একজন কবি ধরে নিচ্ছি 'ক'- জনরায় লেখেন।তার হৃদয় থেকে শব্দমালা কাগজে এসে ঐ রূপটি ধরেই নিজেকে প্রকাশিত আর বিকশিত করে।হতে পারে তা 'খ' জনরার কবির রুচিবোধের সঙ্গে যায় না।হ্যাঁ আপনার নববধূকে কেবল আপনারই ভালো লাগবে সেটা স্বাভাবিক।অন্যকেও ভালো লাগতে বা লাগাতে হবে তা জরুরি নয়!তবে বিয়ের আসরে সবাই আসতে পারে।সমস্যা তখনই ঘটে যখন একে অপরের শব্দচয়ন,মাধুর্যতাকে কেন্দ্র করে পাতি কবি, গ্রাম্য কবি ইত্যাদি নানা বিশেষণে বিশেষায়িত করা হয় ।এই গুরুচন্ডালি দোষে দুষ্ট হয়ে কত কবি ও কাব্য যে অঙ্কুরেই ঝরে গেছে তার হিসাব হাতে আসেনি।এজন্য ছয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা যেতে পারে।সে যাক,আধুনিক কবিতা নাম দিয়ে কয়েক লাইনের হিজিবিজি বা শেষাংশে রস বা আদিরস যুক্ত করে দশটি কবিতা(!) লিখে প্রকাশিত বই ফেরিওয়ালাকে কী বা কি কবি বলা যায় সে দ্বন্দ্ব লেগে থাকবে যতদিন কাব্যসাহিত্য থাকবে।খুব ভালো জাদুকর না হলে জাদুকে হাত সাফাই মনে হবে তা জানি তবে কবিতায় কী উঠে আসবে,এ প্রশ্নের সৃজনশীল উত্তর কী হবে?দ্বৈততা,রসায়ন,বিকৃতি এবং সাধিত বিকৃতি,রোমান্টিসিজম
(রোম্যান্স বলিনি!),সংকট,ধর্ম , জিরাফ ইত্যাদি? শব্দ ও ছন্দের কারিকুরি? হিংসা,রাগ,মতবাদ ও মতভেদও থাকতে পারে?এর মানে কিন্তু এই না যে অন্তরঙ্গতায় আমি ঘোর অবিশ্বাসী।প্রেম,পুজো থাকবে।আমি বলবো একটি পৃথিবীকে থাকতে হবে।অতি ব্যক্তিগত সব সম্পদের মতো নিজেরা মনের অন্ত্যজ কোণে যে পৃথিবীটা লালন করি,ডিএনএর নকশার মতো সবারই তা আলাদা আলাদা।অনন্য ঐ পৃথিবীর ধূলোমাটি ছিটেফোঁটা সব কবিতায় থাকবে।তাহলে কবিতা পাঠ করা মানুষ পাঠ করার সমান হবে।
ঝড় হবে, বৃষ্টি হবে,ঠা ঠা রোদ্দূর হবে ,অগ্ন্যুৎপাত বা জলোচ্ছ্বাসেও বাধা কী? খালি এটাই মনে হতে পারবে না যে 'আমার লেখাটি পড়ে লোকে কী ভাববে ?হচ্ছে কিছু আদৌও?' এ ভাবনায় দোষ কী? দোষ কিছুটা আছে কাব্য লক্ষ্মী মোটেই বঞ্চনা, অপবাদ সইতে পারেননা।আপনার এমন ভাবনায় তিনি রুষ্ট হয়ে একদিন সত্যিই আপনাকে ত্যাগ করে চলে যাবেন।
ফেসবুক কবি-কথাটিতে নেতিবাচক কিছু না মেশানোই ভালো।কিরে কেটে বলুন তো,উদীয়মান কবিদের কয়টি বই মেলায় বিক্রি হয়?সেক্ষেত্রে ফেসবুকে কবিতা লোকে পড়তেও পারছে,সংরক্ষিতও থাকছে,কবির কাব্য প্রকাশ তৃষ্ণাও মিটছে।এতকিছু যখন হচ্ছে তখন মন্দ বলে লাভ আছে?এছাড়াও লিটলম্যাগগুলো সাহসী ও কার্যকরী পদক্ষেপ রাখে।অনেক লিটলম্যাগ সম্পাদকই মেলার শেষদিন তৃপ্ত হন এই জন্য যে তার সবকটি সংখ্যাই পাঠকের ঘরে পৌছেছে।সাহিত্য খরার দিনগুলোতে সাশ্রয়ের মধ্যে এটি দারুণ ব্যাপার।
সব সাহিত্যিকই নিজ নিজ চিন্তা জগতে শতাব্দীর সেরা।তাঁর এই অবস্থান অপরে যদি প্রশ্নবিদ্ধ করে বসেন তবে তাতে চন্ডিকা রূপ ধারণ করা অস্বাভাবিক।কেন? কারণ কবিতা বৃত্তের বাইরে থেকে আসে।কবি যদি আর দশজন গেরস্থের মতো আসন আর বসনে অধিকার প্রতিষ্ঠার চুলোচুলিতে লিপ্ত হয়ে যান তবে আর রইল কী?ভিন্নতা আর কোথায় থাকল?গালি খুউব ভালো জিনিস কিন্তু স্যাভেজ তার চেয়েও একটু ভিন্ন।অপমান আর স্যাটায়ার ও দুই বস্তু।ঈষৎ জ্ঞান প্রদানের ইচ্ছে পাঠক ভেদে মঙ্গলজনক এ কথাগুলো ভুললে চলবে কেমন করে?একশ্রেণীর মানুষ এখনো আছেন যাদের অপাপবিদ্ধ মন প্রিন্টেড যে কোনো কিছু কে আসমানী গ্রন্থের মতো সত্য ধরে নিয়ে বিশ্বাস করে বসে।এক্ষেত্রে লেখক হাত দিয়ে আগুনের খেলা খেলছেন বলা চলে।বাড়িও পুড়তে পারে আবার সুস্বাদু রান্নাও হতে পারে।আর যেসব উদীয়মানেরা পাতার পর পাতা লিখে যান তাদের হররোজকার বৈঠক,পানমশলা, গাঁজায় দম দেওয়া, স্নায়ুর টান এবং ভাবেন এতে করে তারা রেনেসাঁ এবার একটা বাংলার বুকে ঘটিয়েই ছাড়বেন (বা তাদের মহামূল্যবান গ্রন্থটি বেস্টসেলার হবেই) তাদেরকে আসলে দিন শিষে কিছুই বলতে হবে না।পাঠকশ্রেণীর আচরণই তাদের প্রত্যেকের অবস্থান চোখে অঙ্গুলি দিয়ে দেখিয়ে দিবে।তাদেরকে ছাড়া তো কাব্য দেবীও পঙ্গু ।