একটু বড় হলাম। ইতোমধ্যে আপু-ফুপুদের সেই দলটার মোটামুটি সবাই বিয়ের পিড়িতে বসে বিদায় নিয়েছে। আমাদের বড় তখন হাতেগোনা দু-তিন জন। কি আর করা, অগত্যা মেন্দিপাতা সংগ্রহের দায়িত্বটা আমাদের ঘাড়েই পরতো। অবশ্য বাটার দায়িত্বটা বড়দেরই ছিলো।
প্রাথমিকে পড়ি তখন। আমার তৎকালীন হোম টিউটর ম্যামের কাছে মেহেদীর গল্প শুনে মনে সেটি পাওয়ার আকাঙ্খা চেপে বসে। আব্বুকে বলতেই এনেও দিয়েছিলো। সম্ভবত 'শাহাজাদী মেহেদী' সেসময়কার একমাত্র ব্রান্ড ছিলো। ঈদের দু-একদিন আগে সম্ভবত, সেই ম্যাম-ই সাগ্রহে প্রথমবারের মতো আমার দু'হাতে মেহেদী রাঙিয়ে দিয়েছিলো। তবে সেই মেহেদী এখনকার মতো ৫মিনিটেই টকটকে কালার গ্যারান্টি ছিলো না। কিংবা এতো তাড়াতাড়ি শুকিয়েও যেতো না। কিছুটা বাটা মেন্দির মতো ঘ্রাণ ছিলো। আর শুকানোর জন্য হাতে দিয়ে দীর্ঘক্ষন ধরে রাখতে হতো। তারাতাড়ি শুকানোর জন্য আমি তো ফুঁ দিতে দিতে গলা শুকিয়ে কাঠ করে ফেলতাম।
তারপরের ঈদ গুলোতে যেন মেহেদী বাধ্যতামূলক হয়ে গেলো। অন্যদিকে হাজারটা ব্রান্ডের মেহেদী! ৩০মিনিটেই টকটকে কালার, তারপর ২০ মিনিটে, ১০ মিনিটে আর এখনতো ৫ মিনিটেই। তবে মেহেদীর সেই মত মাতানো গন্ধটা হারিয়ে গিয়েছে। এখনকার মেহেদীতেও ঘ্রাণ আছে। তবে সেটা কিছুটা বাটা মেন্দির মত ঘ্রাণ নয়, এসিডের ঘ্রাণ।
কথায় আছে, বড়ো হওয়ার সাথে সাথে জীবনের উচ্ছ্বাস গুলোও হ্রাস পেতে থাকে। আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে এসব আগ্রহও কমে যায়। এখন আর তেমন মেহেদী রাঙানো হয়না ঠিকই তবে বাড়ির ছোটদের হাতে রাঙিয়ে দেবার দায়িত্বটা আস্ত আস্তে ঠিকই কাঁধে এসে চেপেছে। অবশ্য মজাও লাগে। ইদানীং আবার মাথায় দেবার জন্য মেহেদী গুড়া বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু সেই হারিয়ে যাওয়া উচ্ছ্বাস আর বাটা মেন্দির তুলনা কোন কিছুতেই মেলে না।
শিক্ষার্থী, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ
ইংরেজি বিভাগ (অনার্স ৩য় বর্ষ।