আজ থেকে বছর পাঁচ আগের কথা বলছি , তখন
আমার কাছে শনি বার , রবি বার বেশ আনন্দের ।
অফিস ছুটি মানে স্কুল জীবনের সেই শনি বার , রবি বার ।
তবে স্কুল জীবনে ছুটির দিন গুলো খেলা-ধুলার মধ্যেই সময় কাটতো , আর এখন অর্থাৎ চাকরি জীবনে সময় কাটে বারান্দায় পায়চারী করে , রোজকার পেপার ,আর পুরানো পেপার পড়ে ।
আরো একটু বলি ,সেটা হলো নতুন পুরানো মিলে
পেপারের কিছু অংশ কাঁচি দিয়ে কেটে জমা করা ।
তখন সকাল নটা হবে বোধহয় ,সবে পেপার নিয়ে পড়তে বসেছি । এমন সময় এক ভদ্রলোক সাইকেল থেকে নামলো আমার বাড়ির কাছে , নেমে এদিক ওদিক গাছের দিকে তাকাতে লাগলো , আমিও বারান্দা থেকে নেমে পড়লাম , এগিয়ে এলাম লোকটার ধারে । পরনে লুঙ্গি আর গায়ে গেঞ্জি সাটা , আগোছালো ভাবে বড়ো বড়ো
দাঁড়ি ।
লোকটা ততক্ষনে মুখে নানান রকম সিস দিতে লাগলো , আবার মুখে " আয় , মিঠু আয় - - - মিঠু আয় - - - রাগ করিস না , আর এ রকম হবে না , ইত্যাদি ।"
আমি বললাম - কি হয়েছে , দাদা ?
প্রত্যুত্তরে ,আমার টিয়া পাখি টা উড়ে এসছে , ওর ডাক নাম মিঠু , সকালে বিস্কুট - চা দিতে দেরী হয়েছে , তাই রাগ করে উড়ে এসছে । কতো ডাকছি শুনছেই না ! উড়ে আর যাবি কোথায় ?
দুপুরে ছোলা , পেয়ারা খাবি না ! তখন দেখবো ,
রাগ কোথায় যায় , এরে বলে আফিং এর নেশা !
আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না ,দুপুরে খাওয়া র সাথে আফিং এর কি সম্পর্ক ? আরো একটু খোলস হওয়ার জন্য আবার জিজ্ঞাসা করলাম ।
এবার একটু থেমে থেমে উত্তর দিলো , বললো-
সকালে মিঠু যে চা-বিস্কুট খায় তাতে এক সর্ষে
পরিমান আফিং মেশানো থাকে , ওটাই ওর নেশা ,
সেই রকম দুপুরেও তাই করি , এই ভাবে ওকে পুষে
রাখি । ও খাঁচায় বেশি টাইম থাকে না , বাইরে উঠোনেই ঘুরে বেড়ায় , কখনো আমের ডালে , পেয়ারার ডালে বসে থাকে , ডাকলেই আবার চলে
আসে । আফিং এর নেশা মস্ত বড় নেশা ।
আমি বললাম , এটা তো ঠিক নয় , বনের পাখি কে
পোষ মানতে আফিং - - -
কথাটা আর শেষ করতে পারলাম না , আস্তে গুটি গুটি পায়ে সাইকেল নিয়ে হাঁটা দিলো ।
আমরা তো জানি , সেই সুন্ধর কবিতার লাইন -
" বন্যেরা বনে সুন্ধর , শিশুরা মাতৃ ক্রোড়ে "
কিন্তু এ কি ঘটনা , এই রকম কত শত ঘরে এই ভাবে বা আরো কোনো ভয়ানক ভাবে পাখিকে পোষ মানাতে বাধ্য করছে !
প্রতিটি দেশে পাখি কমতে আরম্ব করেছে , পরিবেশ অনুযায়ী তাঁদের পক্ষে অনুকূল
অবস্থা নেই ,বছর দু-তিন আগেও সাঁতরাগাছি ঝিলে যে পরিমান হাঁস পাখি আসতো ,ইদানিং সে রকম হাঁস পাখি আর আসছে না । গ্রামে চারিদিকে গাছ কাঁটা পড়ছে , জলাশয় বুজিয়ে দেওয়া হচ্ছে ,
শহরে ও তাই , ফলের গাছও তেমন ভাবে লাগানো
হচ্ছে না । অনেক পাখি আছে , তাঁদের কাছে ফল ই প্রধান ।
কিন্তু এ কথাও বলবো , বন উৎসব বা অরণ্য সপ্তাহ
এ ছাড়াও অনেক উৎসব কে কেন্দ্র করে চারা গাছ
বিলি করা হয় । বলা হয় , বেশি বেশি গাছ লাগান ।
একটি গাছ , একটি প্রাণ । সচেতনার প্রাধ্যানে আমরা আজ বেশির ভাগ লোক জেনে ফেলেছি ।
আমাদের মধ্যমগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি এ বিষয়ে
অগ্রণী বলা চলে , নেতাজী সুভাষ ময়দানে সাত দিন ধরে মেলা আয়োজন করে , বিভিন্ন ধরণের
গাছ , তার গুনাগুন এবং পরিবেশে তার কি এফেক্ট
পড়ে তা যাঁরা পরিবেশ মেলায় ঘুরতে আসে তাঁদের
কাছে তুলে ধরা হয় ।
আসলে বিশ্ব পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে গাছ বা বনাঞ্চল এক বিরাট ভূমিকা পালন করে ।
আমার ক্ষুদ্র ধারনায় , এটা বার বার মনে হয় যে জলাশয় , গাছ-গাছালি , এবং প্রকৃতির অনুকূল
পরিবেশ পেলে আমাদের পক্ষী কুল ভালো ভাবে
বৃদ্ধি পাবে ।
অনেক পাখি আছে যাঁরা জলাশয় নির্ভর করে বাঁচে ।
যেমন হাঁস পাখি বা বালি হাঁস , পাতি হাঁস ,রাজ হাঁস , মাছ রাঙা , পান কৌড়ি ,কুঁচে বক আরো অনেক রকম
জীব ।
একটু ভেবে দেখুন , যে পাখি গুলি হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে বিদেশের বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের দেশের বিভিন্ন জলাশয়ে আসছে , তাদের যদি আমরা রক্ষা করতে না পারি , সেটা তো আমাদেরই অক্ষমতা ।
এর মধ্যে উপদ্রপ আছে চোরা শিকারির , বিভিন্ন বড় বড় জলাশয়ে জাল পেতে বা অন্য কোনো
পন্থা অবলম্বন করে মারা হচ্ছে সেই সব পাখিদের ,
যাঁরা প্রতি বৎসর দল বেঁধে সূদুর সাইবেরিয়ার থেকে আমাদের বিভিন্ন জলাশয়ে আশ্রয় নিচ্ছে ।
পরিশেষে বলি , আমরা আপননারা সবাই মিলে
অঙ্গীকারবদ্ধ হই যে , আমরা আমাদের যথাসাধ্য
চেষ্টার মাধ্যমে পক্ষীকুল কে রক্ষার চেষ্টা করবো ।
অমানবিক ভাবে পাখিকে নেশার খাবার খায়িয়ে , অন্যায় ভাবে পাখি শিকার করার হাত থেকে রক্ষা করবো ।
সুতরাং পাখি শুট মোটেই নয় , তবে মোবাইল বা ফটো শুট করা যেতে পারে , তবে ওঁদের বিগ্ন ঘটিয়ে নয় । মুক্ত বিহঙ্গ মুক্তই থাক ।
(টিয়া পাখিটার নাম মিঠু ।। আশীষ কুমার বিশ্বাস)