নিলার ঈদ ।। নুরজাহান পারভীন



আমার নাম নিলা। এবার প্রথম শ্রেণীতে উঠেছি। পড়ালেখার সব সময় খুব চাপ থাকে কারণ বছরে তিনবার পরীক্ষা হয়। সেই পরীক্ষাগুলোতে সবসময় আমাকে প্রথমই হতে হয়। আমার ভাই বোন বলতে কেউ নেই তাই বাসায় সবসময় আমি একাই থাকি। বাবার অফিসের ফ্ল্যাটে ৪ নাম্বার রুমে আমি মা ও বাবা থাকি।আমার মা-বাবা খুবই রাগী,একটুতেই বকাঝকা করে।আমাদের রুমের সামনেই রুমেই  আমার চাচা থাকে। আমার চাচার দুই ছেলে মেয়ে যাদের নাম নিহান আর নুর। নুর আমার বয়সী। কিন্তু আমি নূরের সাথে মিশতে পারি না কারণ আমার মা আমাকে মিশতে দেয় না,চাচাদের ঘরে যাইতে দেয় না এমনকি তাদের সাথে কথাও বলতে দেয় না। শুধু কি তাই আমার বয়সে ছেলেমেয়েরা কত খেলাধুলা করে তারা আমাকে খেলার জন্য  ডাক দেয়  কিন্তু আমি মা-বাবার জন্য যেতেও  পারি না।আমি যেহেতু সবসময় একা একা থাকি তাই আমার বাবা আমাকে ফোন কিনে দিয়েছে যাতে আমি সময় কাটাতে পারি।আমি তাই করিও কিন্তু সবসময় কি ফোন চালাতে ভালো লাগে! আমি একটা সময় ফোন চালাতে চাইতে বিরক্ত হয়ে যাই।যখন এমনটা হয় তখন আমি মায়ের কাছে যাই এবং মাকে বলি, "মা, তুমি আমার সাথে খেলা করবে আমার না ভালো লাগছে না।" "কিন্তু মা সচরাচর এটাই বলে, মা মণি, আমি বিজি আছি যাও গিয়ে অন্য কিছু কর,ড্রয়িং করো,তোমার বাবা কতগুলো টয় কিনে দিয়েছে সেগুলো নিয়ে খেলো বা ইউটিউবে ভিডিও দেখো।" তখন আমি বলতে থাকি,"কিন্তু মা, আমিতো সবই করেছি আমার আর ভালো লাগছে না তুমি আসনা মা প্লিজ। " কিন্তু বেশি সময় লাগে না তাতেই মা রেগে যায় আর বলতে শুরু করে,"তোমার হোমওয়ার্ক হয়েছে? সারাদিন খেলাধুলা ছাড়া আর কিছুই বোঝনা!" "যেহেতু আমি আমার হোমওয়ার্ক শেষ না করে কোন কিছু করি না তাই আমি বলতে থাকি,"আমি সব হোমওয়ার্ক করেছি মা,আসো না প্লিজ তুমি বসবে আর আমি তোমাকে রান্না করে খাওয়াবো।" "তোমার রান্না খেতে গেলে আমার কোন কাজ হবে না ঠিক আছে। " "কিন্তু মা.." "কোন কিন্তু না, কোন কাজ না থাকলে যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। আমাকে আর জ্বালিও না,আমার অনেক কাজ পড়ে আছে।"এসবের পর আমি মাকে আর জোর করি না কারণ জোর করলে মা বাবাকে কল দিবে আর বাবা এসে আমাকে মারবে।এমনিভাবেই আমার দিনগুলো যায়।আমি শুধু চুপি চুপি কান্না করি আর ভাবি সবার বাবা-মায় কি এমন হয়! না, শুধু আমারই।আমিতো আমার বাবা-মাকে কত তো ভালোবাসি তাহলে ওরা কেন আমার সাথে এমন করে! তাহলে কি ওরা আমাকে ভালোবাসে না নাকি আমিই পচা মেয়ে? কিন্তু  স্কুলে তো আমার অনেক বন্ধু বান্ধবী আছে যারা আমার চাইতে অনেক বেশি দুষ্টু, আমি তো তাদের মতো দুষ্টামি করি না আর করলেও কার সাথে বা করবো আমার তো কোন ভাই-বোনই নাই।আজকে ঈদের দিন,  দীর্ঘ এক মাস রোজা শেষে ঈদ এসে পাড়ি দিয়েছে। এজন্য আমার বাবা-মা কাজে খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।আমার মা আমাকে গোসল করিয়ে নতুন জামা পরিয়ে দিয়েছে।জামা পড়ানোর পর আমাকে দেখে আমার মা বলতে লাগলো,"মাশাআল্লাহ,আমার প্রিন্সেসকে কারো নজর না লাগুক।"মায়ের কথা শুনে আয়নায় নিজেকে একটু দেখে নিলাম আসলেই একটা ছোট প্রিন্সেস এর মত লাগছে।মায়ের মন ভালো দেখে আর আজকে ঈদ বলে একটু সাহস করে বললাম, "মা, একটু চাচিমার ঘরে যাই সেখানে সবাইকে ঈদ মোবারক জানিয়েই চলে আসব।"মূলত আমার প্ল্যান ছিল ঈদ মোবারক এর কথা বলে চাচিমার ঘরে যাব সবার কাছ থেকে সালামি নিব আর নুরের সাথে খেলা করব। কিন্তু মা আমার আশা সম্পূর্ণ ভেঙে দিয়ে আমাকে জানিয়ে দিল যে আমার কোথাও যাওয়া হবে না বিশেষ করে চাচিমার ঘরে।জানিনা এমনকি ঘটেছিল মা আর চাচিমার মধ্যে যে মা আমাকে চাচিমার ঘরে যেতে দেয় না, বাহিরে কোথাও দেখা হলে কথাও বলতে দেয় না  এমনকি রুম থেকে বের হওয়ার সময় অনেক সময় চাচিমার সঙ্গে দেখা হয় সেখানে চাচি মা আমাকে কেমন আছ জিজ্ঞেস করলেও আমি উত্তর দিতে পারি না মায়ের ভয়ে। কারণ মা আমাকে বলে দিয়েছে কড়া ভাবে চাচিমার কথার উত্তর না দিতে যদি দেই তবে মা বাবাকে বলে দিবে এবং বাবা আমাকে মারবে। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম আজকে তো ঈদের দিন তাই মা আমাকে কিছু বলবে না, চাচি মার ঘরেও যেতে দিবে।কিন্তু আজকে ঈদের দিনেও মা সাধারণ দিনগুলোর মত আমাকে নিষেধ করে দিল। অন্যদিন হলে আমি চুপ করে রুমের ভিতর ঢুকে যেতাম।কিন্তু আজকে ঈদের দিন বলে আমার আর সহ্য হলো না, মনে খুব কষ্ট পেলাম তাই মাকে আজ বলেই ফেললাম" আচ্ছা মা সবার জন্যই তো ঈদ আসে তবে আমার জন্য কেন নয়! "আমার এই উত্তর শুনে মা চমকে গেল আর আমাকে বলতে লাগলো, "তোমার এই রূপ কেন মনে হল?" যার উত্তরে আমি সাহস করে বললাম, "যদি তাই না হয় তবে তুমি কেন আমাকে যেতে দিচ্ছো না অন্যান্য দিনের মত আটকে রাখতে চাচ্ছো? " হয়তবা মা আমি এরূপ উত্তর দিব বলে ভাবতেও পারেনি তাই মা খুবই রেগে গেল আর বলতে লাগল,"তুমি খুব বেড়ে গেছ, মুখে মুখে কথা বলো, হুমম।থামো আমি এক্ষুনি তোমার বাবাকে কল দিচ্ছি তারপর বুঝবে ঠেলা। " মায়ের এই কথা শুনে আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম কারণ মা আমাকে শুধু বকাঝকাই করে কিন্তু বাবা অনেক বেশি পরিমাণে রাগী।বাবা রাগের মাথায় ছোট বড় কাউকেই চেনে না,হাতের কাছে যাই পায় তা দিয়ে মারা শুরু করে।আমি বাবার মার শুধুমাত্র একবারই খেয়েছিলাম আর তাতেই আমার হাত ভেঙ্গে গিয়েছিল তাই মা ভয় দেখালেও আসলে বাবাকে কিছু বলে না আমার কোন ক্ষতি হয়ে যাবে এই ভয়ে কারণ রাগের দরূণ বাবার মাথা ঠিক থাকে না। আর যদিও বলে এটাও বলে দেয় যেন সে আমাকে না মারে। কিন্তু বাবা না মারলেও বাবার বকাও পর্যন্ত আমার সহ্য হয় না আমি এতটাই কষ্ট পাই যে কাঁদতে কাঁদতে শ্বাস আটকে যায়।  তাই না চাইলেও মায়ের সব কথা শুনি যেন মা বাবাকে আমার নামে নালিশ না করে।কিন্তু মায়ের চোখে এবার বেশি পরিমাণ রাগের ঝলক দেখতে পারলাম বুঝতে আর বাকি রইল না যে এবার আমার সাথে খুব খারাপ একটা কিছু ঘটতে চলেছে।তাই আমি চুপসে গেলাম, কি করবো, কোথায় লুকাবো যেন বাবা আমার ছায়াও না দেখতে পারে।  এসব ভাবার মাঝেই শুনতে পেলাম মা বাবাকে কল করে বলছে, "তোমর মেয়ে খুব বেড়ে গেছে, মুখের উপর কথা বলাও শিখে গেছে। জানো আজকে কি বলছিল সবার জন্যই তো ঈদ আসে তবে তার জন্য কেন নয় ! সেটা আবার কেন বলেছে জানো তোমার ওই ভাইয়ের ঘরে যাইতে দেইনি বলে। " মা আরো কি যেন বলছিল বাবাকে শুধু এইটুকু শুনতে পেলাম  শোনো আজকে ঈদের দিনে বাইরে থেকে এসে কোন কাহিনী করো না শুধু ওকে এইটুকু বলে দিও ও যেন তোমার ভাইয়ের ঘরে না যেতে চায়।এই কথা বলে মা ফোনটা আমার হাতে ধরায় দিল আর বলল,"নেও কথা বলো তোমার বাবার সাথে।"ফোনটা ধরার শক্তি টাও পাচ্ছিলাম না আমি তবুও খুব কষ্টে ফোনটা হাতে ধরে হ্যালো বললাম। আমার ফোনটা ধরে হ্যালো বলার দেরি ছিল কিন্তু বাবার বকাঝকা করার কোন দেরি ছিলনা। আমার হ্যালো বলা শুনতেই বাবা বলা শুরু করল,"খুব বেড়ে গেছ না,মায়ের মুখের উপর তর্ক কর। ইস! কি কথা, সবার জন্য ঈদ আসে তবে তার জন্য কেন আসেনা!চাচি মার ঘরে যাব। চাচি মা কে যে তার ঘরে যেতেই হবে? কেন আমি নেই, তোমার মা নেই নাকি সবাই মরে গেছে তোমার জন্য শুধুমাত্র তোমার চাচি মাই বেঁচে আছে ?  এতই যখন দরদ আছে তোমার উপর তোমার চাচি মার তবে এখানে আছো কেন চলে যাও তোমার চাচি মার ঘরে একেবারেই জন্য।আচ্ছা সবই বুঝলাম তুমি তো এত রাগ শুনছো তোমার চাচি মার জন্য,তা তোমার চাচি মা কেন আমাদের ঘরে আসলো না ,আর কেনই বা ঈদ মোবারক জানালো না,তোমাকে না তোমার চাচিমা এতই ভালোবাসে?তোমার চাচিমা নাহে নাই আসলো, তার মেয়েটার কি যেন নাম! হ্যাঁ, নুর ওই কই আসলো আমাদের ঘরে,তোমায় না প্রিয় খেলার সাথী?আসলে সবকিছু না চাইতেই পাও তো তাই জিনিসের মর্যাদা বোঝ না।এখন তো তুমি আমার কাছ থেকে দুইশ,পাঁচশ, এক হাজার টাকা পর্যন্ত ঈদের সালামি পাও।অথচ আমাদের সময়ে আমরা কিছুই পেতাম না,পাবই বা কেমনে আমরা ছিলাম পাঁচ ভাই তিন বোন।যার মধ্যে তোমারি চাচাই ছিল তোমার দাদার  আদরের, আমাদের দিকে তো ফিরেও তাকাতো না। তাই তো সব সম্পত্তি তাকেই দিয়ে গেছে আমাদেরকে কিছুই দেয়নি।এসব দেখেই আমি তোমার পর আর কোন সন্তান নেই নি। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে তোমাকে নেওয়া ও আমাদের ঠিক হয়নি। আমি আর তোমার মা একলাই ভালো ছিলাম।কিন্তু কে জানত আমাদের ঘরে এই রূপ একটা মেয়ে হবে বাইরের আবর্জনা পছন্দ করবে বেশি।যদি আগে জানতাম তবে তোমাকে আসতে দিতাম না এতে তোমার মায়ের ইচ্ছা যাই থাকতো না কেন! এসব শুনে নিলার মতো ছোট মেয়ের মাথায় ঠিক ঠেকলো না, সে এমন কি বলেছিল যার জন্য তার বাবা তাকে এত কিছু বলল।সে তো শুধুমাত্র তার চাচিমার ঘরেই যেতে চেয়েছিল এর চাইতে তো আর বেশি কিছু সে চাইনি।নীলা ঘরে দরজা লাগিয়ে কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল।মাথায় এত চাপ সে সহ্য করতে পারল না তাই সে কাঁদতে কাঁদতে এবার অজ্ঞান হয়ে রইল। কিন্তু তার মা তার সম্পর্কে কিছুই জানলো না শুধু ভাবল সে বুঝি অভিমান করেই দরজা লাগিয়ে দিয়েছে।এই দিকে বেলা বাড়তেই থাকল কিন্তু নিলার আর জ্ঞান ফিরল না তাই দরজাও আর খোলা হল না।এবার নিলার মা চিন্তিত হয়ে উঠল আসলে কি হয়েছে তার যে সে দরজা খুলছে না।সে নিলা নিলা বলে ডাক দিতে লাগলো  কিন্তু রুম থেকে আর কোন সাড়া পেল না। তাই নীলার মার এবার খুব চিন্তা হতে লাগলো এবং সে তার স্বামীকে কল দিতে লাগলো বারবার।কিন্তু তার স্বামী কল রিসিভ করল না কারণ এখনো তার রাগ কমেনি।  এইদিকে সময় আরো বাড়তে লাগলো, কোন উপায় না পেয়ে নিলার মা নিজেই দরজা ভাঙতে চেষ্টা করল কিন্তু তা পারলো না।তখন সে দিশেহারা হয়ে চিৎকার করতে শুরু করল, আশেপাশে সেই মুহূর্তে কেউ ছিল না,কাউকে না পেয়ে নিলার মা প্রায় পাগলের মত হয়ে গেল। এমন সময়ে নিলার চাচিমা তার ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে ঈদ উপলক্ষে ঘুরতে বের হলো।নিলার চাচিমার হঠাৎ করেই নীলার কথা খুব মনে পড়ে গেল এবং তাকে খুব দেখতে মন চাইলো যদিও নিলার চাচিমা খুব ভালো করেই জানতো নিলার মা তাকে  একদমই সহ্য করতে পারি না এবং নিলাকে তাদের সাথে মিশতেও দেয় না। তবুও সে নিলাদের ঘরে কলিং বেল বাজালো কারণ সে নিলাকে আসলেই অনেক ভালোবাসে ।কলিং বেলের শব্দ শুনে নীলার মা একটু আশা খুঁজে পেল এবং সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে দিল এবং তাকে দেখে খুবই খুশি হল।যদিও বা নিলার চাচিমা একটু অবাকই হলো কারণ নিলার মা কখনো তাকে দেখে এতটা খুশি হয়নি কিন্তু পরাক্ষ ক্ষণেই সে নিলাকে খুঁজতে লাগলো।নিলাকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে সে নিলার মাকে জিজ্ঞেস করল নিলা কোথায়?নিলার মা তাকে অস্থির হয়ে বলল নিলা এই রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়েছে আর দরজা খুলছে না। তার এই কথা শুনে নিলার চাচীমাও অস্থির হয়ে গেল এবং দরজা খোলার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না সঙ্গে সঙ্গে সে নিলার চাচাকে কল দিল এবং নীলা চাচা এসে দ্রুত দরজা ভেঙ্গে দিল।দরজা ভেঙ্গে তারা দেখল নিলা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে এবং তারা সময় নষ্ট না করে নিলাকে হসপিটালে নিয়ে গেল। ডাক্তার নিলার চেকআপ করে বলল, "আপনার মেয়ে বেশি দুশ্চিন্তার কারণে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছে। তবে এটা বুঝতে পারছি না তার এই বয়সে এত কিসের দুশ্চিন্তা?আচ্ছা আপনারা কি তাকে অতিরিক্ত কোনো কিছুর চাপ দেন, নাকি এমন কিছু বলেন যা তার মনের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে? " ডাক্তারের এই কথা শুনে নিলার মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।ডাক্তার তাদেরকে  আস্তা দিয়ে বলল "আপনারা দুশ্চিন্তা করবেন না।আর চেষ্টা করবেন সবসময় আপনার মেয়েকে দুশ্চিন্তা মুক্ত, চাপ মুক্ত রাখতে।আমি আপনাকে এই প্রেসক্রিপশন লিখে দিচ্ছি ওষুধগুলো তাকে নিয়মিত খাওয়াবেন।ইনশাআল্লাহ আপনার মেয়ে সুস্থ হয়ে যাবে। আর হ্যাঁ একটা বড় কথা তাকে বেশি বেশি সময় দেওয়ার চেষ্টা করবেন তাকে কখনো নিঃসঙ্গ রাখবেন না আর তার সাথে যথাসম্ভব কোমল আচরণ করার চেষ্টা করবেন, ভালো হয় যদি অযথা ছোট ছোট কারণে তাকে বকাঝকা না করেন আর ভুলেও তার গায়ে হাত তুলবেন না কারন এখনকার দিনে বাচ্চাদের গায়ে হাত তুললে তা তাদের মনের উপর প্রভাব ফেলে। যাইহোক এইরকম কিছু ছোটখাটো নিয়ম কানুন মেনে চলেন তাহলে আপনার বাচ্চা সবসময় সুস্থ সবল হাসি খুশি থাকবে।আর যদি নিয়ম কানুন গুলো না মেনে চলতে পারেন তাহলে পরবর্তীতে বড় রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।"এসব বলে ডাক্তার চলে গেলেন পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিকের দিকে আসলে নিলার চাচি মা নিলার মাকে ঘটনার কারণ জিজ্ঞেস করল  আর তখনই নিলার বাবা সেখানে উপস্থিত হল। নিলার বাবাকে দেখে নিলার মা বলতে লাগলো, "আমাদের দোষে কি হল আজ আমাদের মেয়েটার।ও এমন কি চেয়েছিল যেটার জন্য আমরা ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করলাম  শুধুমাত্র তোর চাচী-মার ঘরেই আসতে চেয়েছিল আর কিছুই না।মুলত সব দোষ আমাদের,আমাদের জন্য এর আগে ওর ক্ষতি হয়েছে আর আজকেও আমাদের জন্যই ওর ক্ষতি হলো। সম্পত্তির লোভ আমাদের এতটাই অন্ধ করে দিয়েছে যে আমরা রক্তের বন্ধন ছিন্ন করতেও দ্বিধাবোধ করি না অথচ দরকারের সময় আমাদের এই রক্তের বন্ধনে কাজে আসে।তাহলে কেন আমরা এমনটা করি, আমরা তো চাইলেই এই বিষয়গুলো আপস করতে পারতাম, একটা  মজবুত সম্পর্ক গড়তে পাড়তাম। কিন্তু না জায়গাজমি আর সম্পতি্র লোভ আমাদের এতটাই অন্ধ করে দিয়েছে যে আমরা কি ভালো কি   খারাপ তা বুঝতেই পারি না,কে আমাদের আপন আর কে পর তাও বুঝতে পারি না শুধু কি তাই আমাদের বিরুদ্ধে কেউ গেলে আমরা তার হাত পর্যন্ত ভেঙ্গে দেই, তাকে অজ্ঞান করে দেই।এভাবেই যদি চলে থাকে তবে আমরা কেউ কখনোই সুখে থাকতে পারবো না।"এমন সময় নিলার চাচাও সেখানে ঔষধ  নিয়ে উপস্থিত হয়।নিজের ভুল বুঝতে পেরে নিলার বাবা এবার নিলার চাচাকে জড়িয়ে ধরে আর বলতে থাকে, "আমাকে ক্ষমা করে দে রে, আমার বড়ই ভুল হয়ে গেছে।আমি তোকে ভুল বুঝেছিলাম।আমার জন্যই আমার মেয়ের আজ এই অবস্থা।তুই আমাকে ক্ষমা করে দে।সম্পত্তির লোভ আমাকে এতটাই অন্ধ করে দিয়েছে যে আমি অহংকারী হয়ে উঠেছি।তুই আমাকে ক্ষমা করে দে। " ওই দিকে নিলার মা নিলার চাচিমাকে বলতে থাকে," আমাকে ক্ষমা করে দেও হীরা। আমারই সব দোষ, আমিই তোমার ভাইকে তোমাদের বিরুদ্ধে উস্কায় দিয়েছিলাম কারণ সম্পত্তি আমার চোখ অন্ধ করে দিয়েছিল।কিন্তু এখন আমি বুঝতে পারছি আমি কতটাই ভুল ছিলাম। আমাকে দয়া করে ক্ষমা করে দাও হীরা।"তাদের মাঝের আপোষগুলো যখন প্রায় শেষের দিকে তখনই নিলার জ্ঞান ফিরে আসে। জ্ঞান ফিরে আসলে সে তার চাচি মাকে দেখে অনেক বেশি পরিমাণ খুশি হয় কিন্তু যখনই তার বাবা-মা তার সামনে আসে সে তাদের দেখে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায় আর বলতে  থাকে, "চাচি মা, তুমি আমাকে নিয়ে যাও আমি আর এদের সাথে থাকবো না, এরা খুবই পচা। এরা আমাকে একদমই ভালোবাসে না।" তখন তার চাচী মা তাকে বুঝায় বলে "তুমি ভয় পেয়ো না মণি এরা তোমার সাথে আর কখনোই খারাপ ব্যবহার করবে না। আর বাবা-মা কখনো পচা হতে পারে বল হুমম।"  "যদি তাই না হয় তবে এরা কেন তোমার সাথে আমাকে দেখা করতে দেয় না,কেন তোমার সাথে কথা বলতে দেয় না?তোমার ঘরে যাইতে দেয় না আর নুরের সাথেও খেলতে দেয় না। বলো কেন?" তখন নিলার মা নিলার পায়ের কাছে পড়ে বলতে থাকে,"সরি মামণি,মা আর কখনো তোমার সাথে এমন করবে না,তোমার সাথে খেলবে,তোমাকে নিয়ে চাচিমারও ঘরে যাবে, নুরকে তোমায় ঘরে আনবে,আমরা তোমার চাচিমা রা একসাথে পিকনিকে যাবো, তুমি কি মাকে ক্ষমা করবে না মামণি!" সেই সময় নিলার বাবাও বলতে থাকে, "আম্মু তুমি তোমার বাবাকে ক্ষমা করবে না!তোমার বাবা আর কখনো তোমার সাথে  রাগ দেখাবে না,তোমাকে মারবে না, বকবেও না।"  এই সময় নিলার চাচা বলতে থাকে তুমি এদের ক্ষমা করে দাও মণি।তখন নিলা বলে ঠিক আছে আমি এদেরকে ক্ষমা করে দিব কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে। "তা  কি? "সবাই মিলে বলে ওঠে। তখন নিলা বলে,"আমরা আর কখনোই আলাদা হবো না,এবং আমার বাকি চাচা ও ফুপুদের সাথেও আমার দেখা করাতে হবে। " সবাই নিলারর শর্ত মেনে নেয়।তখন নিলা বলে ওঠে,"সবার মত আমার জন্যও ঈদ আসে!"  

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।