলে প্রাণমন খুলে থাকত। অভাব থাকলেও সংসারে সকলে হাসিখুশি থাকত। অংশুমান খাবার খেত খুব বুঝেশুনে। কানে মশলাযুক্ত খাবার সে পছন্দ করত না। একবার এক বিয়েবাড়িতে গিয়ে অংশুমান খাওয়া-দাওয়ার পর বড় এল। বাড়িতে এসে সেবার সে অসুস্থ হয়ে পড়লো। অনুষ্ঠান বাড়িতে সে সহজে যেতে চায় না। যে কোনাে অনুষ্ঠানে চলে যায় বাবু। একদিন বাবু ফোন করে জানালাে, অংশুমান আমাদের স্কুলে শিক্ষকের পদ খালি আছে। তুমি একটা দরখাস্ত দিয়ে যাও। অংশুমান সেই দিনই একটা দরখাস্ত লিখে জমা দিয়ে এল। এক সপ্তাহ পরে ইন্টারভিউ। বাড়িতে এসে পড়াশােনা করল। তারপর স্কুলে। ইন্টারভিউ দেওয়ার দু-দিন পরে জানতে পারল চাকরিটা অংশুমানের হয়েছে। পার্শ্বশিক্ষকের চাকরি হওয়ার পরে অংশুমান বাবুর কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করল। আর বাবু তাে এইরকমই ছেলে। কত ছেলে, কত পরিবারের উপকার করেছে তার হিসাব কে রাখে। পার্শ্বশিক্ষকের কাজ হওয়ার পর থেকে অংশুমান মায়ের ওযুধপত্র খাওয়া গ্রামের বাড়িতে কিছু টাকাপয়সা দেওয়া সবকিছুই করে। বাড়িতে মায়ের কাছে স্কুলের টিফিনের সময়ে ভাত খেয়ে আসে। দেবীকে সকালবেলায় রান্না করতে হয় না। সকালে উঠে চা-মুড়ি খেয়ে ওই স্কুলের আর এক শিক্ষক মহাশয় বিশ্বরঞ্জনবাবুর বাবুর মোটর সাইকেলে চেপে স্কুলে যায়। ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালাে লাগে অংশুমানের। আর অবসর সময়ে কিছু লেখালেখিও করে। এইভাবে বেশ চলে যাচ্ছিল অংশুমানের। অংশুমান কাটোয়ার নন্দনপাড়ে বাড়ি করেছে। কিন্তু সেখানে রাস্তাঘাট বা ইলেকট্রিকের আলাে নেই। অংশুমানের ছেলে সৈকত হারিকেনের আলােয় পড়াশােনা করে। প্রত্যেক বছর স্কুলে সে প্রথম স্থান অধিকার করে থাকে। সে পড়ে জানালাল শিক্ষা সদনে। পড়াশােনার ক্ষেত্রে নিজে বাড়িতে পড়ার পিছনে সময় দিয়ে, বাবার কাছে বিষয়গুলি বুঝে নিয়ে সৈকত এগিয়ে যেত, কিন্তু ইলেকট্রিক আলাের অভাবে বেশি রাত অবধি পড়তে পারত না। অংশুমান ঠিক করল যে করেই হােক বৈদ্যুতিক আলাের ব্যবস্থা করবে। অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে অংশুমান তার নিজের পাড়ায় বৈদ্যুতিক আলাের ব্যবস্থা করল। এই ব্যাপারে দেবীর বাবা কল্যাণবাবুও খুব সাহায্য করেছিলেন। অংশুমানের বাড়ির সামনে একটি গরিব লােকের পাড়া আছে যাকে অনেকে ভক্তি বলতে ভালােবাসেন। অংশুমান ওই পাড়ার ছেলে-মেয়েদের পড়িয়ে সাক্ষর করে তােলার চেষ্টা করে। একটা সুস্থ সংস্কৃতি গড়ে তােলার চেষ্টা করে অংশুমান। কিন্তু তার জন্য অনেক বাধা অতিক্রম করতে হবে।
বাবুর বিয়েতে এবার বরযাত্রীরা খেতে বসেছে। এমন সময়ে পাশের বাড়ির পুলিশের বেশে এসে বলছে, "আমি মহিলা পুলিশ। আমাদের মেয়ের কোনো অযত্ন হলে আমি কিন্তু রেগে যাব।" শেষে আমাদের সকলকে খাওয়ালো। খেতে খেতে আমার গান। বললেন, “আমি একটা গান শোনাবো। আপনারা খেতে আমার গান শুনুন।।"আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে "গানটি ক রতে করতে তিনি নাচতে লাগলেন। সবাই ভালাে ভালাে বলে চিৎকার করছেন। তিনি বিয়ের বাড়ির পরিবেশটা আরও সুরময় করে দিলেন। পরের দিন কন্যা বিদায়ের পালা। অংশুমান আগে থেকেই সরে পড়েছে। সবাই কান্নাকাটি করছে। মেয়ে যাওয়ার সময় এই দৃশ্য সতি বড়দুঃখের। পাড়া-প্রতিবেশী-গাছপালা সবাই যে বিষাদের সুর গাইছে। বর-কনে চলে যাওয়ার পরে একটা অঘটন ঘটে গেল বাড়িতে। পাশের বাড়ির পুলিশ দিদিটা হঠাৎ করে স্ট্রোক হয়ে মারা গেল। চারিদিকে কান্নার রােল।অংশুমান, বাবু ছুটে ওদের বাড়ি গেল। আরও অনেক লােকন ডেকে শশানে নিয়ে যাওয়া হল। গত রাতে যে মেয়েটি নিজে পুলিশ সেজে গান করে সবাইকে আনন্দ দিয়েছে, সেই মেয়েটি আজ হঠাৎ করে কোনােরকম চিকিৎসার সুযােগ না দিয়ে অকালে চলে গেল ! জীবন এইরকমই। পদ্মপাতার জলের মতাে। কখন যে ঝরে পড়বে কেউ জানে না। তবু এত ঘৃণা, মানুষ বুঝেও বােঝে না। অবুঝ মন।। গতরাতে বাবুর শ্বশুর বাড়ি থেকে ফোন এসেছে, বাবুর বউ কে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। লেবার পেইন উঠেছে। বাবু গতরাতে মােবাইলে ফোন করে সমস্ত ব্যবস্থা করে দিয়েছে। ডাক্তার বাবু ফোন করেন। আজ নার্সিংহোমে গিয়ে একবার দেখে আসতে হবে। অংশুমান বলল, তুই তাে শ্মশানে যাচ্ছিস যা, আমি না হয় নার্সিং হােমে যাই। নেমে আসতেই আনা গেল, মা ও নবজাতক তালে আছে। ফোন এর অংশুমান মেয়ে হবার খবরটা জানিয়ে দিল। আতমান নার্সিংহোম থেকে বেরিয়ে সােজা কাটোয়ার শশান চলে গেল। কানে গিয়ে তাকে ছেড়ে দিল। বাবু গঙ্গারান করে আনলে সােজা মিগ্রোমে চলে গেল। অংশুমান শ্মশানে বসে যোয়ার কুণ্ডলী দেখছে আর ভাবছে মানুষ এভাবে ধীরে ধীরে ছাই হয়ে যায়। ধোয়া হয়ে যায়। জীবনের আশা-নিরাশা, গখ-দুখ, আনন্দ-বেদনার সমস্ত কিছুর ছেদ টানে এই শ্মশানের চিতা।
***
ইলেকট্রিক আলাে আসার পর অংশুমানের বাড়ির চারপাশে অনেকগুলি বাড়ি হয়ে গেল। প্রতিবেশী বলতে সামনের পাড়াটা আর দু-চারটি ঘর ছিল। কিন্তু এখন পােলে লাইট ঝুলছে। কল হয়েছে, জলেরও অভাব নেই। এখন লােকে জায়গা কিনে বাড়ি তৈরি করছে এইসব সুবিধার জন্য। জায়গার মালিক যারা তারাও ভালােরকম দাম পাচ্ছেন। ফলে অংশুমানের বাড়ির চারপাশে একটা পাড়া গজিয়ে উঠেছে। কিন্তু বেশিরভাগ লােক এখানে পড়াশােনা না জানা দলের। জানলেও হয়তাে সামান্যই জানেন। অংশুমান এদের ছেলেমেয়ের নিয়মিত পড়ায়। লেখাপড়া শিখলে নিশ্চয় কিছুদিনের মধ্যেই পরিবেশ ও পাল্টে যাবে। প্রায় কুড়ি বছর হল অংশুমান কাটোয়ায় এসেছে। এখন পার্শ্বশিক্ষকের কাজ করে। ছেলে ক্লাস ইলেভেনে পড়ে। দেবী সংসারের কাজকর্ম নিয়েই থাকতে ভালােবাসে। অংশুমানের পিসির ছেলে কালীচরণ সি.আর.পি.এফ-এ কাজ করে। হঠাৎ ফোন করে বলল, “অংশুমানদা তােমার বাড়ির সামনে পাকা রাস্তার ধারে একটা মহাকালী লজ আছে। তুমি অগ্রহায়ণ মাসের বাইশ তারিখে লজটা বুক করে এসে। অংশুমান সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে লজ বুক করে এল। ছুটিতে এসে কালীচরণ অংশুমানের বাড়ি এল, কথাবার্তা বলার জন্য। কালীচরণ বলল, “তােমার বাড়ি মাঠের মাঝে হলেও শান্তি আছে। শুধু পাকাবাড়ি, বড় বাড়ি দেখলেই হবে না। শান্তিটাই তাে আসল কথা। এই শান্তি আর ভালােবাসাটা ধরে রাখাই
কাজ।"কালীচরণ মেয়ের বিয়ে দিল এই মহাকালী লজ থেকেই। বাড়ি থেকেসব দায় এসে লজে বিয়ে দেওয়াটা বেশ পরি..আজল নজে বিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতী। কারণ অনুষ্ঠান হয়ে যাওয়ার প চaদিন খরে প্রায় পক্চাশ থেকে সতরজন লােকের খাবার ব্যবস্থা, শে ৰ ক সবার পক্ষে কিন্তু সহজ নয়। লজে বিয়ে হলে প্যান্ডেল অনেক কমে যায়। আর লজে বিয়ে মানে বেশ একটা ধনী লােকের এসে যায়। আবার স্টাইলের মাত্রাও বজায় থাকে। সবজি সবদিক থেকে কি করলে লজ বিয়ে দেওয়া সুবিধা বেশি। | অওমান ভাবে বড় বােনের বিয়েতে বাড়িতে দু-চারদিন লােক আসতে শুরু করেছিল। বিয়ের পরেও দু-দিন ছিল। সে। আজীবনের সঙ্গে প্রাণ খুলে মেশার সুযােগ, গানবাজনা, হৈ-হল্লোড়ে যে থাকত সারা বিয়েবাড়ি। কোথায় যেন একটা আলাদা সুর আছে বাড়িতে বিয়ে বা কোনাে অনুষ্ঠানের। লজে যেটা থাকে না, একটা কৃত্রিম আধুনিকতার গদ্ধতি এই সজ। অংশুমান ভাবে তার বড়দা দিলীপের কথা। নিজের ছেলে সৈকত বড়গার কথা বলে। বাবার মায়ের কথা, বাবার কথা শুনে শুনে সৈকতে মুখ হয়ে গেছে। বড়া গল্প বলত ভাইদের। একবার তিনি ছােটবেলায় ত বস হবে খেলে কি সতেরাে বছর, সেই সময় শ্রীরামপুরে বড় পিসির বাি যাচ্ছিলেন। বড় পিসির বাড়ি কেতুগ্রাম হয়ে গীতা ভবনের পাশ দিয়ে আহত সতীপীঠ বাঁদিকে রেখে সাইকেলে যেতে হত। তখন পাকা রাস্তা হয়নি। রেখে সাইলাম হয়ে দী মাঠর ধান তােলা হয়ে গেলে অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে গরুর গাড়ির চাকার দাগে রাস্তার মতাে হয়ে যেত। সেই রাস্তা দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিল বড়। কতকগুলি রাখাল গরু নিয়ে মাঠে ঘাস খাওয়াচ্ছিল। রাখালরা প্রায় শ বারােজন ছিল। ওরাও তাে ছােট। মনে করল সাইকেল নিয়ে একটা ছেলে যাচ্ছে, ওর সাইকেল কেড়ে নিলে ভালাে হবে। তারা একসাথে থাকে আক্রমণ করল। হাতে তাদের লম্বা লম্বা পাঁচন। বড়দা দেখল অব সুবিধের নয়। সাইকেল স্ট্যান্ড করিয়ে ওদের একজনের হাত থেকে নয়, वौংশের পাচন কেড়ে নিয়ে বো বো করে ঘােরাতে লাগল। ভয়ে রাখল সরে গেল। তারগর বড়দা পাঁচন মাটিতে দুম দুম করে মেরে বলল, আসবি আয় দেখি, সাইকেল নিবি আয়।” দাদার রুদ্রমুর্তি দেখে সবাই উ গালিয়ে গেল। হােট থেকেই বড়পা খুব সাহসী, পরােপকারী ও হৃদয়ব মানুষ। হাতে টাকা-পয়সা থাকলে বেশিরভাগ সময়ে তিনি দুঃস্থ গরিব পাখি করতেন। এই গুণের জন্য এখনও অনেকে তাকে শ্রদ্ধা করে।আজ অংশুমান ছাত্রদের ইতিহাসের গল্প বললেন।তিনি বললেন, বৌদ্ধ যুগের ভারতবর্ষে বিজ্ঞানে, চিত্রকলায়, দর্শনে সর্বত্র নিয়োজিত হয়েছিল এক প্রতিবাদ এবং সেগুলি জগতের কাছে আজও একটি বিস্ময়।মহামতি জীবককে পৃথিবীর সর্বকালের অন্যতম সেরা চিকিৎসক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানী বলা যেতে পারে। কথিত আছে ইনি বারবনিতার সন্তানরূপে জন্ম নিয়েছিলেন আবর্জনার স্তুপে। পরিণত করেছিলেন তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়। চিকিৎসা শাস্ত্র এবং বিজ্ঞান চিকিৎসক মন্ত্রিসভায় যোগদান করেন এবং ভগবান বুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।অজাতশত্রু প্রচন্ড বুদ্ধবিরোধী হলেও এবং পিতাকে বন্দি করলেও জীবকেকে চিকিৎসক পদে বহাল রেখেছিলেন। জীবকের অসাধারণ চিকিৎসা নৈপূণ্যের জন্য। সাধারণ জীবন যাপন করছেন জীবক। ধর্মপ্রচারের পরিবর্তে তাদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন শেষে তার আচরণ অজাতশত্রু কে এতটাই মুগ্ধ করেছিল যে শত্রুতা করেও তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করেছিলেন এবং তাদের পরামর্শে অজাতশত্রু প্রথম বৌদ্ধ সম্মেলন আহ্বান জানিয়েছিলেন। পর্বতের গুহায় সম্মেলন হয়েছিল এবং ভগবান বুদ্ধের বাণী গুলিকে একত্রিত করা হয়েছিল।বৌদ্ধ গ্রন্থ গুলি যুবকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। গ্রন্থ গুলি থেকে জানা গেছে তিনি দু-দুবার বুদ্ধকে কঠিন রোগ থেকে মুক্ত করেছিলেন। সংসার থেকে বৌদ্ধভিক্ষু ১০০ বছর বয়সে পদব্রজে বৌদ্ধবিহার গুলিতে যাওয়া আসা করতেন কেবলমাত্র চিকিৎসার কারণে।বহুদূর থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ ছুটে আসতেন চিকিৎসার জন্য। কাউকে বিমুখ করতেন না। জীবককে বলা হয় বেদোক্ত যুগের ধন্বন্তরি। রোগীকে না দেখেও কিরকম চিকিৎসা করতেন তা শুনলে চমকিত হতে হয়। কথিত আছে ভগবান বুদ্ধ একবার কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওষুধগুলো পদ্মফুলে মিশিয়ে রেখেছিলেন। বুদ্ধদেব গ্রহণ না করায় যুবকদের কাছে প্রেরণ করেছিলেন। ঘ্রাণ গ্রহণ করেই তাঁর রোগ ভালো হয়েছিল। সেবার কাজে নিজেকে শতত নিয়োজিত রাখলেও বিজ্ঞানকে বঞ্চিত করেননি জীবক চিকিৎসা সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। সেগুলো পরের দিকে হারিয়ে গেলেও পরবর্তীকালে ভারতীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের যথেষ্ট সাহায্য করেছিল তার শেষ বয়সে শ্রেষ্ঠ রচনা শিশু রোগ চিকিৎসা গ্রন্থ পৃথিবীর প্রথম শিশু চিকিৎসা সংক্রান্ত বই অতি মূল্যবান গ্রন্থ যা পরবর্তীকালে ভারতীয় চিকিৎসকদের শিশুরোগ সংক্রান্ত গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করেছিল।মহর্ষি পতঞ্জলি পৃথিবীর বিরল প্রতিভা গুলির মধ্যে অন্যতম আবির্ভাবকাল কৃষ্টপুর তৃতীয় শতাব্দীর ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পৃষ্ঠপোষক সঙ্গ বংশের প্রথম সম্রাট পুষ্যমিত্র সঙ্গের সমসাময়িক এবং তার মন্ত্রী কথিত আছে বংশের শেষ সম্রাট কে পরাজিত করে সিংহাসন দখল করেন এবং পুত্রের দ্বারা বিদেশি গ্রীকদের বিকৃতকরণ ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে পুষ্যমিত্র যজ্ঞ করেছিলেন সেই যোগ দিয়েছিলেন পতঞ্জলি।বিজ্ঞানী ও দার্শনিক হিসেবে পতঞ্জলি সুনাম জগৎজোড়া ব্রাহ্মণ্যধর্মের পৃষ্ঠপোষক হলেও বৌদ্ধ ধর্ম বিদ্বেষী ছিলেন না ও মানুষের কল্যাণে মানবজাতির নৈতিক মান উন্নত করা ছিল তার একমাত্র সাধনা মানুষের মনুষ্যত্বের বিকাশ এবং সর্ববৃহৎ রুটি এটি দূর করার জন্য তিনি একাধিক মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।
পতঞ্জলি মনে করতে মানুষের দোস্ত বিবিধ বাক্যের 10-10-10 মানুষের মনের 10 নিবারণের জন্য রচনা করেছিলেন পাতঞ্জল যোগ দর্শন এবং দৈহিক বৃদ্ধি করার জন্য এক সঙ্গীতা গ্রন্থ বিতর্ক থাকলেও কেউ মনে করেন কালজয়ী গ্রন্থ চরক সংগিতা পতঞ্জলি রচনা তবে পতঞ্জলি যোগ দর্শন রচনা বিজ্ঞান গ্রন্থ গবেষণামূলক গ্রন্থ নয় তবু সেই যুগে ধাতু নিষ্কাশন সম্বন্ধে বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন জাতীয় গ্রন্থ রচিত হয়নি।মহর্ষি চরক এককালে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ নামে পরিচিত চরক সংহিতা লেখক চরক সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানা যায় না অথচ বইখানি এককালে পৃথিবীর অধিকাংশ ভাষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং এখনো চরক সংহিতার খ্যাতি বিন্দুমাত্র কমেনি কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের সেই সম্বন্ধে নির্ভরযোগ্য কোন তথ্য প্রমাণ নেই।চরক সংহিতায় আয়ু আত্মা সম্বন্ধে যে দার্শনিক মতবাদ উপস্থাপন করা হয়েছে সেই মতবাদকে গুরুত্ব দিয়ে অনেকে চরকে পতঞ্জলি ছদ্মনাম বলতে চান অপরদিকে একই পৌরাণিক কাহিনী অত্যমত্ম সমর্থক মৎস্য অবতার নারায়ন উদ্ধার করেছিলেন আয়ুর্বেদ রূপে ধরা হয়েছিল চিকিৎসাবিদ্যায় গ্রন্থ অনন্তদেব লাভ করেন এবং মানুষের প্রত্যক্ষ করার জন্য গুপ্তভাবে বাসায় আসেন।চরক সংহিতা আট ভাগে বিভক্ত একটি অঙ্গ ওই কারণে বলা হয় অষ্টাঙ্গ আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অঙ্গুলি যথাক্রমে সূত্র স্থান নিদানস্থান বিমান স্থান শারীর স্থানীয় স্থান ইন্দ্রিয় স্থান চিকিৎসা স্থান কল্প স্থান এবং সিদ্ধি স্থান।নাগার্জুন খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর আরেকটি বিস্ময়কর প্রতিভা মহাযান বৌদ্ধ ধর্মের প্রধান শাখা মাধ্যমিকের প্রতিষ্ঠাতা বৌদ্ধ নাগার্জুন একে ঘিরে ও কিংবদন্তির অন্ত নেই বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থ গুলি এবং এককালে আসমুদ্রহিমাচল নাগার্জুনের জয়গানে মুখর ছিল স্বাধীনতার জীবন কাহিনী লিপিবদ্ধ করেছিল। নাগার্জুনের নামে বহু বই পাওয়া গেছে তেমনি বহু প্রবাদ ছড়িয়ে আছে সেগুলিকে ভিত্তি করে কেউ বলেন নাগার্জুন একজনই আবার কেউ বলেন সমসাময়িক সময়ে অন্তত চারজন নাগার্জুন আবির্ভূত হয়েছিলেন একজন বৌদ্ধ দার্শনিক নাগার্জুন একজন তন্ত্রশাস্ত্র রচয়িতা নাগার্জুন একজন রসায়নবিদ নাগার্জুন এবং আরেকজন সংস্কারক চিকিৎসাবিদ নাগার্জুন কেউ মনে করেন এত বড় প্রতিবাদ পক্ষে বিভিন্ন বিষয়ে পুস্তক প্রণয়ন অসম্ভব নয়।এখন ছেলে সৈকত ত্রিকেট খেলা দেখতে সুপার মার্কেট গেছে। এখানে বুড়ো, সৈকত ভালাে ক্রিকেট খেলে। তার বন্ধুরা সবাই সৈকতকে ডেকে যায় বিকালবেলায় খেলাধুলা করলে শরীর ও মন দুটোই ভালাে থাকে। অংশুমান মাঝে মাঝে নিজে খেলা দেখতে যায়। মাঠের ধারে বসে মন ফিরে গেছে নিজের ছেলেবেলার যুগে। পুরুলে গ্রামের বাড়িতে এই ক্রিকেট দল ছিল। মিলুদা, টুলাদা, রিলিফদা, বিশ্বরূপ, অংশুমান, ভাল, বুড়াে, তাপস, সঞ্জয়, বাবন, চনা ও আরও অনেকে মিলে ক্রিকেট অংশুমানের মনে আছে। একবার বেলুনগ্রামে ছােট পিসির বাড়ির পাশে মাঠে ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে দলবল নিয়ে গিয়েছিল। বেলুনগ্রামের দলকে শােচনীয়ভাবে হারিয়ে দেওয়ার পরে শ্লোগান দিতে দিতে বাড়ি ফিরেছিল। শ্লোগান ছিল, "বেলুন ফুটো করল কে? পুরুলে ছাড়া আবার কে?" ছােটবেলার সেইসব স্মৃতি এখন মনের কোণে সােনার ফ্রেমে বাঁধানাে আছে অংশুমানের। আবার একবার এই ক্রিকেট দল নিয়ে বিশ্বেশ্বরের মাঠে ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে গিয়েছিল। ম্যাচে জেতার পর মাস্টারমশাই সুধীন কুমার মণ্ডল মহাশয় পেট ভরে মিষ্টি খাইয়েছিলেন। তখন তিনি হাইস্কুলের সহকারি শিক্ষক ছিলেন। এখন তিনি কাটোয়া কে, ডি আই-এর প্রধান শিক্ষক। তার এই পুরস্কারে অংশুমান খুব অনুপ্রাণিত হয়েছিল। যতীনপুর গ্রামেও একবার অংশুমান ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিল। অংশুমানের হঠাৎ সম্বিৎ ফিরে এল। মাঠের ধারে বসে সে এতক্ষণ বাল্যকালের সময়ে চলে গিয়েছিল। সৈকতকে নিয়ে সন্ধেবেলায় অংশুমান ফিরে এল ঘরে। নন্দনপাড়ের আশেপাশে বাড়িঘর কম বলে ফাকা লাগে। তবু এখানে থেকে আনন্দ আছে। এখানে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ সবই কম। লােকালয় থেকে অনেকটা দূরে হওয়ায় এখানে সর্বদা গ্রামের পরিবেশ বিরাজ করে।অংশুমান বাড়ি এসে হাত-পা ধুয়ে ঘরে বসল। সৈকত অন্য ঘরে গিয়ে পড়তে বসল। দেবী রান্না করছে। বিয়ের পর থেকেই দেবী অংশুমানের প্রতি হা ও ভক্তি দেখিয়ে আসে। ভারতবর্ষে পতিরা দেবতার আসনে অধিষ্ঠিত কে। দেবী কথায় কথায় আজ অংশুমানকে নিজের কিশােরীবেলার কথা ।ৈ দেবী একজনকে ভালােবাসতাে বিয়ের আগে। এও কি ভুলতে পেরেছে তার প্রথম প্রেম। আশ সখে প্রথম শ্রেমকে মনের এককো সতের লালিত করে ॥ সারাজীবন। আজ তিপাম বছর খাওে সেই প্রেম মনের কোণে কলি সু্যের আলাের মতো আলােকিত করে হৃদয়। সৈকতের পড়া হয়ে গে,। প্রায় সাড়ে আটটা বাজে। এরপর কি সিরিয়াল দেখে খাওয়া-দাওয়া করে তিনজনে শুয়ে পড়ল। শুয়ে দেরি কথা মনে করে অংশুমান। নাবা-মাকে ছেড়ে একা স্বামীর ভরস্য মেয়েরা চলে আসে। সংসারে তারাই থান কাণ্ডা। যে ঘরে কোনাে মহিলা নেই সে ঘরে শান্তি থাকা সম্ভব হয় না। পৃথিবীতে মেয়েদের অবদানই বেশি। তারাই তাে গড়ে তােলে ভবিষ্যতের সুস্থ নাগরিক। পুরুষ তার ছায়াসঙ্গী। মেয়ে-পুরুষের সমবেত প্রচেষ্টায় গড়ে উঠুক সােনার পৃথিবী। আর বন্ধ হােক ধর্ষণ, খুন, পারিবারিক অপরাধ আর জাতিভেদ। অংশুমান মাঝে মাঝে ভাবুক হয়ে পড়ে। পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে তার আশা অনেক। পরের দিন সকালবেলা দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ। দেবী উঠে পড়েছে। বলছে, “কে? কে?” উত্তর এল, "আমি আমিনা"। ছোটবেলার বান্ধবী আমিনা। একসাথে ওকড়সা হাইস্কুলে পড়ত। দেবী ওকে ডেকে এনে বসালাে। চা খাওয়ালাে, তার সঙ্গে চলল গল্প। অংশুমান সৈকত উঠে পড়েছে। আমিনার সঙ্গে পরিচয় হয়ে ভালাে লাগল অংশুমানের। অংশুমান আজ ঠিক করল দেবী আর সৈকতকে নিয়ে মায়াপুর ঘুরতে যাবে। চান করে সবাই রিকশা করে স্টেশনে চলে এল। ট্রেন ধরে নবধীপ স্টেশনে নেমে সােজা গঙ্গার ধারে। সেখান থেকে নৌকা করে ওপারে গিয়ে মায়াপুরে ইসকনের মন্দির। মন্দির ঘুরে ঘুরে দেখার পর ওখানেই খাওয়া-দাওয়া করল। একটা বনভােজনের মতাে আনন্দ হল। নবদ্বীপে এসে শ্রীগৌরাঙ্গ স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন স্থান, বিুুপ্রিয়ার বাড়ি সব দেখা হল। বিকাল পাচটায় ট্রেন ধরে আবার কাটোয়া শহরে।ফিরে আসতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছিল। দেবী বাড়িতে এসে খুব তাড়াত স স্টোভে খিচুড়ি রান্না করল বিভিন্নরকম সবজি দিয়ে তারপর গরমনে চিড়ি খেয়ে ওরা তিনজনে শুয়ে পড়ল। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে আবার শুভ সংবাদ বের বাবা আসবেন। ফোন করে জানিয়ে দিলেন। দেবী খুব খুশি। বাবা এলে দেবীর মুখ আনন্দে উল হয়ে ওঠে। বাবা চলে এলেন বেলা দশটা নাগাদ। বতিতে উৎসবের আবহাওয়া শুরু হয়ে গেল। দেবীর বাবা কল্যাণ বাবু বিডি.ও, অফিসের কাশিয়ার ছিলেন। তিনি খুব ঈশ্বরবিশ্বাসী। সকালে তিন ঘন্টা রহিতে তিন एলটা আহ্নিক করেন নিয়মিত। সমাজসেবক হিসাবেও তার নাম আছে। কল্যাণবাবু একবার শিলিগুড়িতে ট্রান্সফার হয়ে গিয়েছিলেন চকরি প্রথমদিকে। তখন মাইনে বেশি ছিল না। একদিন অফিস থেকে ফিরে এসে দেখেন বয় চাল নেই। রান্না কি করে হবে? হােটেলে বা বাইরের কোনো দোেকানে খান না। যাই হােক এক্লাস জল খেয়ে নিলেন। সামনে কোনাে দোকান ছিল না, কোনো কারণে বন্ধ ছিল। অন্য কোনাে খাবারও নেই। আশা ছেড়ে তিনি মশারি টানিয়ে শুয়ে পড়লেন। একটু পরেই দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ। দরজা খুলে দেখেন পাশের বাড়ির ভহিলা একটি পায়েস নিয়ে এসেছেন। তার বাড়িতে আজ কৃপূজা হয়েছে। কল্যাণবাবু হাসিমুখে পায়েস খেয়ে পেট ভরালেন। কল্যাণ বাবুর জীবনে আর একবার প্রমাণিতহল জীব দিয়েছেন যিনি আহার দেবেন তিনি। ঈশ্বরবিশ্বাদী কল্যাণবাবু দু-হাত কপালে ঠেকিয়ে প্রণাম জানালেন ঈশ্বরকে কল্যাণবাবু কাটোয়ায় মেয়ের বাড়িতে এলেই অংশুমানকে এইসব গল্প শুনিয়ে থাকেন। গল্প হলেও সত্য ঘটনা। দেবী বাবার ব্যাগ খুলে তার শাড়ি, সৈকতের জামা, মিষ্টি সব বের করল। এবার বাবার জন্যে চা বসালাে গ্যাস সটোভে। অংশুমান ছাদ থেকে চেঁচিয়ে বলল, “আমার জন্য এক কাপ জল বেশি ও।” দেবী বলল, ঠিক আছে।” অংশুমান চা-পাউর লেলিয়ে গেল। দেবীর বাবা এখন দু-দিন থাকবেন। উনি বাড়িতে এলে করে খুব ভালাে লাগে। সাধু মানুষের আগমনে পরিবেশ সুন্দর হয়ে যায়।সে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গ ভলােবাসে।। সুবীর যােষ, শমীক , , রাজীব নন্দী, ,নতুন বিশ্বাস সবাই অংশুমানকে খুব ভক্তি করেন। অংশুমান স্কুলে যায়। স্কুল ছুটি হওয়ার পর বিশ্বন ন কাটে এসে সাহিত্যসভা বা কোন ধর্মীয় সভায বয। সি থাকতে পারলে অংশুমানের মন খুব ভালো থাকে। ইবনে নয়। অর্থের প্রয়ােজন থাকলেও আমাদের মনে াখা উচিত ত মূল তবু অর্থই এখন সমাজের শাসনকর্তা। যেদিন আর্থের প্রাণ মানুষের গুণের সমাদর হবে, তখন দেশ পৃথিবীতে শ্রেষ্ আস বে। অংশুমান মাঝে মাঝেই এইসব মনোৱেহকার।দেবী আজ বাবার সামনে অংশুমানকে নিয়ে বসল। সৈকতের উপ এবার হওয়া প্রয়োজন। বারো পেরিয়ে তেরা এতে সাধারণত উপনযন হ অনেকে এর আগে দিয়ে থাকেন। বেশি বস হলে আবর প্রাশি হয়। ওসবের প্রয়ােজন নেই। পৈতেটা দিয়ে দেওয়াই ভালাে। বড়িতে জায়গা। আবার খরচও বেশি। তাই ওরা সামনের খাজুরডিহি প্রেমের ও বর আশ্রমে পৈতে-টা দেওয়া মনস্থির করল। উপনয়নকে চলতিথেয় পৈতে নেওয়া' বলে। ঠিক হল ১৫ই অগ্রহায়ণ হবে। অনুষ্ঠানের আগের দিন সমস্ত বাজার করে অংশুমান আশ্রম পৌছে দল। পরের দিন সকালে আশ্রমে চলে গেল সপরিবারে। আয়োজন আসতে শুরু করেছে। অংশুমানের মা সীতা দেবী, বডদ দিলীপবাব চলে এসেছে। দেবীর বাবা সমস্ত ব্যবস্থা ঠিকমতাে হয়েছে বিশ্বে নিলেন যত উপনয়ন সুন্দরভাবে হয়ে গেল। উপনয়নের সাজ সৈকতকে দর শেখা একটা বড় কাজ হয়ে গেল। এবার অংশুনানের মায়ের চোখ অপারেশ করতে হবে। দেবী মাকে নিয়ে আনতে বলল। মা নীতাদেবী উপনয়নের দশদিন পরকাটোয়া এলেন। তারপর সকালবেলা অংশুমান ও বাবা কতদিন গিয়ে চোখ অপরেশন করিয়ে মা-কে রিবশা করে নিয়ে এল। মা এ
এমন হল তার যার বিজ্ঞান পরিষদ, , অজয় সাহিত্য পর্ষদ মাসে মাসে সাহিত্য আসর করে, অংশুমান উপস্থিত থাকে। ভাল পত্রিকা কাটোয়ায় আছে। ধুলামন্দির, অজয়, ফিনিক্স অরিত্র, বিস্তুতি, শিউলি, আলো , সবুজ সাথী, অন্বেষণ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। অধরা পত্রিকা অট্টহাস থেকে প্রকাশিত হয়। অংশুমান লেখা জমা দেয় মাঝে মাঝে। এইভাবে অংশুমান স্কুলআর সংসার আর নিজের ওতে এ কটা ব্যালেন্স তৈরি করে চলে। একদিন দেবি বলল, আমি ঘুরে আসি।" অংশুমানের বললো, চলো। এখানেই কবি কবিশেখর কালিদাস রায়ের বাড়ি দেখে এল। আজ চারদিন পর ওরা কাটোয়ায় ফিরে এল। কাটোয়া কিকে দেখে কলের বডিটা চোরে খুলে নিয়ে পালিয়েছে। ভারি সমস্যা । কেউ বাড়িতে না থাকলে চোরের উপদ্রব হয় বেশি। কিন্তু প্রথম যখন ওরা এসে বড়ি করে তখন কুড়ি দিন বাড়িছাড়া ছিল। তখন কিন্তু চুরি হয়নি। সৈকত বলল, "বাবা অনেকদিন স্কুলে যায়।আজকে যাব এসেছে বাড়িতে। সৈকত বন্ধুদের সঙ্গে একসাথে স্কুলে চলে গেল। অংশুমান আর দেবী দু-জনে মিলে বাড়িঘর পরিস্কার করল। পাওয়া-সাওয়ার পর দু-জনে খাটে শুয়ে পুরােনাে দিনের কথা মনে করে গল্প করল। দেবী বলল, "দাঁড়াও, সবসময় ভাল্লাগে না।" বলে হাসি হাসি মুখে প্রতিক্রিয়া দেখছে বরের। অংশুমান দেবীকে জড়িয়ে ধরে আদর করল। সংসারে শান্তিই বড়। শুধু অর্থ কখনই শাস্তি আনতে পারে না। শাস্তির জন্য মন চাই, প্রেম চাই আর চাই সহ্য করার শক্তি। | বিকেল সাড়ে চারটের সময় সৈকত স্কুল থেকে ফিরে এল। ফিরে এসে কিছু খেয়ে গল্পের বই নিয়ে বসল। সৈকত ছোট থেকেই গল্পের বই পড়তে ভালােবাসে। অংশুমান টিউশনি চলে গেল আর দেবী নিজের কাজ নিয়ে তার একসপ্তাহ পরেই দেবীর বাবা এসেছেন। এসেই রান করে আহিনকে কসে পড়েছেন। তিন ঘণ্টা আহ্নিক করার পর ভাত খেলেন। আজ রবিবার, ুটা তাই সৈকত আজ বাবার সাথে বিকেলবেলা স্টেডিয়ামের মাঠে লে দেখতে গেল। বাড়িতে ফিরে দেখে অসংখ্য লােকের ভিড়।
একদিন ভিড় দেখে, অংশুমানের বুকটা ভয়ে কেঁপে উঠল। কাছে এসে দেখল কি উঠোনে একটা শাঁখামুটি সাপ ঢুকেছে। সাপকে কি করে। তাই লােকজন চেষ্টা করছে। সাপটা বেশ বড়। শাঁখামুটি সাগ থাক আশেপাশে অন্যান্য বিষধর সাপ থাকে না। কারণ, রাজসাপ সব সপে গিলে খায়। তাই অন্যান্য সাপগুলাে ভয়ে পালায়। রাতে অংশুমান খবর পেল রিলিফ অনেকদিন পরে গ্রামের বা এসেছে সপরিবারে। স্ত্রী চন্দ্রাণী ওই গ্রামেরই মেয়ে। তাই । চন্দ্রাণীরও খুব আনন্দ হয়। বাবা-কাকা-মা-ভাই সবাইকে দেখে মনে শৰ পায়। রুদ্কা আর ইন্দ্র মামার বাড়িত এসে খুব আনন্দ করে। আবার যখন খুব ভালােবাসে। খুশি নিজেদের বাড়িতে চলে আসে। ঠাকুমাকে ওরা খুব ভাল ঠাকুমাও অনেকদিন পরে ওদেরকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে রিলিফ বরাবরই ভ্রমণপিপাসু লােক। কোথাও গেলে সে স্থির হয়ে থাকার লােক নয়। দু-দিন পরেই বৌদি রুণাকে বলল, “চলাে সবাই ৪ একসঙ্গে আমরা অট্টহাস ঘুরে আসি। আর অট্টহাসের কাছেই শ্রীরাম বড় পিসির বাড়ি, সেখানেও দেখা করা যাবে।” | পুরুলে গ্রামেই ভুলু বাঁড়ুজ্যের একটা সুমাে গাড়ি আছে। সেই গাড়ি ভাড়া করে ওরা সবাই অট্টহাস যাবার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ল। এক ঘণ্টার মধ্যেই ওরা পৌছে গেল। পঞ্চমুণ্ডির আসন, মন্দির, গাছপালা সব ঘুরে ঘুরে ওরা দেখল। রিলিফের ছবি তােলা চিরকালের অভ্যাস। ও ছবি তুলল সবার। তারপর দুপুরে আশ্রমেই খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা হল। ফিরে আসার পথে শ্রীরামপুরে বন্য পিসির সঙ্গে দেখা করে ওরা সন্ধ্যাবেলা পুরুলে ফিরে এল।। রিলিফ পুরুলে এলেই এরকম ব্যবস্থা করে থাকে। হৈ-হুল্লোড় লােকজন ও খুব পছন্দ করে। রিলিফ মুখে বলে, আমি নাস্তিক। কিন্তু জ্ঞানী যারা তারা একটু কথা বলেই জানতে পারে রিলিফের ভিতর গভীর জ্ঞানের পরিচয়। ছােট থেকেই বাস্তবের সঙ্গে লড়াই করে রিলিফ বড় হয়েছে। প্রচুর বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মেশে। ফলে বাস্তব জ্ঞান অনেক বেশি। এই বাস্তব জ্ঞানকে পাথেয় করে রিলিফ লিলুয়ায় বাড়ি করেছে। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। দু-একবার মিতালি সংঘের সম্পাদকও হয়েছে। ও দোখন দিয়েছে বাপকা বেটা, সিপাহি কা ঘোড়া, কুছ নেহি তো থােরা থােরা। অস্বীকার করার কোনাে জায়গা নেই। রিলিফের বন্ধু হারু এসেছে সঙ্গে, হার বলল, “আমি আজকে লিলুয়া যাচ্ছি। তােরা দু-দিন পরে চলে আয়।”লিলিফ আজকে মা-কে ভ্যানে চাপিয়ে নিয়ে বেলুনগ্রামে ছােট পিসির বাড়িতে গেল। পিসির বাড়ি বলছি। কিন্তু ছােট পিসি আর বেঁচে নেই মনে করতে বলল রিলিফ। মা রিলিফের কথা শুনে কাদতে শুরু করল। রিলিফ পালটে বলল, মা দেখো আমরা বেলুন চলে এসেছি।" বেলুনে সোশায় ও তার ছেলেদের সঙ্গে দেখা করে মা শান্তি পেল। মা পিসেমশায়কে লন, “মাঝে মাঝে পুরুলে যেও ঠাকুরজামাই।” পিসেমশায় রাশভারী লোক। মাকে খুব শ্রদ্ধা করেন। উনি বললেন, "নিশ্চয়ই যাবো।"রিলিফ বেলুনে থেকে মায়ের সঙ্গে পা-ভ্যানে ফিরে আসছে। মা বললেন, ছােট পিসি মারা যাওয়ার পর থেকে পিসেমশায়ের শরীরটা ভেঙে পাড়েছে।" রিলিফ বলল, "এই তাে ক-দিনের নাটক মা। অভিনয় শেষ হলে প্রত্যেককেই ফিরে যেতে হবে যথাস্থানে। ওর জন্য বেশি চিন্তা করে লাভ নেই।মা চোখের জল ফেলেন। আর ছােটকাকা, পিসি, চণ্ডীদা, বাঁটুলদা সবার কথা মনে করেন। মা বলেন, “যারা মরে যায় তারা তাে ভালােই যায়। কিন্তু যারা বেঁচে থাকে তাদের স্মৃতি বুকে করে, তাদের হয় জীবন্ত অবস্থায় মরণ। এই তাের বাবাকেই দ্যাখ, কেমন ড্যাং ড্যাং করে চলে গেলেন আর আমি বেঁচে থেকে তােদের গলগ্রহ হয়ে রইলাম।” রিলিকের চোখে জল এসে গিয়েছিল। সহজে রিলিফ কাঁদে না, তবু মায়ের কথা শুনে অশ্রু সম্বরণ করতে করতে পারেনি। মাকে আড়াল করে চোখ মুছে নিল। | রিলিফ ভাবছে, সংসারে এমন কিছু ঘটনা ঘটে, তার পিছনে মানুষের হাত থাকে না। অবস্থার বিপাকে পড়ে রিলিফ মাধ্যমিক পরীক্ষা নিজের বাবা-মার কাছে থেকে দিতে পারেনি। সবাই দই-এর ফোঁটা দিয়ে আশীর্বাদ দিয়ে ছেলেকে পরীক্ষায় পাঠায়। কাজের জন্য অনেক সময় রিলিফকে লরির তলায় শুয়ে রাত কাটাতে হয়েছে। এখন ছেলেমেয়ে সবাই আছে। স্ত্রী আছেন। কিন্তু মনের এই গােপন কথা রিলিফ অন্যদের মতাে ফলাও করে বলতে পারে না। এখনও জগতে অনেক ছেলে দুঃখকে সহজমনে মেনে দেয়া জগতে আর কিছু না পারি মানুষের মতা মানুষ যেন হতে পারি'—মনে ন এই প্রার্থনা করে রিলিফ। আদির, দোকানে এসে অংশুমান দেখা পায় বিখ্যাত সব সাংবাদিক, শ্রী দীপ্তিকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, কৌলাল পত্রিকার সম্পাদক ও গবেষক ড স্বপন ঠাকুর, কবি রাজকুমার রায়চৌধুরী প্রমুখ ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে অংশুমান ভাববিহ্বল হয়ে পড়ে। আজ কবি ও গবেষক শ্রী তারকেশর চট্টরাজ মহাশয় বাড়িতে ডেকে পাঠিয়েছেন প্রসাদ খাওয়ার জন্য। তিনি অংশুমানকে করেন। তারকেশরবাবু ক্লেহের চোখে ছােটদের লেখেন ও ভালো তিনি বলেন, "সকলকে নিয়ে একসাথে চলার যে সুখ তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। কবি অনিলবাবু বলেন, আমার সম্বন্ধে কোনো প্রশংসার কথা বলবেন না , "আমি ওসব পছন্দ করি না।” অমায়িক লােক। তিনি বলেন, আমার নামের আগে যেন কবি লিখ না। কাটোয়া তথা পশ্চিমবঙ্গের এক বিখ্যাত সাহিত্যিক কবি তারকেশ্বর চট্টরাজ মহাশয়। অংশুমান বাড়িতে অবসর সময় পেলেই লেখালেখি করে আর যখন ডাক পায় তখন সাহিত্য আসা গিয়ে বসে। কিছু ভালাে কবিতা, ভালাে গান বা ভালাে কথা শুনতে যাওয়াই তার লক্ষ্য। সে জানে সে তারই মতাে। বলে, আমার ক্ষমতা যতটুকু, ততটুকই আমার পক্ষে সম্ভব। এর বেশি আমি কোথা থেকে পাই। আর মনে করে আদিত্যর কথা "কিছু নাই পারেন অংশুদা, অন্তত একজন ভালাে মানুষ তাে হতে পারেন।রুদ্রজ ব্রাহ্মণ সম্মেলন অনুষ্ঠানে অংশুমান সৈকতকে নিয়ে গেছে। প্রণব আর আদিত্য নিমন্ত্রণ করেছে। বড় স্টেজে অনুষ্ঠান হচ্ছে। অনুষ্ঠানে এসেছেন মধা শ্রী স্বপন দেবনাথ, আসাম ও পুরী থেকে দু-জন সাধুবাবা, পৌরপ্রধান অমর রাম, বিধায়ক শ্রী রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, গবেষক স্বপন ঠাকুর, কবি তারকেশ্বর চট্টরাজ প্রমুখ বিশিষ্টজন ছাড়াও আরও অনেকে। সবাইকে মালা-চন্দন দিয়ে বরণ করা হল। উদ্বোধনী সংগীত হল। ডঃ স্বপন ঠাকুর গবেষণধর্মী একটি বক্তব্য রাখলেন। সমবেত সুধীজনের হাততালিতে ভরে উঠল সভাপ্রাঙ্গণ। এবার একটি সংগীত গাইছে একজন কিশোরের। ইতিমধ্যে রােমাঞ্চিত হল। এতবড় একজন পণ্ডিত মানুষ আমার পাশে-বলল অংওমান দেখি "আমার পাশে ত্রিপলে মাটির মানুষ ডঃ স্বপন ঠাকুর। আমার দেই আদিত্যকে। আদিত্য বলল, “অবাক হচ্ছেন কেন? পৃথিবীতে যারা বড় তার এইরকমই হন। এটাই স্বাভাবিক। আমি মঞ্চে উপবিষ্ট মানেই আমি সব। এসব নিচু মানসিকতার লক্ষণ। আদিত্য আবার আলাদা। এই ধারণা শুনিলে প্রাণপাগল করা সেই গান- যারা সুজন নাইয়া, উজান বাইয়া বােকাই করে মাল স্বদেশে ফিরে গেছেন তারা, থাকিতে সকাল, থাকিতে সকাল রে, থাকিতে সকাল। এমনি কত গান পাগল আদিত্য, অংশুমানের পাড়ার ভাই। বার্তাসূচী সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক শ্ৰী দেবাশীষ রায়ের সঙ্গে আশুমানের এখানেই পরিচয়। আদিত্য অংশুমানকে বলল, “বার্তাসূচীর সম্পাদক মহাশয় কে লেখা দেবেন। আপনার লেখা ছাপা হবে।" সম্পাদককে বলে দেখে অংশুমান। শ্রী দেবাশীষ রায় সমস্ত লেখককেই সম্মান দেন। তার পত্রিকা এখন বাজারে বেশ নাম করেছে। পত্রিকাটিতে সম্পাদকের ভাবনার ছাপ স্পষ্ট। আত্যি এখন সরস্বতী পূজার প্রস্তুতি নিয়ে খুব ব্যস্ত। প্রথ্যাত জি, খ্যাত কবি অসীম সরকারকে নিয়ে আসছে আদিত্য। প্রায় দশহাজার লোক জমায়েত হয় এই কবির গান শােনার জন্য। যুবকদের সঙ্গে থেকে আদিত্য এইসব অনুষ্ঠান পরিচালনা করে থাকে। আদিত্য অংশুমান বলল, এবার সরস্বতী পুজোর সময় কবি অসীম সরকারকে দেখতে আসবেন, দেখবেন ভালো লাগবে।এবার অনেকদিন পর কাটোয়ায় অংশুমানের বাড়িতে এল। সঙ্গে পরেশ তার মাসীর ছেলে। অংশুমান ও পরেশ ছােটো থেকেই বন্ধুর মতাে। ওরা একসঙ্গেই থাকত কোনাে বিয়ে বা অনুষ্ঠান বাড়িতে। অংশুমানের পিসির ছেলে কালীচরণ ও বড়পিসির ছেলে অপু। ওরা সবাই সমবয়সি। যখন কোনাে বিয়েবাড়িতে ওরা একসাথে থাকে তখন বিয়েবাড়িও যেন আলাদা একটা মাত্রা পেয়ে যায়।। বাৰু পরেশকে সঙ্গে এনেছে কারণ পরেশের ছােট দিদির ছেলের জন্য এক পার্থ প্রয়ােজন। বিয়ে দিতে হবে। ছােট দিদির ছেলে রমেশ। রমেশ অরে। কিন্তু পছন্দ মতো মেয়ে পাওয়া যাচ্ছে না—বলল পরেশ। পরেশকে বলল, “চলাে অংশুমানের বাড়ি ঘুরে একবার ছােট মামীর গিয়ে বলে দেখি।" পরেশ বলল, “হ্যা, যা করেই হােক এক বছরের নয় বিয়ে দিয়ে দিতে হবে। পরেশ সাঁইথিয়া হোমিওপ্যাথি দোকানের মালিক। খুব সৎ, সত্যবান ও পরিশ্রমী। ফুটবল খেলতাে ভালো। এখন বিয়ে করে সংসারী হয়েছে। পরেশ বলে, কত, জানিস অংশুমান জীবনে লােভে আদর্শ ভ্রষ্ট হয় নি । আমি আমার আদর্শ নিয়ে সঠিক এ জীবনে পরেশ কারাের সাথে খারাপ ব্যবহার কোনোদিন করেনি। সবাই তাকে সৎ, সাহসী ছেলে বলেই জানে। ওদের এ ডাকাতের উপদ্রব। রাত্রি হলেই সবাই ভয়ে ভয়ে কাটাতে। এই হয়-এরকম ভাব। গরেশ ও তার বন্ধুরা নিয়ম করে লাঠিসেসাঁটা নিয়ে রাত পাহারা দিয়ে চিৎকার করে সমস্যার শুরু করল। ওরা হাঁক দিত, ‘ও-ও-ও হ্যাৎ'-চিৎকার করে । কিছুদিনের মধ্যেই ডাকাতদের অত্যাচার কমে গেল। সবাই । ঘুমুতে পারল। অংশুমান মাসির বাড়ি গেলেই পরেশের সঙ্গে ময়ূরাক্ষী নদীর তীরে যেত। ওখানে বালির চরে ফুটবল খেলা হত। অংশুমান বলত, পরেশ আ তােদের এখানেই থেকে যাবাে। পরেশ বলত, “নিশ্চয়ই থাকবি।” সেসব ছােটবেলাকার কথা মনে পড়ে আর ভালাে লাগে—অংশুমান বলল দেবীকে। সব ছােটবেলার কথা অংশুমান তার ছেলে সৈকতকে বলে। সৈকতের এসব শুনে শুনে মুখস্থ হয়ে গেছে। সৈকত আজ মন দিয়ে বাংলা পড়ছিল। বাংলা বইয়ে ভালাে ভালাে লেখকের গল্প-কবিতা আছে। লালন ফকিরের একটা কবিতা আছে, ওটাই সৈকত পড়ছে, “বাড়ির কাছে আরশিনগর, ও এক পড়শি বসত করে।” অংশুমান সৈকতকে থামিয়ে বলল, এর অর্থটা জেনে নিস। শেষে অংশুমান নিজেই বলল, আরশি হল আত্মদর্শনের এক মাধ্যম অর্থাৎ যা নিজেকে দেখা যায়। তাই আরশি' হল মানুষের মন। আর 'পড়শি বলট বােঝানাে হয়েছে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে বাস করা আর এক মানুষ বা ঈশ্বর বা মনের মানুষ। যাকে অন্য গানে লালন অধর মানুষ', 'সহজ মানুষ। অলখ সাঁই ইত্যাদি বলেছেন। সৈকতের খুব ভালাে লাগে বাবার কথা। অংশুমানের ক্লাসমেট' সুলেখক ডা রবীন্দ্ররনাথ মণ্ডল খুব ভালোবাসে তাকে। তার কাছে অনেক প্রয়োজনে অংশুমান উপকার পেয়েছে।কিছু লোক যদি এইরকম হৃদয়বান হতেন, তাহলে মানুষের উপকার হত। সুলেখিকা সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে অংশুমান লেখা পড়ে অনেক অনা তথ্য জানতে পেরেছে। বিবেকানন্দবাবু ও আরও লােকজনের সঙ্গে দেখা হয় । টিফিনে বাড়িতেই থাকে। মানুষ কেন খাওয়া-খাওয়া করে। আর মাসে যতটুকু পারে সাহায্য করে। বড়দার হাতে দেয়, মায়ের ওষুধ দেয়। আজ কবি বলছেন সভায় "গুরুজনদের প্রণাম। সবাইকে যথাযােগ্য সম্মান জানিয়ে আমি দু-চারটে কথা বলব। ধর্ম কথার অর্থ, । ধারণ করে থাকে। সমাজের শান্তি, সুস্থ মন ও কর্ম হচ্ছে ধর্মের ফল। কথাটি সন্ধিবিচ্ছেদ করলে অন্যের কথা আসে। কিন্তু সেই নিয়ম। সুস্থ নিয়ম পালন পুর্বক আমরা যদি প্রত্যেক কর্ম করি, তাহলে ধরে সেটা হল সনাতন ধন অনুশাসন সার্থক হয়। সনাতন ধর্ম। ধর্ম একটাই। সেটা হল সনাতন আর বাকিগুলাে হল সম্প্রদায় বা গােষ্ঠী। এক-একটি গােষ্ঠি করে চলতে ভালােবাসে। আমরা একদম প্রাচীন যুগে যদি চলে যখন মানুষের সৃষ্টি হয় নাই, তাহলে দেখা যাবে, এককোষী প্রাণী থেকে ধীরে ধীরে বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষ এসেছে। আর একজন মানুষ পিতা থেকে আমাদের সৃষ্টি। একজন পিতা আর একজন মাতা থেকেই ধীরে ধীরে এই বিশ্বের মানুষরা এসেছেন। অনেকে বলেন এই পিতামাতার নাম আদম ও ঈভ। তাহলে প্রশ্ন আমরা মানুষ হয়ে তাহলে আলাদা ধর্মের হতে পারি কি করে? আমরা লড়াই করি কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আমাদের। শিক্ষার মাধ্যমে নিজেদের উন্নত করতে হবে। অংশুমান বলছে, আমি অনেক কথা বলেছি। আর কিছু বলব না। আপনারা সকলেই বুদ্ধিমান। সবাই আমার প্রণাম নেবেন-এই বলে অংশুমান সভা থেকে নিচে নামল। চা-বিস্কৃত খেলাে তারপর সভা শেষ হলে বাড়ি ফিরল। তখন প্রায় দশটা বাজে। পরের দিন স্কুল আছে। তাড়াতাড়ি খেয়ে শােয় অংশুনান। মা ও ছেলে তখনও টি.তি, দেখছে। দু-দিন পরে ডঃ স্বপনকুমার ঠাকুর, আদিত্য ও অংশুমান একটি গ্রামে যাবে ঠিক করল। ডঃ ঠাকুর প্রত্নগবেষক। তিনি বললেন, “ভারতবর্ষ নদীমাতৃ দেশ। বড় বড় নদীর ধারে বড় বড় বসতি তৈরি হয়েছে। আমরা যেখালে যাব সেই গ্রামটিতে গঙ্গা নদীর নিকটবর্তী গ্রাম। আদিত্য বলল, “শুনেছি ওই গ্রামে একটা পুরােনাে বাড়ি আছে। ও বাতে অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন আছে। আমরা তার ছবি তুলে নিয়ে বললাম, "তাই হবে। এই পুরােনাে বাড়িতে রাজরাজেশ্বরীর মূর্তি আছে। আবার ওখানে একটি পরিবার বাস করেন। তারা বলেন, এইটি পাঁচশাে বছর আগেকার বাড়ি।”শঙ্কর বললেন, “তথ্য থাকলে তবেই এসব কথা বিশ্বাস করা যাবে। | ঠাকুর বললেন , কথা দিয়ে উপন্যাসের মতাে এইসব কথা বলা যায় না। তার জন্য উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণাদি প্রয়োজন।” ওরা সবাই গিয়ে একবার গ্রামে ঘুরে আসার মনস্থির করল। অংশুমান আবার আদিত্যর কাছে গেল। আদিত্য খুব ভালাে গান করে। “নির্মল বাংলা' নিয়ে একটি গান লিখেছে খুব সুন্দর। অংশুমান গান গাইতে জানে। তবু একবার গানটি গাইবার চেষ্টা করল। অংশুমানকে উৎসাহ দেয় সবাই খুব। গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস লিখতে বলে। অংশুমান উৎসাহ পেয়ে বাড়ি এসে অনেক পড়াশােনাও করে। বর্তমানে দেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে তার বর্ণনা করতে গেলে খুন, ধর্ষণ লেগেই আছে। সংবাদপত্র খুললেই শুধু রক্তারক্তির খবর। মানুষে মানুষে হানাহানির খবর। অংশুমানের ভালাে লাগে না। দেশে শান্তি আসবে। সবাই সুস্থভাবে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকবে। বাঁচো এবং অন্যকে বাচতে দাও'—এই আদর্শ নিয়ে সবাই চলবে। তবে হবে সুস্থ। দেশের সুস্থ নাগরিক। অংশুমান জানে সেই দিন নিশ্চয়ই আসবে। এখনও শাসকদলে অনেক ভালাে লোক আছেন। তারাই একদিন ছাত্র-যুব সবাইকে এক ছাতার তলায় এনে একতার গান গাইবেন। আজ অংশুমান পুরুলেতে এসেছে। বড়দা দিলীপ বলল, “সৈকত আর বৌমাকে একদিন পাঠিয়ে দিস। অনেকদিন আসেনি ওরা।" অংশুমান বলল,ঠিক আছে।"রিলিফ লিলুয়া থেকে স্ত্রী-পুত্র-কন্যাসহ পুরুলে এসেছে। অংশুমানের স্কুল। বর। ভাবল বড়দা মাঝে মাঝেই সৈকতকে যেতে বলে। এইসময় পাঠালে বর সঙ্গেই দেখা হয়ে যাবে। অংশুমান দেবীকে বলল, “যাও তুমি আর সৈকত একবার পুরুলে থেকে ঘুরে এসে।"সে বলল, "তাহলে তুমি চলে যেও না ঘর ফাকা রেখে। যা চোরের ম” অংশুমান বলল, “না না, আমি বাড়ি থেকে বেরােব না। দু-দিন সবাই যাও তােমরা ঘুরে এসো। পর আর সৈকত সকালবেলা বেরিয়ে পড়ল। অংশুমান নিশ্চিন্ত হল,আর নয় এখন বেড়াতে যেতে পারে না। যখন মায়াপুর গেছি তখন মনে আছে, নজনেই গেছিল। তখন একটা ঘরে ছিল তিনজন । এখন যা হােক দুটো-একটা জিনিস হয়েছে। চোর। এসে নিয়ে তাহলে আর বােধহয় অংশুমান ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। পুুরুলেতে গিয়ে সৈকত আর ইন্দ্র দু-দিন খুব ঘুরে বেড়ালাে। সেই নতুনপুকুর , হাড়ি পাড়া, পুজো বাড়ি, হাইস্কুল আর দক্ষিণের খােলা মাঠ। সেখানে। গিয়ে কি করে যে সময় কেটে যায় পাখির গান শুনে, বাতাসের শিহরনে। তা ওরা বুকতেই পারল না। সৈকত আর ইন্দ্র যেন অংশুমান আর বিডি ছােটবেলার ছবি। তারা যেভাবে যীতলায় বেলগাছের ডালে উঠে খদের গায়ে লাফ মারত। সৈকত আর ইন্দ্র আরও অন্যান্য বন্ধুদের সঙ্গে একইরকমভাবে খেলে বেড়াচ্ছে। সেই ছোটবেলা, ছোলামুড়ি আর লুকোচুরি খেলার দিন ফিরে এসেছে। ঘেঁটুফুল, ঘাসফড়িং সবকিছুই নতুন করে চেনা এক ধারাবাহিক পদ্ধতি। এত শিশু আসে আর এক শিশু বড় হয়ে যায়। আবার তার জায়গায় আর এত শিশু এসে ফনি ধরে, লুকোচুরি খেলে, ডিগবাজি খায়, হাওয়াতে দোলে। এ-এক চিরন্তন প্রবাহ জেগে ছিল, জেগে আছে, জেগে থাকবে। এক অসীম নিরবছিন্ন খেলা। দু-দিন পরে আবার ওরা কাটোয়াতে ফিরে এল। কাটোয়াতে এসে প্রায় দু-দিন ধরে সৈকত বলছে, “বাবা, ঠাকুমার জন্যে মন খারাপ করছে, ইন্দ্র জন্যে, বাড়ির সবার জন্যে, ষষ্ঠীতলার জন্যে, নতুন পুকুরের জন্যে মন খারাপ করছে?"অংশুমান বললাে, “মন খারাপ কোরাে না। আবার সুযােগ পেলে ওখানে চলে যাবে। অংশুমান বাবার চাকরিসূত্রে বিভিন্ন জায়গায় কাটিয়েছে। অংশুমান ও তার বন্ধুরা অনেক জায়গায় ঘােরাঘুরি করেছে। পুরী, দার্জিলিং, দিঘার সব জায়গায় গেছে। এখন ঘরে বসে অবসর সময়ে এইসব কথা লেখে। একটা জীবন একটা উপন্যাসের মতাে। অনিলদার বাড়ি। অনিলদা বলেন "চলো অংশুমান, আজ আয়ের সাহিত্য আসর। চলো ঘুরে আসি। অংশুমান বলল, "চলুন ভালােই হবে, একটা কবিতা পাঠ করব। আজয়ের আসরে গিয়ে ওরা দু-জনে কবিতা পাঠ করল। তারকেশ্বর বাবু বললেন ,, “পরবর্তী মাসের আসর কাটোয়া মহুকুমা মন্দিরে অনুষ্ঠিত হবে। সাহিত্য আসরেই পরবর্তী মাসের আসরের দিন ঘোষণা করা হয়। আবার মাসের প্রথম শনিবার বিজ্ঞান পরিষদে অনিল ঠাকুর সাহিত্য আসরে গিয়ে অনুগল্প পাঠ করল। অনিল ঠাকুর বললেন, আমরা একসঙ্গে বাড়ি যাবাে। তুমি চলে যেও না।" অনুষ্ঠান শেষে ওরা বাড়ি এল, কবি ও গবেষক অনিল ঠাকুর সতিই খুব গুণী মানুষ।অংশুমান কথা বলে মোবাইল রেখে দিল। তারপর দেবীকে বল,পুরুলেতে জেঠুমা মারা গেছেন। এই দশ মিনিট আগে।” তখনও খিচুড়ি, ডিমভাজা, আলুভাজা খাওয়া হয়নি। সব কুকুরকে খাওয়ানো হল। সঙ্গে সঙ্গে তিনজনেই রওনা হল পুরুলে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে। প্রায় ধু-ঘন্টা পরে ওরা পুরুলে পৌছে গেল। পাশের বাড়িতে জেুমা থাকতেন। সুই ছেলে বুড়ো আর ভােম্বল। ভবদেব মারা গেছে আগে। ওরা মোট তিত এক বোন। বড়দা, বাবু, অংশুমান সবাই কাটোয়ার শানে যাওয়ার নিল। বিলিফদাকে ফোন করে দেওয়া হয়েছে। রিলিফদা বলল, "আ বোলপুর এসেছি। রাস্তায় ঠিক দেখা করে নেব। তারপর তোমাদের স ববাে।" বাবা মারা যাওয়ার সময় সব ভাইরা একত্রে শাক পালন করেছেন। আবার জ্যাঠাইমা মারা যাওয়াতে সবাই এক হল। কাটোয়ার শ দাহকার্য সমাপ্ত করে সবাই গঙ্গান্নান করার পর সাদা কাপড় পড়শীরা যারা এসেছিলেন সবাই গঙ্গন্নান করে নিলেন। গ্রমের বাবু বাবন , মলয়, নিতাইদা, গোপালদা, , প্রশান্ত, ও আরও অনেকে এসেছেন।এইভাবে কথাবার্তা চলছে। এদিকে দেবী, বড় বোন মামণি, ছােটো বােন পপন ও তাদের ছেলেমেয়েরা, জমাইরা সবাই এসেছে। ঘর মানেই তো মানুষের সমাহার। যে ঘরের মানুষ যত ভালো, সেই ঘর ততটাই সুন্দর। বাই একসাথে এখন থাকবে দু-চারদিন। কারণ চলে গেলে আবার যে লেগে যাবে। আবার কবে দেখা হবে কেউ নিয়ে খুব তাড়াতাডল বাণুর বন্ধু মলয মণল মলয় ও অংশুমানের ভাই-এর ম।। প গাশানে গিয়ে অনেকক্ষণ হরিনাম হয়েছিল। হরিনামের মল যে ছিল ভইা। কাটোয়া শশান গঙ্গার প্রায় কাছাকাছি। তখন ইংলফটিক In tv না। কাঠের আগুনে বা কয়লার আগুনে দাহকার্য সমাপ্ত এ। । ভবা পাগলার সেই বিখ্যাত গান মাইকেে বাজছে। ” ও আমার ব্যথা এভাবে চলে গেলেন তা নয়, যেতে হবে আমাদের আমরা শুধু আমার আমার করেই কাটিয়ে দিই সময়। বৈরাগ্য হলেই তো হবে না।এমন আবেগ আমাদের, মানুষদের করা হল হিংসা,, লোভ পাপ করে সতিকারে মানুষ এখন। আর কিছু হতে না পারি এক এ কারও মাথা নেই। ফলে থেকে সবাই যে যার চলে গেল। পুরুলেতে থাকল বাকি সংসার পরিজন। অংশুমান নিজের পরিবার। । শহরে চলে এল। দেবী তাে ঘরে এসেই বুল ঝাড়া, ঝটি দেওয়া করতে লাগল। সৈকত একটা গল্পের বই নিয়ে বিজ্ানায় পড়তে । অংওমান বাজারে গেল কিছু বাজার করে আনার জন্য। ঠিকঠাক করে রবাি হতে প্রায় বেলা দুটো বোঝা গেল। দেবী কল, "সৈকত আয় খাবি আয়।সৈকত ডাকল বাবাকে। খওয়া-াওয়া হয়ে গেল। দুপুরে একটু শুয়ে সকলে বিশ্রাম করে নিল। বিলকেলায় দেখি ও অংশুমান হাঁটতে বেরােয় আর সৈকত খেলতে যায়। নাড়ের প্রতিবেশীরা সকলে খুব ভালােবাসে। তারা বলে, “আপনারা সকলে বেড়িয়ে যাবেন না। একজন ঘরে থাকবেন।" ঘরে মানুষ থাকলে চোর সাধারণত ঢুকতে সাহস পায় না। | প্রায় মাস হয়ে গেল জেঠাইমা মারা গেছেন। সবই ঠিকঠাক চলছে। একদিন সকালে উঠে দেবী বলল, “ওঠো, দেখাে আমাদের জলের কল চুল নিয়ে গেছে। রাত্রে চোর এসেছিল।”আমি রাতে কোনাে শব্দ পাই নি। কিন্তু কি করে যে চোরে কল তুলে নিল কোনাে শব্দ না করে তা আজও রহস্য থেকে গেল ওদের কাছে। সংসারে। আলো-মন্দ লোক আছে। সবাই তাে আর দয়ালু মানুষ হয় না। জল দেওয়ার জন্য একটা লােক রাখল অংশুমান। সে দু-বেলা রােজ খাবার জল দিয়ে যায়। আসনপন্ন যে, কাপড় কাচা প্রভৃতি কাজের জন্য একটা কুয়াে আছে। দেবী। এখানেই মায়। আ রাত্রে অংসুমান একবার ছাদে এল। আকাশে অসংখ্য তারা। শ কে তাকিয়ে অংশুমানের মনটা ভালাে হয়ে গেল। কোনাে ব, কোনো সমস্যা এখন আর নেই। তার অন্তরে এখন আকাশের সুর। গছে। সে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নক্ষত্রের দিকে। তার মন সে টিনিন আকাশের নক্ষত্র ছুঁতে চায়। তখন আরও স্বল্প দেখে। সে নক্ষত্র রয়েছে। সারা বিশ্বের ভালো মন্দ র আর তার উপর ন্যস্ত হয়েছে। সেই অবস্থায় অংশুমান পৃথিবীর। নর মানচিত্র মুছে ফেলে একটা গ্লোবে পরিণত করতে চায়। পৃথিবীর ওয়েব থেকে আর মােবাইলে গান পাঠানাে যায় ঠিক সেইরকম মানুষের হৃদয়ের মিলনের সুর সারা দুনিয়ার মানুষের মন সেনানে যাবে না কোনাে হন্দ, ইবা কিভাবে জাতের নামে বতি। ভারতবর্ষের সনাতন ধর্ম, ঐতিহ্য, সংস্কার পৃথিবীতে , ভারতবর্ষের আদর্শে অনুপ্রাণিত সারা পৃথিবী, সেখানে সবাই কে ক, মহিলার সম্মান আর শিশু-যুবকের অধিকার। অংশুমান আয় নিচে শুয়ে ভাবছে তার অতিক্রম করে আসা জীবনের কথা।কতউল জীবন-মৃত্যুকে উপেক্ষা করে আজও এই বয়সে নবীন সবুজ মনে পৃথিবীর আজ তার কোনো দুঃখ নেই, শােক নেই। সারা জীবনের অভিজ্ঞতাই তার আজ পাবো। এক দুর্নিবার আকর্ষণে তার মন ছুটে চলেছে অজানা অসীম আনন্দের সরােবরে। সেখানে সে রাজহংসের মতাে শুধু দুধের বুকে, জীবনের সার বস্তুর কথা ভাবে।ও মন সওদাগর / কেন মিছে লত র / দেশের মানুষ দেশে ফিরে চল"। সারা পৃথিবীর মানুষ আহ তার সুরে সুর মিলিয়ে বলে চলুক এক মন্ত্র, আমরা এখানে এসেছি দু-দিনে অতিথি হিসাবে। এখানে হিংসা, মুগার কোনাে জায়গা নেই। চলে যেতে হবে আমাদের সকলকে। পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবার আগে এসাে আমরা সবাই মানুষের কল্যাণের জন্য পৃথিবীকে আরও সুন্দর করে তুলি। সারা পৃথিবী জুড়ে মানব-মনের ভাব প্রকাশের জন্য একটা ভাবা হােক, যে ভাষা ভৌত জগতের মর্ম সীমা অতিক্রম করে যাবে। মরমে প্রবেশ করে নামী মনের গভীরে সুর তুলবে। স্বপ্ন দেখার তাে কোনাে বিধিনিষেধ নেই। বু আগমনের মনে হয় এই স্বপ্ন একদিন সত্য হবে। রাষ্ট্রবিরােধী, সন্ত্রাসবাদী শব্দগুলি অবলুপ্ত হয়ে রাষ্ট্রকল্যাণকারী, আশাবাদী মানবিক পৃথিবী এক হয়ে যাত্রা শুরু করুক। অংশুমান যখন ছোট ছিল তখন দেখেছিল মানুষের মনে হিংসা, ঘৃণা কম ছিল। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে আলট্রা ভায়ােলেট রে যেন সমগ্র বিশ্বকে গ্রাস কর শেষ করে দিতে চাইছে। আমিন সহজে পৃথিবীকে ধ্বংস হতে দেবে না। তার জন্য সে তার সমস্ত দিতে প্রস্তত, ধবধবে সাদা পােশাকে আজ অংশুমান মন্দিরে বলে প্রার্থনা করছে পৃথিবীবাসী শাস্তির জন্য। তক্তিপনূত সামাজিক এবং নান্দনিক জন আন্দোলনের মাধ্যমে পৃথিবীতে শুভ হবে। স্বেচ্ছা পরিশ্রমের ফসল পাবে পৃথিবী। দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অবলুপ্তি ঘটবে। স্বেচ্ছা পরিশ্রমের অতীন্দ্রিয়তার স্পর্শ পেতে বেঁচে থাকার সমস্ত সামাজিক এবং সঙ্গে সঙ্গে অতীন্দ্রিয়তার স্পন গুণাবলির প্রকাশ ঘটবে। গােলােকায়নের এই সুন্দর সাবলীল স্বপ্ন সাংস্কৃতিক গুণাবলির প্র অংশুমানকে আচ্ছন্ন করে তুলেছে। আজ সে রাত্রিতে স্বপ্নে দেখেছে একদিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর থার উপর শ্রীকৃষ্ণ ভগবান অংশুমানকে সাহস দিচ্ছেন, অভয়বাণী শােনাচ্ছেন এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্রে। অংশুমান বুঝে গেছে আর বেশিদিন নয়। সমগ্র পৃথিবী সংঘবদ্ধ হবে। পৃথিবীজোড়া মানবজাতি ধীরে ধীরে একত্র হবে। বিশ্ব মানবতার এক ধর্মে, এক ভাবনায়। এই আত্মিক শক্তির আড়ালেই রয়েছে মানুষের প্রাণের স্পন্দন, শাশ্বত সুন্দরের বীজমন্ত্র।পনেরো বছর নন্দনপাড়ায় কেটে গেল সৈকতের। এখন সে গ্রাজুয়েট হয়েছে। সেও বাবার মত ছাত্র পড়ায়।ইতিহাসের গল্প করে তাদের সঙ্গে।সৈকত বলে, আরেক মুসলমান ঐতিহাসিক ইসমী বলছেন, লক্ষণ সেন কখনই দুর্বল রাজা ছিলেন না। অত্যন্ত মহৎ, উদার ও সাহসী যোদ্ধা ছিলেন তিনি। বলা হয়ে থাকে নদীয়ার দুর্গ দুর্ভেদ্য ছিল, মোটেও এমনটা নয়। নদীয়ার যে দুর্গে মুহাম্মদ খিলজী আক্রমন করেন, তা ছিল অতি সাধারণ গঙ্গাতীরবর্তী একটি তীর্থস্থান। গঙ্গার তীর ঘেসে ছিল রাজার প্রাসাদ। এই প্রাসাদ সুদৃঢ় অট্টালিকা নয়। তদানীন্তন বাঙলার রুচি ও অভ্যাসানুযায়ী কাঠ ও বাঁশের তৈরী সমৃদ্ধ বাংলা বাড়ী। সেখানে পর্যাপ্ত পরিমানে সৈন্যবাহিনীও উপস্থিত ছিলেন না। ১৮ জন সৈন্য নিয়ে মুহাম্মদ খিলজী যখন নগরে প্রবেশ করেন তখন সবাই ভেবেছিলেন তারা বোধ হয় ঘোড়া ব্যবসায়ী। সেই সুযোগে খিলজী প্রাসাদে আক্রমন করে বসেন। তখন সময় দ্বিপ্রহর। মুসলমানেরা যা লুকায় তা হল, খিলজী প্রাসাদে আক্রমণ করার প্রায় সাথে সাথেই তার পিছনে থাকা বিশাল তুর্কী বাহিনীও নগরে ঢুকে যায় এবং প্রাসাদের সকলকে হত্যা করে। ইসমী বলছেন, অতর্কিত হামলা করার পরেও বৃদ্ধ লক্ষণ সেন হাল ছেড়ে দেননি। তিনি ও তাঁর সৈন্যরা সাহসিকতার সাথে দস্যু খিলজীদের মোকাবেলা করেন। একসময় পরাজয় নিশ্চিত জেনে তিনি বিক্রমপুরের দিকে পালিয়ে যান।দস্যু খিলজীর অত্যাচারের কাহিনী তখন লোককাথায় পরিণত হয়েছে। যেখানেই যা পেয়েছেন লুট করেছেন। যেখানেই যা পেয়েছেন ধ্বংস করেছেন। নির্বিচারে নগরের সাধারণ মানুষদের হত্যা ও শিরচ্ছেদ করেছেন। নিম্নবর্ণের হিন্দু, ব্রাহ্মণ ও বৌদ্ধরা দিকবিদিক পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। অত্যাচারে টিকতে না পেরে অনেকেই ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছেন। বৌদ্ধ লামা তারনাথের লেখাতেও যার সাক্ষ্য আছে।অংশুমান আজ সৈকতকে হারিয়ে যাওয়ার গল্প বলছেন।সৈকত মন দিয়ে শোনে। অংশুমান বলে
হাতে একটা ময়লপড়া ঝোলা হাতে শিলকোটানি হেঁকে চলত, শিল কোটাবে গো শিল, শিল কোটাও গো শিল...
বাড়ির বৌ ঝি রা ত্রস্ত হয়ে বেরিয়ে আসত বাইরে। বাইরে এসে বলত, এসো গো আমার দ্বারে আমার শিল একবার কোটাতে হবে। শিলকোটানি লোকটা ময়লা ঝোলা থেকে বের করত ছেনি, হাতুড়ি। তারপর পাথরের শিলের উপর নক্সা ফুটিয়ে তুলতো ঠকঠক শব্দে। আশেপাশে কচিকাঁচা ছাড়াও প্রতিবেশিদের বৌরা দেখত আগ্রগভরে এই শিলকোটা। কিভাবে ধীরে ধীরে ফুটে উঠছে নক্সা হাত ও হাতুড়ির যুগলবন্দীতে।
তারপর একজনের দেখে প্রতিবেশিদের দশজন কুটিয়ে নিত শিল। পাশের বাড়ির অনিতা বললো, আমাদের বাঁটনা বাঁটা শিলটাও কেমন সমান হয়ে গেছে। ফুটো ফুটো না থাকলে মশলা ভালো করে বাঁটা যায় না।
শিলকোটানি লোকটা বলে, নিয়ে এসো গো মা। কুটে দিই শিলটা। আবার কবে আসব জানা নাই।
তারপর দশ বারোটা শিল কুটে রোজগার করে শিলকোটানি চলে আসত তার বাড়ি।
ছেনি, হাতুড়ির সব সময় ঠিক রাখত। অনেকে পাথরের শিল মাথায় করে নিয়ে আসত তার কাছে। কত যত্নে সে শিল কুটতো। তখন তার শিল্পীহৃদয় নিয়ে যেত কল্পনার জগতে। সেখানে রঙ আর রঙীন মেঘের আনাগোনা। সেই মেঘের আশীর্বাদ পেয়ে সে বোধহয় এই কাজ পেয়েছে। সে এই কাজ পেয়ে খুব খুশি। অবসর সময়ে বাগানে গাছ লাগাতেন। আবার সকাল হলেই বেরিয়ে পড়তেন শিকোটানোর কাজে। এখন আর শিলকোটানোর যুগ নেই। মিক্সির চাপে পেশাই হয়ে গেছে প্রচলিত এই পেশা। সেই শিলকোটানোর লোকটির বাড়িতে এখন নাতিদের মিক্সির বাজার। হারিয়ে গেছে পুরোনো সেই শিলের কথা। আর এক সম্প্রদায়ের মানুষ ছিল তারা হাবু গান গাইতো সাথে লাঠি দিয়ে পিঠে আঘাত করত। এইসব আঘাত দেখে সহ্য করতে না পেরে বেশি টাকা দিয়ে তাদের এই খেলা দেখাতে বারণ করত। এইভাবে হাবুগান চলত কিন্তু তার প্রচলন এখনো দু-এক জায়গায় রয়ে গেছে।
হাবু গানে প্রচলিত গান গুলো ছাড়াও কাউকে ব্যঙ্গ করে বা কোন সমাজের অত্যাচার কে ব্যঙ্গ করে গান গাওয়া হতো ।বীরভূম থেকে বহুরূপী সম্প্রদায় এখানে এসে অন্যরকম সাজে অভিনয় করে দেখাতো বহুরূপী রাম সীতা হনুমান এইভাবে তারা বিভিন্ন রকম সাজে সজ্জিত হয়ে আনন্দিত এবং তার বদলে টাকা-পয়সা উপার্জন করে তাদের সংসার চলত। বহুরূপী সম্প্রদায় এখনো অনেক জায়গায় আছে শহরের বিভিন্ন জায়গায় মাঝে মাঝে দেখা যায় হনুমান সেজে কেউ ঘুরে বেড়াচ্ছে কেউ রাবণ সেজে এসে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং তারা বিভিন্ন জায়গায় ভান করে বা মজার ছড়া বলে না কিছু উপার্জন করছে এবং এই উপার্জিত টাকা পয়সা তাদের জীবন নির্বাহ হয়। প্রচণ্ড গরমে তারা সারা দেহে রং মেখে এইভাবে পরিশ্রান্ত হয়ে দিনের পর দিন অর্থ উপার্জন করে এবং দিন চলে গেলে তখন তাদের আর কাজ থাকেনা তখন তারা অন্য কাজ করে। আমরা ছোটবেলায় দেখেছি ভুলো লাগা ব্রাহ্মণ এসে বাড়ি বাড়ি ঘুরতে তারা ছড়ার মত করে বলতো না বিভিন্ন গ্রামের নাম করত এবং বলতো যেসব গ্রাম ঘুরে এসে শেষে আপনাদের বাড়ি এলাম। হয়তো গ্রামগুলো আশপাশের গ্রামগুলোর নাম বলতো, মেলে পোশলা কোপা ভুলকুরি হয়ে তারপর মুলগ্রাম শিবলুন তাড়াতাড়ি হয়ে তারপর আমাদের গ্রামে এসেছে। দিক দিয়ে ভুলো লাগা ভূত নাকি তাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শেষে এইগ্রামে এনেছে। তারপর ঘুরতে ঘুরতে রাস্তা ধরে প্রচন্ড গরমে মালিকের বাড়িতে এলাম বাড়িতে এসে দাঁড়াতেই কথা বলতেন একথা শুনে শিশু থেকে বৃদ্ধ এবং তাকে বসিয়ে হয়তো তার উপার্জিত অর্থ দিয়ে সংসার চলতো সংসার চলত।তারপর এক ধরনের ব্যবসাদার ছিল তারাও সরু লিকলিকে বাসের উপর সেই বোম্বে মিঠাই মিঠাই নানান রঙের মিঠাছড়ি এনে বাচ্চাদের বিভিন্ন রকম পুতুল তৈরি করে দিতে হতো বলতো আমাকে সাপ তৈরি করেছে মিঠাই মিঠাই দিয়ে তৈরি করে দিত আর আমাকে পুতুল বানিয়ে দাও বিভিন্ন নতুন নতুন ছোটদের মনভোলানো আর দেখা যায় না এর অর্থ উপার্জন করত।এই বোম্বাই লাঠি বানানোর জন্য প্রথমে নিজেকে ফুটিয়ে ফুটিয়ে হাজারের মতো তৈরি করা হতো আটা লেগে গেলে বিভিন্ন রঙে রঙিন করা হলুদ নীল সবুজের জরিনা জরিনা হতো প্রথমে তারপর যদি না হতো এবং তাতে প্লাস্টিক জড়িয়ে রাখো ধুলোবালি যাতে না পড়ে তারপর শিশুদের চাহিদামত পুতুল তৈরি করা হতো।
রদের খুব তাছাড়া একটা টিনের বাক্স নিয়ে শনপাপড়ি বিক্রেতা শোনপাপড়ি বিক্রি করত। তারা একটা চাকা ঘোরাতো টিনের বাক্সের মধ্যে থাকা এবং তাতে চিনির জল বিভিন্ন রং মিশিয়ে চাকা ঘুরিয়ে দিলে মাকড়সার জালের মত মিঠাই তৈরি হত। সেটাকে এক জায়গায় করে শোনপাপড়ি বিক্রি হতো। এক টাকায় হয়তো একটা দেখা গেল একটা বড় ফুটবলের মত শোনপাপড়ি। অনেকে এর নাম দিয়েছিল দিল্লিকা লাড্ডু। এখনো অনেক জায়গায় দেখা যায় ঘটিগরম বলে একটা জিনিস যেটা ভুজিয়া জাতীয় জিনিস দিয়ে মিশিয়ে দেওয়া হয়। সেই হাতেধরা জায়গায় থাকে একটা উনুুন এবং সেই উনুনে গরম করে পিঁয়াজ ও নানারকম মশলা মিশিয়ে ঘটিগরম তৈরি করা হয়। বাবার কাছে বড় হয়েও সৈকত গল্প শোনে। ইতিহাসের গল্প বলে ছাত্রদের অবসর সময়ে। আজ বৈদিক যুগের কথা বলছে সৈকত ছাত্রদের।সে বলছে,প্রশাসনিক ব্যয়-নির্বাহের জন্য বাধ্যতামূলক কর ও রাজ হয়ে ওঠে। ঋক বেদের যুগের (১৫০০-১০০০ খ্রিঃ পুঃ) মানুষ ছিল যাযাবর ও পণপ সময় রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয় নি, এবং এজন্য করপ্রদান বা কর আদায়ের কোনও প না। দলবদ্ধ মানুষ বা বিভিন্ন গোষ্ঠী নিজেদের প্রয়োজনে দলপতি রাজা মনোনীত করেছেন। সাধারণ মানুষজন দলপতি বা রাজা করেছেন। সাধারণ ; তাঁর কাজের বিনিময়ে নিজেদের উৎপাদিত শস্যের একটি অংশ প্রদান করত। এর হত বলি। বলি কোনও কর নয়এটি উপহার বা সেচ্ছাদান বাধ্যবাধকতা ছিল না।পরবর্তী-বৈদিক যুগে (১০০০-৬০০ খ্রিঃ পৃঃ) আর্যরা উত্তর ও মধ্য গাঙ্গেয় উপ সম্প্রসারিত হয়। কৃষি মানুষের প্রধান বৃত্তিতে পরিণত হয়। এই অঞ্চলের লােহার হাতিয়ার কৃষিতে উদ্বৃত্ত ফসল ফলায়, সময়ে সময়ে পরবর্তী বৈদিক যুগ কলি হয়ে পড়ে।যুগ সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্রের পত্তন ঘটে এবং রাজকীয় ক্ষমতা ৪০ সামরিক ও প্রশাসনিক ব্যয়-নির্বাহের জন্য কর আরােপ জরুরি হয়ে পতে যাকে ‘বলি' ছিল স্বেচ্ছাকর বা স্বেচ্ছা-উপহার। এখন তা বাধ্যতামূলক হল। এই সময় প্রজাকুলকে 'বলি ও শুল্ক" বলে দুধরনের কর দিতে হত। রাজাকে বলা হচ্ছে বলি আহরণকারী। অথর্ববেদে 'বলি'-র গতি করা হয়েছে এক-ষােড়শাংশ, অর্থাৎ উৎপন্ন ফসলের এক-ষােড়শাংশ এবং পণ্যের ক্ষেত্রে মুনাফার এক-ষােড়শাংশ। ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের কর দিতে হত না।বােঝা বইতে উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত বৈশ্য ও শূদ্ররা। ঐতরেয় ব্রাহ্মণ রাজাকে শৈম অর্থাৎ বৈশ্য ও কৃষকদের গ্রাসকারী বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এই যুগে সংগঠ। ভাগদুখ নামক দু'জন কর্মচারীর উল্লেখ পাওয়া যায়। "সংগ্রহিত্রী' হলেন কোষাধ্যক্ষ ভাগদুখ হলেন রাজস্ব আদায়কারী। এই যুগে জিনিসপত্রের মাধ্যমে রাজস্ব দিয়ে। কারণ তখনও মুদ্রার প্রচলন হয় নি। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের মধ্য গাঙ্গেয় উপত্যকায় কৃষিকার্যের ব্যাপক সম্প্রসারণ। এই অঞ্চলে রাজশক্তি সুদৃঢ় হয় এবং ষােড়শ মহাজনপদের উত্থান ঘটে। কৃষির প মহাজনপদের যুগ বিকাশের ফলে হরপ্পার নগর সভ্যতার বিলুপ্তির প্রায় হল পর ভারতে আবার দ্বিতীয়বার নগরায়নের সূচনা হয়। এই যুগে 'গহপতি ও ক্ল নামে দুই শ্রেণির সমৃদ্ধশালী কৃষকের আর্বিভাব হয়। ভূমিরাজস্বের হয়। ভূমি রাজস্ব হার ছিল এক-) থেকে এক-দ্বাদশাংশ। রাজা ও কৃষকের মাঝে কোন মধ্যস্বত্বভোগী ছিল রাজকর্মচারীরাই কর আদায় করতেন। (১) মৌর্য যুগের শাসক বর্গ সর্বপ্রথম রাজকীয় সম্পদের উৎস হিসেবে করের উপলব্ধি করেন এবং এই যুগেই করব্যবস্থা সর্বপ্রথম সুসংগঠিত ও সুনিয়ন্ত্রিত হয়। সকল কর্মোদ্যোগের জন্য অর্থ প্রয়ােজন। তাই কৌটিল্য : জাকে সর্বদা অর্থসংগ্রহ রাজকোষ পূর্ণ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ফুলে মধু সংগ্রহ করে বেড়ায়, কিন্তু ফুলের কোনও ক্ষতি করে না। রাজাও তেমনি র প্রজাদের কাছ থেকে অর্থ আহরণ করবেন। কৌটিল্যের মতে, রাজা সর্বপ্রকার অর্থনৈতিক কার্যকলাপের উপরেই রাজস্ব আরােপ করবেন। ডঃ রণবীর চক্রবর্তী বলেন যে, “কর ব্যবস্থার দ্বারা সম্পদ তা মৌর্য আমলে বিশেষভাবে প্রকট। ভারতীয় ইতিহাসে যথাযথ প্রশাসনিক হের প্রবণতা মৌর্য অ হার দ্বারা সম্পদ সংগ্রহের প্রয়াস এই আমার প্রথম দেখা যায়।" (২) অর্থশাস্ত্র | এনুসারে সমগ্র করব্যবস্থার সংগঠন ও পরিচালনার দায়িত্ব ছিল দু'জন পদস্থ কর্মচারীর হর্তা' ও 'সন্নিধাতা'। 'সমাহর্তা কর নির্ধারণ করে তা সংগ্রহ করতেন। ছিলেন মুখ্য হিসাবরক্ষক ও পরীক্ষক। সমাহর্তা’ সাতটি সূত্র থেকে কর আদায় সেগুলি হল দুর্গ, রাষ্ট্র, খনি, সেতু, বন, ব্রজ ও বণিকপথ। (৩) ভূমিরাজস্ব ছিল আয়ের প্রধান উৎস। ভূমিরাজস্ব তিনভাগে বিভক্ত ছিল-সীতা, ভাগ ও বলি। এর জমিকে সীতা' বলা হত এবং এই জমি থেকে রাষ্ট্রের বেশ কিছু আয় হত। (ক) রাজার খাস জমি সীতা' জমিতে কয়েদি বা ক্রীতদাসদের দিয়ে চাষ করা হত এবং সরকার থেকে রে লাঙল, বলদ, বীজ ও অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করা হত, সেই জমির উৎপাদিত সালের সব রাজকীয় শস্যাগার জমা পড়তো। (ii) কখনও কখনও আবার এইসব এমিতে ভাড়াটে কৃষক নিয়োগ করা হত এবং এই কৃষকরা কৃষির যাবতীয় উপকরণ নিজেরাই যোগাড় করেনি। সে ক্ষেত্রে উৎপন্ন ফসলের অর্ধাংশ ছিল রাজার প্রাপ্য। jil) অনেক ভাড়াটে কৃষক রাষ্ট্রের কাছ থেকে কৃষির সব উপকরণ পেত, এবং তার নিজস্ব লিতে ছিল শুধু শ্রম। সেক্ষেত্রে ফসলের তিন-চতুর্থাংশ বা তিন-পঞ্চমাংশ রাজকোষে জমা পড়ত। (খ) ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমি থেকে রাজস্ব হিসেবে সরকার উৎপন্ন ফসলের এক-ষষ্ঠাংশ পেতেন। তাকে বলা হত 'ভাগ'। প্রজার জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার বিনিময়ে রাজা ভাগ আদায়ের অধিকারী ছিলেন। (গ) ঋক-বৈদিক যুগে ‘বলি’ কোন প্রকার কর ছিল, বলি’ ছিল স্বেচ্ছাধীন, কিন্তু কালক্রমে রাজকীয় ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে 'বলি’ বাধ্যতামূলক পরিণত হয়। (৪) এছাড়াও কর্মকার, শিল্পী, বণিক, কারিগর প্রভৃতি পেশার মানুষ এবং একটি পণ্যের উপর কর আরােপ করা হয়। গৃহ, ফেরিঘাট, বন, খনি, পথ, জল, গােচারণ , গণিকা, পানশালা, জুয়ার খানা, কারখানা প্রভৃতির ওপর কর আরোপিত হয়। Wসর আমদানি-রপ্তানি শুল্ক, চুঙ্গিকর প্রভৃতি দিতে হত। বণিক সঙ্ বা গিল্ড-এর উপর | আরোপিত হত। সেনা রােপিত হত। সেনাবাহিনীর জন্য সেনাভক্তমনামে একপ্রকার কর আদায় করা হত। | পতঞ্জলি বলেন যে, । ” বলেন যে, মৌর্য রাজারা সােনা সংগ্রহের জন্য মন্দির প্রতিষ্ঠা করতেন। এই | এগুলো ছাড়াও আপ ভাও আপকালে সরকার অতিরিক্ত কিছু কর আদায় করতেন। তাকে প্রণয় বিভিন্ন দিক গুলোকে একত্রে 'ব্যয়-শরীর বলা হত। রাজপরিবার, সেনাবাহিনী ও (৫) মৌর্যযুগে আয়ের বিভিন্ন উৎসগুলিকে একসঙ্গে ‘আয়-শরীর এবং ব্যয়ের অল্প কর্মচারীদের বেতন দের বেতন, রাস্তাঘাট, সেতু, বিশ্রামাগার স্থাপন এবং জনকল্যাণমূলক কাজে অর্থ ব্যয় করতেন। সৈকত ছাত্রদের ছোটবেলার ঘটনা শোনায়। সে অতীত নিয়ে নাড়াচাড়া করতে ভালবাসে। সে বলে কিশোরবেলার কথা। সৈকত বলে, আমরা কিশোরবেলায় খুব ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছি। একবার ঠিক করলাম আমরা বিল্বেশ্বর গ্রামের সঙ্গে ম্যাচ খেলব। ভাবাও যা তার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা বিল্বেশ্বরের সঙ্গে ম্যাচ খেলা ঠিক করে ফেললাম।
ছয় মাইল পায়ে হেঁটে যেতে হবে। আমাদের গ্রাম থেকে ছয় মাইল দূরে বিল্লগ্রাম। সেখানে আমরা হেঁটে চলে গেলাম ১১ জন আর একজন এক্সট্রা মোট ১১ জন। আর দর্শক আমাদের সঙ্গে ছাত্রদল ১২ জন। তারপর দুটোর মধ্যে পৌঁছে গেলাম বিল্বেশ্বর মাঠে।
অজয় নদীর ধারে মাঠ। বেশ বড়। সুন্দর মাঠ তিনটের সময় খেলা শুরু হলো। ওপেন করতাম আমি আর টুলাদা। আমি এক দিকে। আর টুলাদা রানার থেকে কোনরকমে কাটানো হল দু ওভার। বেশ জোরে বল।জোর বলের চেয়ে ভালো বলছে ব্যাটিং।কোনরকমে একদিকে ঠেকােনো হলো আর একদিকে টুলাদা পেটাতে লাগলো।কুড়ি ওভার করে মাত্র খেলা। এর মধ্যে রান তুলতে হবে ভাল রকম। না হলে জেতা যাবে না।টুলা দা ছয় মারতে গিয়ে ক্লিন বোল্ড হয়ে গেল মিডল স্টাম্প উড়ে চলে গেল। তারপরে নামল নীলুদা। নীলুদা নেমে ৪,৬ মারতে লাগল। কিছুক্ষণ পরে নিলুদা আউট হয়ে গেল। আমি একদিকে কোনরকমে ধরে রেখেছি। টুকটাক করে রান নিয়ে কোনরকমে ধরে রেখেছি। তারপরে এরকম করে পরপর যারা মারতে পারে তারা নামছে। ৪,৬ মারছে আর আউট হয়ে যাচ্ছে। এরকম করতে করতে আমাদের প্রায় দুশ কুড়ি রান হলো। দু শ কুড়ি রানে অল ডাউন।এবার ওদের পালা। এবার ওরা ব্যাট করবে আমরা ফিল্ডিং করব। আমরা ফিল্ডার হিসেবে এবার মাঠে নেমে পড়লাম। যে যার নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়লাম। আমি উইকেটকিপিং করতাম। উইকেটকিপার হিসেবে আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। এবার ওদের দুজন প্লেয়ার নামলো। দুজন প্রথম বলেই ক্লিন বোল্ড। একদম উঠে গিয়ে উইকেটকিপার পিছনে গিয়ে পড়েছে। উইকেট গেল ভেঙে। আবার নতুন আনা হলো বাবু খুব ভালো জোরে বল করতে পারে।বোলারদের কাছে কেউ টিকতে পারেনা। শেষে দেখা গেল ওরা ১০০ রানের মধ্যে অল ডাউন হয়ে গেল।আমরা জিতে গেলাম। খুব হুল্লোড় হইহই চেঁচামেচি করলাম। মাঠের মধ্যে আমাদের মাস্টারমশাই সুধীনবাবু ছিলেন। তিনি বললেন দাঁড়াও তোমরা জিতেছো। তোমাদের জন্য পুরস্কার আছে। তার সঙ্গে সঙ্গে আমরা স্কুলের গেট পর্যন্ত গেলাম। একটা হাই স্কুল আছে সেটাই আমাদের স্কুল। সেখানে আমরা পড়াশোনা করতাম। সেই স্কুলের মাস্টারমশাই সুধীনবাবু, করলেন কি, একটা বড় হাঁড়ি করে এক হাঁড়ি রসগোল্লা আমাদের হাতে তুলে দিলেন।অজয় নদীর বাঁধ ধরে কিছুটা এসে মাঠে নামতে হবে। তারপর আমরা হেঁটে যাওয়ার রাস্তা ধরে হাটবো। একটা বট গাছের তলায় আমরা সেই এক হাড়ি রসগোল্লা নিয়ে বসে পড়লাম। সবাই খেলাম। পাশে একটা কল ছিল। সেই কল থেকে জল নিলাম। চাষীদের কল। সেইসব কল থেকে তখন জল পড়ছিল। বোতলে জল ভরে আমরা খেলাম। খুব আনন্দ হয়েছিল সেদিন তারপর আস্তে আস্তে স্লোগান দিতে বাড়ি গেলাম।বিল্বেশ্বরকে হারালো কে? পুরুলিয়া ছাড়া আবার কে। বিল্বেশ্বর কে হারালো কে পুরুলিয়া ছাড়া আবার কে?তখন শীতকাল পৌষ মাস। শুধু খেলা আর খেলা। আবার এক মাসের মধ্যেই আমরা ম্যাচ ধরলাম। পাশের গ্রাম বেলুনের সঙ্গে। বেলুনে আমরা ওখানে খেলতে যেত খুব ভালো লাগত। কাঁদরধারে একটা মাঠ। ইশানী নদীকে কাঁদর বলে ওখানে। আবার আমার ছোট পিসির বাড়ি। যাই হোক সবাই মিলে খেলতে গেলাম। একটা ছোট ছেলে ছিল তার নাম তাপস। তাকে প্রথমে ওপেন করতে নামানো হলো। সে ওদের কি ভীষণ রাগ। ছোট ছেলের সঙ্গে আমরা খেলব না আমরা যখন বললাম, ওকে আউট করে দেখাও?
ওরা জোরে বল করলো। তাপস আস্তে করে ঢুকিয়ে দিলো স্লিপারের মাঝে। একদম সম্মানজনক এক্সপার্ট ব্যাটসম্যানের মত। তখন ওরা অবাক হয়ে গেল। আমি বললাম আউট করতে পারবে না। তারপর তো আমরা আছি। এরকম ভাবে খেলতে খেলতে বেলুনকেও আমরা হারিয়ে দিলাম। বেলুন থেকে যখন আসছি তখন আমাদের শ্লোগান হলো বেলুন ফুটো করলো কে? পুরুলিয়া ছাড়া আবার কে।নীলুদা অধুনা ক্যানাডাবাসি। সেই ছোটবেলায় খুব মজা করত। বেলুন থেকে ফেরার সময় এক দাড়িয়ালা কে দেখে বলছে, এ বাবা দাড়ি দেখ। এক দাড়িওয়ালা দাদু খুব রেগে গেছে।বলছে কি অসভ্য তোমরা। কাকে কি বলতে হয় জানো না নীলুদা এইভাবে আমাদের সাথে থাকতেন এবং আমাদের আনন্দ দিতেন। এরপরে আমরা ক্রিকেট দলের সবাই চিন্তা করলাম যে, ভালো কাজ করতে হবে। রাস্তা, তখন মাটির রাস্তা। রাস্তার এক জায়গায় গর্ত ছিল। সবাই মিলে ওই গর্ত ভরাট করলাম। তারপর ঠিক করলাম, এবার গাছ লাগাতে হবে। প্রচুর গাছ বিডিও অফিস থেকে নিয়ে এলাম। নিয়ে এসে রাস্তার ধারে, শিশু গাছ, আমগাছ, দেবদারু গাছ লাগিয়ে ছিলাম। মনে আছে। সেই গাছ গুলো এখন কতো বড় বড় হয়ে গেছে। কিন্তু সেগুলো তো সব পঞ্চায়েতের অন্তর্গত হয়েছে। সেগুলোর উপর আমাদের অধিকার নেই ঠিকই। কিন্তু সকলের সুবিধার জন্য আমরা সেই গাছ লাগিয়ে ছিলাম। এখন সেই গাছ গুলো দেখে আমাদের খুব আনন্দ হয়।
নীলুদা বলতেন, পরের জন্য কাজ করে যে আনন্দ পাওয়া যায়, সেই আনন্দ আর কোথাও পাবি না। সেইজন্য মনে রাখবি সারা জীবন পরের উপকার করার চেষ্টা করবি। কোনদিন স্বার্থপরের মত শুধু নিজের কথা চিন্তা করবি না।গাছ লাগানোর নেশা আমাদের ভূতের মত পেয়ে বসে ছিল। আমরা গাছ লাগাতাম বিডিও অফিসে প্রচুর গাছ পেতাম। এনে লাগাতাম একদম রাস্তার ধারে ধারে। সেনপাড়া তালাড়ি গ্রামে। এখন গাছগুলো বড় বড় হয়ে গিয়ে তারা আমাদের সেই ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়িয়ে দেয় । আমরা সেই ক্রিকেটদল ছোটবেলা থেকেই নাটক, তারপর যে কোন অনুষ্ঠান, ২৫ শে বৈশাখ পালন করতাম। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন আমরা একটা ছোট্ট স্টেজ বানিয়ে সুন্দরভাবে পালন করতাম। প্রথমে গান গাইতো আমাদের পাড়ার মৌসুমী। তারপরে আবৃত্তি করত নয়ন। আরো অনেক ছেলে ছিল। তাছাড়া আমাদের ক্রিকেট দলের সবাই আমরা দেখাশোনা করতাম সকলকে। আমরা এইসব কাজ করতাম। তারপর রবীন্দ্র জয়ন্তী পালনের শেষে আমরা সবাইকে একটা করে কেক খেতে দিতাম। আমরা নিজেরাই চাঁদা তুলে কেক কিনে নিয়ে আসতাম।আমাদের দলে আমি মিলু বিশ্বরূপ এই তিনজন একসাথে সব সময় থাকতাম। আমরা তিনজন মোটামুটি দলটাকে পরিচালনা করতাম। তাই আমরা কোন অসুবিধা হলে কারো কাছে চাঁদা চাইলেই সহজেই পেয়ে যেতাম। একবার বন্যায় সব মাটির ঘর বাড়ি ভেঙে গেছিলো। আমাদের হাজরা পাড়ায়। তখন আমরা চাঁদা তুলে সেই পাড়ায় সকলের দেখাশোনা করেছিলাম। বন্যায় দু-চারজন ভেসে যাচ্ছিল। আমরা নৌকা করে তাদের হাত ধরে ছিলাম। এই সব স্মৃতি এখনো মনে পড়ে। মনে পড়লে খুব আনন্দ হয়। গর্ব হয় আমাদের কিশোরদলের।
নিলুদা বলেন আমাদের ভারবির কথা। তিনি বলেন, অনেকে বলে থাকেন ভারবির প্রতিবাদকারী ভাব প্রদীপ্ত ছিল। কালি ঘাটে আছে উপমা, বিরক্তি আর গুনের সমন্বয়। মহাকবি কালিদাস কবুল করেন, সংস্কৃত সাহিত্য, সমৃদ্ধি যুগের শুরু বলে মনে করেন। সংস্কৃত সাহিত্যে কালিদাসের পর মহাকাব্য রচয়িতা হিসেবে যার নাম করতে হয় তিনি নিঃসন্দেহে ভারবি। কথিত আছে কোন একদিন স্থানীয় রাজা বিষ্ণুবর্ধন এর সঙ্গে এগিয়ে যায়। পরে ক্ষুধা নিবারণের অর্থে মাংস ভক্ষণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
সেই মাংস ভক্ষণ জনিত পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য তিনি তীর্থযাত্রা করেন।
তীর্থ পরিক্রমা পথে দুর্বিনীত নামে একজন রাজকুমারের সঙ্গে তার দেখা হয়।
ভারবির কবিত্ব শক্তির পরিচয় পেয়ে মুগ্ধ রাজকুমার তাকে নিজের শিবিরে নিয়ে যান তারপর একসময় রাজা বিষ্ণুবর্ধন কবি কে ডেকে রাজস্থান পরবর্তীকালে অনেক জাতীয় লেখা রচনা করেছিলেন।
৭৭৬ লেখা একটি দক্ষিণ ভারতীয় দানপত্র তার প্রমান।
পণ্ডিতেরা পণ্ডিতদের বিচারে খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকে ভারবির আবির্ভাব তাদেরও মনে করার কারণ। ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে লেখা দ্বিতীয় পুলকেশী ও তার বংশের স্তুতিমূলক শিলালিপি রচয়িতা নিজেকে কালিদাস কীর্তিমান বলে দাবি করেছেন।
শিলালিপিটি উৎকীর্ণ হয়েছিল ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে অবন্তী সুন্দরীর কথা যে রাজা বিষ্ণুবর্ধন এ আছে।
তিনি যে দ্বিতীয় পুলকেশীর ভাই সেকথা শিলালিপিতে উল্লিখিত পাঠের ভিত্তিতে ঐতিহাসিকদের দ্বারা প্রমাণিত।
দ্বিতীয় পুলকেশীর রাজত্বকালে ৬০০-৬৫০ খ্রিস্টাব্দে লেখা থেকে উদ্ধৃতি গ্রহণ করা হয়েছে। ৭৭৬ সালে লেখা দক্ষিণ ভারতীয় পত্রকাব্য এবং গুণী হিসেবে রাজা দূর্ববিনিতের নাম পাওয়া যায়।
ভারবি বানভট্টের পূর্ববর্তী এবং সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে কবিতায় যথেষ্ট প্রভাবিত হয়েছিলেন। তার ওপর অনেক প্রমান আছে মহাকাব্যটি কাব্যসৌন্দর্য অতিক্রম করার উদ্দেশ্য নিয়ে শিশুপাল বধ কাব্য রচনা করেছিলেন।
কবিকে অনেক ক্ষেত্রেই অনুকরণ করেছেন তিনি।এসব তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ৫৫০ খ্রিস্টাব্দে সন্নিহিত সময়কে চিহ্নিত করা হয়। অধিকাংশ বিষয়ে একমত পোষণ করেন কিংবদন্তি কবিগণ।