ধারাবাহিক উপন্যাস: দিদার চৌধুরী'র "হৃদয়ের কান্না" -৫।। বর্ণপ্রপাত


: আসলে আপনি ঠিকই বলছেন। আমাদের চিন্তা-ভাবনা সব সময় আত্মকেন্দ্রিক হয়ে থাকে , তাই হয়তো সব সময় সঠিক চিন্তা-চেতনা মনে স্থান পায়না।
আপনাদের জীবন ইটের সুবিশাল প্রাচীরঘেরা চাকচিক্য দ্বারা নির্মিত দালান কোঠার মাঝে। চারিদিকে লোকরঞ্জন, উচ্ছ্বাসিত কোলাহল, কর্মব্যস্ততা , প্রাণের আমোদিত রূপের সমাহার। সভ্যতা এখানে বিপুল সম্পদের অধিকারীর দখলে। আর এই যে সুবিশাল অট্টালিকা প্রতিনিয়ত ধনীদের গর্বস্ফীতির অহমিকা প্রকাশ করছে। এখানে অর্থ উপার্জনের প্রক্রিয়াটি অশুভ প্রতিযোগিতার ফসল । এখানে মানুষের মাঝে মানুষের প্রীতি নেই, আছে ব্যবধান, বৈষম্য। ধনী সর্বত্র নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত । গাঁয়ের লোক? সে তো কোন নস্যি। অথচ গ্রামের নিরব নিস্তব্ধ , অবহেলিত মানুষ-সর্বদা শহরের লোকদের তাবিদারে ব্যস্ত, ব্যস্ত মনোরঞ্জনেও। জানি শহরের প্রাচীরঘেরা দালানের মাঝে জীবনের সুন্দর ও সচ্ছলতা আছে বটে। তবে সরলতা বিন্দুমাত্র আছে কিনা বলা মুশকিল। শহর আর শহরের লোকজন বড়ই জটিল বিষয়। এদের অনুধাবন করা বড়ই কষ্টকর।
ক্ষনিকের পরিচিত মহিলা এই অনাকাঙ্খিত কথাশুনে বলল,
: শহরের লোকদের প্রতি আপনার এই তুচ্ছতা কেন জানতে পারি?
: জ্বী ! এখানে তুচ্ছতা বলছেন কেন , যা বলেছি  তার সব কিছুই কি মিথ্যা ? মিথ্যা ধরে নিলেও একটু বেশি বলে ফেলেছি । মনে কষ্ট অনুভব করলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
: সব অপরাধের শাস্তি কি ক্ষমা দিয়ে শেষ করা যায়?
: তা যুক্তিসঙ্গত, তবে বর্তমানে এটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাকে বলে ফ্যাশন
: আপনার সাথে কথা বলে পারাটা মুশকিল। যাই একটু চা-নাস্তার ব্যবস্থা করিগে-বলে মহিলাটি চলে গেল ।

উত্তম আর অধমের অবস্থান এই পৃথিবীতে । ভালো আর মন্দ নিয়ে জগৎ। হতে পারে এ জগতে মন্দ লোকের সংখ্যা একটু বেশি । তাই নিজেকে মন্দ লোকেই মনে হয় । নয়তো নিজের স্বার্থের জন্য ক্ষনিকের পরিচিত মহিলাকে অহেতুক বিভ্রান্ত করছি। ছিঃ আমি এত খারাপ!

কিছুক্ষণ অতিবাহিত করার পর তিনি একগাদা নাস্তা আর চা নিয়ে হাজির হলেন। এসেই বলল,
: একটু দেরি হয়েছে বলে মনে মনে গাল দিচ্ছেন না তো?
: একগাল হেসে বললাম, কি যে বলেন?
: নিন গরম গরম দুধটুকু খেয়ে নিন। আরে! আপনার বন্ধু কোথায়?
: উৎপলের কথা বলছেন ? সে একটু বাইরে গেছে।
: আপনার বন্ধুর নাম তো জানা হল, কিন্তু.......?: আমার নামের কথা বলছেন ? নামটা তেমন অর্থগত নয়।
: নামের অর্থ দিয়ে কি হয় ? নামটাই তো আসল।
: নামটা কি জানতে চান?
মহিলা মাথা নাড়িয়ে বলল,
: হ্যাঁ
: আমার নাম ইন্ধন।
: বাহ ?বেশ তো নাম।
: সত্যি করে বলছেন? এই নামের অর্থ জানেন ?
: আমি তো অত পড়িনি ,জানবো কিভাবে?
: ইন্ধন মানে আগুনে পোড়ানোর কাঠ।
: তাইতো বলি এত তেজ কিসের?
: তেজ না পোড়া ছাই ।
 কিছুক্ষণের স্তব্ধতা ভঙ্গ করে, এক দৃষ্টি নিরীক্ষণ করে । মহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম,
: আপনার নামটা তো জানাই হলো না।
ভদ্রমহিলা উত্তরে বলল,
: আমার নাম শিউলী।
: তাইতো বলি এত গন্ধ ছড়ায় কে? রাতের নিস্তব্ধতায় কিসের পরশে মন হালকা হয়। সে তো এই শিউলী ! খুব সুন্দর সুরভিত নাম।
: শিউলি কি আবার কোন গুণের অর্থের হয়? রাতেই ফোটে রাতে যার বিলীন ।
 সে আর কতই?
(চলবে)

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।