ধূসর ধুলোটে প্রান্তরে, স্বপ্ন ভাসে পূরবী রাগে বোনা ঘুড়ির মত।
শত কবিরের দোঁহায় লেগে থাকে রক্তের দাগ, কালো ছাপ, যন্ত্রনার ইতিহাসে,
অনসূয়া কাব্য আর উলঙ্গ ভারতবর্ষ এঁকে দেয় ভোট ছাপ, অদুগ্ধ আপীনে ফুটে ওঠে নিনরণী ক্ষত।
আমার আস্যে তিতিক্ষা লিখে যায় উষর উর্বিধরের নোনাস্রাব, অনামিকায় ইস্তেহারি আঁশে।
আমার কলম আঁচড়ায় আধ্যাত্মিক শব্দের খোঁজ, আমায় চমকে দিয়ে ডেকে ওঠে উন্নিদ্র ৭১ এর রাত।
আমার লেখনীর ডগায় ভিড় করে চোল, ভিল, মুন্ডারা, মিছিলে হাঁটে মেহেদী হাসান, মান্টো, গালিবের দল,
কাশ্মীরি পণ্ডিত ও ইউক্রেনিয়ান তরুণী, উদ্বায়ী প্রেমের নোনা শ্রমে ব্যারিকেড ভাঙে, রাখে ঠোঁটে ঠোঁট, হাতে হাত ।
৪৭ এর দাঙ্গায় জ্বলে যাওয়া দলিল বেঁচে ওঠে গোধরায়, ফলস এনকাউন্টার সাইরেন দামামা বাজায়, গেরিলা ছন্দে গর্জে ওঠে কাস্তে, টাঙ্গি, বল্লম আর দিগম্বরী ছায়ালোকে ভেসে যায় তেভাগার ফসল।
আমার সুরার গ্লাসে মেশে আফ্রিকান উপজাতির শিশ্নাগ্রের তীব্র বিষ, উর্ণনাভের ধমনী বেয়ে বয়ে চলা উদিত স্বেদ লেগে থাকে।
কবিতার ছন্দহীনতায় কিংবা বানান ভুলে ঠেসে ধরে, আফগানিস্তানে বোমার আঘাতে ধ্বস্ত “ইকা নাগিবা” র শব,
ফুটপাতের বৃক্ষ ছেদন কেড়েছে মৌটুসী, ফিঙে, বুলবুলির নিশ্চিন্ত আশ্রয়, তবু স্বপ্ন মেশে সায়ানাইট অমৃতেরই বাঁকে।
শিখ দাঙ্গায় জ্বলন্ত চিতা আর খানসেনার হাতে ধর্ষিতা রমণীর গর্ভে যুদ্ধে র পারিজাত তোলে অত্যয়ী নিষ্কল রব।
ভিয়েতনামের বিপ্লবী উমেদ মুছে যায় সদ্যঃপাতি চৈনিক আগ্রাসনে।
জমির পর জমি দখল, সীমান্তে শুয়ে থাকে, বরফ ঢাকা ভারতীয় জওয়ানের লাশ,
আমার পাকস্থলী, ফুসফুস ঢেকে যায় নাগরিক মিছিলের উন্মত্ত জনতার রোষে, নিযুত বিপ্লব জমা হয় বিবস্ত্র ভিখারিনীর উরোজে ও আপীনে।
নন্দীগ্রাম কিংবা বগটুই এর “মা” জ্বলন্ত শরীরে ধরা দেয়, রাজনীতির শিমূল শিউলির যোনিদেশে, বিটপীর সঘন লেহনে ভিজে যায় চারিপাশ।
আমার দেশে চৈতি চাঁদের জ্যোৎস্নায় গুলমার্গ খেলা করে, এলাহী ঈদ রমজানী সংযমে দাঁড়ি টানে।
ফজরের নামাজ সুন্নতী নেক্সাস বয়ে আনে, ভাষার বদ্বীপ রচিত হয় দ্বন্ধমূলক বস্তুবাদী তত্ত্বে,
তবু কেন পুলওয়ামায় বীর শহীদের রক্ত ঝরে? ভাষার নামে জেনোসাইড, মানুষ পোড়া গন্ধই কি বয়ে আনে?
গিরিশের অনুবাদে সিঁদুরী কোরান আর হবে না কনফেশনেরই দিনকাল, উষ্ণ আগুনে ইওসিনোফিল আহুতি দেব না আর, কোন পলিগট কবিত্বের শর্তে।
আর কতকাল অপেক্ষার পর যুদ্ধ থেমে যাবে? কত শয্যা পরে নেমে আসবে নির্বাত শান্তি?
আর কত ধূলিকণা মেঘ হলে বৃষ্টি হবে? কত পুরন্ধ্রি দময়ন্তীর আম্রপালি হওয়া বাকি?
কতদিন আর হাল্লা-শুন্ডীর আকাশ জুড়ে লেখা হবে খাদ্যের সন্ধান? অধ্রুব শোনিত ধারায় মুছে যাবে ক্লেদাক্ত মেদিনীর ক্লান্তি।
এবার তবে প্রৌঢ় পৃথিবীর বুকে মালশ্রী বৃষ্টি হোক, মানবতা হোক অজাতশত্রু, নর্দমার শিরা বেয়ে নেমে আসা নর্মদার ধারায় কস্তূরী আবার কর্দম হয় নাকি?