চিঠি দিও প্রতিদিন।। এস এম নওশের

 

আজ তোমার চিঠি
যদি না পেলাম হায়
আমি ভেবে নেবো
ডাক পিওনের অসুখ হয়েছে।
এক সময়  আশীর দশকে খুব জনপ্রিয় ছিল এই গান টি।এই গান টি তে কিন্তু গায়কের ব্যাক্তিগত জীবনের আবেগ জড়িয়ে ছিল যা উনি সাক্ষাতকারে বলেছিলেন।উনি যার সাথে প্রেম করতেন তিনি থাকতেন অনেক দূরে।সেই আসামে।একবার হল কি আসামের ডাক বিভাগে ধর্মঘট। টানা তিন মাস চিঠি পত্র আসা বন্ধ।সেই সময়ে তার যে কস্ট অস্থিরতা সেটাই এই গানের মুল স্পিরিট ছিল।

আসলে একটা সময় তো ছিল চিঠি পত্রের যুগ।ডাক বিভাগের লোকদের দিন রাত কর্ম ব্যস্ততা। সারা দেশ থেকে সবাই চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ করছে সবার সাথে।অসংখ্য চিঠি প্রতিদিন ডাকঘর গুলাতে জমা হত।সেই চিঠি গুলো বাছাই হয়ে তার পর যেত ডাক পিওনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি বিলি হতে।যারা দুরের ডাক পৌছাত তাদের বলা হত মেল রানার।তাদের হাতে থাকত লাঠি তার সাথে ঘন্টা লাগানো থাকত।যাতে তারা ছুটে চলার সময় টুং টুং করে বাজতে থাকত।পিঠে থাকত তার মেল ব্যাগ। তারা ঠিক মত ডিউটি করছে কিনা সেটা দেখার জন্য নিয়োজিত থাকত ওভারসিয়ার।
তাইতো এদের নিয়ে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় গেয়েছিলেন তার বিখ্যাত গান "রানার"'

রানার চলছে তাই ঝুম ঝুম ঘন্টা বাজছে রাতে
রানার ছুটেছে খবরের বোঝা হাতে
রানার রানার চলেছে রানার
রাত্রির পথে পথে চলে
কোন নিষেধ জানেনা মানার

 এক মেল রানারের সততা আর নিসঠা নিয়ে তারা শংকর বন্দোপাধ্যায় এর খুব বিখ্যাত একটা ছোট গল্প হল ডাক হরকরা।
এটা এক সময় আমাদের দেশে পাঠ্য ও ছিল।পরীক্ষায় আসত  দীনু পালিতের চরিত্র বর্ননা কর।

সারা দেশের গোটা যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল এক সময় এদের উপরেই নির্ভরশীল ছিল।
বৃটিশ আমলে দ্রুত ডাক পৌছানোর  জন্যেই চালু করা হয় দ্রুত গামি ট্রেন যাকে বলা হত মেইল ট্রেন।এখনো অনেক ট্রেনের নামের সাথে মেল লেখা থাকে যেমন চট্টগ্রাম মেইল, রকেট মেইল।এই ট্রেন গুলাতে  লাল রং এর আলাদা বগি জোড়া হত শুধু ডাকের বস্তা নেবার জন্য।

এখন  সবার হাতে হাতেই মুঠো ফোন।ফলে  চিঠি আর লেখা হয়না। এখনকার প্রজন্ম বোধ হয় জানেও না চিঠি কি করে লিখতে হয়।এর জায়গা নিয়েছে এস এম এস আর ই মেইল।বিশ্বের যে কোন প্রান্তে মুহুর্তে চলে যাচ্ছে আপনার বার্তা। সেদিন আর বেশি দূরে না যেদিন এই ডাক বাক্স গুলোর স্থান হবে যাদু ঘরে।

আফসোস এখন আর কেউ কাউকে চিঠি লিখবেনা। এখন আর কেউ গাইবেনা 

চিঠি দিও প্রতিদিন 
চিঠি দিও

এর বদলে গাইতে পারে-

এস এম এস করো প্রতিদিন
তোমার ই মেইল যেন পাই নিত্যদিন



 

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post