রবিউল ফিরোজ'র কবিতা মাগো আমার মা ।। বর্ণপ্রপাত


নিবিড় শান্তির নিভৃত আশ্রয় খুঁজে পেতে চাই
এমন আশ্রয় তুমি ছাড়া কে দেবে বলোতো মা ?
জগতের কেউ কি বুঝে অন্য কাউকে
সবাইতো ব্যস্ত আছে নিজেকে নিয়ে
'আমার- আমার' শব্দটাকে আঁকড়ে ধরে
তুমিতো জানো 'আমার' শব্দটার মতো প্রিয় আর কিছু নেই;
সেখানে আমাকে নিয়ে কারো ভাববার সময় কোথায়?
দগ্ধ যন্ত্রণায় ক্ষত-বিক্ষত, ভাঙা চূর্ণ-বিচূর্ণ মন
ভেতরের জরাজীর্ণ আত্মা নামক অদৃশ্য বস্তু
যেদিকে চোখ যায় শুধু জখম আর জখম
এখানে না থাকাটাই ভালো শতগুণ
চলো তুমি আমাকে নিয়ে সেই নিবিড় আশ্রয়ে।

জানো, আগে ভীষণ ভয় পেতাম মৃত্যু নামক দৈত্যটাকে
ওকে ভাবতে গিয়ে আপনাআপনি দম বন্ধ হয়ে আসতো
মৃত্যু অবধারিত তবু কেন যে ভয় এতো বুঝতাম না
অভয়বাণী খুঁজতাম, যেখানে আল্লাহ্ বলেছেন-
"কারো প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত হয় এবং তোমরা অসহায়ভাবে তাকাতে থাকো, তখন আমি তোমাদের অপেক্ষা তার নিকটতম হলেও তোমরা দেখতে পাওনা"
আয়াতটুকু পাঠ করে শান্তি পাই;

বুকের ভেতর আজনম লালিত স্বপ্নগুলো ধুলিস্যাত হয়ে গেছে
ওজন শূন্য বেলুনের মতো ফাঁকাফাঁকা বুকের ভেতরটা
যাকে দেবী করে রেখেছিলাম বুকের সিংহাসন জুড়ে
সে নেমে এসেছে আরো অধিক স্বর্গসুখের আশায় ;

হাজারো ফুলের শোভা, পাখির সুমধুর গান, জীববৈচিত্র্য, গভীর প্রেমবন্ধন, প্রিয়তমার প্রিয়দৃষ্টির সম্মোহন থেকে
দূরে গিয়ে কীভাবে থাকবো আমি?
চক্ষুবুঁজে ভাবতাম মৃত্যুকে ;
তুমি কী হিমশীতল নাকি উষ্ণতায় ভরা?
ভাবনার পায়েপায়ে এগিয়ে যেতাম ধীরেধীরে
কিন্তু শেষ সীমাটুকু আর ভাবতে পারতাম না
শিউরে উঠতাম, ঘেমে উঠতো গা ;
অবশ হয়ে আসতো দেহখানি
ফিরে আসতাম মৃত্যুর দুয়ার থেকে
কিন্তু নাগো মা, আর আমি ফিরবো না বলে দিলাম ;
তুমি ডাকলেই হাজির হবো নতমুখে তোমার সম্মুখে
আমার ক্লান্ত হাতখানি কেউ একজন ধরলে শান্তি পেতাম
বিশ্বাস করি তুমি ধরলে তারচেয়ে অধিক শান্তি পাবো;
কারণ আমার বেদনা, দুঃখজ্বালা তোমাকে বলতে হবে না,
আমি কত সুখে আছি - কত সুখে ছিলাম দুনিয়াতে
আমার দুটি চোখ দেখলেই তুমি বুঝতে পারবে মা ।
মাগো, আমি তো তোমার জন্য দোয়া করি সর্বক্ষণ
"হে-প্রভু, তুমি আমার মা-বাবাকে ভালো রাখো
যেমন করে তাঁরা শিশুকালে আমায় আদরে লালন করেছে "।
কিন্তু মা, স্বার্থের দুনিয়ায় তুমি বিনে কে অমন করে দোয়া করবে আমার জন্যে?

কে আর বোঝে বলো -
দুঃখ পেলে আমার বুকের ভিতরটাতেও কষ্ট বাজে
সাত সমুদ্রের লোনাজল এসে ভিড় করে দুটি চোখের কোলে
দুমড়ে মুচড়ে যায় বুকের ভেতরটা
অবাঞ্ছিত ঝড়ের কবলে আগুন জ্বলে মনের গহীন অরণ্যে
হাহাকার ধ্বণিত হয় দিক- দিগন্তে
তবু আমি অসহায় হয়ে চেয়ে চেয়ে থাকি
জ্বলি -পুড়ি তবু প্রতিকারের উপায় নেই অনন্ত দুনিয়ায়
মাগো, বলোতো মা- আমার পৃথিবীর সান্ত্বনা কোথায় ?

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।