হটাৎ এলো বৃষ্টি ।। আখতারুল ইসলাম খোন্দকার

 

    আজকে বাড়ি থেকে বের হতেই মন চাইছিলনা। ইচ্ছে ছিল সারাটা দিন বাসায় বসে বসে অতীত স্মৃতি মন্থরে ব্যস্ত থাকবো। অনেকে বিভিন্ন উৎসব পালন করে থাকলেও আমার টা ভিন্ন রকমের। কারো জন্মবার্ষিকী, মৃত্যবার্ষিকী কিম্বা বিবাহবার্ষিকী হয় কিন্তু আমার জন্য বিরহ বার্ষিকী। তাই এই দিন টা একান্তই নিজের মতো করে কাটাই। কিন্তু সেই সুজোগ কোন ভাবেই কাজে লাগানোর ফুরসৎ পেলামনা রহমান ভাইয়ের জন্য। ভোর থেকে ফোন দিয়ে জ্বালিয়ে মারলো দেখা করার জন্য কি এক জরুরী কথা আছে। সারা রাতের আয়েশের ঘুম হয় ভোরে অথচ সেই ঘুমকে হারাম করে উঠতে হবে।   এমনিতেই  অনেক দেরি করে ঘুমিয়েছি।

     মনের মধ্যে জেগে থাকা অতৃপ্ত ভালবাসা আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। কেন যে বোকার মতো বৃষ্টিকে মন থেকে মুছে ফেলতে পারিনা। সে তো দিব্যি ওর স্বামীর সংসারে সুখেই দিন কাটাচ্ছে। তবে আমার মনে অহেতুক কষ্ট পুষে রাখার মানে হয়না। যদিও ওর সেরকম দোষ ছিলনা। সে বার বার আমাকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিত, এমনকি বিয়ের আগের রাতে আমাকে নিয়ে পালিয়ে যাবে বলে সব ছেড়ে ছুড়ে চলেও এসেছিল। কিন্তু আমি তাকে ধরে রাখতে পারিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। যদিওবা তেমন বেশী কিছু তার প্রত্যাশা ছিলনা। তারপরও তখন আমি একেবারেই বেকার অবস্থায় কোন আয় রোজগার ছিলনা, পালিয়ে বিয়ে করে কোথায় রাখবো কি খাওয়াবো? বৃষ্টি আমাকে অনেক অনুরোধ করেছিলো আমি তা প্রত্যাখ্যান করে পাঠিয়ে দিয়েছি। যাবার সময় আমাকে বলেছিল, " দেখবে, সারাজীবন তুমি আমার জন্য কষ্ট পাবে। " সত্যিই মেয়েটার কথার দম ছিল বলতে হয়। ওর বিয়ের পাঁচ বছর পার হলো তবু বিন্দুমাত্র ভুলতে পারিনি আর পারবো না এ জীবনে। নিজে বিয়েটাও করলাম না ওর স্মৃতি আঁকড়ে ধরে রয়েছি। আর অন্য কোন মেয়ে আমার মনে আসন গাঁঢ়তে সক্ষম হয়নি। কাউকে মনে ধরলে হয়তোবা কোন চিন্তা ভাবনা করা যেত। তবে সে রকম মিষ্টি মনের কারো সাথে সম্পর্ক স্থাপনের অবকাশ পেলে মন্দ হতো না বৈকি। আর নরম উষ্ণ স্পর্শের ছোঁয়া পেতে কার না ভাল লাগে?

        সকাল থেকেই মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে। আকাশ ভেঙে অঝর ধারায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে তো থামবার নামমাত্র নেই। দৌড়ে গিয়ে কোনমতে ঠাঁই নেয়া একটা দোকানে দাঁড়িয়েছি কিন্তু ফূটো টিনের চালে পানি রোধ হচ্ছেনা। এদিকে ঝড়ো বৃষ্টির ঝাপটায় নিজেকে শুকনো রাখার উপায় নেই। শরীরের অধিকাংশই ভিজে গেছে। এমনিতেই শীত তার উপরে ভেজা পোষাকে অস্বস্তি লাগছে। পেছন দিকে যে আর একটু সরে দাঁড়াবো সেই সৌভাগ্যটাও হচ্ছেনা, পাশেই গা ঘেঁষে একটি মেয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁতে দাঁত লাগিয়ে কাঠঠোকরার শব্দে করে কাঁপছে। আঁড়িভাবে চেয়ে দেখি, অসম্ভব সুন্দরী ও বেশ লম্বা যেন সদ্য বেড়ে উঠা লকলকে লাউ গাছের ডগা। কঁচি শোসার মতো টসটসে অপরুপ সৌন্দর্যের কারুকার্যে গড়া দেহখানি মনে হয় আমাকে আলগুছিয়ে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে। শরীরে লেপটানো ভেজা কাঁপুড়ে অদ্ভুত লোভনীয় আকর্ষণ যেন চোখ ফেরানো দুস্কর। দুরুদুরু কাঁপা লিপস্টিক লাগানো ঠোঁটের ফাঁকে পানির আছড়ে পড়া ফোটা আনন্দে নাচানাচি করছে। মৌচাকে নাড়া দিলে যেভাবে টপটপিয়ে মধু ঝরে ঠিক তেমনি তার ঠোঁট বেয়ে নির্গত হচ্ছে হীরার মতো চকচকে গাঁঢ় টাটকা রস। ইচ্ছে করছিলো ওগুলোর ফোঁটা মাটিতে পড়ার আগেই পরম অমৃত আয়েশে চেটেপুটে খেয়ে ফেলি। এমন এক চঞ্চলতা দোলা দিয়ে চরম উন্মাদনায় নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি অজানা স্বপ্নের করিডরে। কখন বৃষ্টি থেমে গেছে টের পাইনি। মেয়েটিও হটাৎ কোথায় উধাও হয়ে গেল এদিক ওদিক কোন খোঁজ পেলামনা।




আখতারুল ইসলাম খোন্দকার

গ্রামঃ- বিদির পুর

পোস্ট অফিসঃ- বসন্ত কেদার

উপজেলাঃ- মোহন পুর

জেলা- রাজশাহী -৬২১০

বাংলাদেশ।

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।