ইয়া দেবী সর্বভূতেসু মাতৃরূপেনু সংস্থিতা
নমঃতস্মই নমঃতস্মই নমঃতস্মই নমঃ নমহঃ....
মুখুজ্জে পন্ডিত মাতৃশ্লোক আওড়ান পদ্যে
অষ্টমীর অঞ্জলি দিবি একশত আট নীল পদ্মে।
বিধান দিতে দিতে সপ্তমীর সনাতনী আবাহন সুরে
অবাক বিষ্ময় চোখে ছোট্ট রাশি বাবার হাত ধরে
শিমুল নদীর পাড়ে নাটমন্দিরে বসে
কৃতান্ত দলনীর ত্রিশূল বিদ্ধ মোষে
ঝাঁঝ ঘন্টা আর অনিন্দ্য ঢাককাঠির বোলে
আনন্দে শান্তিতে পুজোর গন্ধে চামর দোলে
আকাশ কাঁপিয়ে দৃপ্ত ঘোষনায় পাঞ্চজন্য প্রানপনে
সত্যানন্দাস্বরূপিনী দেবী তুষ্ট হন সাত্বিক অঞ্জলির ক্ষনে।
রামধনু আঁকা বেলুন আর জিলিপির রসালো প্যাঁচে
শৈশব আনন্দে বাড়ির পথে ছন্দলীন পা দুটি নাচে
শিশির ভেজা স্নিগ্ধ শিউলী আর বিবাগী বিলাসী কাশে
মো মো গন্ধে সুশীল বাঙালিয়ানায় বাতাস ভাসে
রোদ আর জলে ভিজে সে যেন ভ্রমণ বিলাসী মোহনবাঁশী
কোথায় চললি রে রাশি
বাবা, আমি একটু ওদের সাথে ঘুরে আসি
বেশি দূর যাবে না রাশি।
মুক্তির আনন্দে অনুসন্ধিৎসু চঞ্চল প্রান
ভুলেছি সব নিষেধ, বাধা আর চার দেওেয়ালের পিছুটান
পেরিয়ে সব গল্পবুড়োর ভয়ের চৌকাঠ
শৈশব করল জয় ঐ শিমুল ডাঙার মাঠ
হি হি হো হো সারাটা খেয়ালী দুপুর
দূর থেকে শোনা যায় রাঙা বাউলের উদাসী সুর
ভুলুয়ার চুরি করে আনা পেয়ারায় কামড় দিয়ে
পারি, তুই যাবি আমায় নিয়ে
ঐ যে দূরে শিমুলের পদ্মবনে
মুখুজ্জে পন্ডিত বলে পদ্ম লাগে আদ্যাদেবীর আবাহনে।
সে তো অনেকটা পথ
তাই আমার যে নেই মত।
অনেক আগেই বন্ধুরা সব ফিরেছে ঘরে
কোন সে অমোঘ ঘোরে
রাশি চলে শিমুলের পদ্মবনে একা
একশত আট পদ্মে হবে পিনাকধারিনী দেবীকে ডাকা।
অষ্টমী আর নবমী জুড়ে মেয়েটাকে খুঁজেছে সবাই
নাটমন্দির... শিমুলডাঙা.. কোথাও যে সে নাই
বিজয়া রঙ ফিকে হল অবশেষে
শিবু আর মানুষগুলোর দীর্ঘশ্বাসে
একাদশীর থমথমে বিষাদী ভোরে
মালা ফুল কুড়ানো ছেলেটি কড়ানাড়ে জোরে...
মিলেছে রাশির দেখা
শিমুলের পদ্মবনে ভাসে একা!
ভুলে গিয়ে ফিকে কাশ আর নীলাকাশে গ্রাম দেয় ছুট উর্ধশ্বাসে
দেখে উৎসব শেষে প্রানহীন দেবী কাঠামোও ভেসে তার পাশে
অবশেষে ফ্যাকাসে নিথর কনকাঞ্জলির রাশিকে নিয়ে কোলে
শোকাহত শিবু বুকে পাথর রেখে বলে,
একশত আটটিতে করালী মৃন্ময়ীর আগমনে
আমার ফুটফুটের চিন্ময়ীর শরীর গেল বির্সজনে!
কবি পরিচিতি:
কবি সবুজ জানার জন্ম পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায় ১৮ই জানুয়ারি, ১৯৭৭। স্কুল ও কলেজের পত্রিকার লেখার মধ্য দিয়ে লেখার হাতে খড়ি। বর্তমানে লেখা লেখির পাশাপাশি সমাজ সেবা মূলক কাজে যুক্ত থাকতে ভালোবাসেন। কবির লেখা এখন বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত। আগামীতে কবি আরও বেশী করে সাহিত্য সাধনায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চান।