প্রত্ন, পরিব্রাজক ও অন্যান্য কবিতা ।। রজব বকশী

 


প্রত্ন

দূরে আছো সেই ভালো নীরবতা প্রত্ন হয়ে গেছে

ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সময়ের ঢেউ 
মনমাটির গভীরে পুরাকীর্তি ধ্যানমগ্ন ঋষি 
হাওয়ায় নাশপাতি মদিরার ঘ্রাণ 
মদিরাক্ষীর ঘুঙুরধ্বনি শোনা যায়

অনুভবের দেয়ালে মৃগশিঙ চাঁদ হয়ে ওঠে 
হঠাৎ অজিন থেকে ডোরাকাটা আলো উঁকি দেয় 

প্রত্নতাত্ত্বিক মনন থেকে উঠে আসে হিম হাতিধ্বনি হ্রেষা 
স্তব্ধ অস্ত্র জীর্ণ কৌটা কলসি তৈজসপত্র হুক ঈষ হুঁকা 
জং ধরা সিন্দুকের মৌন হাহাকার 

ওই শোনো দীর্ঘশ্বাসে কার যেন বাঁশি বলে ওঠে 
হৃদয় মিউজিয়ামে কাঁটার লতায় হাসে প্রফুল্ল সময় 


পথ চলতে

পথ চলতে অনেক কিছু শোনা যায় 
স্পষ্ট অথবা অস্পষ্ট 

সবকিছুই বোধের নাগালে আসে না
কাঠ কোড়ালি পাখির মত দুর্বোধ্য খোদাই করি দিনরাত

আজকাল পাথরের সাথে কথা বলি
হাপিত্যেশ থেকে ঝর্ণাতল খুব বেশি দূরে নয়

যত অশ্লীল বিকৃত ভাষ্য ফণাধর 
অবোধ্য আঁধার আস্তাকুঁড়ে পড়ে থাকে এলোমেলো 

প্রতিটি ভোরের বুকে শুয়ে থাকে রাত
 শিশির ফোঁটায় প্রত্ম ফসিল আয়না উঁকি দেয় 

দেখি দুর্বোধ্য সময় দংশন করে
তবু দুহাত বাড়িয়ে ডাকি এসো বোধ্য হয়ে উঠি 



পরিণাম

প্রতিদিন একটু একটু করে
তুমি তোমার কবর খুঁড়ে যাচ্ছো

সবুজপাতা বিবর্ণ হয়ে ঝরে পড়ে
সময়ে দেখতে পাচ্ছো?

দুচোখ সাহারা অথবা আকাশ হলে টের পাও
তোমার হাতের কাছে ধূলির সংসার

অথচ বাউল মনে একা হেঁটে যাও
নীরবে ঝিনুক বয়ে বেড়াও  মুক্তোর অপার বেদনাভার

অনুভূতির দরজা খুলতেই বলে ওঠে আলোকিত ঢেউ
মানুষকে ভালোবেসে মানুষের বুকে ঠাঁই পায় কেউ কেউ


পরিতাপ

বিস্তৃত আয়না দাঁড়ে সময়ের ঢেউ 

আকাশ দেখিয়ে দেয় রোদ জোছনায়

চারদিকে অন্ধমোহ মেঘ কুয়াশার ফণাধর ফুঁসে ওঠে 

প্রফুল্ল সময় সীমালঙ্ঘনের থাবায় তৎপর 

অথচ দুঃখের দিন রেললাইনের কথা বলে

সময় ঘোড়ায় চড়ে সঙ্গে চাবুক লাগাম আর সমাদর

রক্তাক্ত হৃদয় নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে অসহায় জনক জননী

নির্লজ্জ কুকুর এই সময়ের চোখে উঁকি দেয়

তবু প্রণয় বিছিয়ে জেগে আছি ভবে অনুভবে 


পরিব্রাজক

ঘুম ও জাগরণের মাঝখানে মৈত্রীসেতু আছে 
বহমান সময়কে প্রস্ফুটিত করে

ফুল কাঁটায় জড়িয়ে ছায়াবাজি জীবনের ঢেউ 
অতীত পিছনে ডাকে আর বর্তমান পায়ে পায়ে
বিশ্বস্ত স্বপ্নের হাত ধরে হাঁটে যতক্ষণ শ্বাস 

সঙ্গী আলোর দুচোখ মেলে জেগে থাকি
দেখি চারদিকে অন্ধকার ফণাধর ফুঁসে ওঠে 

যদিও ভুলের উর্ধে ছিলাম না কোনদিন কেউ 
তবু নির্ভুল পথের দিকে 
ভ্রামণিক মন ছুটে চলে অবিরাম 

-------------
রজব বকশীর পরিচিতি 
জন্ম: ১ অক্টোবর ১৯৬৫,  বকশীগঞ্জ, জামালপুর। 
পেশা:শিক্ষকতা 
ছড়ার বই ১টি: ডুমুর ফুলের মউ।
কবিতার বই ৪ টি: ধূসর এলবাম,উদ্ধত আঁধার, যে হাতে পায়রা ওড়ে ও সেইসব দরজা জানালা জেগে ওঠে। 
মুক্তিযুদ্ধ,ইতিহাস ঐতিহ্য ও লোকসংস্কৃতির উপর গবেষণাগ্রন্থ ২টি : জামালপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও জামালপুর জেলার ইতিহাস। 
সম্পাদক : আরশি 
গীতিকার : বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন।

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।